somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্কাই র্ফোস

২০ শে জুন, ২০১০ বিকাল ৫:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগামীকাল পরীক্ষা। ইমনের মাথায় এখন একটাই চিন্তা। যে ভাবেই হোক রোল এক তার চাই-ই। কিন্তু সমস্যা হল তুলি। মেয়েটা মারাত্মক। গত বছর ইমনের আশা ছিল রোল নম্বর এক তারই হবে। তুলির জন্য পারলো না। তুলিই হল প্রথম। আর ইমন হল দ্বিতীয়। অবশ্য তুলি কাসেও ভাল ছাত্রী হিসেবে পরিচিত। ইমনও কম না। সবগুলো টিউটোরিয়াল ও সেমিস্টারে ইমন তুলির সমান নম্বর পেয়েছে। দুএকটাতে বেশীও আছে। তাছাড়া ২য় টিউটোরিয়ালে তুলি গণিত পরীক্ষা দিতে পারেনি। সে সময় তুলির ভীষণ জ্বর ছিল। ইমন তাদের বাসায় গিয়ে দেখেও এসেছে একবার।
যাক এবার ইমনের ফার্স্ট হওয়া ঠেকায় কে। সন্ধ্যা হওয়ার সাথে সাথেই ইমন বই-খাতা নিয়ে টেবিলে বসে গেল। সিলেবাস আগেই শেষ করা আছে। এখন শুধু রিভিশন দিতে হবে। রিভিশনে মগ্ন ইমন। হঠাৎ তার মনে হলো তার পেছনে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে। তার নিঃশ্বাস ইমনের ঘাড়ে লাগছে। ইমন চট করে পেছনে ফিরে গেল।

একটা বেটে মত লোক ইমনের পেছনে দাড়ানো। মাথায় আর্মি কাটিং চুল। পরনে কালো শার্ট-প্যান্ট।
- কে তুমি, প্রশ্ন করলো ইমন ।
- আমার নাম রাস্কেল।
- রাস্কেল! প্রচন্ড হাসি পেল ইমনের। রাস্কেল আবার মানুষের নাম হয় নাকি ? ওটা তো একটা গালি।
- মানুষের হয়না কিন্তু আমাদের হয়।
- আমাদের আবার কারা ? তোমরা মানুষ না।
- না আমি মানুষ না। আজ বিকেলে তুমি যে গেমস খেলেছো। আমি সেখানে বিমানের পাইলট ছিলাম। এই দেখো তোমার গুলি লেগে আমার হাতটা ছিঁড়ে গেছে। রাস্কেল ডান হাত উচু করে ইমনকে দেখালো।
হাতটা কজ্বি থেকে কাটা। ত স্থান থেকে এখনও রক্ত ঝরছে। ইমনের দুঃখ হলো। মুখটা বিমর্ষ হয়ে গেল। রাস্কেল বললো দেখো যুদ্ধের ময়দানে আমি হেরে গেছি। স্কাই ফোর্সে কেউ কখনো আমাকে হারাতে পারেনি। তুমি আমাকে হারিয়ে দিয়েছো। এখন আমি বাড়ি যেতে পারবো না।
- কেন ? বাড়ি যেতে সমস্যা কি ?
আমাদের স্কইফোর্সের নিয়ম হল- কেউ যখন খেলায় হেরে যায় তখন তাকে বাসায় ফিরতে হলে লাইন গেইম খেলতে হয়। লাইন গেইমে যদি জিততে পারে তবেই তাকে বাসায় ফিরতে দেওয়া হয়।
- যদি হেরে যায় ?
- তাহলে তাকে মেরে ফেলা হয়। তোমার গুলিতে আমার ডান হাত ছিড়ে গেছে, আমি লাইন গেইমে হেরে যাবো। তুমি আমাকে বাঁচাও। রাস্কেলের দু‌চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে। ইমন কারো চোখে পানি দেখলে সহ্য করতে পারে না। তাছাড়া আহ বেচারা তার জন্যই তো তার লোকটার এ অবস্থা। ইমন সিদ্ধান্ত নিলো যেভাবেই হোক সে রাস্কেলকে বাঁচাবে। তাই জিজ্ঞাসা করলো- আমি তোমাকে বাঁচাতে পারবো ?
- হ্যাঁ পারবে, তুমি আমার হয়ে লাইন গেইম খেলে দেবে। সেখানে যদি তুমি জিততে পারো তবে আমি বেঁচে যাবো।
- কিন্তু আগামীকাল যে আমার পরীা।
- রাস্কেল আরও জোরে কাঁদতে কাঁদতে বললো আমি মরে যাচ্ছি আর তুমি তোমার পরীার চিন্তা করছো। তোমার জন্যই আমি মরতে বসেছি। অথচ আমার জন্য তুমি ত্রিশটা মিনিট নষ্ট করতে পারবে না, তোমরা এমনই স্বার্থপর। কথা শেষ করে রাস্কেল হু হু করে কাঁদতে লাগলো। ইমন বললো ঠিক আছে বাপু থামো থামো। আমি ত্রিশ মিনিটে তোমার লাইন গেইম শেষ করে দিয়ে আবার পড়তে বসবো। কিন্তু আম্মু যে এখন কম্পিউটারে বসতে দেবে না।
রাস্কেল বললো কম্পিউটারে বসতে হবে না, আমি গেইম পেয়ার নিয়ে এসেছি। তুমি খেলতে থাকো আমি দরজায় পাহারা দিচ্ছি। আম্মু আসার সময় তোমাকে এসে বলবো। তুমি তখন পেয়ারটা বইয়ের নিচে লুকিয়ে পড়তে থাকবে। আম্মু গেলে আবার শুরু করবে।
ইমন বইটা খোলা রেখেই খেলা শুরু করলো। লাইন গেইমের সোলজারগুলো এলোমেলো হয়ে দৌড়া-দৌড়ি করছে। ইমন তাদেরকে আটকানোর জন্য তাদের পিছু ছুটছে। এমন সময় রাস্কেল এসে বললো আম্মু আসছে। পেয়ারটা লুকিয়ে ফেলো। ইমন পেয়ারটা বইয়ের নিচে রেখে বই পড়তে লাগলো। আর রাস্কেল ঢুকলো খাটের নিচে। একটু পরে আম্মু এক গাস দুধ নিয়ে এলো। ইমন দুধটুকু খেয়ে আবার পড়তে লাগলো। আম্মু খালি গাস নিয়ে চলে গেলো। ইমন আমার পেয়ার বের করে খেলতে লাগলো। কতণ পরে ঝরনা আপু এলো ইমনের রুমে। রাস্কেলের চালাকীতে সেও কিছু জানতে পারলো না। এভাবে কতণ পর পর আব্বু আসে, আপু, কাজের মেয়ে শেফালী আসে কিন্তু কেউ কিছু টের পায় না। ইমন চুপি চুপি লাইন গেইম খেলতে থাকে। খেলতে খেলতে কখন যে রাত দশটা বেজে গেছে ইমন টেরও পায় না।
তখন আম্মু এসে ইমনের দু’গালে দুটি চুমো দিয়ে বলে আজ আর পড়তে হবে না। চল খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। ইমন কিছু না বলে খাটের নিচে তাকায়, রাস্কেল ইশারায় তাকে খেয়ে আসতে বলে। ইমন খেয়ে এসে বিছানায় শুয়ে পড়ে। আম্মু লাইট বন্ধ করে ডিম লাইট জ্বেলে চলে যায়।
কিছুণ পর রাস্কেল খাটের নিচে থেকে বেরিয়ে বলে কই গেইম তো শেষ হলো না। ইমনের হাতে পেয়ারটা ধরিয়ে বলে এই নাও আর একটু পরেই শেষ হবে। ইমন শুয়ে শুয়ে খেলতে থাকে কিন্তু খেলা আর শেষ হয় না। অবশেষে কখন যে ইমন ঘুমিয়ে পড়লো তা সে নিজেই জানে না।
সকালে আম্মুর ডাকাডাকিতে ইমনের ঘুম ভাঙ্গে। আম্মু তাড়াতাড়ি ইমনকে গোসল করিয়ে নাস্তা খাইয়ে স্কুলে নিয়ে যায়। সাতটা থেকে ইমনের পরীা। কিন্তু তার চোখ থেকে এখনো ঘুমের রেশ কাটেনি। তাছাড়া এখনো কিছুই রিভিশন দেওয়া হয়নি তার। আম্মুকে তো আর সে কথা বলা যায় না। বাধ্য হয়ে ইমন আম্মুর সাথে স্কুলে যায়। পরীার হলে স্যার সবাইকে প্রশ্ন দিলে সবাই লেখতে থাকে। ইমনের চোখ জুড়িয়ে ঘুম আসে। তাছাড়া কোন প্রশ্নেরই পুরোপুরি উত্তর তার মনে নেই। তার পরেও লেখার চেষ্টা করে।
ইমনদের বারান্দায় খাচার ভেতর একটা মাছরাঙ্গা পাখি। ইমন বারান্দায় গিয়ে দাড়াতেই মাছরাঙ্গাটা খাচা থেকে বেরিয়ে এসে ইমনের বাহুতে একটা ঠোকর দিল। ইমন ব্যাথ্যা পেয়ে হাত দিয়ে জায়গাটা মালিশ করতে লাগলো। মাছরাঙ্গাটা আরও জোড়ে ঠোকর দিতেই ইমনের ঘুম ভেঙ্গে গেল।
তুলি তার দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে চাপা স্বরে বলছে রাত্রে ঘুমাওনি বুঝি পরীক্ষার হলের ভেতরে ঘুমাচ্ছো যে ?
ইমন এদিক-সেদিক কলম খুঁজতে লাগলো। তুলি নিচ থেকে কলমটা কুড়িয়ে ইমনের হাতে ধরিয়ে দিল আর তখনই বাইরে ঢং ঢং করে ঘন্টা বেজে উঠলো।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×