somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মধ্যাহ্ন (অখণ্ড) রিভিউ

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



লেখক: হুমায়ূন আহমেদ
প্রকাশনা: অন্যপ্রকাশ
প্রকাশকালঃ ২০০৮
পৃষ্ঠাঃ ৪০৮


কাহিনীঃ

‘আমাকে খুঁজবে প্রভাতের প্রথম সূর্যকিরণে।যদি না পাও,খুঁজবে সন্ধায়,যখন সূর্য ডুবি ডুবি করেও ডুবছে না।সাবধান!মধ্যাহ্নে আমাকে কখনো অনুসন্ধান করবে না।’

গল্পের শুরুতে আছেন হরিচরণ বাবু যিনি একজন বিত্তশালী।কিন্তু তাঁর জীবন খুবই সাদামাটা।হিন্দুদের সুবিধামত নিজেদের বানানো বিধিগুলো নিয়ে তাঁর আক্রোশ বা ভক্তি কোনোটাই চোখে পড়েনি। ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ দিয়ে উপন্যাসের শুরু আর দেশভাগের আগ পর্যন্ত পুরো উপন্যাসটি নানা চরিত্রের মধ্য দিয়ে এতো সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হুমায়ূন আহমেদের পক্ষেই সম্ভব। গল্পের সামনে আগাতে আগাতে এক একটা চরিত্র যেন আমাদের সামনে একেকটা বাস্তব রূপ ধারণ করে। এতোটুকু পড়ে যদি আপনি ভাবেন এটা ঐতিহাসিক উপন্যাস তাহলে ভুল ভাববেন।সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘প্রথম আলো’ উপন্যাসটিতে ঐতিহাসিক ঘটনাগুলো যেভাবে বর্ণিত হয়েছিল এখানে সেভাবে বর্ণনা নেই।কিন্তু গল্পের চরিত্রের সাথে ঐতিহাসিক চরিত্র গুলো কখন যে মিলে মিশে একাকার হয়ে গিয়েছে গল্প শেষ করেই বুঝতে পারবেন।যেন এক ঘোরের মাঝে আমরা ঐ সমসাময়িক কালে নিজেদেরকে নিয়ে যাই।

একটি হিন্দু অধ্যুষিত গ্রাম নিয়ে কাহিনীটি আবর্তিত হয়েছে।তৎকালীন হিন্দু সমাজে মুসলমানদের স্থান ছিল তাদের সর্বনিম্ন জাত শুদ্রেরও নিচে।হরিচরণ এক মুসলমান ছেলেকে বাঁচানোর পর কোলে নিয়ে ঠাকুরঘরে প্রবেশ করায় তাঁকে সমাজচ্যুত করা হয়।আর তখনকার জমিদার শশাঙ্ক পাল তাকে সমাজ থেকে পতিত করেন।ইতিহাসের পাতা ঘাটলে সেই শশাঙ্ক পালকে আমরা খুঁজে পাই।হিন্দুদের বানানো সংস্কারের সাথে মুসলমানদের নানা কুসংস্কার,বৈষম্য এগুলোও আমাদের চোখের সামনে ফুটে উঠবে।ধনু শেখ এমনই এক সুবিধাবাধী নামেমাত্র মুসলমান ছিল যে হিন্দু মুসলমান দাঙ্গা বাঁধাতে ভূমিকা রাখে।তৎকালীন সমাজের নারীদের উপর অত্যাচারের কিছু ঘটনাও প্রকাশ পায়। গল্পের মাঝখানে দেখতে পাবো সুলাইমান নামে এক দরিদ্র মুসলিম তার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে নগ্ন অবস্থায় বাড়ি থেকে বের করে দেয়। তখনকার সময় বিয়ে করার পর কনের সাথে কনের বাড়ি থেকে এক দাসী পাঠানো হতো। দাসীর সাথে সহবাস করা বৈধ ছিল।কিন্তু দাসীর গর্ভে সন্তান হলে সেই সন্তান কোনো প্রকার সম্পত্তির ভাগ পেতো না। গল্পের নারী চরিত্রের দিকে তাকালে জুলেখা ছিল অসম্ভব সুন্দরী এক তরুণী গৃহবধু যার চাল-চলন ছিল অন্য সবার মত না।এই সুন্দরী তরুণীও ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নিয়েছে গল্পের ভিতরে ঢুকলেই আমরা বুঝতে পারবো।গল্পের আবর্তনে আরও বিভিন্ন চরিত্রের মধ্যে দেখবো শশী বাবু কে। যিনি পরবর্তীতে শশী মাস্টার হন। তিনি কি ছদ্মবেশধারী কেউ?একই সাথে মাওলানা ইদ্রিস,লাবুস,অম্বিকা আরও নানা চরিত্রের ভিড়ে পুরো বইটা শেষ না করা পর্যন্ত গল্পের মাঝে বুদ হয়ে থাকতে হবে।গল্পের কাহিনীর সাথে রবীন্দ্রনাথ,মাদামকুরী,নজরুল,হিটলার,শরৎচন্দ্র,শেরেবাংলা সবাইকে যেন একই সুতায় বেঁধে ফেলেছেন।বঙ্গভঙ্গ,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে হিন্দুদের বিরোধিতা আবার বঙ্গভঙ্গ রদে হিন্দুদের উল্লাসের সাথে খন্ড খন্ড ইতিহাসের কাহিনী গল্পের কাহিনীর সাথে ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছে।

রবীন্দ্রনাথের মতে ছোটগল্প যেমন শেষ হইয়াও হইলো না শেষ, মধ্যাহ্ন(অখন্ড) উপন্যাস হওয়ার পরেও পড়া শেষ করে মনে হবে যেন এর পরে কি,আর একটা খন্ড কি বের হবে?

অখন্ডের ভূমিকায় লেখক বলেছেন, "মধ্যাহ্ন অখন্ড প্রকাশিত হল। প্রথম এবং দ্বিতীয় খন্ড যুক্ত হয়ে ‘অখন্ড’ প্রকাশনা। পাঠকরা অনেকেই জানতে চাচ্ছেন তৃতীয় খন্ড বলে কিছু আছে কি-না? আপাতত আমার জবাব ‘না’। তৃতীয় খন্ড মানেই দেশভাগ, হতাশা, কষ্ট, গ্লানি এবং মৃত্যুর গাথা। এইসব লিখতে ভালো লাগে না। তারপরেও কিছুই বলা যায় না। তৃতীয় খন্ড লিখে ফেলতেও পারি। তখন আবারো আরেকটি অখন্ড প্রকাশিত হবে। সেখানে লেখা থাকবে ‘মধ্যাহ্ন অখন্ড (আল্লার কসম)’ পাঠকরা যে আগ্রহ এবং মমতায় ‘মধ্যাহ্ন’ গ্রহণ করেছেন তাতে আমি অভিভূত। আমার লেখক জীবন ধন্য।"

পরিশেষে,এটাই শেষ খন্ড হয়ে থাকল।আর নতুন কোনো বই পাও্য়ার সম্ভাবনা নেই। আমদের প্রিয় লেখককে শুভ মধ্যাহ্ন !
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:১১
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×