অস্থির চোখে এদিক- ঐদিক কয়েকবার তাকিয়ে আবার পঞ্জিকার দিকে মনোযোগ দিলেন হায়দার আলী। মিনিট বিশেক পরে তাকালেন ননী পাটোয়ারীর দিকে,, বুঝলি ননী, আর বোধয়য় হবে না, অনেক চেষ্টা করে দেখলাম কিন্তু এর কোনো সমাধান দেখছি না, এইবার বুঝি আমাদেরকে এই জায়গা ছেড়ে চলে যেতে হবে,, তার পঞ্জিকাটা একটা ছোট্ট কাঠের বাক্সে রেখে তালা মেরে দিলেন হায়দার আলী। ননী মনমরা হয়ে বসে ছিল, রাগে আর ক্ষোভে তার মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছিল না,, শুধু ভাবতে থাকলো, এতোগুলো বাচ্চার কি হবে,,কে দেখবে তাদেরকে, কথাগুলো ভাবতে ভাবতে ননীর চোখে পানি এসে গেল,,, সে যখন অনেক ছোট ছিল তখন থেকেই, তার বা-মামা কে তা সে জানতো না, বস্তির অলিতে-গলিতে ননীর বেড়ে উঠা, যে মহিলাটা তাকে বুকে আগলে রেখেছিল, ৭ বছর বয়সে সে মহিলাটা খুন হয়, সে থেকে ননী একা, বড্ড একা,, বস্তির আবর্জনার মতো দিন দিন সে বাড়তে থাকে, খাওয়ার মতো রুটি ছিলনা তার, থাকার মতো জায়গা ছিল না, কথা বলার মানুষ ছিল না সেদিন,,, এই রাস্তার আবর্জনাটাকে বুকে টেনে নিয়েছিলেন হায়দার আলী। নিজের ছেলের মতো তাকে বড় করে তুলেছেন তিনি,, শুধু তাকেই নয়, আরো জনা পঞ্চাশেক বাচ্চাকে এভাবেই বুকে আগলে রেখেছেন হায়দার আলী। কোর্ট থেকে অর্ডার এসেছে কালকের মধ্যেই জায়গা খালি করতে হবে,,, ননী জানে না কালকে তারা কোথায় গিয়ে উঠবে, কার কাছে থাকবে,,,শুধু এতোটুকুই জানে, তাদের মাথার উপর একটা ছায়া আছে, ছায়াটার নাম হায়দার আলী, তিনি কিছু না কিছু করবেনই,,,
সবাই আগে আগে হাটছে, কারো মুখে কোনো শব্দ নেয়,, সবার পেছনে হায়দার আলী, তার ডানহাতের মুঠোয় তার বাবার দেওয়া পঞ্জিকা,, তিনি একবার পেছনে ফিরে বাড়িটার দিকে শেষবারের মতো তাকালেন, তারপর তার পঞ্জিকাটার উপর চোখ নামালেন,,, তাতে তার বাবার হাতের বড় বড় অক্ষরে লেখা, ' মানুষ মানুষের জন্য' লেখাটি পড়ে তার চোখ জোড়া ভিজে গেল,,তিনি সামনের দিকে এগোতে থাকলেন, আর একবারও পেছনে ফিরে তাকালেন না, একবারও না,,,