somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পিশাচিনী (পর্ব ১-৪)

২৭ শে জানুয়ারি, ২০০৯ বিকাল ৫:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পিশাচিনী

এক.
মাইক্রো থেকে নেমে আশেপাশে তাকাতেই ইফতির মনটা ভালো হয়ে গেলো।
মঞ্জু আংকেল মাইক্রো দেখে এগিয়ে এলেন। ততণে মা মাইক্রো থেকে নেমে পড়েছে।
হাসি হাসি মুখে মঞ্জু আংকেল বললেন, ‘ভাবী সাহেবা, ভালো আছেন?’ বলে তিনি উত্তরের অপো করলেন না। মাইক্রো থেকে সদ্য নামানো বিরাট সুটকেস দুটো দু’ হাতে নিয়ে প্রকাণ্ড শরীর দুলিয়ে তিনি সামনের দিকে এগিয়ে গেলেন।
বাড়ির গেটের ভেতরে ঢোকার আগে একবার পেছনে ফিরে তাকিয়ে হাসিমুখে বললেন, ‘ভাবী সাহেবা, আপনারা আসুন।’
মঞ্জু আংকেলের পেছনে পেছনে ইফতি আর মা ঢুকে গেলো বাড়ির ভেতরে।
বাড়িটা ইফতিরও পছন্দ হলো। একতলা বাড়ি।
গেটের ভেতরে বেশ খানিকটা খোলা জায়গা।
বাড়িটা অনেক দিন কেউ ব্যবহার করেনি দেখে বোঝার কোনো উপায় নেই। শুধু সামনের বাগান আগাছায় ছেয়ে আছে। তাছাড়া চারদিক পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন।
মায়ের মুখও বেশ প্রসন্ন। ইফতি বুঝতে পারলো, মায়েরও বাড়িটা পছন্দ হয়েছে।
মা বললো, ‘মঞ্জু ভাই, বাড়িটা পছন্দ হয়েছে আমার। আর এ যে দেখছি আপনি এক্কেবারে পরিষ্কার তকতকে ঝকঝকে করে রেখেছেন।’
‘আর সময় পেলাম কোথায় ভাবী সাহেবা?’ মঞ্জু আংকেল মায়ের কথার জবাব দেন। ‘সুযোগ করে আর একটু ঠিক করতে হবে। দেখি অফিসের রহমানকে বলে।’
বাড়িতে ঘর মোট তিনটে। দুটো কে শোবার ঘর বানানো হয়েছে। একটি হবে ড্রয়িং।
ইফতি যে রুমটা পেলো সেটার সাথে লাগোয়া বারান্দা দেখে ইফতির মন আনন্দে নেচে উঠলো।
হঠাত্ ইফতির একটা কথা মনে হতেই ভয়ে শির শির করে উঠলো তার শরীর। একটা মেয়ে এই বাড়িতে ফাঁস নিয়ে মরেছে। কোন ঘরে মেয়েটা মরেছে?
ইফতি মাকে জিজ্ঞেস করলো, ‘মা, মেয়েটা কোন রুমে ফাঁস নিয়েছিলো?’
শুনে মার মুখটা হঠাত্ চিমসে গেলো। পরণেই তিনি হেসে উঠলেন। বললেন, ‘তোর মঞ্জু আংকেলকে জিজ্ঞেস করলেই পারিস। তিনি জানেন বোধহয়।’ ইফতি মঞ্জু আংকেলের দিকে ফিরে তাকালো। মঞ্জু আংকেল আঙ্গুল তোলে যে ঘরটা দেখালো সে ঘরটাতেই থাকবে বলে ইফতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
‘কি খোকা, ভয় পেলে নাকি?’ হাসি হাসি মুখে মঞ্জু আংকেল ইফতির দিকে তাকালো। ‘ঐ রুমটাতে থাকবে বলেই তো সিদ্ধান্ত নিয়েছো, না? গিয়ে দেখো, মেয়েটা হয়তো এখনো সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলে আছে। হাঃ হাঃ হাঃ।’
মঞ্জু আংকেল তার ইয়া বড় শরীর কাঁপিয়ে হাসতে লাগলেন।
মাও আংকেলের সাথে প্রথমে হাসলেন।
তারপর বললেন, ‘মঞ্জু ভাই, ছেলেদের এভাবে ভয় দেখানোটা কি ঠিক হচ্ছে?’
মঞ্জু আংকেল শেষ ব্যাগটা ঘরের ভেতর ঠেলে দিতে দিতে বললেন, ‘ভয়ের কী হলো ভাবী সাহেবা? মানুষ মরে ভূত হয় জানেন না? এখন হয়তো মেয়েটা নেই কিন্তু ভূতটা থাকতে দোষ কোথায়?’
মঞ্জু আংকেল এমনভাবে কথা বলছেন যেন ইফতির রুমে ভূত থাকাটাই স্বাভাবিক। না থাকাটা বিরাট একটা অন্যায়।
মা ব্যাগ গোছগাছ করছেন। তিনি আর একটা সুটকেস খুলে কাপড় বের করতে করতে বললেন, ‘হ্যাঁ, অবশ্যই দোষ আছে। কারণ ভূত বলে যে কিছু নেই তা আপনি ভালো করেই জানেন। যার অস্তিত্ব নেই তার থাকাতে অবশ্যই দোষ আছে।’
মায়ের কথা শেষ হতে মঞ্জু আংকেল মাথা, শরীর দুলিয়ে আগের চেয়ে আরো জোরে হাসতে লাগলেন। যেন মা খুব মজার কথা বলেছে!
ইফতি অবশ্য মার কথার মাঝে সত্যতাই দেখছে। মার কথা শুনে সে বরং বুকে কিছুটা সাহস পেয়েছে। সে তার রুমের দিকে হাঁটা দিলো।
তাই দেখে হঠাত্ মঞ্জু আংকেল তার হাসি থামিয়ে দিলেন। ইফতিকে ডাকলেন, ‘আরে খোকা কোথায় যাও? শুনো, রাতে কী খাবে বলে যাও। আমি টিফিন করে নিয়ে আসবো।’ তারপর মার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘ইচ্ছে ছিলো, আপনাদের বাসায় নিয়ে যাওয়ার, কিন্তু আপনারা কান্ত তাই খাবার বাসায় দিয়ে যাবো বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
মা বললো, ‘কী দরকার ছিলো? আমাদের সাথে সব কিছু আছে আমরা রান্না করেই খেতে পারতাম।’
মঞ্জু আংকেল কিছু বললেন না। খানিক চুপ থেকে বললেন, ‘তাহলে ভাবী সাহেবা, এই কথাই থাকলো। আমি এখন যাই।’
কথা শেষ করে মার কথার কোনো অপো করলেন না তিনি। চলে গেলেন।


দুই.
ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই মা বাসাটা গুছিয়ে ফেললেন। এবং আরো আধ ঘণ্টার মধ্যে তিনি নিজে পরিষ্কার হয়ে ইফতিকে ডাকলেন। ইফতি তার রুম গুছাতে ব্যস্ত। তার প্রয়োজনীয় জিনিস সে গুচ্ছাচ্ছে। একটা ওয়্যারলেস সেট তৈরি করার চেষ্টা করছে ইফতি। তাছাড়া আরো বেশ কয়েকটা প্রোজেক্ট দাঁড় করিয়ে রেখেছে সে আধাআধিভাবে। সময়ের অভাবে করতে পারছে না।
মার রুমে ঢুকে ইফতি দেখলো মা বসে আছে।
ইফতিকে দেখে উঠলেন তিনি।
রান্নাঘর থেকে দু’ মগ কফি নিয়ে বারান্দায় গিয়ে বসলো দুজন।
‘জার্নির পর কফি খেলে বেশ ফ্রেশ লাগে।’ মা বললেন। ‘ভালো কথা, বাসাটা তোর পছন্দ হয়েছে, ইফতি?’
‘খুব হয়েছে।’ ইফতি জানালো। ‘সত্যি বেশ পছন্দ হয়েছে।’
‘কফি খেয়ে এলাকাটা একটু ঘুরে আয়।’ কফির মগে চুমুক দিয়ে বললেন মা। ‘পাশেই দেখলাম খেলার মাঠ। সন্ধ্যা হতে এক ঘণ্টার মতো বাকি আছে এখনো। আশেপাশের দু’একজন সমবয়সী বন্ধুর সাথে পরিচয় হয়ে আয়।’
মায়ের কথা শেষ হতেই কফিতে ঘন ঘন চুমুক দিয়ে মগ রেখে উঠে দাঁড়ালো ইফতি।

গেট থেকে বের হয়ে মাঠের দিকে এগিয়ে গেলো। ছেলে-মেয়েরা যে যার মতো খেলছে।
ইফতি মাঠের কাছে যেতেই একজন তার দিকে এগিয়ে এলো।
‘এলাকায় নতুন এসেছো বোধহয়।’ ছেলেটা নিজ থেকেই জানতে চাইলো। ‘দেখলাম গাড়ি করে একটু আগে এলে।’
‘ঠিকই বলেছ।’ ইফতিও সহজভাবে কথা বলার চেষ্টা করছে। ‘আজকেই এসেছি আমি। আমার নাম ইফতি হাসান।’
ইফতি নিজের হাত ছেলেটির দিকে এগিয়ে দিলো।
ইফতির সাথে হাত মেলাতে মেলাতে ছেলেটি বললো, ‘আমার নাম অয়ন।’
ওরা দুজন এমনভাবে আলাপ করছে দেখে, যারা দূরে দাঁড়িয়ে ওদের কথা শুনতে পাচ্ছিলো না তারা, এগিয়ে এলো দুজনের কাছে।
দেখতে দেখতে সবার সাথেই ইফতির পরিচয় হয়ে গেলো।
ব্যাটিং প্যাড পরে হাতে ব্যাট নিয়ে যে ছেলেটা দাঁড়িয়ে আছে ওর নাম শুভ্র। শান্তশিষ্ট ধরনের। কথা বলে মেপে মেপে। চোখে ভারী ল্যান্সের চশমা।
পাশে হাতে গ্লাভস পরা টিঙটিঙে ছেলেটির নাম রন্তু। আর বেটে মোটা ছেলেটি, যে কিনা কথায় কথায় কৌতুক করে সবাইকে হাসাতে চেষ্টা করে তার নাম কামরুল।
ওদের দলে একমাত্র ময়ে বন্ধু নাবিলা।


তিন.
‘বুঝলে, আমরা যে কেউ ইচ্ছে করলেই এ কাজটা পারি না। কিন্তু ও ঠিকই পারে।’ বললো অয়ন।
‘পারে মানে, ও করেছেও এরকম।’ কামরুল বলতে লাগলো। ‘তোমাকে উদাহরণ দিচ্ছি। তাহলেই বুঝতে পারবে। একবার কি হলো বলছি। আমরা গিয়েছি গোকুল। গোকুলে কী আছে জানতো? ওখানে বেহুলার বাসর ঘর। রিকশা থেকে নেমে যেই মাত্র পায়ে হেঁটে সামনে সামান্য একটু গেছি দেখি ইয়া বড় এক সাপ!’ কামরুল দু’হাত দু’দিকে প্রসারিত করে দেখালো। ‘আমরা তো ভয়ে অস্থির। লাঠিসোঁটার জন্য দৌড়দৌড়ি করছি। কিন্তু ও কি করলো জানো?’ আবার বলতে শুরু করেছে কামরুল। ‘বললো, তোমরা কেউ সাপটাকে মারবে না। ও তোমাদের কোনো তি করেনি। বলেই সাপটাকে ধরে নিয়ে পাশের জঙ্গলে ছেড়ে দিলো।’
বলতে বলতে কামরুল উত্তেজিত হয়ে পড়লো।
অয়ন বললো, ‘ওর সাথে নিশ্চয় তারা আছেন।’ বলেই কামরুল নিজের নাকে কণিকা আর বৃদ্ধাঙ্গুলির সাহায্যে চিমটি কাটলো। কে নাকি তাকে বলেছে, কণিকা আর বৃদ্ধাঙ্গুলির সাহায্যে নিজের নাকে চিমটি কাটলে ভূত কিছু করতে পারে না।
এতোণ চুপ করেছিলো শুভ্র, অয়নের কথা শুনে বললো, ‘ভূত বলে কিছু নেই অয়ন। তুই তোর কথা ফিরিয়ে নে।’
শুভ্র এমনভাবে অয়নকে বললো যেন কথা ফিরিয়ে না নিলে ওকে চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে কচকচ করে। অয়ন ভয়ে ভয়ে শুভ্রর দিকে একবার, ইফতির দিকে একবার তাকাতে লাগলো।
ইফতি বুঝতে পারলো না ভূত আছে কি নেই তা নিয়ে এতো সিরিয়াস হবার কী আছে?
বুঝা গেলো একটু পরেই। জানা গেলো, শুভ্র প্রমাণ করেছে ভূত বলতে কিছু নেই।
ঘটনা হলো এই, একবার শুভ্র কার সাথে বাজি ধরে ভূতের সাথে লড়েছে।
পরে দেখা গেছে যারা ওর সাথে বাজি ধরেছে তারাই শুভ্রকে ভয় দেখানোর জন্যে ভূত সেজেছিলো! শুভ্র অবশ্য ওদের আচ্ছা জব্দ করেছিলো।
অয়ন শেষ পর্যন্ত মীন মীন করে বলতে বাধ্য হলো, ‘আসলেই ভূত বলতে কিছু নেই!’
তখন আবার মেয়েটাকে নিয়ে কথা উঠলো। মেয়েটা যে সত্যিই একটু অন্যরকম তা একটু পরে ইফতিও বুঝতে পারলো।
মাঠের এক কোণে বসে আছে মেয়েটা। ঠিক বসে নেই, মনে হচ্ছে কোন গভীর ধ্যানে মগ্ন।
ইফতি বললো, ‘চলো মেয়েটার সাথে কথা বলে আসি।’
কামরুল বললো, ‘কাজটা কি ঠিক হবে? হয়তো এখন কোনো জিনের সাথে...’ বলতে গিয়ে কামরুল থেমে গেলো শুভ্রর দিকে চোখ পড়াতে।
শুভ্র জিনও বিশ্বাস করে না। এই শুভ্রকে নিয়ে যতো জ্বালা। ব্যাটা জিন-ভূত ঠিকই বিশ্বাস করবি। যেদিন জিন-ভূত ধরে আচ্ছা করে রাম ধোলাই দেবে তখন ঠিকই বুঝতে পারবি হাঁদারাম টিকটিকির ল্যাজ, আরশোলার ঠ্যাং, মাকড়সার ডিম কোথাকার!
মনে মনে শুভ্রকে আরো বেশ কয়েকটা গালি দিলো কামরুল।
এমন সময় শুভ্রর মোবাইল বেজে ওঠলো। ওর বাবা ওকে ডাকছে। শুভ্র চলে গেলো।
হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো যেন সবাই।
অয়ন তো মুখ ফুটে বলেই ফেললো, ‘বাঁচলাম রে দোস্ত। এই হাঁদারাম গদাই লস্করের জন্য প্রাণ খোলে দু’টা কথা বলতে পারি না।’
ইফতি মেয়েটার সাথে কথা বলতে চায় কথাটা আবার সবাইকে মনে করিয়ে দিলো।
কামরুল এবার সুযোগ পেয়েছে বলার। শুভ্র নেই। বললো, ‘ও একটা পিশাচিনী। ওর সাথে তোমার কী কথা ইফতি?’
‘পিশাচিনী! কী বলছো তোমরা?’ আকাশ থেকে পড়লো ইফতি। এই সভ্যতার যুগে একজন পিশাচিনীর দেখা পাওয়া তো চাট্টিখানি কথা নয়। তোমরা আমার সাথে গেলে আসো, নইলে আমি একাই গেলাম।’
কথা শেষ করে ইফতি সামনের দিকে পা বাড়ালো।
ওরা তো আর ইফতিকে চেনে না। চিনলে ঠিকই এতো তর্ক করতো না। ইফতি রহস্যের গন্ধ পেলে যে আর থেমে থাকে না, একথা তো এখনো ওর নতুন বন্ধুরা জানে না।
ইফতি একা একা যাচ্ছে দেখে তার সাথে যোগ দিলো নাবিলা। তারপর অয়ন ও রন্তু এবং সবার শেষে কামরুল।


চার.
‘আমার নাম ইফতি হাসান। তোমাদের এলাকায় নতুন এসেছি। তোমার সাথে পরিচিত হতে এলাম।’ ইফতি বললো মেয়েটাকে উদ্দেশ্য করে।
‘আমার নাম পিশাচিনী। এলাকার দুর্ভাগা বাসিন্দা।’ মুখে হাসি টেনে বললো মেয়েটা।
মেয়েটার কথা শুনে ইফতি হা হয়ে গেলো। বলে কি মেয়েটা! তার নাম নাকি পিশাচিনী?
‘আমার মনে হয় তোমার আর একটা সুন্দর নাম আছে যেটা আমি শুনতে চাই।’ বললো ইফতি।
‘ওরা তোমাকে বলেনি যে আমি একটা পিশাচিনী?’ বলে মেয়েটা এমনভাবে হেসে উঠলো যে, ইফতির গা কাটা দিয়ে ওঠলো।
কামরুল দু’পা পিছিয়ে গেলো ভয়ে।
মেয়েটার দিকে ভালোভাবে তাকালো ইফতি।
শ্যামবর্ণ গায়ের রং।
মুখের কাটিং কিছুটা লম্বাটে।
চোখ ও ভ্রু টানা টানা।
মাথার চুলগুলো বেশ লম্বা ও ঘন কালো।
পুরো মুখের অবয়বটা মনে হয় কোনো একটা ছবির পটের মতো। দেবী প্রতিমার মতো মুখের গঠন।
আর চেহারার মধ্যে একটা কাঠিন্য বিদ্যমান। মনে হয় কোনো অশরীরী আত্মা যেন তার উপর ভয় করে আছে!
ইফতি মেয়েটার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো। এবার মেয়েটাও ইফতির দিকে তাকালো। বললো, ‘অন্যের ব্যাপারে নাক গলানোর স্বভাব পাল্টাও। আমার নাম দিয়ে তোমার কোনো প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। থাকলে ঠিকই বলতাম।’
ইফতি বললো, ‘তোমাদের এলাকায় নতুন এসেছি। এলাকায় যারা আমার সমবয়সী আছে সবার সাথে আমার পরিচয় থাকবে না, এটা কেমন কথা!’
ইফতির দিকে তাকিয়ে মেয়েটা বললো, ‘আমার নাম ইশা। থাকি তোমাদের বাসার পরের বাসাটাতেই।’ কথা শেষ করে ইশা দাঁড়ালো না। হন হন করে হেঁটে চলে গেলো।
‘আস্ত ডাইনি।’ বললো কামরুল। ‘দেখলে কেমন উট পাখির মতো করে হাঁটে!’
রন্তু বললো, ‘আমার কী মনে হয় জানো? আমার মনে হয় ওর সাথে আমাদের মতো তোমারও না মেশাই ভালো।’
ইফতি একথার কোনো জবাব দিলো না। সে ভাবতে লাগলে অন্য কথা- মেয়েটার কথা।
মেয়েটা কত অসহায়! এলাকায় তার কোনো বন্ধু নেই। কারো সাথে সে প্রাণ খুলে কথা বলতে পারে না। হাসতেও পারে না নিশ্চয়।
‘বললে তো ইফতি বিশ্বাস করবে না, এ মেয়েটা গাছের সাথে কথা বলে।’ কামরুল বলতে লাগলো। ‘আমরা লুকিয়ে থেকে শুনেছি, গাছও তার কথার জবাব দেয়!’
‘কী বলতে চাইছো তুমি?’ উত্তেজিত হয়ে উঠলো ইফতি। ‘এ কথা তুমি বিশ্বাস করতে বলো আমাকে?’
‘আগেই বলেছি তুমি বিশ্বাস করবে না।’ বললো আবার কামরুল। ‘কিন্তু রন্তু আর অয়নকে জিজ্ঞেস করে দেখো।’
রন্তু আর অয়নের দিকে তাকালো ইফতি। ওরা মাথা নাড়লো। সে আশ্চর্য হয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে রইলো।
এর মানে কী!
ওরা কি ওর সাথে ফান করছে?
নাকি তাকে ধোঁকা দিচ্ছে?
কিন্তু সে তো নিজের চোখেই দেখলো, মেয়েটাকে। এই সুন্দর, দেখতে নিষ্পাপ মেয়েটার এতো গুণ অথবা দোষ?
ইফতি এসব নিয়ে ভাবার আর সময় পায় না।
সন্ধ্যা প্রায় হয়ে এসেছে। ইফতি সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসার দিকে হাঁটা ধরলো।
তার মাথায় রাজ্যের চিন্তা।
ভাবতে অবশ্য ভালোই লাগছে। নতুন জায়গায় আসার সাথে সাথেই নতুন একটা রহস্য পেয়ে গেলো। তাও আবার যে সে রহস্য নয়। আগের রহস্যগুলো থেকে যা সম্পূর্ণ অন্যরকম।
বাসায় ঢুকতে গিয়ে ইফতি থমকে গেলো। ওদের পাশের বাসাটাতেই নাকি মেয়েটা থাকে।
ইফতি বাসায় না ঢুকে একটু সামনে এগিয়ে গেলো। ওদের বাসার ঠিক পরেই উঁচু প্রাচীরঘেরা পুরানো ধাঁচের বিরাট একটি বাড়ি। [চলব]
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪


শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×