আজ শুক্রবার, স্কুল ছুটি। আকাশদের থানায় ওদের বাড়ির কাছাকাছি মাঠ বলতে দক্ষিনপাড়ার ঐ মাঠটাই আছে, স্কুলের মাঠ যা আছে তাতো তিন মাইল দূরে। সকালে আকাশ কয়েক লোকমা ভাত খেয়ে ফুটবল নিয়ে আদনানের সাথে বের হয়ে পড়ল। দক্ষিন পাড়ায় বর্ষার মৌসুমের আগে পড়ে সবসময়ই ফুটবল চলে, যদিও শীতে ব্যাডমিন্টন একটু বেশীই খেলা হয়। কিন্তু আকাশের ফুটবল ছাড়া আর অন্য খেলা ভালো লাগেনা। সঞ্জিতবাবুর দোকানের সামনে দিয়ে যাবার সময় চোখাচোখি হলে বাবু জিজ্ঞেস করল, "ও আকাশ যাস কনে ?" একটা উজ্জ্বল অকৃতিম হাসি দিয়ে আকাশ বলল, “দক্ষিনপাড়ায় কাকাবাবু।" পাশ থেকে আদনান জিজ্ঞেস করল, “তুমি কেমন আছো, কাকাবাবু ?” “অনেক ভালো আছি বাপ!” বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে সঞ্জিত দাস। আবার পালটা প্রশ্ন করে “শুনছিস আদনান, আজকে যে সিকদার সাবের বড় পোলা আইতাসে ?” “মানে ? কেডা ?” আদনানের প্রশ্ন। “রুবেল শিকদার, থাকে ইতালীতে, কাম করে। “ কি কও !”, আদনান অবাক হয়। “হ, এই লইগাই কই, ওরে ধর। তুইও বিদেশ যা।” মাথা নাড়াতে নাড়াতে হাটতে থাকে দুই ভাই। সঞ্জিনবাবু আবার চিৎকার করে বলে, “দিদিকেও কথাটা কইস” এই সঞ্জিতবাবু ও তার স্ত্রী আকাশের বাবা মারা যাবার পর ওদের পরিবারের পাশে থেকেছে এখনো আছে, বিপদে আপদে সবসময়ই সাহায্য করে, তার এক ছেলে আর এক মেয়ে বিয়ে করে ঢাকায় থাকে, খোজ নেয়না তাদের, একমাত্র বউকে নিয়ে তার জীবনের শেষার্ধ চলে। সঞ্জিতবাবুর বড়ভাই আর আকাশের বাবা বাল্যকালের বন্ধু, নদীতে যখন ওদের বাড়ি চলে যায় তখন এই সঞ্জিতবাবুর বাবাকেই নিজের দুই একর জায়গা দিয়ে চাষবাস করতে দিয়েছিলেন আকাশের দাদা। একারনেই সঞ্জিতবাবুর এই দুই ভাইয়ের প্রতি তার ভালবাসাটা তীব্র। দক্ষিনপাড়ায় যেতে খেলার সাথীদের কয়েকজনকে পেল আকাশ। মিঠুন নামের এক ছেলে আকাশকে লক্ষ করে “কিরে পিচ্চি ! তোর দলবল কই ?” “কেন ? দলবল দিয়া কি হইব ? আমি আইসি তাতে চলেনা ?” এমন ক্ষ্যাপা মিশ্রিত উত্তরে ওরা বেশ মজা পেল। “পোলাপাইন তো আজকে গেছে নদীর পাড়ে মাছ ধরতে, খেলব কে ?” বিকাশের প্রশ্ন। পাশ থেকে আরেকজন বলে “গেছে তো কি হইসে ? আমরা যারা আছি তারাই খেলুম। ঐ বাট কর।” চৈত্র মাসের কাঠফাটা গরমে তারা খেলতে থাকল। আকাশ, সাদ্দামের কাছে ওয়ান টু ওয়ানে পাস দিয়ে বিপক্ষের দুইজনের মাঝ দিয়ে সামনে এগিয়ে নিয়ে গেল। একজন ডিফেন্ডার কাছে এসে স্লাইড করে বল নেবার চেষ্টা করছে বুঝেই নিজেই নিজেকে থ্রু দিল। শেষবারের মত বাঁধা হল গোলকিপার সেলিম। সেলিম খুব আত্মবিশ্বাসের সাথে দুই হাত প্রসারিত করে দাঁড়াল। এবার আকাশ সুযোগ বুঝে জোরে কিক করল সেলিমের দুই পায়ের মাঝ বরারব। বল মাটি কামরে গোল পোস্টের ভিতর ঢুকে গেল। গোওওওওওল !!! ঐ মাঠের পাশের পথ দিয়েই বাজার করতে শিকদার বাড়ির বড় ছেলে রুবেল যাচ্ছিল জনা পাচেক লোকের সাথে, কথা বলছিল ইতালীর জীবন নিয়ে। হঠাত আকাশের দিকে চোখ পরতেই পাশে থাকা একজনকে জিজ্ঞেস করে এই ছেলেটা কে ? পাশের জন বলে, “কাশেম মিয়ার ছোট ছেলে ?” “কোন কাশেম মিয়া ? আদনানের বাপ?” জিজ্ঞেস করে রুবেল, “হ ! ভাই। ওর নাম আকাশ” কথা বলতে বলতে তারা বাজারের দিকে হাটতে থাকে, খেলা চলতে থাকে ............
ক্যারিয়ারঃ পর্ব ২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১০:১৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ
গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।
... ...বাকিটুকু পড়ুন
৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…
১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন
মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট
মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন
'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'
নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ
আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন