somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্লোজ আপ কাছে আসার সাহসী গল্প

৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

উড়ু উড়ু মন নিয়ে স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রেখেছিল সৌরভ, দিন তার ভালোই যাচ্ছিল,, ক্লাস, বন্ধু-বান্ধব, আড্ডা সবকিছু নিয়ে সে এতোটাই মেতে ছিল যে সে বুঝতেই পারে নি কখন জীবনের একটা বছর শেষ হয়ে গিয়েছিল,, আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি যুদ্ধ শুরু হলো, তবে এইবার সে কেন্ডিডেট না, ক্যাম্পাসের বড় ভাই। কাল ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের পরীক্ষা, সকালে ঘুম থেকে উঠতেয় বন্ধু রাজ্জাকের আবদার তার দূরসম্পর্কের এক আত্মীয় আসবে পরীক্ষা দিতে, তাকে স্টেশন থেকে আনতে সৌরভকেই যেতে হবে, কারন সে অসুস্থ,, কি আর করা, অনিচ্ছা সত্ত্বে ও সে বাস স্টেশনে গিয়ে বসে আছে,,রাজ্জাক তাকে একটা নাম্বার দিয়ে বলেছে, এইটা মিতুর নাম্বার, স্টেশনে গিয়ে ওকে কল দিস, আমি জানাই দিব। সৌরভ ইতিমধ্যে একবার মিতুর সাথে কথাও বলে ফেলেছে, কিন্তু আওয়াজের কারনে কথা বিশেষ কিছু নি, শুধু জেনে নিলো যে, আপনার আর কতোক্ষন লাগবে,,মিতু জানালো সে ঠিক বুঝতে পারছে না, সুপারভাইজার জানালো আরো ১৫-২০ লাগবে। সেই ১৫-২০ মিনিট পার হয়ে অলরেডি আরো ১৫-২০ মিনিট হয়ে গেল,,

আর এই দিকে তো সৌরভের মাথা তেলে-বেগুনে আগুন হয়ে যাচ্ছে,,,সে চিন্তা করলো মেয়েটাকে কিছু কড়া কথা শুনাবে,, ঠিক তখনই বাস এসে দাড়ালো কাউন্টারের সামনে, সৌরভ এগিয়ে গিয়ে কল করবে এমন সময় তার ফোন বেজে উঠলো! মিতু সামনে থেকেই বলে উঠল,,সরি ভাইয়া আপনাকে অনেক্ষন দাড় করিয়ে রাখলাম,, সৌরভ কি বলবে বুঝে উঠতে পারছিল না, অনেক কষ্টে মুখ খুললো, আরে ও কিছু না! চলেন,,মিতুর ব্যাগটা হাতে নিয়ে হাটা দিল সে, যদিও মিতু দিতে চাইছিলো না,,

বাসে পাশাপাশি সিটে বসেছিল ওরা, সৌরভ কি বলবে বুঝতে পারছিল না কিন্তু মিতু ননস্টপ বলেই যাচ্ছিল, জানেন ভাইয়া, আমি না কিচ্ছু পড়ি নাই, পরীক্ষায় গোল্লা পাবো,, আরো কতো কি,, সৌরভের ভালোই লাগছিল,, কেন সে নিজেও জানে না,, ক্যাম্পাসে পৌছেঁই সৌরভ মিতুকে হলে ওর বান্ধবীর রুমে নিয়ে গেল, মিতুকে বললো তারাতারি ফ্রেশ হয়ে আসতে, ডাইনিংয়ে এক সাথে খেতে যাবে,,

সবাই একসাথে লাঞ্চ করার পর মিতুকে হলে গিয়ে রেস্ট নিতে বসে সৌরভ চলে আসলো, যদিও তার ইচ্ছা করছিল মিতুর সাথে আরো কিছুক্ষণ থাকতে,, সৌরভ নিজের রুমে এসে খাটের এক কোণায় বসে বসে গভীর চিত্তে ভাবছিলো,, বাসে মিতুর পাশে বসে থাকা সে ক্ষণের কথা,, কোনো রকম জড়োসড়ো হয়ে সিটে বসে ছিল সে! পাগল মেয়েটা কত্তকথা বলে,,সৌরভকে তো কতো নির্দ্বিধায় বলেই ফেললো, ভাইয়া আপনার নাকটা বোছা কেন?,, কথাগুলো ভাবতে ভাবতে সে নিজে নিজেই হেসে উঠলো,,এম সময় সৌরভের ফোন বেজেঁ উঠলো,,, হ্যালো, আমার না একদম রেস্ট নিতে ইচ্ছে করছে না, আপনি যদি ফ্রি থাকেন তাহলে আমাকে আপনাদের ক্যাম্পাসটা একটু ঘুরে দেখান না, প্লিস,,

এভাবেই শুরু হলো তাদের কাছে আসা,,আস্তে আস্তে একে অন্যকে জানা, হাসি- ঠাট্টা কখন যে পরীক্ষা শেষ হয়ে গিয়ে মিতুর চলে যাওয়ার সময় হলো সৌরভ টেরই পেল না,, মিতু সৌরভকে রেল স্টেশনে দিয়ে আসার অনুরোধ জানাতেই সৌরভের অতৃপ্ত হৃদয়ে খুশির ঢেউ খেলে গেল,,রেল স্টেশনে গিয়েই মিতুকে বসিয়ে সে টিকেট আনতে কাউন্টারে গেল, কিন্তু হঠাৎ তার মনটা খারাপ হয়ে গেল, না সে কিছুতেই মিতুকে এখন ছাড়বে না, কিছুতেই না,, মিতুর কাছে গোমরা মুখে এসে বললো টিকেট শেষ, যদিও টিকেটের অভাব ছিল না,,, মিতুকে বললো চল, বাস স্টেশনে যাই,,রিক্সায় চড়ে রওনা দিলো বাস স্টেশনের দিকে, রিক্সায় সৌরভ কোনো কথাই বলতে পারলো না, তার মনটা বেকুল হয়ে উঠল মিতুকে কিছু একটা বলার জন্য কিন্তু সাহসে কুলাচ্ছিল না, আশ্চর্জনকভাবে মিতুও খুব একটা কথা বললো না, বাস স্টেশনে এসে ও ইচ্ছা করে ৩ ঘন্টা পরের টিকেট কাটলো সৌরভ,, মিতুকে বললো, বাস ছাড়তে আরো তিন ঘন্টা লাগবে,,, পাশেই একটা সুন্দর পার্ক আছে, চল তোমাকে শেষ বারের মত ঘুরিয়ে নিয়ে আসি,, পার্কে ঘাসের সবুজ চত্বরে দু জন পাশাপাশি বসলো,, মিতু বললো, আপনি আমাকে অনেক মিস করবেন, তাই না? আমিও কিন্তু আপনাকে মিস করবো, তবে সবসময় না মাঝেমাঝে, কথাটা বলেই সে হেসে উঠল,,কতো সুন্দর সে হাসি, অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সৌরভ, সে কি পারবে এই মায়াবী হাসিটা ভুলে যেতে, সে কি পারবে এই মেয়েটাকে ছেড়ে ভালো থাকতে!! জানে, সে পারবে না, তার মনের কথা সাহস করে মিতুকে বলতেই হবে আজ,যদি আজ বলা না হয় তাহলে কোনোদিনও আর বলা হবে না,, সৌরভ মাথা নিচু করে হাতে কিছু লম্বা লম্বা ঘাস নিয়ে মনের অজান্তেয় সেগুলো পেছিয়ে একটা রিং বানালো,,মিতু সেটা খেয়াল করেও কিছু না বললেও তার বাম হাতটা এমনভাবেই রাখলো যেন সে চাচ্ছে সৌরভ রিংটা তাকে পরিয়ে দিক,, সৌরভ ঠিকই মিতুর হাতের উপর আলতো পরশ বুলিয়ে রিংটা তাকে পরিয়ে দিল,,সে মিতুর চোখের দিকে তাকাতে পারছিলো না, তার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে শুরু করলো,, আপনি কি আমাকে কিছু বলতে চাচ্ছেন? দেখুন আমার থেকে বেশি কিছু এসপেক্ট করা আপনার উচিত হবে না,,মিতুর কথাটা শুনে সৌরভের মাথায় বাজ পড়লো,,সে মিতুর দিকে সাহস করে চোখ তুলে তাকালো,, ভালোবাসার ছোয়াঁয় ক্ষতবিক্ষত সে চোখ!

জানিনা আজকের পর আমাদের আর কখনো দেখা হবে কিনা,, আমার জীবনে এর আগে কখনো এমন হয়নি,,কারো জন্য আমার মনে এতটা মায়া কাজ করেনি,, আমার জীবনের বিগত ২৪ টা ঘন্টাকে আমি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই,,বলছি না আমাকে ভালোবাসতেয় হবে, শুধু এভাবে পাশে থেকো সারাটি জীবন,, সৌরভের কোনো কথার উওর মিতু তখন দিতে পারেনি,, শুধু গাড়ি ছাড়ার সময় একটি বার জানালা দিয়ে সৌরভের দিকে বিষন্নদৃষ্টিতে তাকালো,,গাড়ি চলতে শুরু করলো, দাড়িঁয়ে রইল সৌরভ, এক মুহুর্তের জন্য সৌরভের মনে হলো তার কলিজাটা কেউ ছিড়ে নিয়ে যাচ্ছে, নিথর হয়ে পাথরের মত দাড়িঁয়ে রইলো সে,,,

কি হবে এর পরের গল্প,, সৌরভ কি পাবে মিতুকে?

৩ মাস পরের কথা,, একুশে বই মেলায়,, মিতু সৌরভের হাত ধরে টানতে টানতে একটা বই স্টলের দিকে নিয়ে গেল,,সৌরভকে একটা বই দেখিয়ে বললো, ঐ বইটা আমার চাই,,,সৌরভ বইটা হাতে তুলে নিল,, সবুজ মলাটের বইটিতে লেখা ছিল,,,
ক্লোজাপ কাছে আসার সাহসী গল্প!
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×