somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বাধীনতার ৪০ বছর কথাটির দ্বারা অস্বীকার করা হয় ৭১ পূর্ব এই জনপদের মানুষের স্বাধীনতার ইতিহাসকে।

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১০:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চট্টগ্রাম থেকে নাইট কোচে ফিরছিলাম ঢাকা। ঢাকার ভিতর ছোট গাড়িতে করে যখন সোনারগাঁ হোটেলের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম তখন আমার চোখ আঁটকে গেল লাইট-পোস্টে ঝুলানো পোস্টার গুলোর দিকে। স্বাধীনতার ৪০ বছর। ব্যাপারটা খুবই সাধারণ। অনেকদিন ধরেই শুনছি। কিন্তু ব্যাপারটা নিয়া গভীর চিন্তা করিনি বলে এর একটা দিক আমার কাছে ধরা পরে নাই। স্বাধীনতার ৪০ বছর এ কথার অর্থ কি? এর অর্থ কি এই যে আমরা গত ৪০ বছর আগে হাজার হাজার বছর ধরে পরাধীন ছিলাম! একটা জাতি নদীর বুকে হঠাৎ জেগে উঠা কোন চর নয়। এর একটা দীর্ঘ ইতিহাস থাকে। যাকে অস্বীকার করা মানে জাতির অস্তিত্ব কে অস্বীকার করা। আমার কাছে এটাকে মনে হয়েছে, আমাদেরকে আমাদের দীর্ঘ স্বাধীনতার ইতিহাস থেকে বঞ্চিত করার এক অপচেষ্টা। এই খণ্ডিত ইতিহাস আমাদেরকে স্বাধীনতার মূল স্পৃহা থেকে করবে বঞ্চিত। সত্য প্রকাশ করা আমাদের দায়িত্ব। আর সেই দায়িত্ববোধই আমাকে কলম ধরতে বাধ্য করল।
সুপ্রাচীন সভ্যতার গৌরবের পতাকা হাতে এই পাললিক জনপদের মানুষেরা বরাবর সংগ্রাম করেছে অত্যাচারী শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। তারা নিজেদের নিরন্তর সংগ্রামের মাধ্যমে টিকিয়ে রেখেছে তাদের স্বাধীনতা। আজকের আধুনিক বাংলাদেশের শিকড় সেই সব মানুষের নিরন্তর সংগ্রামের মধ্যেই প্রোথিত। একে অস্বীকার করার কোন উপায় নেই।
এ অঞ্চলের মানুষেরা গঙ্গারিড়ী নামে এমন একটি শক্তিশালী রাষ্ট্রের জন্ম দেয় যাকে আক্রমণ করতে সাহস করেনি আলেকজান্ডারের মত বীরও। এদেশের মানুষ সেই অষ্টম শতক থেকেই সুশৃঙ্খল গণতান্ত্রিক রাজ্যের জন্ম দেয় পাল রাজ বংশের মাধ্যমে। এদেশের মুক্তিকামী মানুষ লড়াই করেছিল বহিরাগত আর্য ও সেনদের বিরুদ্ধে। আবার তারাই মানবতার মুক্তিদাতা মুসলমানদেরকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করেছিল। প্রায় সাড়ে পাঁচশত বছর ধরে বাংলায় ছিল স্বাধীন সুলতানদের শাসন। তারাই এ অঞ্চলকে বাঙ্গালা নামে পরিচয় করিয়ে দেয়। এদেশের স্বাধীন মানুষ পায় পরিচয়।
আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস অনেক সুপ্রাচীন। এদেশের অনার্যরা লড়াই করেছিল আর্যদের বিরুদ্ধে, লড়াই করেছে বাক্ষণ্যবাদী সেনদের বিরুদ্ধে। স্বাধীন বার ভুঁইয়ারা মসনদে আলা ঈসাখাঁর নেতৃতে লড়াই করেছিল বহিরাগত মঙ্গোলদের বিরুদ্ধে। আমাদের স্বাধীনচেতা মানসিকতা আমাদেরকে গোলামির নাগপাশে আবদ্ধ হতে দেয় নি। ইতিহাসে তাই আমরা বিদ্রোহী জাতি হিসাবে পরিচিত।
আমাদের গোলামীর ইতিহাস মূলত শুরু হয় ১৭৫৭ সালের ২৩শে জুন পলাশীর আম্রকাননে যখন বাংলার স্বাধীনতার সূর্য ভূলন্ঠিত হয় ব্রিটিশ বেনিয়া শক্তির হাতে। ১৭৫৭ সাল থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত আমরা আমাদের স্বাধীনতা হারিয়ে ছিলাম। কিন্তু এদেশের স্বাধীনচেতা মানুষ ব্রিটিশ রাজ শক্তিকে একদিনও শান্তিতে থাকতে দেয়নি। ফকির মজনু শাহ, শহীদ তিতুমীর, হাজী শরিয়তুল্লাহ, দুদু মিয়া ইংরেজ শক্তির বিরুদ্ধে গড়ে তুলেছিল এক ঝড়। নীল বিদ্রোহের সময় নাম না জানা অসংখ্য অসহায় কৃষকরা ভূমিকম্পের সৃষ্টি করেছিল ব্রিটিশ রাজ্যে। স্বাধীনতা হারানোর একশত বছর পর ১৮৫৭ সালে এদেশের সিপাহী জনতা স্বাধীনতার পক্ষে গড়ে তুলে এক মহা আন্দোলন। যা সাত সাগরের ওপারের রাজশক্তির ভিত নাড়ীয়ে দেয়। ঢাকা থেকে দিল্লী পর্যন্ত গাছে গাছে ফাঁসিতে লটকে থাকা বিপ্লবীরা জানিয়ে গেছে আমাদের স্বাধীনতার ইতিবৃত্ত। আফসোস আমরা আজ স্বাধীনতার জন্য তাদের রক্তদান কে অস্বীকার করতে বসেছি। এদেশ জন্ম দেয় ক্ষুদিরাম, মাস্টার দা সূর্যসেন, প্রীতিলতা, সুভাষ চন্দ্র বসুর মত বিপ্লবীদের। যারা বুকের রক্তে সমৃদ্ধ করেছে এদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসকে।
অনেক ত্যাগ, রক্ত আর সংগ্রামের পর ১৯৪৭এ আমরা স্বাধীনতা ফিরে পাই। পাই একটি নতুন নাম নতুন পতাকা। মুসলমান অধ্যুষিত বাংলা পাকিস্তান সৃষ্টির পিছনে সবচেয়ে বেশি পরিশ্রম করেছিল। পাকিস্তান ছিল আমাদের দীর্ঘ সংগ্রামের ফসল। কিন্তু খুব দ্রুতই পশ্চিম পাকিস্তানী নেতাদের আচরণ আমাদের মনে সঞ্চার করে ক্ষোভ। তবে একথা অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে ১৯৭১এর ২৫শে মার্চের আগ পর্যন্ত আমরা অবশ্যই পরাধীন ছিলাম না। ইতিহাস তাই বলে। পাকিস্তানের পক্ষে ১৯৬৫ সালের যুদ্ধে ভারতের বিরুদ্ধে আমাদের বাঙ্গালী সেনারা। এদেশের নেতারা নির্বাচনে অংশ নেয়। অবিচার হলেও আমারা পরাধীন ছিলাম না। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানী জেনারেলদের স্বৈরশাসন আর কম্যুনিস্টদের অপপ্রচারে আমাদের মধ্যে জন্ম নেয় ভ্রাতৃ ঘাতী দ্বন্দ্ব। ১৯৭০ সালের নির্বাচন আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবরের শান্তি আলোচনাই প্রমাণ করে আমরা চেয়ে ছিলাম শান্তি, নিরাপত্তা আর স্বাধিকার।
১৯৭১সাল ২৫শে মার্চ, আমরা আবার হারাই আমাদের স্বাধীনতা। পশ্চিম পাকিস্তানী বাহিনী কর্তৃক আমাদের স্বাধীনতা ভূলন্ঠিত হয়। স্বাধীনতা সংগ্রামের সুদীর্ঘ ইতিহাসধারী এই বঙ্গীয় জনপদের মানুষেরা গড়ে তুলে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ। প্রায় ৯ মাসের এক রক্তক্ষয়ই যুদ্ধের পর আমরা ১৬ই ডিসেম্বর ফিরে পাই আমাদের কাক্ষিত স্বাধীনতা, নতুন নাম, নতুন পতাকা।
স্বাধীনতার ৪০ বছর কথাটির দ্বারা অস্বীকার করা হয় ৭১ পূর্ব এই জনপদের মানুষের স্বাধীনতার ইতিহাসকে। এইভাবে ইতিহাস বিকৃতির দ্বারা অত্যাচারী শাসকগোষ্ঠী আমাদেরকে স্বাধীনতার মূল স্পৃহা থেকে দূরে সরিয়ে রাখার অপচেষ্টায় রত। যুবক সমাজকে ঘুমপাড়িয়ে রাখা হচ্ছে স্বাধীনতার কথা বলে। বাস্তবিকে আমারা ৭১রে সামরিক বিজয় পাই বটে, কিন্তু জুলুম অন্যায় অবিচারের এক নাগপাশে বন্দি আছি আজও আমরা।
আমাদেরকে আজ নতুন সংগ্রামের শপথ নিতে হবে। গণতন্ত্রের মুখোশধারী এইসব স্বৈরশাসকদের বিরুদ্ধে। আজ সময় হয়েছে জেগে উঠবার। তিতুমীর, ক্ষুদিরাম, আসাদ, নূর হোসেনের বাংলাকে আবার জাগতে হবে। জুলুমের দিন অবসানে আমাদের ঐক্যবদ্ধ এক আন্দোলনে নামতে হবে।
জুলুমশাহী নিপাত যাক বাংলার মানুষ মুক্তিপাক।
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৬

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট



পানি জীবনের মূল উৎস। এটি ছাড়া কোনো প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন:

وَجَعَلۡنَا... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪


শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×