somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মৃত্যুঃ চিকিৎসা বিজ্ঞান , বিভিন্ন ধর্ম , গুণীজনদের উক্তি এবং সাহিত্যের আলোকে মৃত্যুক্ষণের বর্ণনা

০৪ ঠা জুলাই, ২০১৫ রাত ১২:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মৃত্যু এমন একটি সত্য যার সম্মুখীন আপনাকে আমাকে আমাদের সবাইকে হতেই হবে । তাই ভয়কে জয় করার জন্য সর্ব প্রথম জানতে হবে কি এই মৃত্যু ? মৃত্যুর সময় কেমন লাগে?

শুধু মাত্র ধর্ম নয় , বিজ্ঞান শাস্ত্র এবং প্রতিটি মানুষ বিশ্বাস করে যার প্রাণ আছে , তাকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে । এই কথাটি সর্ব স্বীকৃত । পৃথিবীর বুকে এমন কোন মানুষ নাই , যে মৃত্যুকে ভয় করে না । মৃত্যুকে ভয় করার অন্যতম প্রধান কারণ হল মৃত্যু সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান খুবই সীমিত । এই ভয়ের কারনে আমরা মানুষরা সাধারণত মৃত্যু সম্পর্কিত যে কোন লিখা থেকে দূরে থাকতে পছন্দ করি । যেহেতু আমরা সকলেই কোন না কোন সময় এই মৃত্যুর সম্মুখীন হতে হবে , আমাদের কি মৃত্যু সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞানটুকু থাকা প্রয়োজন নয় ? আজ আমরা চিকিৎসা বিজ্ঞান , বিভিন্ন ধর্ম এবং বিশিষ্ট চিন্তাবিদগণ মৃত্যু সম্পর্কে কি জ্ঞান দান করেছেন তা জানার চেষ্টা করবো ।

মৃত্যু সংজ্ঞাঃ

উইকিপিডিয়াঃ

মৃত্যু (ইংরেজি: Death) বলতে জীবনের সমাপ্তি বুঝায়। জীববিজ্ঞানের ভাষায় প্রাণ আছে এমন কোন জৈব পদার্থের (বা জীবের) জীবনের সমাপ্তিকে মৃত্যু বলে। অন্য কথায়, মৃত্যু হচ্ছে এমন একটি অবস্থা (state, condition) যখন সকল শারিরীক কর্মকাণ্ড যেমন শ্বসন, খাদ্য গ্রহণ, পরিচলন, ইত্যাদি থেমে যায়। কোন জীবের মৃত্যু হলে তাকে মৃত বলা হয়।

মেডিকেল ডিকশনারিঃ

Death is defined as the cessation of all vital functions of the body including the heartbeat, brain activity (including the brain stem), and breathing.

ধর্মে মৃত্যুর সঙ্গাঃ

সকল ধর্মে মৃত্যুর সংজ্ঞা দেয়া আছে প্রায় একই রকম ভাবে । তবে মৃত্যুর সময় আত্মার অবস্থা , মৃত্যুর পরবর্তী সময়ে আত্মার গন্তব্য এবং অবস্থা সম্পর্কে বিভিন্ন ধর্মে বিভিন্ন মতবাদ দেখা যায় । তবে মৃত্যু সম্পর্কে সকল ধর্মে সাধারণ ভাবে বলা আছে ইহকাল থেকে পরকালে গমনের প্রথম ধাপ মৃত্যু ।

চিকিৎসা বিজ্ঞানে মৃত্যুর বর্ণনাঃ

এতদিন ভাবা হতো মৃত্যুর হিমশীতল ভুবন থেকে কেউ যেহেতু ফিরে আসেনি, সেহেতু মানুষ কোনোদিন জানতে পারবে না মৃত্যুর স্বাদ; কিন্তু বিজ্ঞানীরা কেন থেমে থাকবেন! শুরু হয়ে গেছে মৃত্যুকে জানতে ব্যাপক তোড়জোড়। যদিও এখন পর্যন্ত জানা হয়েছে খুবই কম। মৃত্যু নিয়ে গবেষণা শুরু করেছেন মৃত্যু বিশেষজ্ঞ নিউইয়র্ক শহরের উইল কর্নেল মেডিকেল সেন্টারের গবেষক ড. সাম পার্নিয়া। সম্প্রতি পার্নিয়া ও তার সহকর্মীরা প্রকাশ করেছেন তাদের ৩ বছরের গবেষণার উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার। এই গবেষণা অডঅজঊ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। ইউরোপ, কানাডা ও ইউএসের ২৫টি মেডিকেল সেন্টারের ১৫০০ রোগী, যারা ‘কোমা অবস্থা’ থেকে ফিরে এসেছেন জীবনে, পার্নিয়া গবেষণা করেছেন মূলত তাদের নিয়ে।
পার্নিয়ার গবেষণা থেকে জানা যায় মৃত্যু মুহূর্তের কোনো ঘটনা নয়; হৃৎপিন্ডের কম্পন বন্ধ হলে ধীরে ধীরে জীবকোষগুলো ক্ষয় হতে শুরু করে। জীবকোষগুলো চলাচলে অক্ষম হতে থাকে আর সব ক্রিয়া বন্ধ হতে সময় লাগে ১০ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা। ওই সময়গুলোর অনুভূতি সম্পর্কে আমাদের কোনো ধারণা নেই। তবে ১০ অথবা ২০ শতাংশ মানুষ যারা ‘কোমা অবস্থা’ থেকে ফিরে এসেছেন, কিছুক্ষণ বা ঘণ্টা খানিক পর তিনি চেতন ফিরে পেয়ে কি দেখে এসেছেন সে বিষয়ে স্বকল্পিত বিবরণ দিতে পারেন। প্রায়-মৃত্যু থেকে ফিরে আসা রোগিদের অনেকে কোমা অবস্থায় নানামাত্রিক রঙের কারুকাজ দেখেছেন বলে মনে করেন। এই বিবরণ কতটা সত্য বা কতটা অলীক কিংবা মনের ভুল তা নিশ্চিত করে অবশ্য বলা সম্ভব নয়।
সাধারণভাবে মনে করা হয় মৃত্যু প্রাণীর জীবনে আচমকা এসে সবকিছু লন্ডভন্ড করে দেয়; কিন্তু চিকিৎসা শাস্ত্রে বলে মৃত হতে হলে প্রথমে হৃদয়ের কম্পন বন্ধ হতে হবে, ফুসফুস তার ক্রিয়া বন্ধ করবে, যার ফলে মস্তিষ্ক তার সব কাজ বন্ধ করে দেবে। ডাক্তার চোখের মণিতে আলো ফেললে যদি স্নায়ুর ওপর কোনো উদ্দীপনা সৃষ্টি না করে তবে তাকে মৃত বলে ঘোষণা দেয়া হয়।
মানুষ মারা যাওয়ার পর সেই মৃতদেহে কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। এই পরিবর্তন সম্পর্কে আধুনিক বিজ্ঞান কিছু তথ্য দিয়েছে। যেমন মৃতদেহের পচন ধরার পূর্ব পর্যন্ত শারীরিক কী কী পরিবর্তন হয় বা কোন প্রক্রিয়ায় মৃতদেহে পচন শুরু হয়।
চিকিৎসা বিজ্ঞারীরা বলেন, মৃত ঘোষণার অর্থ এই নয় যে, দেহের প্রতিটি কোষের মৃত্যু হয়েছে। হৃদযন্ত্র শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া বন্ধ করলে, কোষগুলো অক্সিজেন পায় না। অক্সিজেন পাওয়া বন্ধ হলে পেশিগুলো শিথিল হতে শুরু করে। পাশাপাশি অন্ত্র এবং মূত্রথলি খালি হতে শুরু হয়।
দেহের মৃত্যু ঘটলেও, অন্ত্র, ত্বক বা অন্য কোনো অংশে বসবাসকারী ১০০ ট্রিলিয়ন ব্যাকটেরিয়া তখনও জীবিত থাকে। মৃত্যুর পর দেহের অভ্যন্তরে যা কিছু ঘটে, সে সব কিছুর পেছনে কাজ করে এই ১০০ ট্রিলিয়ন ব্যাকটেরিয়া। মৃত্যুর পর সর্বপ্রথম দেহের যে পরিবর্তন আসে হলো, প্রথমে অ্যালগর মরটিস (মৃতদেহের তাপমাত্রা) ঘরের তাপমাত্রায় না-আসা পর্যন্ত দেহের তাপমাত্রা প্রতি ঘণ্টায় ১.৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট করে কমতে থাকে। লিভোর মরটিস বা লিভিডিটি- এ ক্ষেত্রে দেহের নিচের দিকে রক্ত এবং তরল পদার্থ জমা হয়। মৃতদেহের ত্বকের আসল রঙ ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়ে গাঢ় বেগুনি-নীল রঙ ধারন করে।
রিগর মরটিস- এ ক্ষেত্রে দেহ থেকে অত্যধিক ক্যালসিয়াম ক্ষরণের ফলে পেশিগুলো শক্ত হয়ে যায়। ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত এই অবস্থা থাকে। এই সময় চোখ খোলা থাকতে পারে। বেশ কিছুক্ষণের জন্য মৃতের চোখ খোলাই থাকে।
এর পর দেহে পচন ধরতে শুরু করে। রক্ত চলাচল বন্ধ হলে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের গঠন শুরু হয়, অম্লের মাত্রা বাড়তে থাকে। এর ফলে কোষগুলোতে ভাঙন ধরে। ২ থেকে ৩ দিনে দেহ পচতে থাকে। পরিপাক নালীতে থাকা ব্যাকটেরিয়া এবং আণুবীক্ষণিক প্রাণীরা দেহের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় তলপেট সবুজ বর্ণ ধারণ করে এবং তাতে গ্যাস তৈরি হয়। তার চাপে শরীরের মলমূত্র নিষ্কাশিত হয়।
পিউট্রেসিন এবং ক্যাডাভেরিনের মতো জৈবিক যৌগ শিরা-উপশিরায় ছড়িয়ে পড়লে, দুর্গন্ধ বের হতে শুরু করে। এই গন্ধই মৃতদেহের অন্যতম বৈশিষ্ট। নেক্রোসিস পদ্ধতিতে এর পর দেহের রঙ সবদিক থেকে কৃষ্ণবর্ণ ধারণ করে।
মৃতদেহের দুর্গন্ধে আকৃষ্ট হয়ে ভিড় জমায় উচ্ছিষ্ট-ভোগী পোকা-মাকড়। মৃতদেহকে খাদ্যভা-ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এ তো গেল শুধু প্রথম সাতদিনের বৃত্তান্ত। এর পর ধীরে ধীরে প্রাণহীন মৃতদেহ ক্রমে মাংস-চামড়ার খোলস ত্যাগ করে পরিণত হয় হাড় সর্বস্ব কঙ্কালে ।


ধর্মে মৃত্যুর বর্ণনাঃ

বিভিন্ন ধর্মে মৃত্যুর ক্ষণ সম্পর্কে কি ধারণা দেয়া আছে তা খুঁজতে গিয়ে একটা জিনিস নজরে আসলো যে ইসলাম ধর্মে মৃত্যু সম্পর্কে যে বিশদ বর্ণনা দেয়া আছে অন্য ধর্মে তেমন নেই । এমনটাও হতে পারে আমি মুসলমান বলেই হয়তো অন্য ধর্মে মৃত্যু সম্পর্কে বর্ণনা খুঁজে পেতে সমস্যা হয়েছে । তবে মৃত্যুর পরবর্তী জীবন নিয়ে প্রায় সকল ধর্মেই কিছুনা কিছু বলা আছে ।

ইসলাম ধর্মে মৃত্যুর বর্ণনাঃ

আধুনিক বিজ্ঞান যেমন মনে করে মৃত্যুর যন্ত্রণা ভয়াভহ তেমনই মুসলমানদের পবিত্র ধর্ম গ্রন্থ আল কোরআন এবং রাসুল (সঃ) বারবার সেই মৃত্যু যন্ত্রণার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন ।
মৃত্যুর যন্ত্রণা সম্পর্কে বলতে গিয়ে আল্লামা ইমাম সুয়ূতী রহ. বলেন: যখন আজরাঈল আ. আসবে তখন ৫০০ ফেরেশ্তা তাকে চাপ দিয়ে ধরবে। মুমিন হলে ৫০০ রহমতের ফেরেশ্তা আসবে। আর মৃত্যুর যন্ত্রণা শুরু হবে পায়ের বৃদ্ধা আঙ্গুল থেকে। এমনকি তা কণ্ঠনালী পর্যন্ত চলে আসবে।

হাদিসের এক বর্ণনায় এসেছে, মূসা আ.-এর ইন্তেকালের পর এক লোক তাকে স্বপ্নে দেখে বলল: হে আল্লাহর নবী! আপনি কী মৃত্যুর যন্ত্রণায় কষ্ট পেয়েছেন? উত্তরে মূসা আ. বললেন: আমার মৃত্যুর সময় মনে হলো কতকগুলো বিষাক্ত কাঁটা আমার কলিজার মধ্যে ঢুকিয়ে সমস্ত রগের মধ্যে পেঁচিয়ে সমস্ত লোক একত্রিত হয়ে টান দিলে যেমন কষ্ট হয়, তার চেয়ে মৃত্যুর যন্ত্রণা আমার কাছে আরো অধিক বেশি কষ্টের মনে হয়েছে।

রাসূলুল্লাহ্ সা. বলেছেন: তোমরা বনী ইসরাঈল থেকে ঘটনাবলি বর্ণনা কর। এতে কোনো ক্ষতি নেই। কেননা, তাদের মাঝে বহু বিস্ময়কর ঘটনা আছে। অতঃপর তিনি একটি ঘটনা বলতে শুরু করলেন: নবী ইসরাঈলের কিছু লোক একবার হাঁটতে হাঁটতে এক কবরস্থানে এসে পৌঁছল। তারা তারা তখন বলল : এসো আমরা নামাজ পড়ে আমাদের রবের নিকট দু’আ করি। যেন তিনি আমাদের সামনে কোনো মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করে দেন। আর সে আমাদের নিকট মৃত্যু সম্পর্কে কিছু বলে। তারপর তারা নামাজ পড়ল এবং দু’আ করল। ইতিমধ্যে একটি কবর থেকে এক ব্যক্তি মাথা তুলে বলল: হে লোকেরা! তোমরা কী চাও? নব্বই বছর আগে আমি মৃত্যুবরণ করেছি। এখনো মৃত্যুযন্ত্রণা আমার থেকে দূর হয়ে যায়নি। এখনো আমি তা অনুভব করি। সুতরাং তোমরা আল্লাহর নিকট দু’আ কর, যেন আমি (দুনিয়াতে) যে অবস্থায় ছিলাম, সে অবস্থায় তিনি আমাকে ফিরিয়ে নেন। আর সেই ব্যক্তির কপালে সিজদার দাগ ছিল।

অপর এক বর্ণনায় এসেছে, ঈসা আ. একবার এক কবরের নিকট গিয়ে বললেন: “আল্লাহর নির্দেশে জীবিত হও। (যখন লোকটি আল্লাহর নির্দেশে জীবিত হলো, তখন তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন) তুমি কে? তোমার নাম কী? তখন লোকটি বলল: আমার নাম সাম ইব্ন নূহ। তখন ঈসা আ. তাঁকে কয়েকটি প্রশ্ন করেছিলেন। তিনি তাঁকে বললেন : আপনি কি আবারও কবরে থাকতে চান, না দুনিয়াতে থাকতে চান? তিনি বললেন: হে আল্লাহর নবী ঈসা আ.! আমি যদি এ দুনিয়ায় আবার থেকে যাই তাহলে কী আগের মৃত্যুর সময় আজরাঈল যেমন আমার রূহ কবজ করেছে তেমন আবারও রূহ কবজ করবে? তখন ঈসা আ. বললেন: আপনি আল্লাহর পয়গম্বর। আপনি কেন আজরাঈলকে এত ভয় করেন? জবাবে সাম ইব্ন নূহ আ. বললেন: আপনার সাথে তো আর আজরাঈলের দেখা হয়নি এজন্য এ মন্তব্য করছেন। হে আল্লাহর নবী ঈসা আ.! আজ থকে ৪০০০ বছর পূর্বে আজরাঈল আমার রূহ কবজ করেছিল কিন্তু আমি আজও আমার মৃত্যুর যন্ত্রণাকে ভুলতে পারিনি।
হযরত আয়েশা রাযি. বলেন, ইন্তেকালের আগ মুহূর্তে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সামনে একটি পাত্রে পানি ছিলো, তিনি তাতে হাত ডুবিয়ে আপন চেহারা মুছছিলেন আর বলছিলেন, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, অর্থাৎ, নিশ্চয়ই মৃত্যুযন্ত্রণা বড়ই তীব্র।” (সহীহ বুখারী, মৃত্যু যন্ত্রণা অধ্যায়, হাদীস নং ৬১৪৫)

হিন্দু ধর্মে মৃত্যুঃ

হিন্দু ধর্মে মৃত্যুর পরবর্তী জীবন এবং পুনরুত্থান সম্পর্কে অনেক কিছুই বলা আছে । কিন্তু মৃত্যুর সময়কার বর্ণনা অথবা মৃত্যু পথযাত্রী বেক্তির শারীরিক অথবা মানুষিক অবস্থার কোন বর্ণনা ইন্টারনেটে খুঁজে পাইনি । কোন হিন্দু ভাইয়ের যদি এ সম্পর্কে জ্ঞান থাকে অবশ্যই লিঙ্ক দিবেন ।

খ্রিষ্টান ধর্মে মৃত্যুর বর্ণনাঃ

মৃত্যুর পরবর্তী জীবন নিয়ে খ্রিষ্টান ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ বাইবেলে স্পষ্ট লিখা রয়েছে । কিন্তু মৃত্যুর সময়কার বর্ণনা তেমন খুঁজে পাইনি । তবুও Ecclesiastes 9:5 এ উল্লেখ আছে “ জীবিতদের জন্য তারা মারা যাচ্ছে , কিন্তু যারা মারা যাচ্ছে তারা জানেনা যে তারা মারা যাচ্ছে…”। বাইবেল গ্রন্থের তর্জমায় বলা আছে যখন Lazarus কে মৃত্য থেকে জীবিত করা হল তখন তিনি তার মৃত্যু সম্পর্কিত জ্ঞান কারো কাছে বর্ণনা করেনি । তার বলার মতন কোন কিছুই ছিল না । সে শুধু জানত সে মারা গিয়েছিল , কিন্তু এখন সে জীবিত ।
খ্রিষ্টান ধর্মে মৃত্যুর পরের জীবন নিয়ে মূলত দুই ধরনের মত রয়েছে। এক মত অনুযায়ী মৃত্যুর পর আত্মা ঘুমিয়ে পড়ে এবং সেটা পুনরুত্থান পর্যন্ত ঘুমিয়ে থাকে। অন্য এক বিশ্বাস মতে মৃত্যুর পরেই আত্মা তার কৃতকর্ম অনুযায়ী হেল/হেভেনে চলে যায়।

বাইবেলের অনেক জায়গায় মৃত্যুকে ঘুমের সাথে তুলনা করা হয়েছে । বাইবেল বলে মৃতেরা অচেতন; তারা যে-অবস্থায় রয়েছে তার তুলনা সবচেয়ে ভালভাবে ঘুমের সঙ্গে করা যায়। (উপদেশক ৯:৫, ১০; যোহন ১১:১১-১৪) এইজন্য মারা গেলে আমাদের কী হয়, সেই বিষয়ে আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোন প্রয়োজন নেই, ঠিক যেমন আমরা কাউকে গভীর ঘুমে ঘুমাতে দেখলে উদ্বিগ্ন হই না। যীশু এমন এক সময়ের কথা বলেছিলেন যখন “কবরস্থ সকলে” এক পরমদেশ পৃথিবীতে নতুন জীবনে “বাহির হইয়া আসিবে।”—যোহন ৫:২৮, ২৯; লূক ২৩:৪৩.
খ্রিষ্টান ধর্মে মৃত্যু সম্পর্কে আমি এর থেকে বেশি কিছু খুঁজে পেলামনা । তবে আমার আরো জানার ইচ্ছা আছে । কারো পক্ষে যদি সাহায্য করা সম্ভব হয় , লিঙ্ক দিয়ে সাহায্য করবেন ।



মৃত্যু সম্পর্কে বিশিষ্ট জনদের ভাবনাঃ

পৃথিবীর প্রতিটি মানুষই মৃত্যু নিয়ে ভাবেন , আগেও ভেবেছেন । যেমন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর , হুমায়ন আহমেদ , শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় , লালন , চতুর্দশ লুই , জর্জ ওয়াশিংটন সহ আর অনেক বিখ্যাত বেক্তিগণ মৃত্যু সম্পর্কে তাদের ধারণা দিয়ে গেছেন । কোন কোন সাহিত্যিক তার লিখনির মাধ্যমে মৃত্যুর সময়কার বর্ণনা তুলে ধরেছেন ।
বিখ্যাত লেখক হুমায়ন আহমেদ বলেছেন সব মৃত্যুই কষ্টের, সুখের মৃত্যু তো কিছু নেই। (কোথাও কেউ নেই।পৃ: ৪০)
আল্লামা ইকবাল সাহিত্যের উজ্জ্বল নক্ষত্র। যিনি সকলকে পিছনে ফেলেছেন মৃত্যু উপস্থাপনায় ;
‘‘প্রাণ হতে যত দুঃখের কাঁটা হবে গো বহির্গামী
সরোদের মতো হবে উত্তম বিহঙ্গ কলতান।’’
কবির দক্ষতায় মৃত্যু ফুটে উঠেছে চরম প্রশান্তির বস্তু। সার্বিক যন্ত্র উপশমকারী হিসাবে মৃত্যুই হতে পারে অদ্বিতীয়।
তৌহিদবাদীদের বিশ্বাসের অনেকটা কাছাকাছি মৃত্যু ও মৃত্যু পরবর্তী জীবন সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মৃত্যু সম্পর্কে বিশ্বাস সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে নিচের চিঠিখানাতে। দার্শনিক ও রবীন্দ্রভক্ত মোহিতচন্দ্র সেনের কন্যা উমা দেবী, যার ডাক নাম বুলা-তাঁর মৃত্যুর পরে মৈত্রেয়ী দেবীকে লেখা কবির এ চিঠি।

‘‘কল্যাণীয়াসু,
বুলা একবারেই নেই একথাটা তোমার মন কোনমতেই স্বীকার করতে চাচ্ছে না, তখন তাকে স্বীকার করবার দরকারটা কী? থাকা ব্যাপারটার কত বৈচিত্রই আছে। কখনো ঘুমিয়ে থাকি কখনো জেগে থাকি কখনো কাছে থাকি-কখনো দূরে থাকি-কখনো দৃশ্যে কখনো অদৃশ্যে তার সঙ্গে আরো একটা কথা যোগ করে দিতে দোষ কি-অর্থাৎ কখনো এ লোকে কখনো অন্য লোকে-কখনো মর্ত্য শরীরের অবস্থায় কখনো এ-শরীরের অতীত অবস্থায়। তুমি বলবে নিশ্চিত জানিনে যে। এ জন্যেই ইন্দ্রিয়ের প্রমাণকে না মেনে আকাঙ্ক্ষার প্রমাণকেই তো মানা ভালো। পৃথিবীতে সব আকাঙ্ক্ষার সার্থকতা ঘটে না। একথা সত্য, তেমনি একথাও সত্য যেসব সত্যের যুক্তি আমাদের হাতে নেই, তাই যাকে নিশ্চিত বলে জানি, সেও ভ্রান্ত হতে পারে। মৃত্যুকে বিলয় বলে মনে করছি খুব সম্ভব তার কারণ এই যে, সে যে বিলোপ নয় তার প্রমাণগুলো আমাদের হাতের কাছে নেই-হয়তো কেবল বৃথা বিলাপ করেই মরছি। মা পাশের ঘরে গেলে শিশু যেমন মায়ের অবলুপ্তি কল্পনা করে এও হয়তো তেমনি। আমি একথা বলি যখন দ্বনেদ্বর মধ্যেই আছি তখন না-য়ের চেয়ে হ্যাঁ-কে মানাই ভালো। মৃত্যু যদি চরম সত্যই হয় তাহলে আক্ষেপ করা বৃথা। যদি সত্য না হয় তাহলে ততোধিক বৃথা-অতএব মৃত্যু পর্যন্ত অপেক্ষা করে দেখা যাক তারপরে হয় এ পক্ষে নয় ও পক্ষে তর্কের সমাধান হবে-আমি নিজে শান্ত মনে তার অপেক্ষা করছি এবং এই বিশ্বাস ধরে রাখছি যে মৃত্যুর পরেই অস্তিত্বের সম্পূর্ণ প্রতিবাদ হ্যাঁ করে নেই। ইতি-২৫শে ডিসেম্বর, ১৯৩১
শুভাকাঙ্ক্ষী
শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর’’

মৃত্যুর স্বাদ যতই মধুর হোক অথবা তিক্ত , সেই স্বাদ আমাদের সকলের গ্রহণ করতেই হবে । তার বিকল্প নাই। তাই মৃত্যুর ভয় দূর করার জন্য মৃত্যু সম্পর্কে আমাদের আরো জানতে হবে । যার সম্মুখীন আমাদের অবশ্যই হতে হবে , তার সম্পর্কে জেনে যাওয়াই হবে আমাদের জন্য উত্তম । তাই নয় কি?
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৫ দুপুর ১২:০৩
১টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

#প্রিয়তম কী লিখি তোমায়

লিখেছেন নীল মনি, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৭:৫১


আমাদের শহর ছিল।
সে শহর ঘিরে গড়ে উঠেছিল অলৌকিক সংসার।
তুমি রোজ তাঁকে যে গল্প শোনাতে সেখানে ভিড় জমাতো বেলা বোস, বনলতা কিংবা রোদ্দুর নামের সেই মেয়েটি!
সে কেবল অভিমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভুল শুধু ভুল নয়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৬

এক
লেখাটা একটি কৌতুক দিয়ে শুরু করি। ১৯৯৫ সালের ৩০ নভেম্বর থেকে শফিপুর আনসার একাডেমিতে বিদ্রোহ হয়। ৪ ডিসেম্বর পুলিশ একাডেমিতে অভিযান চালায়। এতে চারজন আনসার সদস্য নিহত হয়েছিল। এটি ছিল... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। VF 3 Mini: মাত্র 60 মিনিটে 27 হাজার বুকিং!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২১ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:০৪



আমার ব্যাক্তিগত গাড়ি নেই কিন্তু কর্মসূত্রে বেঞ্জ , ক্যাডিলাক ইত্যাদি ব্যাবহার করার সুযোগ পেয়েছি । তাতেই আমার সুখ । আজ এই গাড়িটির ছবি দেখেই ভাল লাগলো তাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ময়লাপোতার কমলালেবুর কেচ্ছা!! (রম্য)

লিখেছেন শেরজা তপন, ২১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৩


বাংলাদেশের বিশেষ এক বিভাগীয় শহরে ময়লাপোতা, গোবরচাকা, লবনচোরা, মাথাভাঙ্গা, সোনাডাঙ্গার মত চমৎকার সব নামের এলাকায় দারুণ সব সম্ভ্রান্ত পরিবারের বাস।
আমার এক বন্ধুর আদিনিবাস এমনই এক সম্ভ্রান্ত এলাকায় যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাময়িক পোস্ট: বন্ধ হয়ে গেল সচলায়তন

লিখেছেন করুণাধারা, ২১ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


বন্ধ হয়ে গেল সচলায়তন! view this link

সামহোয়্যারইনব্লগ থেকে কয়েকজন ব্লগার আলাদা হয়ে শুরু করেছিলেন সচলায়তন বা সংক্ষেপে সচল ব্লগ। এটি বন্ধ হবার মূল কারণ উল্লেখ করা হয়েছে দুটি:

১)... ...বাকিটুকু পড়ুন

×