বারান্দায় কফির মগ নিয়ে দোলনায় বসে আছে নিলয় ,পাশে তার স্ত্রী সুমনা।বাইরে চিরন্তন বরষার বর্ষন ,মেঘে অন্ধকার চারিধার।নিলয়ের চোখ কি যেন এক আকর্ষণে আটকে আছে ; হাঁ সে দেখছে সুমনার রহস্যভরা মায়াবী আঁখি যা দেখেই সে যেন সুমনার সব ভাষা বুঝে । বাইরের পরিবেশের সাথে সেই চোখ আজ তাকে মনে করিয়ে দিচ্ছে তাদের প্রথম মিলনের স্মৃতিকে
গন্তব্য ছিল তাদের ঢাবির হলের দিকে কিন্তু বৃষ্টির হঠাৎ আক্রমনে আটকে পরে দুজনে শাহবাগের যাত্রিছাউনিতে । সূর্যকে আড়াল করে আকাশ জুড়ে কালো মেঘের রাজত্ব আর নিচে উদ্দম বাতাসের প্রবাহ - কোথাও প্রলয় এমনই এক উন্মত্ত বায়ুর বেগে সুমনার গলায় জড়ানো ওড়নার একপাশ নিলয়ের মুখ ছুয়ে যায়। আঁধার ভেদ করা বিজলির আলোয় সে দেখে নিলাভ সাদা ওড়না পরিহিতার মুখ । ক্ষণে ক্ষণে বজ্রপাতের শব্দে সে কাপছে ; যেন এক ভিত হরিণী। বৃষ্টি অবিরাম- থামার নাই কোন নাম।CSE ইর চটপটে নিলয় তাই পাশের পরিচিত চায়ের টোঙ থেকে বড় লাল ছাতা ম্যানেজ করে । বড় ছাতা দেখে নিলয়ের কিছু বলতে হয়নি সুমনাই তাকে হলের গেট পর্যন্ত পৌঁছে দেবার অনুরোধ জানায়। নিঃসংকোচে নিলয় রাজি হয় ,ছাতার নিচে পানি জমা রাস্তায় হাটতে থাকে দুজনে । কোন কথা নেই তাদের নিশব্দতা ভেদ করে ছাতায় পানির ফোঁটার টুপ টুপ শব্দ, বাতাসে সুমনার চুল গুলো নিলয়ের মুখে-ঘাড়ে দোল খাচ্ছে ।মাতাল হাওয়ায় মত নিলয়ের হৃদয় ও যেন বাধ না মানা উচ্ছ্বাসে দুলছে , বিব্রত সুমনাও লাজুক চোরা চোখে নিলয় কে দেখছে ।
হঠাৎ এক বজ্রপাতের শব্দ নিলয়কে তার বর্তমানে ফিরিয়ে আনে এখানেও তার পাশে সুমনা ,হাতে কফির মগ- দোলনায় বসে তারা।
সুমনাও স্নিগ্ধ আঁখির লাজুক চাহনিতে দেখছে নিলয়কে । তার হৃদয়মানসপটে উকি দিচ্ছে সেই দিনটি । ঢাবির নাট্যতত্তের সুমনা সে দিন টি এস সির খোলা আঙ্গিনায় এক অনুষ্ঠানের নাটকের প্রধান চরিত্রে -নিলয় ও ছিল ক্যামেরা অপারেটিং এ। এদিন সুমনার বিভাগের ই এক ছেলে ইচ্ছা করে যেন কেউ না বুঝে এভাবে এক গলা কোণ আইসক্রিম ফেলে দেয় সুমনার বুকের স্পর্শকাতর অংশের ফাকে। সুমনা একে অনিচ্ছাকৃত দুর্ঘটনা ভেবে লেডিজ চেঞ্জরুমে যায় । কিন্ত তার জানা ছিলনা এই দুর্ঘটনাচক্রে আরো ২/৩ জন রয়েছে যারা লেডিজ চেঞ্জ রুমে অনুষ্ঠান চলার সময় মোবাইলের ভিডিও অন করে এসেছে। ফলাফল শরীরের সামনের পুরো অংশে আইসক্রিম লাগায় সে যা করেছে দুরভাগ্যবশত সম্মুখ অংশের পুরোটাই ভিডিও হয়েছে ক্যামেরা সামনে থাকায়।
নাটক শেষে অন্য সেগমেন্ট চলার সময় ভিডিও টিকে পুজি করে নারী লুপ্সু জানোয়ার গুলো সুমনাকে বাজে প্রস্তাব দেয় নয়তো ভিডিও ছড়িয়ে দেবায় হুমকি দেয়। নিষ্পাপ পবিত্র বাঙালি রমণীর হৃদয় ভাঙ্গায় শব্দ কেউ হয়ত শোনেনি , কারণ হঠাৎ ই অনুষ্ঠান শেষে বজ্রপাতের শব্দে বৃষ্টির আগমনে সবাই চলে যেতে ব্যস্ত নয়তো নিরাপদ কোথাও যাবে যাতে না ভিজে । পারফর্মার রা স্টেজে রয়ে গেছে তাদের জন্য বিশেষ উপহার আছে বলে । চিন্তাক্লিষ্ট ভগ্ন হৃদয়ে সুমনা বসে কাদছে বৃষ্টিতে ।বাইরের পরিবেশের মত তার মনেও ঝড় বয়ে যাচ্ছে আর চোখ দিয়ে বর্ষণ । সুমনাকে ভিজতে দেখে নিলয় ও তার দিকে এগিয়ে আসে ভিজবে বলে । কিন্তু অর মুখ দেখেই বুঝে ফেলে এ আনন্দের বৃষ্টিস্নান নয়। সে সুমনার হৃদয়-চোখের বর্ষণ জল আর মেঘের বর্ষণ জল বুজতে পারে । কারণ প্রথম দেখায় এক ছাতার নিচে হাটার সময়ই তার এক ছাদের নিচে থাকার বাসনা জন্মে তাই সে বুঝে। সে সরাসরিই সুমনাকে কান্নার কারণ জানতে চায়। CSE এর ছাত্র বিধায় কিছুটা সংকোচে সে নিলয় কে ঘটনা টা জানায় এ থেকে মুক্ত হয়ে সম্মান পথ জানতে চায়।
নিলয় কেবল সাধারন ছাত্রই নয় এক হ্যাকারও বটে সে সুমনাকে সাহস যুগিয়ে পাঠায় অই জানোয়ারদের কাছে নিজেও আড়ালে যায়। সে সুমনাকে আগে জানতে বলে ভিডিও অন্য কাউকে দিয়েছে কিনা , না দিলে সে যেন বলে ভিডিও সে নিজে দেখবে সেখানে কতটা এক্সপোজড তা জানার জন্য । আসলএ ভিডিও নেয়ার জন্য যখনি ওরা share it এ wifi hotspot zone এ আসবে তখনি অই হারামির সিস্টেম ক্রাক করবে আর ভিডিও ডিলেট করবে জাস্ট অন করাতে পারলেই। ছলনায় কাজ হল সুমনাও লজ্জা থেকে মুক্ত হল কিন্তু বাধা পরে গেল নিলয়ের মনের সাথে । আর সুমনার মোহনিয় লাবন্যময় সৌন্দর্যে নিলয়ত আগেই বাধা পরেছে । স্টেজের চারিদিকে বৃষ্টির ধারা ।
সুমনা বাস্তবে ফিরল নিলয়ের ডাকে তার কফির কাপ খালি আরেক কাপ চাই । সুমনা আর বর্তমানেও দেখছে বৃষ্টির অবিরাম ধারা ,আকাশঢাকা কালো মেঘে অন্ধকার চারিদিক ক্ষণে ক্ষণে বিজলির ঝলক , মাতাল হাওয়া বইছে।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৫:২২