পালাও
যে যেদিকে পারছে ছুটছে। পিতৃপ্রদত্ত প্রাণটা আর সাথে মুল্যবান যা পারা যায় তাই নিয়ে আপাতত খান সেনাদের থেকে যতটুকু দূরে যাওয়া যায় তার চেষ্টা। গ্রামের পর গ্রাম খালি।আর যারা ছুটতে গিয়ে খান সেনার রাইফেলের আওতায় পড়েছে তারা মাটিতে শুয়ে আছে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় লাল ছোপ নিয়ে। অনেকে আবার যেতে পারেনি বিশেষত মেয়েরা। যারা প্রথম গুলিতে মারা যায়নি তাদের জন্য অপেক্ষায় রয়েছে বীভৎস মরন।মনে মনে ভাবে রাজাকার মতিন। এমন সময় চারিদিকে হাসির রোল উথল।মতিন ঘুরে সেদিকে এগিয়ে গেল ব্যাপারটা দেখার জন্য।কাউকে ঘিরে জটলা পাকিয়ে খান সেনারা হাসাহাসি করছে। মাঝখানে পরে বেচারা সেলিম এমন ভাবে ঠক ঠক করে কাপছে যে ঠিকমত দাঁড়াতে পারছে না।
"শালা ভীতুর ডিম একটা, খান সেনারা ধরেছে বলে কি লুঙ্গি ভিজিয়ে ফেলতে হবে" মনে মনে ভাবে মতিন।
মতিন জটলা থেকে দূরে সরে এল। সবসময় মোজাফফর স্যারের আশেপাশে থাকতে হবে আর স্যারকে খুশি রাখতে হবে।
এমন সময় দুজন খান সেনা কবিরকে ধরে নিয়ে এল। মতিন মনে মনে খুশি হল। শালা পাকিস্তানের নামে বহুত খারাপ খারাপ কথা বলে আর এর আগে নাকি লুকিয়ে মুজিবুরের ভাষণ শুনতে গিয়েছিল।
"স্যার এ্যা মুক্তি হ্যায়" কবিরকে দেখিয়ে মোজাফফর স্যারকে বলল মতিন।
কিন্তু কবিরের চোখে ভয়ের লেশমাত্র দেখতে পেলনা মতিন। কবির কেমন যেন নির্লিপ্ত চোখে চারদিক ঘুরেফিরে দেখছে। জুলেখার উপর চোখ পরা মাত্র কবিরের চোখে ভয়ের ছায়া দেখতে দেখতে পেল মতিন।
"ও এই ব্যাপার" মনে মনে ভাবল মতিন।
মতিনের মনে একটা শয়তানি বুদ্ধি খেলে গেল। সে এগিয়ে মোজাফফর স্যারের কানে কানে কিছু বলা মাত্র স্যার মুচকি হাসল। আসলেই ভাল বুদ্ধি।
"এ উল্লুকে পাঠ্যাকে ভি ইদার লেআও" সেলিমকে দেখিয়ে বলল মোজাফফর। আদেশ যথারীতি পালিত হল।
সেলিম আর কবিরকে সামনে রেখে জুলেখাকে বুকে টেনে নিল মোজাফফর। মুহূর্তে দৌড়ে আসার চেষ্টা করল কবির। সাথে সাথে অন্তত পনেরটা বুলেট কবিরকে দুহাঁটু ভেঙ্গে বসিয়ে দিল।
তারপর স্যার তার ইউনিফর্ম খুলে জুলেখার উপর ঝাপিয়ে পরলেন।
পরমুহুর্তে মোজাফফর স্যার তার পিঠে থুথুর স্পর্শ পেলেন। চমকে পিছনে তাকিয়ে তিনি দেখতে পেলেন সেলিমের ঠোঁটে থুথু লেগে আছে।
পরক্ষনেই মোজাফফর একটা সত্য আবিস্কার করলেন আর কেঁপে উঠলেন।
ভয়ে।