somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভূতের ছাও

২০ শে জুন, ২০১০ বিকাল ৫:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লিটল ফাওয়ার স্কুলের প্রথম শ্রেণীতে পড়ে তিশা। ভাল ছাত্রী হিসাবে স্কুলের স্যারেরা ওকে খুব আদর করে। আব্বু তো মাথায় করে রাখেন। কারণ পড়ালেখা ছাড়াও তিশা ভাল ভাল ছড়া লেখে। আর ছবিও আঁকে চমৎকার। স্কুলের আনিকা ম্যাডাম প্রায়ই বলেন- ওর ভেতরে একটা জয়নুলের প্রতিভা আছে। চেষ্টা করলে অনেক বড় শিল্প হতে পারবে।
অবশ্য আম্মুর মন্তব্য ভিন্ন। আম্মু বলেন শিল্পীরা পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা ভালবাসে। তারা সবসময় পরিচ্ছন্ন থাকে। কিন্তু ও সবসময় নোংরা অপরিস্কার থাকে। যেখানে সেখানে ময়লা ফেলে। আর ছবি আঁকার সময় তো ওকে চেনাই যায় না। নাক-মুখ, এমন কি জামা-পায়জামাতেও রঙ মেখে তার চেহারা এমন হয় দেখলে মনে হবে একটা রঙবাজ ভুতের ছাও।
আজ জুমাবার। তিশার স্কুল বন্ধ। সকালের নাস্তার পর তিশা বসল ছবি আঁকতে। তুলিতে রঙ লাগিয়ে ক্যানভাসে টান দেওয়ার আগেই মাথা থেকে ঝুলে পড়া চুলের ডগায় মুখে সুড় সুড়ি লাগে। তিশা তুলিটা হাতে রেখেই ডান হাত দিয়ে চুল সরাতে গেল। আর অমনি তুলির ডগা থেকে রঙের আঁচর লেগে গেল মুখে। এভাবে কিছুণ পর ঘাড় চুলকায় অমনি তুলি থেকে রঙ লেগে যায় ঘাড়ে। পিঠ চুলকাতে গেলে রঙ লাগে পিঠে।
সে সময় আকাশে উড়ে যাচ্ছিল একটা ছোট্কু ভুতের ছাও। নাম লবঙ্গ। লবঙ্গের বাবা মা যে কেন এমন একটা নাম রেখেছে তা সে নিজেই জানে না। কিন্তু এ ব্যাপারে লবঙ্গের কোন অভিযোগ নেই। সে ক্রমবর্ধমান ঢাকার বাড়ীগুলো দেখছে আর ভাবছে “ভুত ম্যাগাজিনের” আগামী সংখ্যায় “ঢাকার বাড়ী” শিরোনামে একটি ফিচার লেখবে। তাই খুব গভীরভাবেই দেখছিল সে। হঠাৎ তার চোখ আঁটকে গেল পীরের বাগের একটি ফাটে। তিশা তখন তুলি রেখে জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে ভাবছিল তার ছবিতে রাস্তার রঙ কি হবে ? যদি কালো হয় তবে পিচ ঢালা পথে ব্যস্ততার নিশান ওড়ে। আর যদি সুরমা কালার হয় তবে তা হয় তাদের গ্রামের বাড়ীর নির্জন রাস্তার প্রতীক। তিশা ভাবতে থাকে।
লবঙ্গ রঙে মাখামাখি তিশাকে দেখে ভাবল এ নিশ্চয়ই রঙবাজ ভুতের ছাও। বাড়ীওয়ালা মজার করার জন্য এভাবে আটকে রেখেছে। ওমনি লবঙ্গ নেমে এলো তিশার কাছে। তারপর তিশাকে নিয়ে সোজা ভূত কলোনীতে হাজির। বাসায় তখন কেউ ছিল না। লবঙ্গ তিশাকে খাটে বসিয়ে রেখে বাথরুমে ঢুকল। তিশা কিছু বুঝতে না পেরে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল।
ভুত কলোনীর স্ট্রাকচারই আলাদা। আবছা আলো আঁধারিতে কেমন ভুতুড়ে ভুতুড়ে পরিবেশ। ফাটগুলো মানুষের মুন্ডুর মত। দরজার ডিজাইন পুরানো মুন্ডুর মুখের আদল। জানালা নাকের ছিদ্রের মত। আর চোখের কোটর থেকে ভ্যানটিলেটর। তিশা লবঙ্গের সাথে ফাটে ঢেকার সময় এসব দেখেছে। তারপরও তিশা ততটা ভয় পায়নি। স্টার মুভিজে প্রায়ই সে ভুতের ছবি দেখে।
হঠাৎ তিশা শুনতে পায় পাশের রুমে কারা যেন ফিস ফিস করে কথা বলছে। তিশা কান পেতে শোনার চেষ্টা করে কিন্তু কিছুই বুঝতে পারে না। এবার সে খাট থেকে নেমে পাশের রুমে গেল। কিন্তু কেউ নেই। তিশা চারপাশটা ভালভাবে দেখতে লাগল। এবার মনে হলো সামনে আরেকটি রুম আছে এবং সেখান থেকে ফিস ফিসানির শব্দ আসছে। তিশা পুরানো মুন্ডুর হাঁ এর ভিতর দিয়ে পাশের রুমে গেল। সেখানেও কেউ নেই। এভাবে তিশা একের পর এক রুম পেরিয়ে যেতে লাগল। দশটি রুম পেরিয়ে তিশা দেখল তারই মত একটি মেয়ে বসে বসে ছবি আঁকছে। তিশা তার কাছে যেতেই মেয়েটি বড় হতে লাগল। বড় হতে হতে এক সময় গায়ের চামড়া ঝুলে পড়ল। কিছুণ পর মেয়েটির গা থেকে চামড়া খসে পড়তে পড়তে মেয়েটি একটি কঙ্কাল হয়ে গেল। ভূত কলোনীতে এসে এই প্রথম তিশা ভয় পেল। তার গা কাঁপতে লাগল।
কঙ্কালটি তখন হা হা করে হাসছে। সাথে সাথে বেরিয়ে আসছে তার তিন ইঞ্চি পরিমাণ রক্তমাখা দাঁত। তিশা দু’হাতে মুখ ঢেকে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল। কঙ্কালটি তখন হাত-পা ছুঁড়ে নাচতে নাচতে তিশার দিকে এগিয়ে আসছে। তিশা হাতের ফাঁক দিয়ে তা দেখতে পেয়ে দিল এক ছুট। কঙ্কালটিও ছুটতে লাগল। তিশা দৌড়াতে দৌড়াতে ভুতের ফাট থেকে বেরিয়ে এলো।
একটা বড় মাঠে এসে মাঝ বয়সী এক মহিলার সাথে তিশার সাাত হলো। মহিলাটি তিশাকে বললÑ কি মা, কি হয়েছে ? এমন করে দৌড়াচ্ছ কেন ? তিশা মহিলাকে সব খুলে বলল। মহিলা বললÑ ও তাই ? বলেই খিক খিক করে হাসতে লাগল। হাসির গমকে মহিলার শরীর কেঁপে উঠল। আর তাতেই তার শরীরের গোশত খসে খসে পড়তে লাগল।
এবার আর তিশা দৌড়াতে পারল না। তার পা যেন আটকে গেছে মাটির সাথে। এদিকে মহিলাটি এক সময় পুরোপুরি কঙ্কাল হয়ে তিশার দিকে ছুটে আসতে লাগল। ভয়ে তিশা দুই চোখ বন্ধ করল।
এক মিনিট দুই মিনিট করে ত্রিশ মিনিট কেটে গেল। কিন্তু কঙ্কাল আর তিশার কাছে এলো না। তিশা ভয়ে ভয়ে চোখ মেলে চাইল। কিন্তু এ কি ! এ যে তাদের বাসা। ক্যানভাসের সামনে দাঁড়িয়ে আছে সে। একবার চোখ কচলে নিল। না সবই ঠিক আছে। তবে কি এতণ আমি স্বপ্ন দেখেছিলাম ? নিজের অজান্তেই বলে ফেললো তিশা।
- না তুমি স্বপ্ন দেখোনি বলতে বলতে দশ/বারো বছরের একটি ছেলে এসে দাঁড়াল তার সামনে। তারপর হাত জোড় করে বললÑ আসলে আমারই ভুল হয়ে গেছে। আমাকে তুমি মা করে দাও। তিশা বললÑ তার মানে আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।
- ছেলেটি তখন বলতে লাগলো আমার নাম লবঙ্গ, ভুত কলোনীতে থাকি। এদিক দিয়ে যাওয়ার সময় রঙে মাখামাখি তোমাকে দেখে ভাবলাম তুমিও বুঝি রঙবাজ ভুতের ছাও। তাই তোমাকে উদ্ধার করে নিয়ে গেলাম। বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি তুমি নেই। হঠাৎ আমার ছোট ভাই এসে বলল একটা মানুষ ধরা পরেছে। তাকে দিয়ে কলোনীর মাঠে খেলা দেখানো হবে। ভাইয়ের সাথে খেলা দেখতে এসে দেখি তুমি। পরে অন্যান্য ভুতদের সাথে অনেক ঝগড়া ফ্যাসাদ ও মারামারি করে তোমাকে তোমাদের বাড়ীতে রেখে যাচ্ছিলাম। কিন্তু তুমি চোখ বন্ধ করে থাকায় এতণ আমি যেতে পারছিলাম না। কারণ তোমার কাছে মা চাইতে হবে তো।
তিশা বলল না না সেকি। আমারই তো দোষ। ছবি আঁকতে গেলেই আমি রঙে মাখামাখি হয়ে যাই। সামনের থেকে আমি আর ও রকম হবো না। বলতেই ভুত বলল ঠিক কথা বলেছো। মানুষেরা তো মানুষের মতই হবে। রঙ মেখে সঙ সাজলে তাকে তো ...............। এমন সময় দূরের মসজিদে জুমার আযান হলো। লবঙ্গ ভুত তখন কানে আঙ্গুল চেপে দৌড়াতে লাগল। তা দেখে তিশা হি হি করে হাসতে লাগল।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুন, ২০১০ বিকাল ৫:৩৫
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×