somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছিল ফরিং এর মতই আশ্চর্য রকমের সজীব

০১ লা অক্টোবর, ২০১০ রাত ১০:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাসায় বাসায় গিয়ে দাওয়াত রক্ষা এবং ঘুরে বেরানো,এই দুটো কাজ বাদ দেওয়ায় ঈদে এবার বিশেষ কোন পরিকল্পনা ছিলনা,তাই ভাবলাম আটঘাট বেধেই টিভি অনুষ্ঠানগুলো দেখা যাক।বেশ কতগুলো সংবাদপত্রের ‘ঈদ বিনোদন’ সংখ্যা(যেগুলোতে বাহারি রকমের বিষয় থাকলেও শেষ পর্যন্ত সেগুলো কোন চ্যানেলে কি দেখাবে তারই ফিরিস্তি,অর্থাৎ অনুষ্ঠানসূচি)নিয়ে বসলাম।সংগীতানুষ্ঠান,অডিও বাজারের খোঁজখবর,বিশেষ অনুষ্ঠান,টক শো,তারকাদের কর্মকান্ড,সিনেমা এবং নাটকের প্রিভিউ(বা,গল্পের সারাংশ)সব বিষয়গুলোই মোটামুটি একইরকম ছিল সবগুলোতে,শুধু একটা ‘টেলিছবি’র ক্ষেত্রে দেখা গেল দুটো পত্রিকায় গল্পটা দুইভাবে লেখা, যার একটা পড়ে টেলিছবিটাকে অদ্ভূত এবং অন্যটা পড়ে খুব সাধারন মনে হওয়া স্বাভাবিক।যেহেতু পরিচালকের কাজের সাথে আগের থেকেই পরিচয় আছে,এবং সে পরিচয় মুগ্ধতার তাই অনেক কৌতুহল এবং তার থেকেও বেশি প্রত্যাশা নিয়ে ঈদের ৩য় দিন দুপুর ২.৩০টায় এনটিভিতে দেখতে বসলাম, মাসুদ হাসান উজ্জল রচিত এবং পরিচালিত টেলিফিল্ম ‘যে জীবন ফরিং এর’।
জুন, বাংলাদেশী বাস্তবতায়,ঢাকা শহরবাসী উচ্চবিত্ত সমাজের একজন প্রতিনিধি।সুপ্রতিষ্ঠিত বয়ফ্রেন্ড(যাকে সে খুব শীঘ্রই বিয়ে করতে যাচ্ছে,এমনকি এনগেজমেন্টও হয়ে গেছে) আর চোখ বন্ধ করে চারপাশকে দেখার ‘স্বাভাবিক’ জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত এই মেয়েটির জীবনে হঠাৎ একটা বড় ঝাকুনি লাগে যখন অদ্ভুত এক যুবক তার গাড়ীতে অ্যাক্সিডেন্ট করে।বনেটের ওপর তার শুয়ে থাকা দেখে জুন ভেবেছিল বড় কোন দূর্ঘটনা হয়ত ঘটে গেছে,কিন্তু যুবক তাকে অবাক করে জানাল,‘ঘুমিয়ে পড়েছিলাম’ এবং তার এই ঘুম অনাহারের ক্লান্তিজনিত।জুন তাকে লিফট দেয়,সে এবার সীটবেল্ট বাধা অবস্থাতেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে।তাকে কিছু খাওয়ার অফার দেওয়া হলে সে খেতে চায়,‘বার্গার,স্যান্ডউইচ জাতীয় বিদেশি কোন খাবার’।সে তার বন্ধুদের অদ্ভুত কর্মকান্ডের কথাও জানায় এবং নিজেদেরকে পরিচয় দেয় দার্শনিক হিসাবে।তার বিত্তহীন দার্শনিক বন্ধুদের একজন উচ্চস্বরে বলে,‘দার্শনিকদের পাকস্থলি থাকতে নেই’।পরে আরও দুইবার জুনের সাথে তার দেখা হয়;একবার পার্কে আবর্জনা ফেলার গাড়িতে ভ্রমণরত অবস্থায়,আর একবার শহীদ মিনারে বন্ধুদের সাথে মিলে কাফনের কাপড় পড়ে,একটা ব্যানার হাতে দাড়ান অবস্থায় যাতে লেখা ছিল,‘স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই’।এই অদ্ভুত জীবনযাত্রা এবং দুর্বোধ্য কথাবার্তা জুনের জীবনে প্রভাব ফেলে।সে আস্তে আস্তে আবিষ্কার করতে থাকে বয়ফ্রেন্ডের সাথে তার যাপিত জীবনের অসারতা;যখন জুন দেখে তার বয়ফ্রেন্ড কবিতার বই গিফট পেলে খুশি হয়না,তার সব আগ্রহ শেয়ারবাজারের ওঠানামার প্রতি এবং একটা ফ্লাট কিনে সুন্দরভাবে সাজানোর পরিকল্পনা করার থেকে এই টাকা কিভাবে ইনভেস্ট করলে আরো প্রফিট হবে সেই চিন্তায় ডুবে থাকা একজন মানুষকে,পরিবর্তিত জুনের সাথে তখন স্বাভাবিক নিয়মেই দূরত্ব তৈরি হয়।সম্পর্ক চুকিয়ে দিয়ে সে ফিরে যায়,জীবনকে খালি চোখে দেখা সেই মানুষটার কাছে কিন্তু ততক্ষনে দেরি হয়ে গেছে।কবরে তৈরি করা দরজাটায় সে করাঘাত করছে,হয়ত পেয়ে যাবে সেই জীবনের খোঁজ,যে জীবন ফরিং এর।
টেলিফিল্ম বলতে আমরা যে জিনিশ দেখতে অভ্যস্ত এটা মোটেও সেরকম নয়।আমার এক বন্ধুর মতামত হল,‘এইটা এবার ঈদের একমাত্র অনুষ্ঠান যেইটা আমার ব্রেনের এন্টেনার উপর দিয়া গেছে’!অনেকেরই হয়ত এমনটা ঘটেছে।কিন্তু স্টোরি,ইউনিকনেস,আর্ট বিবেচনা করলে বলতেই হবে এটি অসাধারন একটি নির্মাণ;‘গল্প’ নয়,‘অনূভুতি’র নির্মান,আমাদের সমাজের অসারতা,ভন্ডামি এবং চিরায়ত সৌন্দর্যের প্রতি মানুষের আকাঙ্ক্ষার এক অপূর্ব কাহিনিচিত্রিক দলিল।

সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০১০ রাত ১০:৩২
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×