somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খেতাব হারানোর শঙ্কা

০৫ ই জুলাই, ২০০৭ দুপুর ১:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমরা দুর্ণীতিতে বার বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। এটার একটা ধারাবহিকতা ছিল বটে। কিন্তু এখন বোধ হয় তা আর থাকছে না। গেল বছরই এর আলামত টের পাওয়া গেছে। গেল বছর বাংলাদেশ দুর্ণীতিতে প্রথম না হলেও শীর্ষ দেশগুলোর তালিকায় ছিল। এবার আশংকা হচ্ছে, ওই তালিকায় বোধ হয় নিজের দেশটাকে দেখব না। ভাবতে খারাপ লাগছে। বারবার একই তালিকা দেখতে দেখতে, শুনতে শুনতে একটা অভ্যাস তৈরি হয়ে গিয়েছিল। এখন সেই অভ্যাসে ছেদ পড়বে। হায় সেলুকাস! কি বিচিত্র দেশে আমাদের বাস! দুর্নীতিতে প্রথম হব না বলে এখন খারাপ লাগছে দেশবাসীর।
কোনো কিছুতে আমাদের সাফল্য নেই। কোনো তালিকায়ও বাংলাদেশ জায়গা করে নিতে পারেনি কখনো। যদিও এক আধবার বিভিন্ন তালিকায় নাম উঠেছে কিন্তু তা বেশিদিন টেকেনি। ছিল না কোনো ধারাবাহিকতা। ফুটবলের দিন শেষ, ক্রিকেট মাঝে বাঘের মতো গর্জে উঠেছিল, এখন তার গলায় বিলাইয়ের ডাক। ওই যে, ধারাবাহিকতার অভাব। কেবল দুর্ণীতিতেই আমরা সফল। বেশ একটা ধারাবাহিকতা ছিল। কিন্তু বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পরে সবকিছু কেমন যেন আস্তে আস্তে বদলে যাচ্ছে। ভেস্তে যেতে বসেছে দুর্নীতি প্রকল্প। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাজ কর্ম দেখে মনে হচ্ছে তারা দুর্নীতি নিমূল না করে ছাড়বেন না। না না, তাদের এটা ঠিক হচ্ছে না। দুর্ণীতি করে আমরা বিশ্ববাসীর কাছে যে খেতাব পেয়েছি তা আমরা হারাতে চাই না। কোনো ভাবেই আমরা বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিত হতে পারছিলাম না। তারা আমাদের চিনত দুর্নীতিবাজ হিসেবে, সেখানেও হাত পড়েছে সরকারের।
বিগত বছরগুলোতে দেখেছি এক সরকারকে ক্ষমতায় এসে অন্য সরকারকে দুর্নীতিবাজ হিসেবে গালাগাল করতে। কিন্তু কেউই নিজেদের দুর্ণীতিবাজ হিসেবে আখ্যা দেয়নি। এখন কি দেখছি, যারা অন্যদের দুর্নীতিবাজ বলত তাদের বেশিরভাগ এখন দুর্নীতির অভিযোগে লাল দালানে। ওদের জন্য আমার সহানুভূতি, আহা! তোমাদের সুকর্মের জোরেই দেশটা দুর্নীতিতে শীর্ষ স্থানে ছিল। তোমরা এখন ময়দানে নেই। দেশটা কিভাবে এখন শীর্ষ আসনটা ধরে রাখবে। দিনদিন রাজনীতির ময়দান [শুধু রাজনীতি নয় আরো অনেক ময়দান] খালি হয়ে যাচ্ছে। যেভাবে ধরপাকড় হচ্ছে তাতে করে আর বেশি দিন দুর্নীতিবাজ নেতারা লাল দালানের বাইরে থাকতে পারবে না। দুর্নীতিবাজদের ধরতে ধরতে শেষ পর্যন্ত না দেশ নেতা শূন্য হয়ে যায়। লোম বাছতে গিয়ে যদি কম্বল উজাড় হয়ে যায় তাহলে তো আনন্দের কথা। কম্বল আর গায়ে দিতে হবে না।
আমাদের জানাশোনার গন্ডি বাড়ছে। আমরা নতুন নতুন প্রবাদ বাক্য, উপমা, অলঙ্কার ইত্যাদিতে পূর্ণ হচ্ছি। দুর্নীতিবাজদের ধরা না হলে এগুলো আমাদের জানা হতো না। এই যেমন, বনখেকো, বনভক্ষক, বনের রাজা শামসু..., তেইল্যাচুরা। আমাদের প্রজন্মরা এখন শিখবে ‘আমাদের দেশে এক বনখেকো ছিল। তার নাম গণি... [আমাদের দেশে এক গরীব কৃষক ছিল। নাম ছিল তার গণি মিয়া-এর বদলে শিখবে]।
বর্তমান সরকার আরেকটা খারাপ কাজ করছে যা বেশিরভাগ সরকারী চাকরিজীবীদের অভ্যাস খারাপ করে দেবে। এই সরকার এত জায়গায় নজরদারি করছে যে তাদের রাতের ঘুম শিকেয় উঠেছে। অফিসে টেনশনে কাজ করতে হয়, নাজানি কখন গ্রেফতার। এই আতঙ্কে রাতের ঘুম চোখ থেকে উধাও। দিনের বেলা সারাদিন ঢুলু ঢুলু চোখে কাজ করা যায়? অফিসে দেরি করে আসা, ঘণ্টাধরে খবরের কাগজ পড়া, ক্যান্টিনে বসে আড্ডা দেয়া, ৪টা বাজতেই বাসার উদ্দেশে বের হয়ে পড়া আর এর ফাকে একটু কাজ করা এই ছিল কিছুদিন আগ পর্যন্ত বেশিরভাগ সরকারি চাকরিজীবীদের কাজের ধরন। এখন তাদের এতোদিনের পুরনো অভ্যাসটা পাল্টেছে। এতে তাদের কষ্ট হচ্ছে খুব। সরকারের কি উচিত হচ্ছে ওই আরাম পিয়াসীদের আরামে হাত দেয়া। তারা যে মনে মনে সরকারকে অভিশাপ দেবে। এগুলো ঘাড়ে নেয়ার কি দরকার।
আর এসবের কারণেই তো আমরা শীর্ষ দুর্নীতিবাজ-এই খেতাবটা হারাবো। আমরা এখন খেতাব হারানোর আশঙ্কায় আছি।
বলা হয়, স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা আরো কঠিন। এখন দেখছি ওই জায়গাটা দখল করে নিচ্ছে ‘খেতাব অর্জনের [শীর্ষ দুর্নীতির খেতাব] চেয়ে খেতাব রক্ষা করা আরো কঠিন’ কথাটি।

২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইতিহাসের সেরা ম‍্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৪



বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত‍্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×