somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মার্ডার-লুপ

০৪ ঠা মার্চ, ২০১৪ সকাল ৭:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাটিতে পড়ে থাকা লাশটার এক ইঞ্চি সামনে এসে থেমে গেল বুটজোড়া ।
মৃতদেহটির পকেট থেকে আস্তে করে বের করে নেয় একটা রিং – শেষ মাথায় পেনড্রাইভটা আলগোছে ঝুলছে ।

শুন্য গ্যারাজে আর কেউ নেই । তিনটি মাত্র গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে ভেতরে । চারপাশে শুনশান নীরবতা ।
হোলস্টারে পিস্তলটা ভরে রেখে বাইরের দিকে পা বাড়ায় বুটের মালিক । পেছনে তার ছায়া দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয় ।

মিনিট দুয়েকের মাঝেই একজোড়া কন্ঠে সচকিত হয় গ্যারাজটি ।
মেয়েটা খিলখিল করে হাসছে । ছেলেটিও কথা বলছে উচ্চস্বরে । অ্যালকোহলের প্রভাব দু’জনের মাঝেই বিদ্যমান ।
চাকার নিচে বিশ্রী একটা কড়মড় শব্দের সাথে সাথেই থেমে যায় ওদের হাসি ।

ঝটপট দুইদিকের দরজা খুলে নেমে আসে ওরা ।
চিল চিৎকার ছাড়ে মেয়েটা ।
ছেলেটাও হতভম্ভ । বিড় বিড় করে বলে শুধু, ‘মাই গড !’


এবার বেল টিপে ধরে রাখে ডিটেক্টিভ আসিফ আহমেদ ।
পাঁচ মিনিট ধরে ও দরজাটার সামনে । আগেও দুইবার কলিংবেল বাজালেও ভেতর থেকে কোন রেসপন্স পায় নি ।
জিনা ওকে ডেকে এনে বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখবে কেন ? দরজার ওপরের নম্বর প্লেটটা আরেকবার দেখে । A-5 ।
ঠিকই আছে ।

মেসেজটা স্পষ্ট মনে আছে আসিফের ।
‘Need your help. Im at hotel Shurovi. A-5. Come at once’
জিনার মত একটা মেয়ে হোটেলে এসে উঠবে কেন ?

সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে আসিফ । পিস্তলটা ডান হাতে নিয়ে বাম কাঁধে প্রচন্ড ধাক্কা মারে দরজায় ।
অফ ডিউটিতে থাকলেও জিনার মেসেজের তাৎপর্য বুঝতে পারেনি বলে সাথে করে আগ্নেয়াস্ত্রটা নিয়ে এসেছে ।
তৃতীয় ধাক্কাতে উড়ে যায় হাল্কা লকটা ।

চোখে ভেতরের অন্ধকার সয়ে আসতে সময় নেবে । দেওয়াল হাতড়ে দ্রুত সুইচবোর্ডটা খুঁজে বের সবগুলো জ্বালিয়ে দেয় ও ।
আলোতে উদ্ভাসিত হয়ে উঠে ঘরটা । বেডরুমের দরজাটা একটু খোলা ।
‘জিনা ?’ আস্তে করে ডাক দেয় আসিফ ।
জবাবে এইমাত্র মেইন দরজা খুলে যাওয়ায় বায়ুপ্রবাহের ফলে আরেকটু খুলে যায় বেডরুমের দরজাটা । ভেতরে এক জোড়া পা চোখে পড়তেই একধাক্কায় দরজাটা পুরো খুলে ফেলে আসিফ । হাতে উদ্যত পিস্তল ।

নিথর দেহ নিয়ে পড়ে আছে মাঝবয়েসী এক লোক । হাত মুঠো করে ধরে আছে বিছানার চাদর । শরীরের অর্ধেক বিছানাতে অর্ধেক বাইরে । এক পা মেঝেতে ছুঁয়ে আছে – অপর পাটা দুলছে একটু একটু ।
সব নিমেষেই দেখে নেয় আসিফ । তারপর তাকিয়ে থাকে লোকটার গলাতে বিঁধে থাকা শক্ত জিনিসটার দিকে ।
রুমের চারপাশে ভালো করে দেখে অন্য ঘরগুলোও চেক করে ও । তারপর শান্ত ভঙ্গীতে ফোন দেয় ।
জিয়াকে জানাতে হবে সিএসইউকে এখানে পাঠাতে বলে ।

জিনাটা গেল কোথায় ?
ছেলেবেলার বান্ধবীটির জন্য বুকের ভেতর কোথাও আশংকা অনুভব করে আসিফ ।
তারমাঝেই কাছ থেকে দেখার জন্য এগিয়ে যায় লাশটার দিকে ।

*
বেশ বিরক্তি নিয়ে পাশের গলিতে ঢুকে সিগারেটে আগুন ধরায় জিয়া । বস আশেপাশে থাকলে সিগারেট খায় না ও কখনই । তবে আজকের ব্যাপারটা আলাদা । তবুও বসের সামনে খাবে না বলেই গলিতে এসে ঢুকেছে ও ।
হোটেল সুরভীর সামনে গিজগিজ করছে পুলিশ । তবে তাদের অবস্থাও একই রকম । ঠিক যেমন অবস্থা হোমিসাইড ডিপার্টমেন্টের ।

ভ্রু কুঁচকে দাঁড়িয়ে আছে আসিফ । বিল্ডিংয়ের ঠিক বাইরে ।
কাওকে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না । উপরন্তু বোর্ডারদের বের করে দেওয়া হচ্ছে ।
আসিফের মেজাজ খারাপ হওয়ার কারণটা ওখানেই ।

হোমিসাইড ডিপার্টমেন্টের সবচেয়ে সফলতম ডিটেক্টিভকে বের করে দেওয়া হয়েছে তারই আবিষ্কৃত ক্রাইম সীন থেকে !
‘স্নিফার্স’ এখানে কি করে ?

২০১২ সাল থেকেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এই নতুন বাহিনীটি ।
জনগণের কাছ থেকে সম্পূর্ণ গোপন তো রাখা হয়েছেই – এমনকী আসিফের মত একজন উচ্চপদস্থ অফিসারকেও ওদের ব্যাপারে জানার ব্যাপারে যথেষ্ট কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে । পুরোনো এক বন্ধু স্নিফার্সে ছিল কয় মাস তাই যতটুকু জানার জেনেছে আসিফ । স্নিফার্স বাহিনী খোলার পেছনে সরকারের উদ্দেশ্য পরিষ্কার । রাষ্ট্রের প্রয়োজনে যেকোন আবর্জনা সাফের জন্য এরা আছে । সরাসরি কাজ করতে অনেক জবাবদিহিতার ব্যাপার থাকে । তবে স্নিফার্সদের এই ঝামেলাই নেই । যেখানে যেমন প্রয়োজন কাজ করে ওরা ।
প্রশ্ন করতে যাবেন ? পাথরমুখো কালোকোটধারী লোকগুলো সোজাসুজি জানিয়ে দেবে, ‘এর সাথে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা জড়িত ।’
নাকের সামনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের এমন একটি কার্ড ঝুলিয়ে দেবে যে আসিফের মত একজন অফিসারকেও চুপ করে সরে পড়তে হবে সেখান থেকে ।

ঠান্ডা মাথায় ভাবার চেষ্টা করছে আসিফ ।
জিনা এমন কোন ধরণের সমস্যায় পড়ে গেছে যে কারণে খোদ স্নিফার্স মাথা ঘামাচ্ছে ? তারওপর মেয়েটা নিখোঁজ ।
একটু আগে তৃণাকে জিনার ডিটেইলস জানিয়ে বলেছে পুলিশ ফোর্সকে অ্যালার্ট করে দিতে । যদিও জানে এভাবে কাজ হবে না । বড় কোন শক্তি কাজ করছে এর পেছনে ।

হেঁটে একটু সামনে আসে আসিফ । এখানে থেকে আর লাভ নেই । স্নিফার্স ওকে মাথা ঢোকাতে দেবে না । জিনার ব্যাপারটা বেমালুম চেপে গেছে ও । ঘটনা কোনদিকে গড়াচ্ছে না জেনেই সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না ।
জিয়াকে খুঁজছে ওর চোখ । প্রায় সাথে সাথেই পাশের গলি থেকে বের হয়ে আসে জিয়া । বসকে সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে একটু থতমত খায় যেন ।

‘স্যার – কিছু ঠিক করলেন ?’ জানতে চায় জিয়া সামলে নিয়ে ।
‘এখানে থেকে কাজ নেই । মেয়েটার লোকেশন জানতে হবে ।’ গাল ঘষে আসিফ আনমনে ।
‘কিন্তু স্যার -’ ইতস্তত করে জিয়া ।
তার দিকে তাকিয়ে থাকে আসিফ ।
‘স্নিফার্সরা তাদের কেসে আমাদের গলানো মাথাকে খুব একটা স্বাগত জানাবে না মনে হয় ।’ অবশেষে বলেই ফেলে ও ।
‘আমরা খুনের ব্যাপারে তো জড়াচ্ছি না ।’ তাকে আশ্বস্ত করে আসিফ, ‘আমার বাল্যবন্ধুকে খুঁজে বের করতে পারলেই হল আমাদের ।’
‘জ্বি স্যার ।’ বললেও স্নিফার্সের সাথে সংঘাতের ঝামেলায় যাওয়ার আশংকা দেখতেই পায় জিয়া । তবে এও ঠিক বস তাঁর বান্ধবীর ব্যাপারে নিশ্চিত না হয়ে যাচ্ছে না কোথাও ।

একটু দূরে পার্ক করা আসিফের গাড়িটার দিকে এগিয়ে যায় ওরা ।
পকেট থেকে চাবিটা জিয়ার দিকে ছুঁড়ে দেয় আসিফ, ‘ড্রাইভ ।’
খপ করে বাতাসেই লুফে নেয় জিয়া সেটা । বুঝতে পেরেছে বস এখন চিন্তার জগতে ডুবে থাকবে ।

দরজার লক খুলে আসিফকে ঢোকার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকে ও ।

কিন্তু আসিফের আর ঢোকা হয় না ।
‘আসিফ !’ নারীকন্ঠের বিস্ময়ে ভরা চিৎকারটা দুইজনকেই ঘুরিয়ে দেয় শব্দের উৎসের দিকে ।
‘জিনা !’ আসিফও কম অবাক হয়নি, ‘তুমি এখানে ?’


‘খুলে বল এখন । কি হয়েছে ?’ গাড়ি চলছে । তার মাঝে জানতে চায় আসিফ ।
ব্যাকসীটে বসে আছে জিনার সাথে । ড্রাইভ করছে জিয়া।

এক মুহূর্ত নিশ্চুপ থাকে জিনা । ভাবছে কোথা থেকে শুরু করবে ।
‘মালিবাগে আমার বাসা । জানো বোধহয় ।’
মাথা ঝাঁকায় আসিফ ।
‘ঘটনার শুরু ওখানেই ।’ বলতে শুরু করে জিনা ।

*
অন্যদিনের মত অফিস থেকে বাসায় ফিরে আসতে আসতে অন্যধরণের একটা শান্তি অনুভব করে জিনা ।
ছোট একটা দুইরুমের বাসা । তবে ওর এরচেয়ে বেশি কিছুর প্রয়োজনও নেই । একা মানুষ । স্বাধীনচেতা বলে বিয়ের ব্যাপারে এখনও ভাবে নি ।
আজ রাত হয়ে গেছে একটু বেশিই । বহুদিন পর দেখা হয়ে গেছে স্কুলজীবনের বান্ধবী মিতালির সাথে । ও ঢাকাতে এটাও জানত না জিনা এতদিন !
পুরোনো দিনের গল্প করতে করতে এদিক ওদিক ছুটে বেড়ানো – সিকদারে গিয়ে চিকেন গ্রীলের বারোটা বাজানো এবং তারপরেই ঘরে ফেরার কথা মনে পড়ে ওদের ।
ফিরে আসার সময় একে অন্যের সাথে যোগাযোগ রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিলেও স্মৃতিকাতরতার আবেশ কাটতে কাটতে বেশ দেরী হয় । আর কয়েক মাস পরেই দেশ থেকে চলে যাচ্ছে জিনা – সে কথা শুনে মিতালির মনটাও বেশ খারাপ হয়ে যায় ।
যাওয়ার আগে একবার অবশ্যই দেখা করবে – এই কথা নিয়েই ওকে ছাড়ে জিনা ।

তবে বাসার কাছে পৌঁছতেই সব মুছে যায় মাথা থেকে । পরদিন আবার অফিস – ব্যস্ত জীবনে ডুবে থাকা ।
ঘরে ফিরে একটু স্বস্তি বোধ করে ও । আবারও তার নিজের করে পাওয়ার মত কিছু মুহূর্ত এখানে । ডেস্কটপটা অন করে । ফেসবুকে ঢোকা যায় – শাহেদটা সেই আমেরিকায় বসে আছে । ও ফ্রি থাকলে স্কাইপে একটু কথা বলা যেতে পারে ।

ফ্রিজ থেকে কোল্ড ড্রিংকসের একটা ক্যান নিয়ে ফিরে আসে ও রুমে ।
শাহেদকে পাওয়া যায় ।

ছেলেটা ব্যস্ত থাকে অনেক । সেই যে পিএইচডি করতে পাড়ি জমিয়েছে আমেরিকাতে – ফেরার নাম নেই । জিনা-শাহেদের সম্পর্কটাকে কোন সংজ্ঞাতে সংজ্ঞায়িত করা যায় না । তবে ছেলেটাকে বেশ লাগে জিনার । শাহেদ অবশ্য কিছু বলেনি মুখে – তবে জিনা ভালো মতই বোঝে এই ছেলে তার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে ।
বোকাটা বলে না কেন ?

তবে সেদিকে চাপ দিতে চায় না এখন জিনাও । সব কিছু ঠিকমত থাকলে মাত্র চারমাস পরেই আমেরিকায় চলে যাচ্ছে ও । এই খবর শাহেদকে জানানো হয় নি এখনও । ওখানে গিয়েই একেবারে সারপ্রাইজ দিতে চায় ।

শাহেদকে পাওয়া গেল । আজ ওর অফ ডে । তাইতো – খেয়াল হয় জিনার । ওখানে তো আজ রবিবার !
ওর সাথে কথা বলতে বলতে রাত দুটো বেজে যায় – বাড়িওয়ালার জরুরী তলবে কথা থামায় শাহেদ । মনে হয় মদ্যপ্য জোসেফটা আবার সিঁড়িঘরে বোতল ভেঙ্গেছে !
বিছানার দিকে যায় জিনাও । একটু না ঘুমালে কাল অফিসে ঝিমাতে হবে !

দরজার কাছে খুবই হাল্কা শব্দটা তখনই শোনে ও ।
কানের ভুল ? না – ওইতো ! আবার শোনা যাচ্ছে ! কেউ কি ওর ঘরের দরজার তালা খোলার চেষ্টা করছে বাইরে থেকে ?
খুব ধীরে বিছানা থেকে উঠে যায় জিনা ।

চোরের উৎপাত শুরু হল না তো আবার ? গেল বছরে পাড়া একেবারে খালি করে দিচ্ছিল চোরের গুষ্ঠি ! সেই থেকে বেশ আলাদা রকমের লক লাগিয়েছে ওর দরজায় । এত সহজ না বাবা পিকলক করা !
কিচেনে ঢুকে চট করে কিচেন নাইফটা তুলে নেয় জিনা । এবার আসো !

পরমুহূর্তেই ‘দুপ’ জাতীয় একটা শব্দের সাথে ছিটকে খুলে যায় দরজা !
মুভির পোকা জিনাকে বলে দিতে হয় না ওটা কিসের শব্দ !
সাইলেন্সড পিস্তল !

গড়িয়ে সোফার নিচে ঢুকে পড়ে জিনা । ভেতর থেকে শুধু বুটজোড়া দেখতে পাচ্ছে ।
সতর্ক পায়ে হাঁটছে লোকটা – একচুল শব্দ হচ্ছে না । এগিয়ে যাচ্ছে বেডরুমের দিকে । একটু উঁকি মেরেই বুঝতে পারে জিনা – হাতে লম্বা নলের সাইলেন্সার লাগানো পিস্তলটা দৃঢ়তার সাথেই ধরে রেখেছে মানুষটা ।
জিনাকে বিছানায় ঘুমন্ত আশা করছে ?

নিজের ভাগ্যকে ধন্যবাদ দেয় জিনা । দরজার আলতো শব্দটা না শুনলে বিছানা থেকে উঠে ড্রইং রুমে আসা হত না ওর ।
পিস্তলধারী এই যুবক যে কোন ছিঁচকে চোর নয় সেটা বলে দিতে হয় না ! নিশব্দে সোফার ভেতর থেকে বের হয় জিনা । সাবধানে এখন দরজা দিয়ে বের হয়ে যেতে হবে । তারপর পুলিশে খবর দিলেই ওর কাজ শেষ ।
ভেতরে লোকটা কতক্ষণ ব্যস্ত থাকে বলা যায় না । দ্রুত কেটে পড়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ ।
পা টিপে টিপে দরজার দিকে আগায় জিনা ।

কাঁচ ভাঙ্গার বিদঘুটে শব্দটা রাতের নিস্তব্ধতা চিড়ে দেয় !
অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে এই মাত্র কনুইয়ের গুতোয় পড়ে যাওয়া সখের ফুলদানীটার অবশেষের দিকে তাকিয়ে থাকে জিনা – তারপরই ছুট লাগায় দরজার দিকে প্রাণপনে ।

কোনমতে দরজাতে পৌঁছেছে – এই সময় বেডরুমের দোরগোড়ায় দেখা যায় মৃত্যুদূতকে । এক হাত তুলেছে, হাতটায় শোভা পাচ্ছে নীরব ঘাতক পিস্তলটা ।
ঝট করে দরজা দিয়ে বেরিয়ে যায় জিনা – সেই সাথে মৃদু ‘দুপ’ শব্দ ওঠে পেছনে । একই সাথে চিড়ে গেছে দরজার চৌকাঠ !

কোথা থেকে জানি বুদ্ধিটা উদয় হয় জিনার মাথায় – প্রাণ বাঁচায় ওকে সেই তাৎক্ষণিক চিন্তাটাই । দড়াম করে মেইন দরজা লাগিয়ে বাইরের হুড়কোটা তুলে দেয় ও । তারপর কোনদিকে না তাকিয়ে সিঁড়ি ভেঙ্গে নিচে নামতে থাকে প্রাণপনে ।

ওপরের দিকে ধাক্কাধাক্কির শব্দ ওকে কিছুটা স্বস্তি এনে দেয় । হুড়কোর ক্ষেত্রে নবের মত সিকিউরড লোকেশনটা বোঝা যাবে না দরজার অন্যপাশ থেকে । কাজেই একগুলিতে উড়িয়ে দেওয়ার মত ব্যাপার আসছে না ।

বাসা থেকে বেরিয়েই সোজা থানাতে চলে আসে জিনা । কর্তব্যরত অফিসারকে ধরে বেঁধেই আনতে হয় একপ্রকারে ।
বাসাতে পুলিশের গাড়িতে করে ফিরে এসেও ভয়ে ওর বুক দুরুদুরু করে !
তবে ফোর্স নিয়ে পৌঁছে দেখে কাহিনী ভিন্ন । দরজার ধাক্কাধাক্কিতে অন্য ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদেরও ঘুম ভেঙ্গে যায় ।
তাদেরই একজন জানালেন যার জন্য আস্ত ফোর্স নিয়ে আসা তাকে বের হয়ে ডানদিকে কোথাও খুঁজতে ।
কারণ দরজার কব্জা লাথি মেরে উড়িয়ে এই বিল্ডিং থেকে বেরিয়ে ওদিকেই ছুটে গেছে লোকটা ।

গোলাগুলির চিহ্ন দেখে পুলিশগুলোও একটু তৎপর হয়ে উঠেছে ততক্ষনে ।
বুকে রিজভী লেখা পুলিশটি এগিয়ে আসে এবার, ‘ম্যাম – আপনার জীবন মনে হচ্ছে নিরাপদ নয় । আজ রাতটুকু থানাতে কাটালেই ভালো করবেন ।’
কথা বাড়ায় না জিনা । ঝটপট কেবল হাতব্যাগটা সাথে করে বেরিয়ে পড়ে আবারও ।
রাতটুকু থানাতে কাটিয়ে বের হয় সকাল নয়টার দিকে । বাসাতে ফেরার ইচ্ছে নেই । ব্যাগের ভেতর ক্রেডিট কার্ডটা আছে । কোন এক হোটেলে উঠতে হবে । লো-প্রোফাইলের থাকার জন্য মাঝারি ধরণের হোটেল সুরভীকেই পছন্দ হয় ওর ।
অন্তত একটা সপ্তাহের আগে বাসাটাতে ফিরতে ভালো লাগবে না ওর ।

থানা থেকে হেঁটে বেড়িয়ে বড় রাস্তায় দাঁড়ায় একটা রিকশার জন্য ।
তখনই লক্ষ্য করে ব্যাপারটা । বেশ পেছনে দাঁড়িয়ে একমনে সিগারেট টানতে থাকা লোকটা আড়চোখে তাকায় একবার ওর দিকে ।
নিশ্চিত হতে পায়ের দিকে একবার তাকায় জিনা – কোন সন্দেহ নেই !
সেই বুটজোড়া !

থানার এত কাছে কি করছে এই লোক ?
থানাতে ফিরে যেতে হলে লোকটাকে পাশ কাটিয়েই যেতে হবে – সাহসে কুলোয় না জিনার ।
রিকশার মায়া ত্যাগ করে আরেকটু আগাতে থাকে । লক্ষ্য করে আসছে মানুষটাও ।
জিনার একটু বিভ্রান্ত লাগে নিজেকে । পেছনে পেছনে আসতে থাকা লোকটাই কি কাল রাতের আক্রমণকারী ? নাকি অযথাই সন্দেহ করছে ও ?
রাতের অন্ধকারে লোকটার চেহারা দেখতে পায় নি ও । বুটজোড়াও কতটুকু মনে আছে প্রশ্নের বিষয় । এখন রাস্তায় যে কোন বুটের মালিককে দেখলেই পালিয়ে বেড়ানোটাও কাজের কথা না ।

একটা রিকশা থামিয়ে লাফিয়ে উঠে পড়ে জিনা । পেছনের লোকটা থেমে গেছে – পরের রিকশাটা ধরে নেয় মানুষটা ।
যা বোঝার বোঝা হয়ে যায় জিনার । হৃৎপিন্ডের কাঁপুনি টের পাচ্ছে ও বুকের ভেতর । হার্টটা কি বের হয়ে যাবে নাকি ?

প্রায় আধঘন্টা ধরে আঠার মত লেগে আছে পেছনের রিকশাটাও ।
সামনের ওভারব্রিজটা চোখে পড়তেই একেবারেই হঠাৎ নতুন একটা প্ল্যান আসে জিনার মাথায় ।
হাতে টাকা বের করে রেখেই ছিল । রিকশাওয়ালাকে থামিয়েই চট করে টাকাটা ওর হাতে গুঁজে দিয়ে ওভারব্রিজে উঠতে থাকে ও । হতভম্ভ অনুসরণকারী রিকশা থামাতে থামাতে অর্ধেকেরও বেশি উঠে গেছে জিনা ।
লোকটা সিঁড়ির প্রথম ধাপে পা রাখতে না রাখতেই ও পৌঁছে যায় ওপরে । পাশের শপিং কমপ্লেক্সের সাথে সরাসরি যুক্ত ওভারব্রীজটা – চট করে তাতে ঢুকে পড়ে জিনা ।
এখান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার অন্তত বিশটা রাস্তা আছে ।

লোকটা ওকে কখনই খুঁজে পাবে না ।


ব্যাগ থেকে পানির একটা বোতল বের করে একঢোক খায় জিনা ।

মনোযোগ দিয়ে ওর কাহিনী শুনছিল আসিফ । সামনের ড্রাইভিং সীটে বসে থাকা জিয়াটাও বেশ আগ্রহ নিয়েই শুনে যাচ্ছে বোঝা যাচ্ছে ঘন ঘন চোখ পিট পিট করা দেখে ।

‘তারপর ?’ অবশেষে জানতে চায় আসিফ ।
‘তারপরেই তোমার কথা মনে পড়ে । হোমিসাইডে আছ – সেটা জানি । তবুও আইনের লোক তো ! আমার পেছনে কারও লাগার কারণটা যদি কেউ বের করতে পারে – তুমিই পারবে । পুলিশ তো আমার বাসার ঘটনাকে ডাকাতির চেষ্টা বলেই থেমে গেছে । এর বেশি আগাবে বলে মনে হয় না ওরা ।’

মাথা ঝাঁকায় আসিফ, পুলিশের কার্যপদ্ধতি ওর জানা আছে । রাজ্যের সব ফাঁকিবাজে ভর্তি বাংলাদেশ পুলিশ । গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে এমন লোকও কম নেই ওখানে তবে বেশিরভাগই ঝামেলা দেখলেই এড়িয়ে চলা পাবলিক ।
তাছাড়া জিনা একটা গুলির ক্ষত নিজের শরীরে দেখানোর আগ পর্যন্ত তাদের বিশ্বাস করানো যাবে না ওর পেছনে কেউ লেগেছে ।
এখন শুধু একটা জেনারেল ডায়েরী করিয়ে ওকে বুঝ দিতে পারে বড়জোর – এই যা !
এদের দিয়ে এই মুহূর্তে জিনার কোন উপকার হবে না । তাই বাল্যবন্ধুর সাহায্য চেয়ে বসে মেয়েটা ।

‘5-A বলেছিলে তুমি ।’ মনে পড়ায় বলে আসিফ ।
‘ছয়তলাতে ছিলাম তো ।’
‘এরা এদের ফ্লোরগুলোকে ওভাবে নম্বরিং করে না । একতলার রুমগুলো 1-A, 1-B এভাবেই নম্বরিং ।’ সামনে থেকে জিয়া বলে বসে এবার ।

মেয়েটার ভুলটা বোঝে দুইজনই । আতংকে সেই রুমে ঢুকে আর বের হয় নি নিশ্চয় । নিজের রুম ছয়তলাতে এটা ভেবেই ফাইভ-এ বলে দেয় আসিফকে । আসলে ওটা ছিল 6-A ।

‘বের হলে কখন ?’ জানতে চায় আসিফ ।
‘এই তো – কালো কোট পড়া এক লোক এসে সবাইকে বেরিয়ে যেতে বলল হাতের কার্ড দেখিয়ে । বুঝলাম না ঠিক কি হয়েছে ! চেক আউট করিয়ে বের হয়ে দেখলাম তুমি গাড়িতে উঠে যাচ্ছ ! আরেকটু হলেই মিস করেছিলাম !’
একটু হাসে আসিফ । কিন্তু সেই সাথে পুরোনো একটা চিন্তা ওর মাথায় এসে ধাক্কা দেয় । এতক্ষণ জিনার গল্প শুনতে শুনতে যেটা ভুলেই গিয়েছিল প্রায় ।

স্নিফারস এই মাত্র খুন হওয়া লোকটাকে নিয়ে এত আগ্রহ দেখাচ্ছে কেন ?
মাথা ঝেড়ে চিন্তাটাকে সরিয়ে দিতে চায় আসিফ । জিনার সমস্যাটা নিয়ে ভাবা যেতে পারে । এটাই এই মুহূর্তে জরুরী ।
তবে এই কাহিনী শোনার আগে পর্যন্ত ও ভেবেছিল এই মাত্র হওয়া খুনটার সাথে জিনার সম্পর্ক আছে । তবে ঘটনা দেখা যাচ্ছে ভিন্ন ।

‘জিনা, তুমি আমার বাসাতে থাকবে কয়টা দিন । মা ছাড়া কেউ নেই । খালি বাসা পড়ে আছে । তোমার কোন অসুবিধে হবে না ।’ রায় ঘোষণা করে আসিফ ।
‘কি যে বল ! কয়দিন তোমাদের ঘাড়ে চেপে থাকব ? হুম ? এরচেয়ে আরেকটা ভালো হোটেলের কাছে আমাকে নামিয়ে দাও । আর সময় পেলে আমার ঝামেলাটার ব্যাপারে ভেব একটু । তাহলেই হবে ।’
‘এত ফর্মালিটি শিখলে কবে ?’ রাগ রাগ মুখে বলে আসিফ ।
‘আচ্ছা বাবা ! আর ভ্রু কোঁচকাতে হবে না । চল ওদিকেই । আন্টির সাথে দেখা করা হয় না অনেকদিন ।’
এক চিলতে হাসি ফোটে আসিফের মুখে । জিয়াকে কিছু বলতে হয় না । সবই শুনতে পাচ্ছে ও ।
বসের বাসাতে আজ একটা মেয়েকে রেখে এসেছে – এই খবর অফিসে চাউর হয়ে গেলে কি চমকটাই না খাবে প্রত্যেকে ! আর তৃণার চেহারাটাও নিশ্চয় দেখার মত হবে ! অপারেটর তৃণাকে ভেবে আনমনেই একটু হাসে জিয়া । চিরচেনা ডিটেক্টিভ আসিফের পাশে কোন মেয়েকে কল্পনাও করতে পারে না ওরা । পাথুরে একটা খোলসের ভেতরে থাকে আসিফ সবসময় ।

আসিফ আর জিনাও চুপ হয়ে গেছে পেছনে হঠাৎ । তবে আসিফের মাথায় জিয়ার মত হাল্কা জিনিসগুলো আসে না । ও ভাবছে সম্পূর্ণ নতুন কিছু নিয়ে ।
মৃত লোকটার মানিব্যাগ পকেটেই ছিল । সেখান থেকে নামটা জানতে পেরেছে ও শুধু ।
আসাদ রউফ । ব্যাবসায়ী ।
ইনার কি সমস্যা ছিল ? হোটেল সুরভীতে উঠেছিলেন কেন ?
জিনার মতই প্রাণভয়ে ভীত কেউ ?

তা নাহলে কোমড়ের কাছে গানপাউডারের গন্ধ পাওয়া যাবে কেন ?
সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে আসিফ, ফোনটা বের করে কল দেয় তৃনাকে ।
‘আসাদ রউফ সম্পর্কে তথ্য দরকার আমার । বিজনেসম্যান ।’
‘জানাচ্ছি ।’ তৃণা ফোন রেখে দিতে উদ্যত হলে দ্রুত আবার মুখ খোলে আসিফ ।
‘ইনার লাইসেন্স করা পিস্তল আছে কি না জানাটাও দরকার । আর হ্যাঁ ...’ জীবনের প্রথমবারের মত বলে আসিফ কথাটা, ‘এই সার্চের ব্যাপারে অফিসে জানানোর দরকার নেই । সার্চ হিস্টোরি ডিলেট করে দিবে যদি পার ।’

ফোনের ওপাশে হতভম্ভ তৃণাকে রেখে মোবাইল পকেটে ঢোকায় আসিফ ।
স্নিফার্সকে ভুলে গেলে চলবে না । ওদের কেসে আসিফ নাক গলাচ্ছে জানতে পারলেই হোমিসাইডের বারোটা বাজাবে জবাবদিহি চেয়ে ।

একঘন্টা পর আসিফ যখন ওর ছোটখাট বাসাটার সামনে নামে জিনাকে নিয়ে পেছন থেকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে জিয়া ।
মেয়েটাকে বসের সাথে বেশ মানাচ্ছে !

পকেটে মোবাইলটা ভাইব্রেট করছে । ওদিকে হাত বাড়ায় জিয়া ।
থমকে গেছে বসও – বিশ ফিট সামনে । পকেটে হাত ঢুকাচ্ছে সেও ।
বুঝে ফেলে জিয়া কি দেখতে পাবে মোবাইলে ।

এইমাত্র কোন ডেডবডি পেয়েছে হোমিসাইড ।
অন্য ফিল্ড অপারেটরদের মত আপডেট জানানো হয়েছে আসিফ আর জিয়াকেও !

*
জিনাকে বাসায় রেখে দ্রুত বেড়িয়ে এসেছে আসিফ ।
মেয়েটাকে বাসাতে রাখার আগেই অফিসের আপডেট পেয়ে যায় ওরা । কাজেই আবার ছোট !

‘মালিবাগেই এই বডিটাও ।’ নিচু স্বরে যেন মনের কথাটাই মুখে উচ্চারণ করে ফেলে জিয়া ।
‘জিনার সাথে লিংক খোঁজার মানে হয় না, জিয়া ।’ বিরক্তির সাথে বলে আসিফ, ‘এই শহরে প্রায় রোজই মার্ডার হচ্ছে । মালিবাগে হতে সমস্যা থাকার কথা না ।’
বসের ধমক একটাই যথেষ্ট । কাজেই আর কিছু না বলে গাড়ি চালায় জিয়া ।

ভাইব্রেট করতে থাকা মোবাইলটা বের করে অবাক হয় আসিফ । তৃণা !
‘হ্যালো ?’
‘আনঅফিশিয়ালী কিছু জানানোর ছিল, স্যার ।’ তৃণার কন্ঠে একটু ব্যস্ততা ?
ইঙ্গিতটা ধরতে পারে আসিফ । আসাদ রউফের ব্যাপারে কিছু জেনেছে মেয়েটা !
‘আসাদ রউফের নামে কোন আগ্নেয়াস্ত্র ইস্যু করা নেই ।’
‘নিরীহ ব্যবসায়ী ?’, গলায় বিদ্রুপ রেখে জানতে চায় আসিফ - গানপাউডারের গন্ধ ও স্পষ্টই পেয়েছিল !
‘ব্যাবসায়ী পরিচয়ে ভুল বোঝার অবকাশ নেই । ইনার নামে আগে বেশ কয়েকবার অভিযোগ উঠেছিল । যদিও প্রতিবারই সেগুলো খন্ডন করেছেন । তবে মজার ব্যাপার হল – যেসব অপরাধের সন্দেহের তালিকাতে তাকে পেয়েছে পুলিশ ডিপার্টমেন্ট – সব ঘুরে ফিরে একই ।’
‘কি সেটা ?’ কানে ফোন চেপে ধরে আসিফ ।
‘ড্রাগস ।’
‘হোয়াট ?’

আসিফের মুখ থেকে স্বতস্ফূর্তভাবেই বেড়িয়ে যায় শব্দটা ।
খুব বেশি হলে তাহলে আসাদ রউফ একজন ড্রাগ ডীলার ! একজন ড্রাগ ডীলারকে কেন স্নিফার্স এতটা গুরুত্ব দিবে ?
ডিএনসি [ডিপার্টমেন্ট অফ নারকোটিকস কন্ট্রোল ] তাহলে কি করতে আছে ?
সবকিছুই এলোমেলো লাগছে আসিফের ।

‘আরেকটা অদ্ভুত ব্যাপার আছে স্যার ।’ তৃণা থামে না ।
‘বলো ।’
‘আরেকটা কেসে সন্দেহ করা হয়েছিল মিস্টার আসাদকে ।’
‘কোন ধরণের কেস ?’ জানতে চায় আসিফ ।
‘প্রস্টিটিউশন ।’
এবারের বিস্ময়ের ধাক্কাটা আরও জোরে লাগে আসিফকে ।
প্রস্টিটিউশন আর ড্রাগস ? বৈধ ব্যবসায়ীর কাভারে এসব ব্যবসাও চালিয়ে যাচ্ছিল আসাদ রউফ – সেটা ঠিক আছে । কিন্তু তবুও স্পষ্ট হল না – কেন স্নিফার্স তাকে নিয়ে মাথা ঘামাবে ? ওরা নারকোটিক্স কন্ট্রোল নয় !

‘স্যার । পৌঁছে গেছি আমরা ।’ জিয়ার গলাতে বাস্তবে ফিরে আসে আসিফ । তৃণাও লাইনে আছে ।
‘গ্রেট জব, তৃণা । পুরোনো ফাইলগুলো দ্রুত আনিয়ে নাও – আসাদ রউফ সম্পর্কে যে থানাতে যা পাওয়া যায় । আমার ডেস্কে রাখবে । ওকে ?রাতে ফিরতে দেরী হলে বাসায় পাঠিয়ে দেবে ।’
‘ইয়েস, স্যার ।’ বাধ্য মেয়ের মত বলে তৃণা ।

ফোন পকেটে রেখে গাড়ি থেকে নামে আসিফ । তৃণার প্রতি কৃতজ্ঞতা অনুভব করছে ।
মেয়েটা জানে এই তথ্য নিয়ে একটু সমস্যা আছে । তবে অন্যায়ের প্রতি আপোষহীন আসিফ স্যারের ব্যাপারে ভালোমতই জানে ও । কাজেই নির্দ্বিধায় সাহায্য করছে ।

বাড়িটা দোতলা ।
ঢুকতেই একটা চিপা সিঁড়ি । সেটা বেয়ে দোতলাতে দুইপাশে দুটো দরজা । আলাদা আলাদা দুটো ফ্ল্যাট ।
বামদিকের দরজাটা খুলে আছে ।

ভেতরে ক্রাইম সীন ইউনিটের লোকেরা ঘুর ঘুর করছে । ছবি তুলছে । এভিডেন্স কালেক্ট করছে ।
শূন্য ঘর । কোন আসবাব পত্র নেই । ঘরের এমাথা থেকে ওমাথা পর্যন্ত রক্তের ধারা চলে গেছে ।
গা শিরশির করে ওঠার মত একটা দৃশ্য ।
শেষ মাথায় পড়ে আছে মেয়েটা ।

এগিয়ে আসে মেডিক্যাল এক্সামিনার তোফায়েল, ‘জিএসডব্লিউ স্যার । দুটো । পেটে দুটোই ।’
জিএসডব্লিউ মানে গান শট উয়ন্ড । এভাবেই শর্টকাটে বলে হোমিসাইডের ওরা । সময় বাঁচে এতে ।
একটু পেছনে ছিল জিয়া ।
বস অন্যদিনের মত জানতে চাচ্ছে না, ‘টাইম অফ ডেথ ?’ প্রশ্নটা ! একটু অবাক হয়ে সামনে আসে ও ।

মেঝেতে একটা লেখার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ডিটেক্টিভ আসিফ আহমেদ ।
ওদিকে চোখ ফিরিয়ে জমে যায় জিয়াও ।

নিজের রক্ত দিয়ে একটা শব্দই লেখে গেছে মেয়েটা ।
‘জিনা’ !


সামনের চেয়ারে বসে থরথরিয়ে কাঁপছেন যিনি – ইনিই এই বাড়ির মালিক সিদ্দিক মিয়া ।
যদি এই আধভাঙ্গা দোতলা বস্তুটাকে বাড়ি বলা যায় আর কি !
সামনে বসে থাকা সুদর্শন যুবকের পরিচয় পেয়ে ইনার কাঁপুনী দ্বিগুণ বেড়ে গেছে । একে পুলিশের ধাক্কাতেই কাহিল – তারওপর এসে জুটেছে এই ডিটেক্টিভ !

কড়া চোখে লোকটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে আসিফ । আরেকটু কুঁকড়ে যায় মানুষটা । চোখ সরিয়ে নেয় আসিফের চোখ থেকে ।
ওরা বসে আছে ওই বাসাতেই । বাড়িওয়ালার বাসাটাই ছিল দোতলার ডানের দরজা ।
কোন এক কারণে আসিফ চাচ্ছে না এই লোককে ডিপার্টমেন্টে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে । রুমের অন্য কোণাতে দাঁড়িয়ে থাকা জিয়া ব্যাপারটা বেশ বুঝতে পারছে । স্যারের মনে নিশ্চয় এখন আর সন্দেহ নেই বান্ধবী জিনার সাথে এই মার্ডার সম্পর্কযুক্ত !

মালিবাগ এলাকাতেই একের পর এক অঘটন ঘটতে পারে না জিনা নামের মেয়েদের সাথে । ব্যাপারটা পরিষ্কার ।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মুখ খোলে আসিফ ।

‘খুন হয়ে যাওয়া মেয়েটাকে চিনতেন আপনি ।’ প্রশ্ন নয় – কথার কথা, এভাবে বলে আসিফ ।
‘জ্ব-জ্বী !’ একটু কেঁপে উঠে বলে বাড়িওয়ালা লোকটা ।
‘ভিক্টিমের নাম ?’ ফোনের নোটপ্যাড চালিয়ে জানতে চায় আসিফ ।
‘অন্বীতা ।’
‘অন্বীতা ?’ ভ্রু কুঁচকে জানতে চায় আসিফ । অন্য কোন নাম আশা করেছিল যেন ।
‘জ্বী । অন্বীতা ।’ বাড়িওয়ালা জোর দিয়ে বলে ।
‘আপনি নিশ্চিত ?’ অবাক হয়ে বলে আসিফ ।
‘আমি হ্যারে দুই বছর ধরে চিনি ।’

বাড়িওয়ালার কথাতে এবার আরও অবাক হয় আসিফ । এই লোক মেয়েটাকে দুই বছর ধরে চেনে ?
আরেকবার চেষ্টা করে আসিফ, ‘আপনি নিশ্চিত মেয়েটার নাম মিতালি নয় ?’
ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে সিদ্দিক মিয়া । তারপর উদাস গলায় বলে, ‘ওদের আর নাম । এই মিতালি তো এই অন্বীতা । জীবনটা বড়ই নির্মম ।’

সুরটা দুইজনের কানেই ধরা পড়ে । আসিফ আর জিয়া – দুজনই স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সিদ্দিক মিয়ার দিকে ।
‘পরিষ্কার করে বলুন !’ কঠোর সুরেই বলে আসিফ ।
‘পতিতা মানুষের আবার নাম কি ? এরা তো আসল নাম বলে না কারও কাছেই !’
‘পতিতা বলছেন – কারণ ?’
‘গত দুইবছর ধরেই এই বাসা নিয়ে রাখছিল মাইয়া । আরও কওন লাগব ?’ তেড়ে ওঠেন এবার সিদ্দিক মিয়া নিজেই ।

তথ্যটা হজম করতে সময় লাগে আসিফের ।
‘এখানেই থাকত মেয়েটা ?’ অবশেষে জানতে চায় ও, ‘মানে গত দুই বছর ধরে ?’
‘না । স্পেশাল কাস্টোমার থাকলে এখানে আনত । ভালাই কামাইত । শ্যাষ ছয় মাসে আর আসে নাই । একদম গতকাল হাজির ।’
‘শেষ ছয় মাসে আসে নি ? কেন ?’
‘আমি কি করে জানতাম ? আমারে কইয়া করে নাকি সব ? তয় ভাড়া ঠিকই দিছে ।’
‘তারপরে ? শেষ ছয় মাসে একবারও আসে নি ?’

আসিফের এই প্রশ্নে এবার একটু মাথা চুলকায় সিদ্দিক মিয়া, ‘না মানে – আসছিলো ... এই – তিন চারবার । তয় এবার এক পোলার লগেই আসত । নিজের বিজনেস করে ফেলছে মনে হয় !’

এত অল্প বয়েসে প্রস্টিটিউশনের ব্যবসা নিজের করে ফেলা যায় না – ভালোমতই জানে আসিফ । মেয়েটা নিজেই কর্ত্রী হয় নি । এই ছয়মাসে নিশ্চয় কোন উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ থেকে সরে গেছিল ও ।
কারণটা ওকে জানা লাগবে ।

‘শেষ তিনচারবার যেই ছেলেকে নিয়ে এসেছিল গত কাল কি তার সাথেই এসেছে ও ?’
এই প্রশ্নে মাথা নাড়ে সিদ্দিক মিয়া, ‘না । এইবার আসছিলো একা ।’
আসিফও মাথা নাড়ে, ‘পরে তো সেই ছেলে এসে দেখা করতেই পারে । আপনাদের নিচে তো কোন সিকিউরিটি থাকে না । জানবেন কিভাবে ?’
কিছুক্ষণ ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকে বাড়িওয়ালা, ‘তা ঠিক !’
‘চেহারার বর্ণনা দিতে পারবেন সেই ছেলের ?’ জানতে চায় আসিফ ।
‘পারুম না ক্যান ? একটু লম্বা কইরা – শ্যামলা কইরা ...’

আরও বর্ণনা দেওয়ার আগেই হাত তুলে ওকে থামায় আসিফ, ‘আমাদের স্কেচ আর্টিস্টের কাছে দেবেন এই বর্ণনা ।’
‘কার কাছে ?’ আবারও শুন্য দৃষ্টিতে তাকায় বাড়িওয়ালা ।
‘আপনার বর্ণনা থেকে একটা ছবি এঁকে দেবেন উনি আমাদের । আসামী ধরার জন্য কাজটা আমাদের জন্য সহজ হয়ে যায় ।’

স্কেচ আর্টিস্ট জোগাড় করে ‘পোষা’ হচ্ছে মোটা টাকা দিয়ে ।
বাইরের দেশগুলোতে রাস্তার কোণায় কোণায় প্রাইভেট ডিটেক্টিভদের পর্যন্ত স্কেচ আর্টিস্ট থাকতে পারলে বাংলাদেশের সরকারী বিভাগে এক আধজন রাখা যাবে না ? আসিফের চাপাচাপিতেই ব্যবস্থা করতে রাজী হয়েছেন কমিশনার রেজাউল করীম ।
এর মাঝে দুই-চারটি করে কেসে প্রত্যেকেই অসম্ভব হেল্প পেয়েছে স্কেচের । বেশ দ্রুতই সাসপেক্টকে আটকে ফেলতে পেরেছে ডিটেক্টিভরা ।

‘জিয়া – উনাকে সাথে করে নিয়ে যাও তো ডিপার্টমেন্টে ।’ পকেটে মোবাইল ঢোকাতে ঢোকাতে বলে আসিফ, ‘আর সিএসইউকে জানিয়ে দাও আমার ফোনে যেন ভিক্টিমের ছবি পাঠিয়ে দেয় । স্কেচের কাজ হলে আমাকে জানাবে । তার আগ পর্যন্ত বাসাতেই আছি আমি ।’
বসের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে জিয়া । জিনা মেয়েটার জন্য স্যারের দেখা যাচ্ছে বেশ একটা সফট কর্ণার আছে !

পেছনে দরজা লাগিয়ে বের হয়ে আসে আসিফ ।
জিয়াকে সাথে আনতে চায় নি । গাড়িতে উঠে ইঞ্জিন স্টার্ট দিয়ে ঝড়ের বেগে বের হয়ে যায় ও গলিটা থেকে ।
মার মেসেজটা ছিল সংক্ষিপ্ত, কিন্তু স্পষ্ট ।

স্কয়ার হাসপাতালে যেতে বলেছে মা ওকে ।
জিনা আর মা ওখানে কি করে ?
জিনা বেঁচে আছে তো ?


রাত বারোটা ।
ফাইলের স্তুপে প্রায় চাপা পড়ে গেছে ডিটেক্টিভ আসিফ আহমেদ ।
থানাগুলোকে প্রায় ফাঁকা করে ফেলেছে আসিফ । আসাদ রউফ নিয়ে মাত্র আটটা ফাইল ছিল । পাতলা ধরণের ।
সেখানে যার যার নামেই তথ্য পেয়েছে তাদের প্রত্যেকের ফাইল বের করিয়ে নিয়েছে থানাগুলো থেকে ।

আসাদ রউফ চরিত্রটা অবাক করে ওকে । হাই লেভেলের লোকজনের সাথে ওর সম্পর্ক ছিল দেখা যাচ্ছে ! এরকম একটা মানুষ কিভাবে ড্রাগস আর প্রস্টিটিউশনের সাথে জড়ায় ?
পরোক্ষভাবে জড়িত থাকলেও মূলতঃ ঢাকার বেশিরভাগ ড্রাগস আর প্রস্টিটিউশনের কন্ট্রোল ছিল এই আসাদ রউফের হাতেই – এমনটাই ধারণা করা হয় । কিন্তু কোন উপযুক্ত প্রমাণ নেই ।
ড্রাগস ইমপোর্ট হত নিরাপদে – আসাদের নজরদারিতে । ডিস্ট্রিবিউশন – আসাদের প্ল্যানিংয়ে । ঝামেলা সামলানোর জন্য সবদিকে কানেকশান – সেই আসাদেরই হাতে । প্রস্টিটিউশনের দিকেও এ এগিয়ে আছে দুই ধাপ । ব্রথেল ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ঢাকার অনেক জায়গাতে । সেগুলোর তত্ত্বাবধায়নে থাকে এলাকাভিত্তিক নিয়ন্ত্রক । কিন্তু সারা শহরে ছড়ি ঘুরায় এই লোকটা – আসাদ রউফ ।

অন্বীতার সাথে ওর কানেকশান ছিল নিশ্চয় ? অন্বীতাই মিতালি ?
ছবি নিয়ে জিনাকে দেখানোর ইচ্ছেটা পূরণ হয় নি । স্কয়ারে শুয়ে আছে মেয়েটা ।
পেটে দুটো বুলেট নিয়ে । ঠিক অন্বীতার মত !

সকালে নিজের বাসাতে মেয়েটাকে রেখে এসে নিরাপদ মনে করেছিল আসিফ । ভুলেও ভাবে নি প্রতিপক্ষ গাড়ি নিয়ে ওদের ফলো করতে পারে !
একটা প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে মাথায়, মেয়েটাকে হোটেলেই গুলি করল না কেন আততায়ী ?
বাসাতে রেখে আসতে না আসতেই এই অন্বীতার মার্ডার কেসে জড়িয়ে পড়ে ও আর জিয়া । দ্রুত বের হয়ে গেলেও – বাসার নিচে সিকিউরিটি গার্ডকে জানিয়ে এসেছিল আরেকটু কড়াকড়ি গার্ড দিতে ।
তারমাঝেও যে ভুলটা হয়ে গেল - সেটার জন্য আসলে কাওকে দায়ী করা যায় না ।
মা জিনাকে নিয়ে একটু ঘুরে আসতে চান বাসার পাশের পার্কটা থেকেই । মেয়েটা মনমরা হয়ে ছিল । ভেবেছিলেন মন ভালো হবে ।

বাইরে অপেক্ষা করছিল অনুসরণকারী । পার্কের ভেতর ঢোকার কয়েক মিনিটের মাঝেই হঠাৎ ঢলে পড়ে মেয়েটা – পেটের কাছটা লাল হয়ে ওঠে ওর ।
চারপাশে অনেক লোকের ভীড় জমে যায় কয়েক সেকেন্ডের মাঝেই । তাদের সহযোগীতায় কোনমতে জিনাকে নিয়ে স্কয়ার পর্যন্ত পৌঁছেছেন মা । কিন্তু মেয়েটা এখনও অচেতন ।
ভেতরে তীব্র একটা ক্রোধ অনুভব করে আসিফ ।

বার বার জিনাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে কেন ? এই প্রশ্নের জবাব পায় নি ও খুঁজেও ।
আসাদ রউফের লাশ শকুনের মত পাহাড়া দেবে কেন স্নিফার্স ?
অন্বীতা আর আসাদের মার্ডার কি ইন্টারকানেক্টেড ?
প্রশ্নগুলোর উত্তর নেই । কানাগলিতে দাঁড় করিয়েছে ওরা আসিফকে ।


জিনার বান্ধবী একজন প্রস্টিটিউট ছিল ? নাকি অন্বীতা অন্য কেউ ?
যদি যুক্তির খাতিরে ধরে নেওয়া যায় অন্বীতাই মিতালি – তাহলে একটা লিংক পাওয়ার আশা করতে পারে আসিফ । আসাদের প্রস্টিটিউশনের ব্যবসা ছিল । তার মৃত্যুর পর এটা ধরে নেওয়াই যায় । অন্বীতার সাথে কোনভাবে আসাদের কানেকশন থাকতেই পারে !
এবং জিনার বান্ধবী হওয়ার কারণে জিনাকে কি কোনভাবে জড়িয়ে ফেলেছিল অন্বীতাবেশী মিতালি ?
এমন কিছু বলেছিল যেটা জানার কথা না জিনার ? যেটা জানার অপরাধে মৃত্যুদন্ড দিতে পারে কেউ ?

শত প্রশ্ন এসে জমা হয় আসিফের মনে । অনেকগুলো ‘যদি’ আর ‘হয়ত’ জড়ো হয় সেই সাথে ।
উঠে দাঁড়ায় যখন ও সব ফাইল পড়া শেষে – রাত চারটা বাজে ।
চারঘন্টার একটা ঘুম দরকার – কালকে কাজ আছে । বিছানায় নিজের শরীরটা এলিয়ে দিতে না দিতেই ঘুমে তলিয়ে যায় দুশ্চিন্তায় মগজ ভারী করে রাখা ডিটেক্টিভ ।

*
ছোট একটা বার । লুকানো ।
মদ্যদ্রব্য বিক্রয়ের লাইসেন্স নেই এদের । কাজেই চমৎকার রেস্টুরেন্টের পেছনে একটি গোপন কামরায় চলে এই বেচাকেনা । পরিচিত কাস্টোমাররাই আসে । বাকিদের ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয় না কোনভাবেই ।

ট্যারা রাজনকে ঢুকতে দেখে বারটেন্ডারের মুখে একচিলতে হাসি ফোটে । শালা মদ খেতে জানে বটে ! আর বিল পরিশোধও করে নগদে ! তবে তার সাথে থাকা মানুষটাকে চিনতে পারে না ও । রাজনের বন্ধু হবে হয়ত !
‘মাল দাও দোস্ত !’ প্রতিদিন এসে যেভাবে বলে আজও সেভাবেই বলে রাজন । গলা চড়িয়ে ।
অবশ্য এই মিনিবারের ভেতরও বেশ জোরেই মিউজিক বাজছে । সাউন্ডপ্রুফ রুমের সুবিধে পুরোপুরি উপভোগ করছে এখানে আসা উঠতি বয়েসের ছেলেমেয়েগুলো ।
‘সাথে কে ? নতুন দোস্তের জন্য কি দেব ?’ রাজনের প্রিয় ককটেল বানাতে বানাতে জানতে চায় বারটেন্ডার হাসিমুখেই ।

জবাবে নিজের ব্যাজটা সাবধানে বারটেন্ডারের সামনের টেবিলে রাখে আসিফ ।
‘ডিটেক্টিভ !’ চোখ বড় বড় করে রাজনের দিকে তাকায় বারটেন্ডার অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে । যেন রাজনের বিশ্বাসঘাতকতা সে বিশ্বাসই করতে পারে না !
‘পেরেশানী লইও না মামা । কথা কইব শুধু । আমার দোস্ত মানুষ !’ অভয় দেয় ওকে রাজন ।
‘ট্যারা লোককে কোনদিনও বিশ্বাস করবি না’ – বলেছিলেন স্বর্গীয় পিতা । সেই কথা মেনে না চলার শাস্তি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে এখন বারটেন্ডার ।

‘আমি চাইলে একটা টাচ করেই তোমার ব্যবসার বারো দ্বিগুণে চব্বিশটা বাজাতে পারি ।’ হাতের মোবাইলটা নাচায় আসিফ ।
স্পষ্ট দেখতে পায় বারটেন্ডার – ওর বারের লোকেশন জানিয়ে একটা মেসেজ অলরেডি লেখে ফেলা হয়েছে । সেন্ড করা হচ্ছে ‘অফিস’ নম্বরে । শুধু ‘Send’ লেখা অংশটাতে একটা আলতো টাচই যথেষ্ট ওর ব্যবসার দফারফা করে দিতে । আর জেলখানা তো আছেই !
নিজের ভালোমন্দ বোঝার বয়েস হয়েছে বারটেন্ডারের ! ইঙ্গিতে পেছনের আরেকটা ছোট্ট রুম দেখায় আসিফকে ।
‘ওখানে কথা বলা যায় – কি বলেন ?’
মাথা ঝাঁকিয়ে সায় দেয় আসিফ ।

এই লোকের মাথাতে আসাদ রউফের মৃত্যুর পরবর্তীতে ড্রাগস ম্যানেজমেন্টের অবস্থা কি সেটা থাকতে বাধ্য । আসাদ রউফের রাইট হ্যান্ড ম্যান হিসেবে সন্দেহ করা হয়েছিল একে এক সময় ।
ভেতরে ঢুকে পিস্তলের ভয় দেখালেই যে গড় গড় করে সব বলে দেবে না সে ব্যাপারে আসিফ যথেষ্ট সচেতন ।

ভেতরের ঘরে ঢুকে দরজা লাগাতেই অনেকটাই কমে আসে বাইরের গানের শব্দ ।
লোকটার চোখের সাদা অংশটা হলদেটে টাইপ । আরেকটু হলদে হয়ে যায় আসিফের হাতে অস্ত্রটা বের হয়ে আসতে দেখেই ।
‘ওটা সরিয়ে রাখুন । কি জানতে চান বলবেন প্লিজ ?’
‘বাংলা লেখতে জানো ?’ ঠান্ডা গলায় জানতে চায় আসিফ ।
অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে লোকটা, ‘ফাজলেমী করতে নিশ্চয় আসেন নি ? যেটা বলবেন বলুন । আজেবাজে কথা বলে নষ্ট করার মত সময় আমার নেই !’
‘প্রশ্ন তো এই একটারই জবাব আশা করছি । বাংলা লেখতে জানো তো ?’ আসিফের চোখেমুখে ফাজলেমীর কোন লক্ষণ নেই ।
‘কে না জানে ?’ তাচ্ছিল্যের সুরে বলে লোকটা ।

বিদ্যুতের মত নড়ে ওঠে আসিফ – ডান হাতে পিস্তলটা ছিল, ঘুষিটা মারে বাম হাতে । দেওয়ালের ওপর ছিটকে পড়ে বারটেন্ডার । পিস্তলটা হাত থেকে ফেলে দিয়েছে আসিফ ততক্ষণে – ওটা মাটিতে পড়ার আগেই ডান হাতটাও আছড়ে পড়ে দেওয়ালে বাউন্স ব্যাক করে ফিরে আসতে থাকা মানুষটার মুখে ।
ব্যাথায় চোখে অন্ধকার দেখছে লোকটা – এই ফাঁকে চট করে পকেট থেকে একটা টেপ বের করে ঝটপট লোকটার মুখে পেঁচিয়ে দেয় আটপাক ।
শত চেষ্টাতেও কথা বলতে পারবে না এখন বারটেন্ডার – চিৎকার তো দূরে থাকুক । দুর্বল হাতে কয়েকটা ঘুষি মারার চেষ্টা করে অবশ্য আসিফকে – কিন্তু সুবিধে করতে পারে না । শক্ত ঘুষি দুটো খেয়ে এরই মাঝে মগজ নড়ে গেছে বেচারার ।

এইমাত্র ঢোকা দরজাটার সাথে লোকটার বাম হাতটা হ্যান্ডকাফ দিয়ে আটকে দেয় আসিফ ।
অন্যহাতটা খোলা থাকে । একটা কলমের রিফিল ধরিয়ে দেয় ওকে ওই হাতে । শুধুমাত্র রিফিল দিয়ে আক্রমণ করে সুবিধে করতে পারবে না বারটেন্ডার । পাতলা জিনিস । অস্ত্র হিসেবে কলমের মত কার্যকর নয় ।
নিজের পরিণতি দেখে হাসি পায় বারটেন্ডারের । ওর ডেরায় এসে আক্রমণকারী লোকটার সাহস আর কৌশলের প্রশংসা করতেই হয় । তথ্য আদায় করতে এসেছে – সেটা নিশ্চিত । ড্রাগ কার্টেলের কতটা ওপরে ওর পদ জেনেও ওর মুখ থেকে কথা বের করার চেষ্টা করতে এসে বোকামী করে ফেলেছে লোকটা । শত অত্যাচারেও ওর মুখ থেকে কেউ কথা বের করতে পারে নি ।

‘আমি প্রশ্ন করব । তুমি লেখবে । আন্ডারস্টান্ড ?’ জানতে চায় আসিফ ।
মুখ দিয়ে দুর্বোধ্য শব্দ করে লোকটা । নিশ্চয় ওর গুষ্টি উদ্ধার করছে ?
‘লেখে জানাও !’ কঠোর কন্ঠে বলে আসিফ ।
‘ফাক ইউ’ – আসিফের দেওয়া কাগজটাতে এটুকুই লেখে ও ।
ওটাকে পাত্তা না দিয়ে জানতে চায় আবার আসিফ, ‘আসাদ রউফ মারা যাওয়ার পর বিজনেস কে চালাচ্ছে ?’
জবাবে বারটেন্ডার লেখে - ‘টর্চার করে কথা বের করতে পারবি না । ওসবের মাঝে আমি কম যাই নি ।’
‘আঙ্গুল তো সবই আছে দেখছি । টর্চার হল কই তাহলে ?’ দাঁতে দাঁত চেপে বলে আসিফ । হাসপাতালের বিছানাতে পড়ে থাকা জিনাকে মনে পড়ে ওর । ড্রাগ কার্টেলটাই যে এজন্য দায়ী তা বলার অপেক্ষা রাখে না ।
একটু সরে এসে পিস্তলটা তুলে নিয়ে সাইলেন্সার লাগায় আসিফ । বিস্ফোরিত চোখে ওকে দেখে বারটেন্ডার । বাম হাত টান দিয়ে সরিয়ে নিতে চায় দরজার নব থেকে । আরেকটু সরে আসিফ – আসলে গুলি করলে সেটা যেন পাতলা দরজা ভেদ করে বাইরে চলে না যায় সেজন্য ওদিককা দেওয়ালে ঘেঁষে দরজার সমান্তরালে আসতে চেষ্টা করছে লোকটা – পরিষ্কার বুঝতে পারে বারটেন্ডার – শক্ত পাত্র এ ।
ওর নিজের বারেই ওকে টর্চার করে তথ্য বের করার মত সাহস যার আছে – সে কোন পর্যায়ের বেপরোয়া তা বলার অপেক্ষা রাখে না !
একটা মৃদু শব্দের সাথে সাথে উড়ে যায় বারটেন্ডারের বাঁ হাতের তর্জনী । আকাশ ফাটিয়ে চিৎকার করতে চাইলেও মুখে আটকে থাকায় একটুও শব্দ করতে পারে না মানুষটা ।
গায়েব হয়ে যাওয়া আঙ্গুলটা থেকে ছড় ছড় করে রক্ত বের হচ্ছে । কোন শিরা কেটে গেছে হয়ত গুলির ধাক্কায় !

‘আসাদ রউফের পর কার্টেল চালাচ্ছে কে ?’ আবার জানতে চায় আসিফ, ‘উত্তরটা পাওয়ার আগ পর্যন্ত প্রতি তিন সেকেন্ডে একটা করে আঙ্গুল উড়বে তোমার ।’ এবার আগের চেয়েও শীতল ওর গলা ।

ডান হাত থেকে কলমের রিফিলটা পড়ে গেছে বারটেন্ডারের – জবাব কোথা থেকে দেবে ?
তীব্র ব্যাথায় ডান হাত কুঁচকে আছে – দ্বিতীয় গুলিতে মধ্যমা উড়ে যায় ওর ।

ব্যাথা বেড়ে শতগুণ হয়ে যেতেই টেপ ভেদ করেও জান্তব শব্দ বের হতে থাকে ওর মুখ থেকে । সেই অবস্থাতেই দেখতে পায় আসিফকে পিস্তলটা আবার তুলতে ।
ডানহাতটা নিয়ন্ত্রণে আনে বারটেন্ডার সবটুকু মানসিক জোর একত্র করে রিফিলটা তুলে নেয় লোকটা ।

সাদা পাতাটায় লেখে একটা নাম –
“চুন্নু মিয়া” !


কালো সানগ্লাসে চোখ ঢাকা আসিফের ।
সারাজীবন নিষ্ঠার সাথে আইন মেনে কাজ করলেও এবার সত্য জানার জন্য আইন বহির্ভূত কাজ করে ফেলেছে ও । অবশ্য কেসটা এতই জটিল লাগছে – এতকিছুর পরও এটাকে সলভ করতে পারবে কি না বুঝতে পারছে না ।
সাধারণ মানুষ জানে না – হোমিসাইডের হাতে আসা সব কেসের সমাধান ডিটেক্টিভরা করতে পারে না । এইতো গেল বছরেই প্রতিরক্ষামন্ত্রীর মেয়েকে রেইপ করে খুন করা হয় – খুনীদের টিকিটিও ছুঁতে পারেনি আসিফরা ! এই কেসটাও ব্যর্থ হবে কি না বুঝতে পারছে না – হতাশা অনুভব করছে ।

‘অন্বীতার সাথে যে ছেলেটা দেখা করত তার স্কেচের খবর কি ?’ জানতে চায় ও জিয়ার কাছে ।
‘স্কেচ তো রেডী । কিন্তু এখন পর্যন্ত কারও সাথে মিলে নি । মানে রেকর্ডে যাদের নাম আছে আর কি ।’
পুলিশী ঝামেলায় পড়ে গেছিল এমন মানুষদের ছবি রাখা হয় । তাদের ছবির সাথে সাসপেক্টের ছবি মেলানো ছাড়া আপাতত ওই দিক থেকে আগানোর কোন উপায় নেই – বুঝতে পারছে আসিফ ।

‘স্যার, এই চুন্নু মিয়াকে পেলেন কোথায় ?’ জিয়া আনমনে প্রশ্ন করে ।
‘সোর্স ছিল কার্টেলে ।’ অপরাধবোধটা আবার সুক্ষ খোঁচা দেয় আসিফকে । কাজটা বেআইনী হয়েছে !

হাসপাতালের কেবিনে পুলিশী প্রহরার ব্যবস্থা করেছে গতকালই । জিনার ওপর আবার হামলার আশংকা আছে ।
লোকাল পুলিশ চেষ্টা করেও গুলি যে ছুঁড়েছিল তার ব্যাপারে জানতে পারে নি কিছু । ধারণা করা হচ্ছে সাইলেন্সার লাগিয়ে কোন কিছু দিয়ে পিস্তলটা ঢেকে সবার সামনেই – কিন্তু সবার অগোচরে গুলি করে কেটে পড়েছে আততায়ী ।
পার্কের ভেতর মানুষ ছিল অনেক । কাজেই এর চেয়ে বেশি ঝুঁকি নেয়া একজনের পক্ষে সম্ভব না । সেজন্যই হয়ত বেঁচে গেছে জিনা । ঠিকমত লাগাতে পারেনি ওকে ।
এখনও ওদের হাতে থাকা কেসগুলোতে অন্ধগলিতে আটকে আছে ওরা । অন্বীতার মার্ডার আর জিনার ওপর হামলা ।
যেই কেসটায় ক্লু পেয়েছে সেটা ওদের হাতে নেই । স্নিফার্স নিয়ে গেছে ওটা ।
আসাদ রউফের মৃত্যু রহস্য ।

‘মৃত্যুর মাত্র কয়েক ঘন্টা আগে গুলি করে আসাদ কাওকে লক্ষ্য করে । কাকে – সেটা জানা দরকার ।’ বিড় বিড় করে বলে আসিফ ।
‘স্যার ?’ ইতস্তত করে বলে জিয়া ।
‘চুন্নু মিয়ার লোকেশন তৃণা খুঁজে পেলেই আমরা বের হব ।’
‘কিন্তু স্যার – এই কেসটা আমাদের না ।’ অবশেষে বলেই ফেলে জিয়া ।

হতাশায় ছাদের দিকে তাকায় আসিফ । ও জানে এই কেসটা ওদের না । সেজন্যই ডিপার্টমেন্টে এনে ইন্টেরোগেট করতে পারছে না কোন সাসপেক্টকে । যেটা করে ফেলছে সেটা সম্পূর্ণ বেআইনী ।
‘আমার সিক্সথ সেন্স বলছে – কেসগুলো ইন্টাররিলেটেড । আসাদের সাথে মিতালির আর মিতালির সাথে জিনার কানেকশন ছিল । মৃত্যুর আগে নামটাও লেখে গেছে ও জিনার ।’
‘ইয়ে ... স্যার ? আসাদের সাথে মিতালির কানেকশনের ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত নই ।’ আস্তে করে বলে জিয়া ।
‘সেটা নিশ্চিত করার জন্যই আমাদের আরেকটু ডিগ করতে হবে ।’

দরজাতে তৃণার মাথা দেখা যায়, ‘স্যার – একটা সমস্যা ।’
‘কি ?’ একটু বিরক্ত হয়েই বলে আসিফ ।
‘ডাটাবেজে চুন্নু মিয়ার ফাইলগুলো সব সরিয়ে ফেলা হয়েছে হাই ক্লিয়ারেন্স লেভেলে । আমরা আর দেখতে পারব না ওগুলো ।’
‘স্নিফার্সের কাজ ।’ বিড় বিড় করে বলে আসিফ ।

চোখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে জিয়ার, ‘আমরা তাহলে ঠিক পথেই এগুচ্ছি ।’

শান্ত চোখে আবার তৃণার দিকে তাকায় আসিফ, ‘ওর লোকেশন সম্পর্কে জানা গেল কিছু ?’
‘আননোন ।’ কেমন করে জানি তাকায় মেয়েটা । সেটা ধরতে পারে আসিফ ।
‘তোমার কি মনে হয় ?’ চোখে কৌতুক মিশিয়ে বলে ও ।
‘স্নিফার্সের কাস্টডিতে আছে চুন্নু মিয়া ।’ একেবারে আসিফের মনের কথাটা বলে ফেলে তৃণা ।

ফোনটা তুলে কাওকে ডায়াল করে আসিফ, ‘হাল্লো ডিয়ার রিয়াজ ! কেমন আছ তুমি ?’
*
হেলেদুলে সাধারণ দেখতে বিল্ডিংটার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে একজন বৃদ্ধা ।
ঠেলে মেইন গেটটা খুলতেই আপাদমস্তক কালো পোশাক পরে থাকা একজন আটকায় তাকে, ‘প্রাইভেট প্রোপার্টি, মিস । সরে যান ।’

সত্তরোদ্ধ মানুষটা ‘মিস’ শব্দটা সহ্যই করতে পারেন না ।
‘আমাকে দেখে কি তোমার টীন-এজার মনে হয় ? যত্তসব !’ খনখনে গলায় বলে ওঠেন বৃদ্ধা, ‘দেখি, পথ ছাড়ো তো । আমার নাতিনের সাথে দেখা করতে এসেছি ।’
‘ইয়ে । নানী, ভুল ঠিকানাতে এসেছেন আপনি ।’
ভেতরে রাখা পাঞ্চারটাতে হাত বোলাতে থাকেন বৃদ্ধা, ‘নাতিন আমার এখানেই কাজ করে । বড় অফিসার ।’
অল্প শিক্ষিত মানুষটা হাল ছাড়ে না ।

সন্দেহ হয় স্নিফার্সের গার্ডের ।
‘গেট আউট, ম্যাম !’ কোমড়ের পিস্তলে হাত নিয়ে বলে গার্ড ।
দ্বিতীয় গার্ডও এগিয়ে আসে, ‘কি সমস্যা ?’
‘ইনি ভেতরে ঢোকার জন্য জোর খাটাচ্ছেন ।’ বলে প্রথমজন ।
‘না, ম্যাডাম । ঢুকতে পারবেন না এখানে । বাইরে চলে যান ।’ দ্বিতীয় গার্ড সায় দেয় প্রথমজনকে ।
‘কিন্তু আমার নাতনী তো ...’
‘উনাকে ফোন দিন । বাইরে গিয়ে ।’ বলে প্রথমজন ।

গেট ঠেলে ভেতরে ঢুকে একজন স্নিফার্স সদস্য । বুড়িকে দেখেই মেজাজ খিঁচড়ে যায় তার ।
‘এ ঢুকল কি করে ?’ কড়া গলায় জানতে চায় মানুষটা ।
‘ইয়ে স্যার ! ভেতরে নাকি উনার নাতি আছে বলছেন ।’ একটু কাচুমাচু খেয়ে বলে দুইজনই ।
‘বের করো ! চাকরি হারাতে চাও ?’ কড়া গলায় বলে স্নিফার্সের সদস্য । এর ব্যক্তিত্ব লক্ষ্য করার মত ।

এক মুহূর্ত একে অন্যের দিকে তাকায় গার্ড দুইজন ।
দ্বিতীয়জনই মুখ খোলে, ‘আপনাকে আগে দেখেছি বলে তো মনে হয় না ...’
বিদ্যুতবেগে হাত চালায় স্নিফার্সের পোশাক পড়ে থাকা হোমিসাইড ডিটেক্টিভ আসিফ আহমেদ ।
প্রথম গার্ড ঢলে পড়ে মাটিতে – একই সাথে দ্বিতীয়জন অস্ত্রের দিকে হাত বাড়িয়েছে – বৃদ্ধার এক মোক্ষম আপার কাটে চোখ কপালে উঠে যায় এরও !
মাটিতে পড়ে থাকা দেহ দুটোর দিকে তাকায় আসিফ, ‘কুইক জিয়া । বাথরুমে !’

বুড়ি আর আসিফ মিলে দুটো দেহ গার্ডদের জন্য রাখা বাথরুমে রেখে দেয় দ্রুত ।
‘বাই দ্য ওয়ে – চমৎকার অভিনয় ।’
‘ও কিছু না স্যার – কলেজে নাটক-ফাটকের সাথে যুক্ত ছিলাম ।’ একগাল হেসে বৃদ্ধার মেকআপ সরাতে থাকে জিয়া ।
একজন গার্ডের পোশাক খুলে ফেলতে থাকে আসিফ । ওটা পড়ে নেয় জিয়া ঝটপট ।
ইয়ারফোন আটকায় কানে দুইজনই ।
‘গেটে থাকো তুমি । সময় হলে আমি সিগন্যাল দেব । আমি চুন্নুকে নিয়ে আসি ।’

লম্বা পায়ে বেড়িয়ে পড়ে আসিফ – লিফটার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে জিয়া । যে কাজে নেমেছে – এদিক ওদিক হলেই সোজা জেলে যেতে হবে ওকে ।
বসের প্রতি একধরণের অন্ধ আস্থা সৃষ্টি হয়েছে ওর – যে কারণে প্রশ্নই আসে না কোন রকমের দোনমনার । জানে – আসিফ যে কারণেই এত বড় ঝুঁকি নিতে বলুক – তার পেছনের কারণটা অবশ্যই এই ঝুঁকির যোগ্য ।

এদিকে লিফটের ভেতর ঢুকে B2 বাটনে চাপ দেয় আসিফ । রিয়াজের কথা সত্য হলে ওখানেই থাকার কথা ওদের সেলগুলো । স্নিফার্সের নিজস্ব কাজে ওগুলো ব্যবহার করা হয় । যে কাওকে ধরে এনে তাতে আটকে রেখে অনির্দিষ্টকালের জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করার পূর্ণ অধিকার দেওয়া হয়েছে ওদের । মানবতাবিরোধী কাজ সন্দেহ নেই । কারণ স্নিফার্সের কোন জবাবদিহিতার বালাই নেই ।

প্লাস্টিকের নকল নাকটা একবার স্পর্শ করে দেখে আসিফ । ভেতরে সিকিউরিটি ক্যামেরা থাকতে বাধ্য । আসল চেহারা দেখিয়ে বেড়ানোর মত বোকামি এখানে আর হয় না । স্নিফার্স ওকে খুঁজে বের করবে পাঁচ ঘন্টার মাঝেই । তারপর চুন্নু মিয়া তো উধাও হয়ে যাবেই – সেই সাথে যাবে এত সাধের চাকরি । জেলখানাতে কয় বছর কাটাতে হবে সেটা একটা প্রশ্ন বটে !

লিফটের দরজা খুলে গেছে ।
সামনে অসংখ্য স্নিফার্স অফিসারের ডেস্ক দেখা যাচ্ছে । এদের মাঝ দিয়ে হেঁটে গেলে কারও না কারও মনে সন্দেহ জাগবেই । ডানে তাকায় আসিফ । কী-বোর্ডে অনেকগুলো চাবি ঝুলছে এককোণে ।
সেলের চাবিও কি এখানে রাখে ?
রাখার কথা তো না । রিয়াজের দেওয়া তথ্যগুলো মনে করার চেষ্টা করে । দুই মাস ছিল ছেলেটা স্নিফার্সে । তাও এক বছর আগের কথা ! কাজেই এতদিনে সব অপরিবর্তিত নাও থাকতে পারে । স্নিফার্সের কাজ দেখে দেশের স্বার্থ রক্ষার চাইতে ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রীদের স্বার্থ রক্ষাতেই ওদের বেশি তৎপর মনে হয়েছিল রিয়াজের । ঘৃণাভরে সরে আসলেও প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী বাইরের কাওকে তথ্য দেয় নি এতদিন ।
পুরোনো বন্ধু আসিফ অবশ্য ঘটনার গুরুত্ব বুঝাতে পেরেছে । যতদিন এই কেসের সমাধান হচ্ছে না – জিনার প্রাণের ওপর হামলা আসতেই থাকবে – সন্দেহ নেই ।

চারপাশে ভালো মত চোখ বুলাতে বুলাতে এগিয়ে যায় ও । এই বাসার ব্লু প্রিন্ট কোথাও থেকে ম্যানেজ করার সম্ভাবনা নেই – কাজেই যা দেখার চোখে দেখে নিতে হবে ওকে । তারপর ভেগে যাওয়ার প্ল্যানটা সেই অনুপাতে করতে হবে । হঠাৎ চমকে ওঠে আসিফ ।

ডিরেক্টরের দরজা থেকে বের হতে দেখা যাচ্ছে সালাউদ্দীন চৌধুরীকে ! এই লোক স্নিফার্সের ডিরেক্টর হল কবে ?
অন্যদিকে তাকিয়ে সামনে এগিয়ে যায় আসিফ । সালাউদ্দীনের সাথে ওর পুরোনো রেশারেশি আছে । লোকটা ছিল র‍্যাবে ।
এক কেসে ওর সাসপেক্টকে ধরে ফেলেছিল সালাউদ্দীনের ফোর্স । কোনঠাসা করে এনেছিল আসিফ আর জিয়া মিলেই – কিন্তু ভুল সময়ে ভুল জায়গায় থেকে সাসপেক্ট ধরা পড়ে যায় র‍্যাবের হাতে ।
সাসপেক্টকে ফেরত চায় আসিফ – প্রফেশনাল সহযোগীতা করার কথা যেখানে সালাউদ্দীনের – সেখানে লোকটাকে ক্রসফায়ারে মেরে ফেলে ও । সেই শেষ দেখা ওর সাথে সালাউদ্দীনের । তিক্ত কথা শুনিয়ে আসে ওকে আসিফ ।

এই লোকের সামনে ছদ্মবেশে থেকেও লাভ নেই – ঠিক বুঝে ফেলবে ।
লম্বা রুমটা পার করে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে আসিফ । সিঁড়ি নেমে গেছে নিচে । এদিক দিয়ে নেমে গেলেই কাস্টডির সেলগুলো পাওয়া যাওয়ার কথা । স্নিফার্স এরই মধ্যে সেগুলোর অবস্থান সরিয়ে না ফেললে ।
ধীরে ধীরে নেমে আসে আসিফ । বামের ছোট্ট ঘরটাই লক্ষ্য ওর । ওখানে থাকার কথা ক্যাপটিভ হোল্ডারের – নির্দিষ্ট কেউ নয় – তবে প্রতি সপ্তাহে একজনের ডিউটি পড়ে এখানে - চার ঘন্টার জন্য । প্রতিটি স্নিফার্সের জন্যই এটা বেশ বিরক্তিকর কাজ – অ্যাকশনে থাকতে পছন্দ করে তারা । ছোট একটা ঘরে চারটা ঘন্টা নষ্ট করতে চায় না কেউ ঠান্ডাভাবে ।

দরজাটা খোলা । ভেতরে স্নিফার্সদের গর্বিত পোশাক গায়ে জড়িয়ে বসে আছে মানুষটা ।
কোনরকম সম্ভাষণ ছাড়াই ভেতরে ঢুকে পড়ে আসিফ । একই সাথে ঝট করে দাঁড়ায় স্নিফার্সের সদস্য – আসিফ সেকেন্ডের ভগ্নাংশের মাঝে পিস্তল বের করলেও কমব্যাটে আসিফের চেয়ে দুইধাপ এগিয়ে এই লোক । নিখুঁত এক জুডোর প্যাচে উড়িয়ে দেয় ও পিস্তলটা – তারপরেই ঝাঁপিয়ের পড়ে আসিফের ওপর ।
স্নিফার্স লোক বাছাইয়ে কতটা সতর্ক হাড়ে হাড়ে টের পেয়ে থমকে যায় আসিফ । ও যে কোন থ্রেট হতে পারে সেটা বুঝতে একেবারেই বেশি সময় নেয় নি এই স্নিফার্স । উড়ন্ত মানুষটার মুখ বরাবর একটা সলিড ঘুষি চালায় আসিফ – কিন্তু ওকে অবাক করে দিয়ে সেই হাতটা ধরে আলগোছে আসিফকেই আছড়ে ফেলে ও মাটিতে ।
দড়াম করে আছড়ে পড়েই আসিফ বুঝতে পারে – এ যাত্রা আর চুন্নু মিয়াকে নিয়ে বের হয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না ওর পক্ষে ।
স্নিফার্স সদস্য কোমড়ের দিকে হাত বাড়িয়েছে – যেখানে আছে তার হ্যান্ডগানটা !


পায়ের কাছে এই মাত্র স্নিফার্স সদস্যের ছেড়ে আসা চেয়ারটা চোখে পড়ে আসিফের একেবারে সময়মত ।
পিস্তলটা ড্র করে ওর দিকে তুলছিল লোকটা – তার মাঝেই এক লাথিতে চেয়ারটা একটি নির্দিষ্ট কোণে শুন্যে ভাসিয়ে দেয় আসিফ । মোটামুটি ওজনের চেয়ারের ধাক্কা একেবারেই হঠাৎ করে পিঠে অনুভব করে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে স্নিফার্স সদস্য – সুযোগটা হাতছাড়া করে না আসিফ । এক ঝটকায় উঠে পড়েই কনুইয়ের নার্ভ সেন্টারে ঘুষি বসিয়ে এর পিস্তলটাও হাতছাড়া করে দেয় ।

তবে দমে যাওয়ার পাত্র নয় প্রতিপক্ষও । পরের তিনটি ঘুষি একেবারে হাড় পর্যন্ত অনুভব করে আসিফ - সেই সাথে ছিটকে যায় দেওয়ালে । বড় করে দম নিচ্ছে – এরই মাঝে দেখতে পায় অ্যালার্ম সুইচের দিকে এগুচ্ছে লোকটা ।
পেছন থেকে ঝাঁপিয়ে ওর ঘাড়ে পড়ে ওকে নিয়ে মাটিতে পড়ে আসিফ । চট করে উল্টো হয়ে যায় স্নিফার্স সদস্যও – কমব্যাটে অতি দক্ষ এই লোক । আসিফের গায়ের ওপর উঠে গেছে সেই সাথে – কাজেই মাটিতে ফেলেও খুব একটা সুবিধে করতে পারছে না ও । বরং প্রতিপক্ষ এইমাত্র চেপে ধরে আসিফের গলাটা । ধীরে ধীরে গলাতে চাপ বাড়ছে – দুর্বল হাতে লোকটাকে ওপর থেকে সরানোর চেষ্টা করে আসিফ ।
হাতের চাপ বাড়াচ্ছে স্নিফার্স সদস্য – আর সময়ের সাথে সাথে বাতাসের অভাব অনুভব করে আসিফ – সময় শেষ হয়ে আসছে দ্রুত । আরেকটু পর ওর মাথাতে একবুক নিঃশ্বাস নেওয়া ছাড়া আর কিছুই থাকবে না – প্রতিরক্ষার ক্ষমতা একেবারেই গায়েব হয়ে যাবে !

শরীরের সমস্ত শক্তি একত্র করে লোকটার বাম চোখের দিকে হঠাৎই এক আঙ্গুল চালিয়ে দেয় আসিফ । স্নিফার্স সদস্যের রিফ্লেক্স দেখার মত ! নিমেষেই সরে গিয়ে আঘাত এড়ায় – তবে সরতে গিয়ে আসিফের গলা থেকে হাত ছুটে গেছে !
সুযোগটা কাজে লাগায় ও – শুয়ে থেকেই দুই ঘুষিতে নাক-মুখ সমান করে দেয় স্নিফার্সের । ছিটকে দুই ফিট দূরে সরে গেছে লোকটার মাথা, এবার হাঁটুটাকে কাজে লাগায় আসিফ । নিশ্ছিদ্র একটা আঘাতেই কাটা কলাগাছের মত ওর পাশে লুটিয়ে পড়ে স্নিফার্সের প্রোডাক্ট ।

গড়িয়ে উঠে পড়ে আসিফ – হাঁফাচ্ছে, কাশছে সেই সাথে । বাম হাত দিয়ে খুলে নেয় স্নিফার্স সদস্যের কোমড়ে ঝুলে থাকা চাবির গোছা । তারপর টেবিলে রাখা ছোট ওয়াকিটকিটাও তুলে নেয় ও দ্রুত ।
দশটি সেল – করিডরের দুইপাশে পাঁচটি করে ।
এখন তাতে রাখা হয়েছে তিনজন মানুষকে । প্রত্যেকের চোখেই হতাশা ।

দুইপা এগিয়ে যায় আসিফ, ‘চুন্নু মিয়া ?’
কাঁপা পায়ে উঠে দাঁড়ায় একজন মানুষ । চল্লিশের কোঠাতে হবে বয়স । শরীরের এক ফোঁটা শক্তি আছে বলে মনে হয় না । তবুও চোখজোড়া জ্বল জ্বল করছে । বোঝাই যাচ্ছে – স্নিফার্সের নির্যাতনের শিকার ভালোই হতে হয়েছে ওকে । মুখ নিশ্চয় খোলে নি ? নাহলে সেলে নয় – মর্গে চলে যেত এতদিনে । স্নিফার্সের ভালোই রেকর্ড আছে খুনখারাপীতে ।
শক্ত পাত্র !

সেলের তালা খুলে দেয় আসিফ, ‘আপনাকে বের করে নিয়ে যেতে এসেছি আমি । লেটস গো ।’
*

খর খর করে ওঠে নিচে দাঁড়িয়ে থাকা জিয়ার কোমড়ের ওয়াকিটকি । গার্ডের ড্রেস নেওয়ার সময় এই জিনিসও পকেটে চলে এসেছে ওর । তবে রেডিওতে বলা শব্দগুলো শুনে প্রমাদ গুণে ও ।

‘সেল সিকিউরিটি হ্যাজ বিন অ্যাটাকড ! ইনভেডরস ইনসাইড ! হি ইজ রিলিজিং সেলিজ । নীড ব্যাকআপ !’
আতংকিত একজন স্নিফার্সের গলা !

সেল প্রহরী স্নিফার্স সদস্যকে নিশ্চয় কব্জা করে ফেলেছিল বস ? তারপর সেল থেকে চুন্নু মিয়াকে উদ্ধার করতে নামতেই আরেকজন স্নিফারের চোখে পড়ে গেছে ?
বস বের হবে কি করে ?

একটা নাম্বারে কল দেওয়ার জন্য হাত নিশপিশ করলেও নিজেকে শান্ত রাখে জিয়া । সময় হয় নি !

তবে নিচের স্নিফার্সদের প্রত্যেকে শুনেছে অনুপ্রবেশকারীদের আক্রমণ করতে যাওয়া স্নিফার্স সদস্যের আর্তনাদ ।
একমুহূর্ত সবাই যেন নিজ নিজ ডেস্কে থমকে যায় ।
নীরবতা ভাঙ্গে ডিরেক্টর সালাউদ্দীন চৌধুরী – নিজের রুম থেকে বের হয়ে হুংকার ছাড়ে, ‘গো গেট দেম, ইউ ইডিয়টস !’

গেটের গার্ডদের এরিয়া লকডাউন করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে ওয়াকিটকিতে – শুনতে পায় ও, প্রতিউত্তরে সম্মতিসূচক দুটো শব্দ উচ্চারণ করে চুপ হয়ে যায় ও । ওপরের ওরা ভাবতে থাকুক – বাইরে গার্ড দুইজন এখনও ঠিক আছে ।

*
হুড় মুড় করে নেমে আসছে জনা পনের স্নিফার্স সদস্য । সব মিলিয়ে এই কজনই ছিল অফিসে । সেলের দিকে নেমে যাওয়ার রাস্তাটার দিকে বাইরে নয়জন পজিশন নেয় – চটপট ঢুকে পড়ে বাকি ছয়জন ।
প্রত্যেকের হাতেই উদ্যত পিস্তল । ক্লোজ রেঞ্জে হ্যান্ডগানই যথেষ্ট । ভারী অস্ত্র নিয়ে নড়াচড়াতে ঝক্কি । তাছাড়া ওয়াকিটকিতে সাহায্যের আবেদন শুনে এরা আক্ষরিক অর্থেই যার হাতের কাছে যা ছিল তাই নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে ।
প্রথম রুমের ভেতর গার্ড মানুষটা অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে সেই আপডেট এদের আগেই দেওয়া হয়েছে – তবুও উঁকি দিয়ে একবার দেখে নেমে আসা ছয়জনের একজন । এবং থমকে দাঁড়ায় ।

‘দেখে যান, স্যার !’ সিনিয়র স্নিফার্স সদস্যকে ডাক দেয় লোকটা ।
দরজার কাছে এসে হা হয়ে তাকিয়ে থাকে বাকি পাঁচজনও । পড়ে থাকা গার্ডের শরীরের কাপড়গুলো নেই ।
বিস্মিত ছয়টা মুখের সামনে হাল্কা ‘বুম’ জাতীয় শব্দে ফাটে স্মোক গ্রেনেডটা ।

একে অন্যের ওপর ঢলে পড়ে বোমার কাছেই থাকা ছয় স্নিফার্স - নাইট্রাস অক্সাইডের প্রভাবে এদের বেশ কিছুক্ষন সেন্সলেস থাকার কথা ।
কিছুই না বুঝে তাদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসা পরের দুইজনও একটা বোকা বোকা হাসি দিয়ে আছড়ে পড়ে মেঝেতে ।

তবে বাকিরা সতর্ক হয়ে গেছে । অস্ত্রের ওপর ট্রিগার রেখে টানটান স্নায়ু নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে ওরা । সাতজন সাতদিকে খুঁজছে শত্রুকে ।

*
‘চরম খেল দেখাইলেন, বস !’ খুশিতে বলে ওঠে চুন্নু মিয়া ।
হামাগুড়ি দিয়ে ভেন্টিলেশন শ্যাফটের ভেতর দিয়ে এগিয়ে চলেছে ওরা ।
ভেতরে ঢোকার সময় সবগুলো শ্যাফটের মুখ দেখে নেয়াতে এখন কাজে লাগছে । ওয়াকিটকিতে সবাইকে ডাক দিয়ে উঠে পড়ে ওরা সেলের গার্ডটা যেখানে অজ্ঞান হয়ে পড়েছিল সেখানে । চুন্নু মিয়ার শরীরেও স্নিফার্সের পোশাক । অজ্ঞান স্নিফার্স সদস্য থেকে ধার নেওয়া ।

বাড়তি সতর্কতার জন্য ওকে এটা পরে নিতে বলে আসিফ । কারণ বেজমেন্ট টু থেকে বের হওয়ার সময় আর কারও সামনে পড়ে গেলে অযথা ঝামেলা এড়াতে পারবে ওরা । স্নিফার্সের সদস্যরা তাদের কাজ ঠিকমত করেছে – ছুটে এসেছে আগে পিছে চিন্তা না করেই । এবং সঠিক সময়ে নার্ভ গ্রেনেডটা ফোকড় বরাবর ছুঁড়ে মেরে আরও দূরে সরে আসতে থাকে আসিফ চুন্নু মিয়াকে নিয়ে ।


দুইদিকে মোড় নেওয়া শ্যাফটের বামদিক বেছে নেয় আসিফ নির্দ্বিধায় । পিছু নিয়ে আসতে থাকে চুন্নুও । অপর শ্যফটের মুখের কাছে পৌঁছে গেছে ওরা । এদিক দিয়ে বাইরের সাতজনের পেছনে চলে আসতে পেরেছে ওরা । খুবই ধীরে ধীরে ঢাকনাটা সরাতে থাকে আসিফ । সেলের দিকে দশজন মত থাকার কথা কাভার দিয়ে । এতজনের সাথে একসাথে পারবে না ও ।

আসিফের জানা নেই – দশজন নয়, সাতজন টিকে আছে এখন স্নিফার্স হেডকোয়ার্টারে । আর তাদের ডিরেক্টর সালাউদ্দিন । চাপা গলাতে অধস্তনদের গালি দিয়ে তাদের ভূত ভাগাচ্ছে লোকটা ।

*
সালাউদ্দীনের পরামর্শ মত নাকে রুমালে পানি ভিজিয়ে সেটা পেঁচাচ্ছে স্নিফার্সের সদস্যরা । তারপর আবার ঢুকবে ওরা সেলের ভেতর । আধ ঘন্টার মাঝে অনুপ্রবেশকারীকে ধরতে না পারলে প্রত্যেকের পেছন দিকের চামড়া খুলে ছেলের জন্য ফুটবল বানানোর ঘোষণা দিয়েছে সালাউদ্দীন – উপেক্ষা করার মত নয় সেটা ।

‘স্যার, আপনি একটু সরে দাঁড়ান । তিরমিজি আর মাসুদ – স্যারের সাথে থাকো । আমরা পাঁচজনই যথেষ্ট ব্যাটাকে পেড়ে ফেলতে ।’ বাকিদের দিকে তাকায় হাইর‍্যাংক অফিসার ।
একটু হতাশ মনেই সালাউদ্দীনকে এসকর্ট করে পেছনের দিকে সরতে থাকে তিরমিজি আর মাসুদ । অ্যাকশনের যাওয়ার জন্য প্রত্যেকে পাগল থাকে । কিন্তু এখন দূরে থাকতেই হচ্ছে । কাজেই বিরক্তি লাগাটা স্বাভাবিক । গজগজ করে সালাউদ্দীন আবার মনে করিয়ে দেয় তার প্রতিজ্ঞার কথা ।

অস্ত্র হোলস্টারে রেখে করে নাকের মাঝে রুমাল গুঁজে নিতে থাকা স্নিফার্সদের ঠিক মাঝে এসে আরেকটা নার্ভ গ্যাস গ্রেনেড বিস্ফোরিত হতেই চমকে ওঠে প্রত্যেকে ।
শত্রুপক্ষ ওদের থেকে এগিয়ে থাকছে সব সময় ! এখন পর্যন্ত চোখের দেখাও দেখতে পায় নি ওরা । তার মাঝেই আটজনকে ঘায়েল করে দিয়েছে ওদের !
এরই মধ্যে নার্ভ গ্যাসের ক্ষমতা দেখা হয়ে গেছে ওদের । কাজেই সামনে বিস্ফোরিত হওয়া গ্যাস বোমাটার ইফেক্ট স্পষ্ট হয়ে যায় প্রত্যেকের কাছেই । স্বাভাবিক রিফ্লেক্সে একদিকে ঝাঁপিয়ে সরে যেতে চায় ওরা – শুধু একজন স্নিফার্সকেই দেখা যায় সঠিক সিদ্ধান্তটা নিতে পেরেছে – নাকে পানি ভেজা রুমাল ধরে সরে যাচ্ছে প্রাণপনে !
স্নায়ু টান টান করা উত্তেজনা আর নিতে পারে না লোকটা – পিস্তল বের করে ধাঁই ধাঁই করে গুলি ছুড়তে শুরু করে যেদিকে পারে !

এদিক ওদিক ঝাঁপিয়ে পড়া স্নিফার্সদের কেউই রক্ষা পায় না গ্যাসের আলিঙ্গন থেকে – ঢলে পড়ে মেঝেতে ।

একটু সরে যাওয়া সালাউদ্দীনের এসকর্টরা জ্ঞান হারায় নি – তবে মাথা ঘুরছে ওদেরও । টলে টলে সরে পড়ার চেষ্টা করতে থাকতেই দেখতে পায় ওপর থেকে নেমে আসছে মৃত্যুদূত । নাকে একটা অদ্ভুত মাস্ক পড়ে আছে – কাজেই শরীরে স্নিফার্সের পোশাক থাকলেও মানুষটা যে বহিরাগত সেটা বুঝতে সমস্যা হওয়ার কথা না এতকিছুর পরও । কাঁপা হাতে পিস্তলের দিকে আঙ্গুল বাড়ায় ওরা । কিন্তু ওদের থেকে বেশ এগিয়ে লোকটা । বিদ্যুতবেগে কাছে এসে নার্ভসেন্টারে আঘাত করতেই দুইজনই জ্ঞান হারায় ।

বুদ্ধিমান স্নিফার্স নাকে রুমাল বেঁধে নিজেকে রক্ষা করলেও এই মুহূর্তে হতভম্ভের মত তাকিয়ে ছাড়া আর কিছু করার নেই তার । একটু আগে পাগলা ফায়ারিং-এ ম্যাগাজিন খালি করে ফেলেছে সে ।
বিশফিট সামনে থেকে এক গুলিতে তার হাতের পিস্তলটাও উড়িয়ে দেয় আসিফ ।

‘রুমালটা খুলে ফেল ! নাহলে গুলি করতে বাধ্য হব ।’ কঠোর কন্ঠে বলে ও ।
চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে স্নিফার্সের সদস্য ।
গর্জে ওঠে আসিফের পিস্তল আরেকবার । এবার নিজের কপালের পাশ দিয়ে বুলেটের তপ্তটা টের পায় লোকটা ।
আসিফ মিথ্যে হুমকি দিচ্ছে না বোঝে ও । আলগোছে নাক থেকে রুমালটা খুলে ফেলার সাথে সাথে টলে ওঠে স্নিফার্সের এই সদস্যও ।

চুন্নু মিয়ার কন্ঠে মনোযোগ টুটে যায় আসিফের ।
‘ভাইগা যাইতেছে তো !’


ছুটছে গাড়ি ।
পেছনের সীটে বসে আছে আসিফ আর জিয়া । পরনে এখনও স্নিফার্সের পোশাক ।
ড্রাইভিং সীটে রিয়াজ – আসিফের পুরোনো বন্ধু – স্নিফার্সের অবিচারে ক্লান্ত হয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে গেছে ও আগেই । প্রাক্তন স্নিফার্স হয়েও স্নিফার্সের বিরুদ্ধে কিছু করতে যাওয়ার অপরাধের শাস্তি একটাই – মৃত্যুদন্ড । বেশ ভালো মতই জানা ছিল ওর । সেকারণে বুকের ভেতর চাপা দিয়ে রেখেছিল ক্ষোভ এতদিন ।
আসিফ দেখা করে ওর সাথে গতকালই । ওকে প্ল্যানটা গুছিয়ে বলতে এতদিনে অন্যায়ের প্রতিবাদে কাজ করার সুযোগ পেয়ে আর ছাড়ে নি রিয়াজ । যতদূর সম্ভব তথ্য দিয়ে সাহায্য তো করেছেই – সেই সাথে ড্রাইভ করার দায়িত্বটা নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে স্বেচ্ছায় ।

রিয়াজের পাশেই বসে আছে চুন্নু মিয়া । তার দিকে একটা পিস্তল তাক করে রাখার দায়িত্ব বেশ খুশি মনেই গ্রহণ করেছে জিয়া । আসিফ ডুবে আছে গভীর চিন্তায় ।

গাড়ির পঞ্চম এবং শেষ আরোহী আছে পেছনের ট্রাংকে । ওটা বোনাস ।
হাতে একটা ছোট আকারের ব্রিফকেস নিয়ে পালাতে চেষ্টা করা স্নিফার্সের ডিরেক্টরকে আচ্ছা মত প্যাদানী দিয়ে গেটের কাছেই অচেতন করে ফেলে জিয়া । লোকটার ব্রিফকেস আসিফের হাতে থাকলেও খুলে দেখেনি এখনও ও ।
আগে চুন্নুটাকে জেরা করে বের করতে হবে কিছু তথ্য ।

এই কাজটাও হোমিসাইড ডিপার্টমেন্টে করা যাবে না । স্নিফার্সের বিরুদ্ধে এতবড় একটা অভিযান চালিয়ে এসেছে আসিফ – এটা কেউ জেনে গেলে ওকেও ফাঁসিতে ঝুলতে হবে নির্ঘাত । স্নিফার্সের কোন বাজে উদ্দেশ্য পাওয়া না গেলে সেটাই অপেক্ষা করছে ওদের সামনে । জানা থাকার পরও নির্বিকার আসিফ আর জিয়া ।
মার্ডার সলভ করাই ওদের কাজ । সেজন্য যে মূল্য দেওয়া লাগবে দিতে প্রস্তুত ওরা ।

আগের রাতেই ম্যানেজ করে ফেলা বাসাটার সামনে এসে থামে ওদের গাড়ি । জায়গাটা নির্জন ।
কারও চোখে না পড়েই ভেতরে ঢুকে যায় ওরা দুই বন্দীকে সাথে করে ।

চুন্নু মিয়া স্নিফার্সের ডেরা থেকে বের হয়ে আর হাসতে পারেনি । হাসতে পারেনি আসিফের পরিচয় জানার পর থেকে ।
তবুও ভেতরে ভেতরে স্বস্তি অনুভব করেছে অনেকটাই । স্নিফার্স থেকে হোমিসাইড ডিপার্টমেন্ট অনেক ভালো !
এই মুহূর্তে হাতে হাতকড়া পড়ে বসে থাকলেও মনে তেমন খেদ কাজ করে না ওর । ঘরের একমাত্র টেবিলটার অন্যপাশে রাখা আছে আরেকটা চেয়ার – তবে সেটাতে বসছে না ডিটেক্টিভ মানুষটা ।
লোকটা ওকে তার নাম জানায় নি । তবে এর চোখের মাঝে যেন কি আছে – চুন্নুর মনে হয় ওর ভেতরের সব পাপ পড়ে নিচ্ছে মানুষটা !

‘আসাদ রউফকে খুন করেছিলে কেন ?’ ঠান্ডা গলায় জানতে চায় আসিফ ।
একটু হাসে শুধু চুন্নু , বলে না কিছু ।
‘চুপ করে থেকে পার পাবে না, চুন্নু মিয়া ! আসাদ আর তোমার পার্টনারশীপ বিজনেস ছিল । খুন করার পেছনে অন্য কারও মোটিভ নেই । অপরাধ স্বীকার করে ফেল । শাস্তির মেয়াদ কমে আসবে অনেটাই । ’
‘আমারে আপনাগো কাস্টডিতে নেন তাইলে । চোরের মত পলাইয়া এই বাসায় উঠছেন ক্যান ?’ একটা প্রশ্নই করে চুন্নু ।

মুখ আটকে যায় আসিফের । চুন্নুর মত হাই লেভেলের অপরাধীর এই অসংগতিটা ধরে ফেলাটা স্বাভাবিক । অপরাধীকে অ্যারেস্ট করে নিজের বাসায় এনে জেরা করে না কোন গোয়েন্দা । ঘাপলার গন্ধ ঠিকই পেয়ে গেছে এই লোক ।

‘আসাদ রউফের সাথে কি হয়েছিল বলে ফেললেই মুক্তি পাবে তুমি । শেষ সুযোগ তোমার, চুন্নু ।’ আবার বলে আসিফ, ‘এর পর ডিপার্টমেন্টে নিয়ে গেলে আর কোন সুযোগ দেওয়া হবে না তোমাকে ।’
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চুন্নু, ‘আসাদরে কে মারছে বলতে পারি, স্যার । তয় আমাকে ছাইড়া দিতে হইব এরপরে । এইটার ডীলে আসেন আগে ।’

একমুহূর্ত চিন্তা করে আসিফ । তারপর মাথা দোলায় ।
‘কথা দিলাম ।’
‘আপনার কথার মূল্য নাই আমার কাছে । আমার হাতকড়া খুলেন । পাবলিক প্লেসে চলেন । তারপর আমি জানাতে পারি আসাদের ব্যাপারে । প্লেস আমি ঠিক করুম । আর সব কইয়া আমি হাওয়া হইয়া যামু বুঝতেই পারতাছেন । এবার বলেন আপনার সিদ্ধান্ত কি ?’

গ্যাঁড়াকলে ফেলে দিয়েছে ঘাঘু অপরাধী আসিফকে ।
সিদ্ধান্ত নিতে বেশ বেগ পেতে হয় আসিফের । তারপরে মাথা নাড়ে ও ।
‘স্নিফার্সের ডিরেক্টরের ফাইল থেকে যথেষ্ট তথ্য জানা হয়ে গেছে আমাদের । এখন তুমি নিজে থেকে স্বীকার করলে বেঁচে গেলে । নাহলে ডিপার্টমেন্টে নেয়ার ঝামেলা আমাদের করার ইচ্ছে নেই । এখান থেকে একটু দূরেই স্যুয়ারেজ কানেকশন । কেউ পড়ে গেলে সোজা তুরাগ নদীতে চলে যাবে । ’

আসিফের কথার তাৎপর্য বুঝতে সময় লাগে না চুন্নুর ।
মরিয়া হয়ে মাথা নাড়ায় ও, ‘কিন্তু খুনটা তো আমি করি নাই !’
‘কে করেছিল তাহলে ?’ ভ্রু বাঁকা করে জানতে চায় আসিফ ।
‘রায়হান আর ফিরোজ মিল্যা করছে কামটা । আসাদের ড্রাগ কার্টেলের লোক এরা ।’ মাথা নামিয়ে অবশেষে বলে ফেলে চুন্নু ।
‘আসাদের নয় শুধু । তোমারও ।’ আসিফ বলে, ‘ কিন্তু কেন ?’
‘বিশ কিলো হেরোইন সরিয়ে ফেলেছিল ওরা দুইজন মিল্যা । দুইজনই ওপরের লেভেলের । তারপরও কামটা কেন করল বুঝি নাই । পুরাই বিশ্বাসঘাতকতা ।’
‘তারপর ?’
‘ওরা তো স্বীকার করে না । তারপর আসাদে বারের সবার সামনে রায়হানরে গুলি করে কয়টা । আহত হয় রায়হানে । কিন্তু ফিরোজে এবার ডর খাইয়া যায় । দুইদিনের মাঝে চালানের মাল ফিরায় আনতে সময় দিছিল ওরে আসাদ । নাইলে রায়হানের মত তার কপাল ভালো নাও হইতে পারে – এটাও জানায় দিছিল । ’ চুপচাপ তাকিয়ে থাকা আসিফের দিকে তাকিয়ে আরও যোগ করে চুন্নু, ‘এইগুলা আসাদ খুন হওনের আগের রাইতের কাহিনী ।’
গাল চুলকায় আসিফ । নতুন দিক উন্মোচিত হচ্ছে !
‘এই ফিরোজটাকে কোথায় পাব ?’ জানতে চায় ও ।
‘ওরে এত সহজে পাইবেন না । তয় রায়হান কোন ক্লিনিকে আছে কইতে পারি । ওখানে ওরে পাবেন ।’

ঠিকানাটা জেনে নেয় আসিফ । বের হয়ে যাবে – আবার ঘুরে এসে জিজ্ঞাসা করে, ‘তোমাকে স্নিফার্স জেরা করত কেন তাহলে ? খুন না করেই থাকো যদি ?’
‘আপনে ওদের ফাইল থেকে কিছুই পান নাই তারমানে ।’ শ্লেষের সাথে বলে চুন্নু ।

কথা সত্য । অন্বীতা আর চুন্নুর নাম আর অসংখ্য ডাটা ছাড়া আর কিছু পায় নি ও ফাইলে । অন্তত অর্থবোধক কিছু পায় নি । আরও গবেষণা করতে হবে ওকে । তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সংযোগ থাকার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে এই কেসে । কাজেই কিছুক্ষণ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ও চুন্নুর দিকে ।

‘কিছুই পাই নি – তেমনটা নয় । চল্লিশ কোটি টাকার ব্যাপারে কিছু বলেছে তোমাকে স্নিফার্স ?’ গলা থেকে পরাজয়ের সুরটা লুকাতে পারে না আসিফ । ফলপ্রদ তথ্য নয় এগুলো । আরও বিভ্রান্তি বাড়িয়েছে ওর ।
‘এত টাকা !’ হা করে তাকিয়ে থাকে চুন্নু মিয়া ।
‘অন্বীতা বলে কাওকে চিনতে ?’ জানতে চায় আসিফ ।
মাথা দোলায় চুন্নু, ‘এইটা আবার কি ধারা নাম ! কিন্তু কইলেন না যে টাকাটার ব্যাপারে কিছু !’

চুন্নুর মাথায় টাকা ঢুকেছে ! বিষয় পাল্টাতে আগ্রহী নয় এখন । অন্য সময় হলে মুচকি হাসত আসিফ ।

‘টাকার ব্যাপারে তোমাকে কিছু জিজ্ঞাসা করে নি স্নিফার্স ?’ অবাক হয়ে বলে ও ।
‘আমারে একটা কথাই ওরা বার বার জিগাইত ।’ ধীরে ধীরে বলে চুন্নু, ‘পেনড্রাইভটা কোথায় রাখছি ।’
‘কিসের পেনড্রাইভ ?’ অবাক হয়ে যায় আসিফও ।
আসিফকে হতবাক করে দেয় চুন্নুর জবাব, ‘তা তো জানি না, স্যার ! জানলে কি আর এত মাইর খাইতাম !’

*
শান্ত মুখে গাড়ি চালাচ্ছে ডিটেক্টিভ আসিফ আহমেদ ।
প্রাইভেট ক্লিনিকটা বেশি দূরে নয় ।

সহকারী জিয়াকে পাঠিয়ে দিয়েছে ডিপার্টমেন্টে । ওখানে সবাই জানে অন্বীতা হত্যা রহস্য নিয়ে তদন্ত করছে আসিফরা । সে ব্যাপারেই ঘাটাঘাটি করতে পাঠিয়েছে ওকে আসিফ ।
অন্বীতা নামধারী মিতালি মেয়েটার ব্যাপারেও বেশ সন্দেহে আছে আসিফ । মেয়েটা জিনার নাম লেখে যাবে কেন শেষ মুহূর্তে ? জিনাকে সতর্ক করে দিয়েছিল যে ওর পেছনেও কেউ লেগেছে ?
মিতালির মৃত্যুর পরই শুরু হয়েছে জিনার পেছনে গুপ্তঘাতকের হামলা ।
মিতালি আর আসাদ রউফের মাঝে সম্পর্কটা আসলে কি ছিল ? আসাদকে মিতালি চিনতেই পারে – প্রস্টিটিউশনের সাথে যুক্ত ছিল লোকটা । কিন্তু কি নিয়ে এদের কানেক্ট করা যায় বুঝে না আসিফ ।
তার ওপর আবার স্নিফার্স ডিরেক্টরের কাছ থেকে উদ্ধার করা ফাইলটা থেকে বেশ বুঝতে পারছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর জড়িত থাকার ভালো সম্ভাবনা আছে এই কেসে । একজন প্রস্টিটিউট আর ড্রাগ ডীলারের সাথে কিভাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কানেক্টেড হন ?
চমৎকার মানুষ তিনি । মন্ত্রী হিসেবে অনেকের চেয়েই বয়েসে তরুণ।
এবং স্মার্ট ।
দেশের ইয়াং জেনারেশনের অনেকেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইমরান খানের ফ্যান ।

এই কেসটা বেশ ঘোরালো ।
তারপর আসে চুন্নু মিয়া ।
চুন্নু মিয়া আসাদের হত্যাকারী – এই বিশ্বাস রাখাটাই স্বাভাবিক ছিল । যেহেতু একসাথে কাজ করত ওরা – সেখানে মতের অমিল হতে পারে – সেখান থেকে খুনোখুনীতে গড়িয়ে ব্যবসা একার করে নেওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয় এই লাইনে ।
তাছাড়া চুন্নু মিয়ার সাথে স্বল্প সময় থাকাতেই আসিফের মনে হয়েছে – এই লোক মাস্টারমাইন্ড ক্রিমিনাল হতে পারে না ।

আসাদের প্ল্যান অনুযায়ী কাজ করত চুন্নু ? অন্যের অধীনের কাজ করতে করতে হাঁপিয়ে উঠে সরিয়ে দেয় আসাদকে ?
তাছাড়া আসাদ রউফ প্ল্যানিংয়ে ভালো হতে পারে – কিন্তু একেবারে নিখুঁতভাবে সবকিছুর বাইরে সে থাকতে শেখে নি । নাহলে পুলিশের খাতায় এতগুলো রেকর্ড উঠত না ওর নামে । ব্যবসার ক্ষতি হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা ছিল আসাদ দলে থাকলে । সেজন্যই কি ওকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে প্রথম সুযোগে ?

কিন্তু চুন্নু মিয়ার জবানবন্দী অনুযায়ী – খুনটা করেছে রায়হান আর ফিরোজ নামের দুইজন ওপরের দিকের ডীলার । ঝামেলাটা বেঁধেছে বিশ কিলোগ্রাম হিরোইন মেরে দেওয়া নিয়ে । রায়হানকে গুলি চালিয়েছে আসাদ – মৃত্যুর কয়েক ঘন্টা আগে । ভীতি ঢুকিয়ে দিতে চেয়েছে ফিরোজের মনে । যাতে বিশ কিলোগ্রাম হিরোইন ফিরে আসে জায়গা মত ।
ড্রাগস বলে নয় – যে কোন ক্রাইম সিন্ডিকেটই চলে এই ভীতির ওপর ভিত্তি করে । কেউ ভুল করেছে - দুই নম্বরী করছে – তাকে মৃত্যুদন্ড দিয়ে দাও । বাকিরা এমনিতেই গ্রামার মেনে কাজ করার অনুপ্রেরণা পাবে ।

মৃত আসাদ রউফের লাশের পাশে কয়েক সেকেন্ড থাকার সুযোগ পেয়েছিল আসিফ । তখনই গানপাউডারের হাল্কা গল্ধ ও পায় তার শরীরে ।

রায়হানকে গুলি করে নিজের হোটেল রুমে ফিরে আসতেই ফিরোজ পিছু নিয়ে গুলি চালায় আসাদকে ? নিজের মুক্তির জন্য এটা একটা পথ বটে !
বিশ কিলো হিরোইন মানে অনেক টাকা । নিজের করে জীবন চালানোর মত যথেষ্ট । ভাগীদার রায়হান গুলিবিদ্ধ – ফিরোজ সেই সুযোগ নিয়েছিল ? আসাদ সরে গেলে নির্বিঘ্নে পুরোটাই তার !
হতে পারে !

চিন্তার সমুদ্র থেকে উঠে আসে আসিফ ।
সামনে ক্লিনিকটা দেখা যাচ্ছে ।

রিসেপশনিস্ট মেয়েটা হাসিমুখে জানতে চায়, ‘স্যার, আপনার জন্য কি করতে পারি ?’
প্রতিউত্তরে চমৎকার একটা হাসি তাকে উপহার দেয় আসিফও, ‘আমার ফ্রেন্ড রায়হান এখানেই অ্যাডমিটেড । দেখা করতে আসছিলাম আসলে । রুম নম্বর ২৪৭ । দেখুন তো নাম আর রুম ঠিক আছে কি না ?’

কম্পিউটারে ঝুঁকে পড়ে মেয়েটা ।
‘জ্বী স্যার । রায়হান কামাল । ২৪৭ । ’
‘অনেক ধন্যবাদ আপনাকে ।’ এলিভেটরের দিকে এগুতে থাকে আসিফ ।

এলিভেটরের দরজা খুলে যেতেই তিনজন ডক্টর আর একজন রোগী নেমে আসে – অন্তত মানুষটাকে সাদা অ্যাপ্রনের ভীড়ে আসিফের রোগীর মতই লাগে ।
দোতলাতে উঠে সাতচল্লিশ নম্বর রুমে পৌঁছতে একটু হাঁটতে হবে ভেবেছিল ও – কিন্তু কাছেই পাওয়া যায় রুমটা ।
ভেতরে ঢুকে থমকে যায় আসিফ ।

বিছানা শুন্য ।
রায়হান কামাল নেই এখানে । চলে গেছে এরই মধ্যে !
স্যালাইনের নিডলটা এখনও দুলছে অল্প অল্প !


ঝড়ের বেগে আবারও নিচে নেমে আসে আসিফ ।
রিসেপশনিস্ট মেয়েটা কিছু একটা জানতে চাইছিল – সেদিকে ফিরেও তাকায় না ও ।

ক্লিনিকের গেট থেকে বের হতে গিয়ে একজন ডাক্তারের সাথে ধাক্কাই লেগে যায় – ক্ষমা সূচক একটা বাক্য আওড়ে রাস্তায় নেমে আসে ও ।
গাড়ির জানালার গ্লাস ভাঙ্গার বিচ্ছিরি শব্দটা রাতের কোমলতাকে নষ্ট করে দেয় । ঝট করে ফিরে তাকায় আসিফ – ওদিকেই ও নিজের গাড়িটা রেখে এসেছে !
কখন ছুটতে শুরু করেছে ও জানে না ।

আসিফের গাড়িটার জানালার কাছে উবু হয়ে আছে একটা ছায়া মূর্তি !
ও তখনও পঞ্চাশ ফিট দূরে । প্রাণপনে দৌড়ায় আসিফ – নতুন ক্লুটাকে হারিয়ে যেতে দিতে চায় না ।
কিন্তু ও কাছে আসার আগেই ভেতরে ঢুকে গেছে লোকটা – ভাঙ্গা জানালার ভেতরে হাত ঢুকিয়ে দরজা খুলে ফেলেছে আরও আগেই । এখন নিশ্চয় তার ছিঁড়ে জোড়া দিয়ে থ্রাস্ট দেওয়ার চেষ্টায় আছে গাড়িটাকে !

আসিফ যখন মাত্র দশ ফিট দূরে – গর্জে উঠে জ্যন্ত হল ওর গাড়িটা । হুঁশ করে বেড়িয়ে গেল ওর সামনে দিয়েই !

পাগলের মত রাস্তার ওপর উঠে আসে আসিফ – হাত নাড়িয়ে থামানোর চেষ্টা করে পরের গাড়িটাকে ।
একটা ব্লু ক্যাব – তবে ভেতরে প্যাসেঞ্জার আছে – আসিফের দিকে ভ্রুক্ষেপও করে না ড্রাইভার । টেনে চলে যায় ।
পরের তিনটি গাড়ির ড্রাইভারও গা করে না থামাতে – ওদিকে দূর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে আসিফের গাড়িটা ।

চতুর্থ গাড়িটা ওর পাশে থেমে যেতেই চট করে ব্যাজ বের করে দেখায় তাকে আসিফ, ‘হোমিসাইড ডিপার্টমেন্ট । আপনার গাড়িটা আমার লাগবে । ফেরত পাবেন ।’
চটে ওঠে গাড়ির মালিক, ‘ফাইজলামী নাকি ? রাতদুপুরে গাড়ি ডাকাতি ? আপনি হোমিসাইডের লোক – তার প্রমাণ কি ? ব্যাজ তো যে কেউ দেখাতে পারে !’

গাড়ি স্টার্ট দেয়ার উপক্রম করেন ভদ্রলোক ।
প্রমাণ দেয়ার সবচেয়ে সহজ রাস্তাটা ধরে আসিফ, ঝট করে পিস্তলটা বের করে ড্রাইভারের মাথার দিকে তাক করে নিষ্কম্প হাতে ।
‘গেট আউট !’

থমকে গেছে ড্রাইভার – প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হয়েছে যেন ।
ওদিকে আসিফের গাড়িটা কোথাও দেখা যাচ্ছে না এখন । বেশ সামনে চলে গেছে রায়হান ওটা নিয়ে ।
লোকটাকে দ্রুত গাড়ি হস্তান্তর করানোর জন্য একটা উপায়ই আছে !

পর পর দুটো গুলি করে আসিফ । প্রথমটা আকাশে – পরেরটা গাড়ির সাইড উইন্ডোতে ।
এলাকার মানুষগুলো আতংকে চেঁচিয়ে ওঠে গুলির শব্দে । আর লাফিয়ে নেমে আসেন ভদ্রলোক ।
তার দিকে ফিরেও তাকায় না আসিফ – গাড়ির ওপর উঠে দড়াম করে লাগায় দরজা ।
স্টার্ট নিয়ে সামনের দিকে বাড়ে, একটু জোর গলায় মালিককে আশ্বস্ত করে শুধু, ‘ফেরত পাবেন । রিপেয়ারের খরচ সহ ।’

মাথামোটা ড্রাইভারের জন্য বেশ দেরী হয়ে গেল ! দাঁতে দাঁত পিষে আসিফ ।
তীরবেগে গাড়ি ছুটিয়ে সামনে ঢাকার চিরায়ত জ্যাম দেখতে পেয়ে স্টিয়ারিং হুইলে থাবা মারে অধৈর্য্য ভঙ্গীতে ।
জ্যাম আধঘন্টাও লেগে থাকতে পারে ! ততক্ষণে বহুদূরে চলে যাবে গাড়িটা । শেষ ক্লুটাও হাতছাড়া করে ফেলার জন্য নিজেকে লাথি মারতে মন চায় আসিফের !

হঠাৎই পঞ্চাশ ফিট দূরে একটা নীল ঝলক দেখতে পেয়ে আশান্বিত হয়ে ওঠে আসিফের মনটা । এই ব্লু ক্যাবটাই প্রথমে ওকে আমলে না নিয়ে সামনে সরে গেছিল !
ওই গাড়িটা যখন জ্যামে আটকে গেছে তখন আসিফের গাড়িটাকে এখানে আশা করতে দোষ কি ?
আসিফের চোখ দুটো ওর কালো গাড়িটাকে খোঁজে । দেখা যাচ্ছে না অবশ্য – গাড়ির ভীরে ।
দরজা খুলে নেমে এসে একটু অ্যাংগেল করে দাঁড়ায় ও । জ্যামের একেবারে সামনের দিকে দেখা যাচ্ছে ওর গাড়িটাকে ।
ভাগ্যকে ধন্যবাদ দেয় আসিফ – আর একটু সময় – তারপরই আসাদ রউফের খুনের রহস্য উদঘাটন করতে পারবে ও ।

জ্যাম ছুটতে ছুটতে পাঁচটা মিনিট পার হয়ে যায় – কতক্ষণ আগে লেগেছিল কে জানে !
ছিনতাই করা গাড়িটিতে ফিরে এসে আবার স্টার্ট নেয় আসিফ । এবার একটু নিশ্চিন্ত মনে ড্রাইভ করতে পারছে ।
নিরাপদ একটা দূরত্ব বজায় রেখে ফলো করে যায় ও চুপচাপ ।

সামনের গাড়িটাতে তেমন তাড়াহুড়ো নেই ।
গাড়িচুরির পরে প্রতিটি গাড়ি চোরেরই একটি সাইকোলজিক্যাল দুর্বলতা কাজ করে । তারা মনে করে গাড়ি কেড়ে নিলে খালি পায়ে মালিক কখনই ফলো করতে পারবে না – চোরকে ধরতেও পারবে না ।
কিন্তু রাস্তার আরেকটা গাড়ির সহায়তা নিয়ে ঠিক পেছনেই লেগে থাকতে পারে গাড়ির মালিক – এব্যাপারটা বেশিরভাগ চোরই ইগনোর করে যায় ।
ফলে দেখা যায় ঢিমে তালে গাড়ি নিয়ে সরে পড়তে – যেই বেগে চলতে থাকা অবস্থায় সহজেই আরেকটা গাড়ি দিয়ে ধরে ফেলা যায় ।
যেমনটা এখন ধরেছে আসিফ ।

পল্লবীর এক ভূতুড়ে চেহারার বাড়ির সামনে গাড়ি থামায় রায়হান । বেশ দূরত্ব রেখে গাড়ি পার্ক করে নেমে আসে আসিফও । রায়হান বাসাটার ভেতর ঢুকে যাচ্ছে । হাইডআউট ? নাকি আরও কোন দুরভিসন্ধি নিয়ে এখানে এসেছে লোকটা ?
জানার উপায় নেই ।
পেছনে পেছনে ঢুকে যেতেও পারছে না আসিফ । ওকে একটু আগে দুইবার দেখেছে লোকটা । এখন দেখলেই চিনবে ।
আর একবার পালালে আর রায়হানের টিকি ছোঁয়া যাবে না সহজে । আহত মানুষটা বের হয়ে গেল কি করে !

বিল্ডিংটার কাছাকাছি এসে কান পেতে দাঁড়িয়ে থাকে আসিফ । কোনরকম হট্টগোলের শব্দ পেলেই ঝাঁপিয়ে ঢুকে পড়বে ভেতরে । কিন্তু চারপাশ শুনশান নীরব ।
ব্যস্ত হয়ে ঘড়ি দেখে আসিফ – মনে হচ্ছে আধঘন্টা পার হয়ে গেছে রায়হান ভেতরে ঢোকার কিন্ত আসলে পেরিয়েছে মাত্র দুই মিনিট । আর পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করে দেখার কথা ভাবে আসিফ । তারপর ঢুকে যাবে – যা আছে কপালে !

ঘড়ি ধরে পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করে আগাতে যাবে আসিফ – তখনই বের হয়ে আসে রায়হান । টলছে একটু ।
গুলি খেয়েছে বেশিক্ষণ হয় নি – এরই মাঝে রাস্তাতে নেমে পড়লে টলে ওঠারই কথা !

আবারও গাড়ি স্টার্ট নেয় রায়হান । বেশ কিছুক্ষণ পর পেছনে লেগে যায় আসিফও । যথেষ্টরও বেশি দূরত্ব রাখছে এখন । চায় না রায়হানকে বুঝিয়ে দিতে যে তাকে ফলো করা হচ্ছে ।
মিরপুর ঘুরে রায়হানের গাড়িটা বেরিয়ে যাচ্ছে কল্যাণপুরের দিকে । লেগে থাকে আসিফও ।
কল্যানপুর ছাড়িয়ে আরও এগুতে থাকে কালো গাড়িটা । নিজের গাড়িটাকে এতক্ষণ ধরে একটানা পেছন থেকে দেখেনি কখনও আসিফ !

শেখেরটেকের একটা বিল্ডিংয়ের নিচে সোজা ঢুকে পড়ে এবার গাড়িটা ।
একটু অবাকই হয় আসিফ – এদিকের বাড়িগুলোর সিকিউরিটি থাকে বেশ ভালোই । এই বাড়িটায় নেই কেন ?
বাড়িটা এমনিতে চমৎকার ! বেজমেন্টে গ্যারেজ । এবং ওখানেই গিয়ে ঢুকেছে রায়হান কালাম ।

বাড়িটা ছেড়ে একটু এগিয়ে যায় আসিফ । সামনে গাড়িটা রেখে নেমে আসতে যাবে – গুলির প্রচন্ড শব্দে এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে ! এই মাত্র যে গ্যারাজে ঢুকেছে রায়হান – সেখান থেকেই এসেছে শব্দটা !

অজান্তেই ছুটতে শুরু করেছে আসিফ – কিন্তু পৌঁছতেও পারে না গেটের কাছে – তার আগেই ওর গাড়িটা নিয়েই বেড়িয়ে আসে রায়হান – তীব্রবেগে ফিরে যাচ্ছে যেদিক থেকে এসেছে – সেদিকেই !
গুলির শব্দের সাথে সাথে এলাকাবাসী ভয়ে চিৎকার দিয়ে উঠলেও এখন পুরো এলাকাটাই চুপচাপ হয়ে গেছে ।
আরও গুলির আশংকা করছে এলাকাবাসী ?

ধীরপায়ে হেঁটে গ্যারাজে নামে আসিফ । ওর বুটজোড়া প্রতিধ্বনী তুলছে গ্যারাজের বুকে ।
মাটিতে পড়ে থাকা লাশটার এক ইঞ্চি সামনে এসে থেমে গেল বুটজোড়া ।

অবস্থান দেখেই বোঝা যাচ্ছে – গাড়ি থেকে ধাক্কা দিয়ে মৃতদেহটা ফেলে দেওয়া হয়েছে খুনটা করার পর ।
ঝুঁকে বসে আসিফ – পকেটগুলো সার্চ করে লাশটার ।
মৃতদেহটির পকেট থেকে আস্তে করে বের করে নেয় একটা রিং – শেষ মাথায় পেনড্রাইভটা আলগোছে ঝুলছে ।

শুন্য গ্যারাজে আর কেউ নেই । তিনটি মাত্র গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে ভেতরে । চারপাশে শুনশান নীরবতা ।
হোলস্টারে পিস্তলটা ভরে রেখে বাইরের দিকে পা বাড়ায় বুটের মালিক । পেছনে তার ছায়া দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয় ।

ফোনটা বের করে জিয়াকে কল দেয় আসিফ, ‘অফিসে ?’
‘জ্বী, স্যার ।’
‘তৃণাকে বল লোকাল অথরিটিকে যেন জানায় শেখেরটেক থেকে পল্লবীর দিকে আমার গাড়িটা যাচ্ছে – ওটাকে ইন্টারসেপ্ট করতে । মিস করলেও সমস্যা নেই – একটা ঠিকানা দিচ্ছি – সেখানেই যাবে গাড়িটা সম্ভবত ।’ মনে চোখে দেখতে পায় আসিফ – জিয়া ছেলেটা দ্রুত নোট নিচ্ছে ওর কথার । ‘আর সিএসইউ কে একটা ঠিকানা দেবে । এখানে এই মাত্র একটা খুন হয়েছে । ওদের পাঠিয়ে দাও । দরকার নেই যদিও । তবুও আসুক । ছবি-টবি তুলে রাখুক ।’


‘খুনী আপনার গাড়িতে, স্যার ?’ অবস্থা বুঝে বলে জিয়া ।
‘শুধু তাই নয় – আমার গাড়ির ট্রাংকে বিশ কিলো হিরোইন পাওয়ার সম্ভাবনা আছে । রহস্যটার সমাধান করে ফেলেছি, জিয়া । চুন্নুকে আটকে রাখো । ’
‘মিস জিনা কি নিরাপদ এখন ?’ জানতে চায় জিয়া ।
‘জিনার ওপর বিপদ ছিল না কখনই – সামান্য একটু সময় ছাড়া । বাকি কথা অফিসে হবে । আসছি আমি ।’

আসিফের পাশ দিয়ে একটা ছেলে আর একটা মেয়ে হাসাহাসি করতে করতে গাড়িতে করে এগিয়ে যায় গ্যারাজের দিকে । প্রমাদ গুণে আসিফ ।


মোটা ফাইলগুলো একপাশে সরিয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকালেন কমিশনার রেজাউল করীম ।

‘গত কয়েকটা দিনে কতগুলো বেআইনী কাজ করেছ সে খবর আছে ?’ কটমট করে তাকান তিনি আসিফের দিকে ।
পাশের চেয়ারে বসে থাকা জিয়া বুঝতে পারে বসের দৃষ্টির সামনে কুঁকড়ে যায় আসিফ ভেতরে ভেতরে । যদিও বাইরে থেকে তাকে অটল-অবিচল এক ও অদ্বিতীয় আসিফ আহমেদই লাগছে !
‘একে তো স্নিফার্সের কেসে নাক গলিয়েছ – তারওপর শোনা যাচ্ছে বেআইনী জেরা চালিয়েছ তুমি । তাতেও যদি ক্ষান্ত দিতে ! স্নিফার্সের হেডকোয়ার্টারে হামলা চালিয়েছ এবং -’ একটু ইতস্তত করে বলেই ফেললেন রেজাউল করীম, ‘সাধারণ জনতার গাড়ি পর্যন্ত চুরির অভিযোগ করে গেছে তোমার নামে পুলিশ ডিপার্টমেন্ট ।’

লজ্জায় যেন মাথা কাটা যাচ্ছে হোমিসাইড ডিপার্টমেন্টের হেড-এর । সেরা এবং সবচেয়ে স্নেহের ডিটেক্টিভটির নামে এত অপবাদ আসলে কিভাবে হাসিমুখে থাকা যায় ?
তবুও একগাল হাসলেন তিনি । উঠে এসে পিঠ চাপড়ে দেন আসিফের ।
‘ফ্যান্টাস্টিক ওয়র্ক, মাই বয় । ’

একটু হাসে আসিফও, ‘থ্যাংক ইউ, স্যার ।’
‘অ্যান্ড টু ইউ টু – জিয়া ।’ তর্জনীটা পিস্তলের মত জিয়ার দিকে তাক করে বলেন রেজাউল করীম ।
বিনয়ের সাথে মাথা দোলায় জিয়া । এখনও পুরো কাহিনী জানেই না বেচারা ।

‘এবার আসিফ, খুলে বলবে কি ? গত কয়েকদিনের লুকোচুরি কেসটার ব্যাপারে ?’
ইঙ্গিতে ফাইলটা দেখায় আসিফ, ‘সব তো ওখানেই ছিল, স্যার ।’
‘ইয়ে ... তোমার মুখ থেকেই শুনতে চাচ্ছিলাম ।’ আসলে পুরো ফাইলটা পড়েও অনেক কিছুই স্পষ্ট বোঝেন নি – সেটা অধস্তনকে বলতে গায়ে বাঁধে কমিশনারের । যতই হোক না কেন প্রিয় !

এক মুহূর্ত চিন্তা করে আসিফ । কোথা থেকে শুরু করবে ভাবছে বোধ হয় !
অবশেষে দীর্ঘশ্বাস ফেলে শুরু করে ও ।

‘শুরুটা করা যায় আসাদ রউফ নামের চরিত্রটা থেকে । একই সাথে মেধাবী এবং দুর্জন হিসেবে অনেক জায়গাতেই নাম কামিয়েছেন ইনি । যদিও মামলা করে ধরতে যান – পারবেন না । প্রমাণ খুঁজে বের করবেন তাঁর নামে ? পারবেন না । পিছলে চলার অভ্যাসটা ভালোমত রপ্ত করে ফেলায় ড্রাগসের ব্যবসাতে বেশ নামডাক করে ফেললেন বৈধ ব্যবসার পাশাপাশি । কিন্তু মানুষটার কিছুটা সমস্যা ছিলই । কোন অপরাধীই নিখুঁত নয় । ব্যবসায়িক পরিকল্পনা বেশ ভালো মত করতে পারলেও নিজেকে সম্পূর্ণ বাঁচিয়ে চলতে ইনি পারেন নি কোন কোন ক্ষেত্রে । কাজেই – লোকাল পুলিশ এবং নারকোটিক্স কন্ট্রোলের ওরা একটু আধটু আঁচ করে ফেলে ইনার সাথে ড্রাগসের সম্পর্ক ।’

জিয়া আর রেজা স্যারের দিকে তাকায় আসিফ একবার । দুইজনই চোখ বড় বড় করে গোগ্রাসে গিলছে ওর কথাগুলো ।
আবার বলতে শুরু করে ও ।

‘এই মানুষটার সাথে পরিচয় হয় প্রস্টিটিউশনের সাথে যুক্ত চুন্নু মিয়ার । পদ্মার বুকে বেশ বড় একটা ধরা খাওয়া থেকে বেঁচে যায় একই সাথে চুন্নু মিয়া আর আসাদ রউফ । একে অন্যের সহায়তা প্রয়োজন পড়ে তাতে তাদের । তবে ওই একটা সম্ভাবনা ছিল বটে প্রমাণ সহ ধরা খেয়ে যাওয়ার । কাজেই একে অন্যের সুহৃদ হয়ে উঠলেন তাঁরা । যদিও কিছুদিন যেতে না যেতেই চুন্নু মিয়া বুঝতে পারল – এই লোকের ক্রিমিনাল ব্রেইনের শত ভাগের একভাগও তার মাথায় নেই । তাছাড়া মানুষটার সাথে ওঠাবসা সব বাঘা বাঘা মানুষের । উচ্চস্তরের ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে আমলা পর্যন্ত সমীহের সাথে কথা বলে আসাদ রউফে সাথে । কাজেই পার্টনারশীপে কাজ করতে চাইল ও আসাদের সাথে । আসাদ রউফও বেশ লাভই দেখলেন । পার্টনারশীপে কাজ করলে আল্টিমেটলি লাভটা তারই । প্রস্টিটিউশন বিজনেস এই দেশে খুব একটা খারাপ চলে না । কাজেই জয়েন্ট ভেঞ্চারে নেমে পড়লেন তাঁরা । এবং সমস্যাটা বাঁধল সেখানেই ।’
‘কি সমস্যা ?’ ঝুঁকে পড়ে জানতে চাইলেন রেজাউল করীম । গল্পে একেবারে ডুবে গেছেন তিনি ।

‘আসাদ রউফ তাঁর হাল্কা ট্রেস রেখে যাওয়া স্বভাব চালু রাখলেন এখানেও । আবারও কয়েকবার আঙ্গুল উঠল তাঁর দিকে । প্রতিবারই দক্ষ উকিল দিয়ে জাল কেটে বেড়িয়ে পড়লেন তিনি । আমার অবশ্য এই পর্যায়ে মনে হয় আইনের সাথে লুকোচুরি ইনি ইচ্ছে করেই খেলতেন । অসম্ভব অপরাধী মানসিকতার মানুষটি । আইন তাকে দেখতে পাচ্ছে অথচ স্পর্শ করতে পারছে না – অনুভূতিটা হয়ত তাকে নেশাগ্রস্থ করে ফেলেছিল ! তবে এখনকার অবস্থা আলাদা । এতদিন নিজের বিজনেসে যা ইচ্ছে তাই করতে পারতেন তিনি – কিন্তু চুন্নু মিয়া দেখলেন তাঁর প্রস্টিটিউশনও ফোকাসে চলে আসছে আসাদ রউফের ভুলে । এমনকী এক কেসে আসাদের পার্টনার বলেই ডেইটা কালেক্ট করে পুলিশ । আর আসাদও খেলে যেতে থাকলেন তাঁর লুকোচুরি খেলা । কিন্তু এটা মেনে নিতে পারে না চুন্নু । পুলিশী ঝামেলা মুক্ত একটা নির্ঝঞ্ঝাট জীবনই চেয়েছিল সে । তবে আসাদের ব্রিলিয়ান্ট ব্রেইন তার স্টাইলেই আইনকে কাছে আসতে দিয়ে ধরা না দেয়ার খেলা খেলতে থাকল ।’

একটু দম নেয় আসিফ । ঘরের মধ্যে পিনপতন নীরবতা । তারপর আবার মুখ খোলে ও ।

‘আসাদের সাথে অনেক হোমড়া-চোমড়াদের খাতির সেটা আমরা জানি । কিন্তু এটা আমিও জানতাম না – আসাদ রউফ আর আমাদের স্বল্পবয়েসী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইমরান খান ছিলেন বাল্যবন্ধু !’ বেশ অবাক হয়ে তাকায় এবার জিয়া আর রেজাউল করীম । ‘নতুন ধরণের ক্রাইমের দিকে সব সময়ই চোখ থাকে আসাদের । এবং সুযোগের সন্ধানে থাকলে যা হয় আর কি – পেয়েও গেলেন তিনি একটা । বন্ধুকে শিকার করার একটা চমৎকার আইডিয়া খেলে গেল তাঁর মাথায় । নারীলোলুপতার ব্যাপারে ইমরান খানের খ্যাতি জনতা জানে না – তবে আসাদ রউফ জানতেন । গত বছর প্রতিরক্ষামন্ত্রীর ষোড়শী কন্যা লাবণীর রেপড অ্যান্ড কিলড হওয়ার খবর সবাই জানে – জানে না শুধু কালপ্রিটের খবর । বাল্যবন্ধুর বাসাতে আসাদের যাতায়াত নিয়মিত ছিল । একদিন লাবণীকে হয়ত ধারে কাছে দেখেও থাকবেন – তবে আমার বিশ্বাস – লাশ উদ্ধারের পর আসাদের মত জিনিয়াস ঠিকই বুঝেছিলেন কাজটা কার । তবে একটা বছর ঘাপটি মেরে বসে ছিলেন ও আরও বড় কিছুর ধান্ধায় । বিরক্ত লাগছে শুনতে ?’ হাসিমুখেই প্রশ্নটা করে আসিফ ।

কান একেবারে পেতে দিয়ে শুনছিলেন রেজাউল করীম আর জিয়া । একেবারে হাহাকার করে উঠল ওরা আসিফ থেমে যাওয়াতে । ‘একেবারে কাহিনী শেষ কর, ছেলে !’ অর্ডারই দেন রেজাউল করীম ।

মুচকি হেসে আবার শুরু করে আসিফ ।
‘প্রমাণ জোগাড় করে ব্ল্যাকমেইল করতে চায় ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইমরান খানকে । এই আশা করতেই পারে আসাদ রউফ । কেননা – বিকৃত যৌনাচারে অভ্যস্ত ইমরান খানের হবি একটাই – নিজের সাথে অন্য মেয়েদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তগুলো ভিডিও করে রাখা । মেয়েটির অগোচরে অবশ্যই ! লুকোনো ক্যামেরা থাকতই তাঁর স্পটগুলোতে ! আর লাবণীর ব্যাপারটা দেশ তোলপাড় করা – কাজেই সেটা মিস করবেন ইমরান খান – এটা ভাবাটা কষ্টকর । বেশিরভাগ স্যাডিস্ট ধরা পরেই এসব কারণে – যেই স্যম্পলটা রাখা সবচেয়ে বিপদজনক – সেটাই এরা রাখে ততোধিক আগ্রহের সাথে ! লজিক হেরে যায় এদের সাইকোলজিক্যাল ডিজঅর্ডারের কাছে । ইমরানের ক্ষেত্রে সেটাই আশা করেন আসাদ রউফ । লাবণীর খুনের ডেটটা বেশ ভালো করেই মনে রেখেছিলেন তিনি । তারও তিনদিন আগে থেকে মেয়েটা ছিল নিখোঁজ । কাজেই – ভিডিও চিত্রের তারিখই যথেষ্ট ইমরান খানকে একেবারে অকাট্য ধরতে । কিন্তু চাইলেই তো আর হার্ডড্রাইভ আপনাকে খুলে দেবে না ইমরান । এক্ষেত্রে আসাদ রউফকে একটা চাল চালতেই হল । কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলতে চাইলেন তিনি । স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নারীলোলুপতা কাজে লাগিয়েই বের করতে চাইলেন মেয়েঘটিত অপরাধটার প্রমাণটা । ছয় মাস ধরে একজন নিখুঁত মেয়ে খুঁজে চললেন তিনি – পেয়েও গেলেন একজনকে । মেয়েটার নাম অন্বীতা ।’

হা হয়ে যায় জিয়ার মুখ । ঘটনা বেশ জটিল দেখা যাচ্ছে !

‘অন্বীতা মেয়েটা আমার আর জিয়ার ভিক্টিম স্যার । ওর আসল নাম মিতালি । সৌভাগ্যক্রমে মেয়েটা আমার বাল্যবান্ধবীর বাল্যবান্ধবী ।’ একটু হাসে আসিফ । তারপর মুখ গম্ভীর হয়ে যায় ওর মিতালির পরিণতি মনে পড়তে । ‘যাই হোক – মেয়েটাও তার প্রস্টিটিউট লাইফ থেকে বের হয়ে যেতে চাচ্ছিল বেশ কয়েকদিন ধরেই – প্রেমে পড়েছিল মেয়েটা । পঙ্কিল জীবনের মত পঙ্কিল নয় সেই প্রেম – একেবারেই খাঁটি ! যেই ছেলের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে ও – সেও অন্ধকারের যাত্রী । কিন্তু এই অপরাধ জগত থেকে বেরিয়ে যেতে চায় বোকা ছেলেটাও । মিতালির হাত ধরে । অন্তত মিতালি সেটাই জানত !’

উদাস দৃষ্টিতে বাইরের দিকে তাকায় আসিফ । ওর চোখে একটা ভিন্ন ধরণের অনুভূতি যা জিয়া আগে কখনও দেখেনি – বেদনা !

‘কাজেই আসাদ পেলেন তাঁর হাতিয়ার আর মিতালি পেল চল্লিশ কোটি টাকা থেকে পাঁচ কোটি টাকা পাওয়ার প্রতিশ্রুতি । মেইনলি, আসাদ রউফের প্ল্যানটা ওরকমই ছিল । স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রাথমিক ধাক্কায় চল্লিশ কোটি টাকা দিতে বাধ্য করা হবে । পরে থাকছে আরও অনেক কিছু । প্রমাণ বের করে আনতে পারলে মন্ত্রীত্ব দূরে থাকুক – ফাঁসীর দড়ি এড়াতে পারবে না ইমরান খান । ইন্টারনেট নামক চমৎকার ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রতিটি মানুষ স্বচক্ষে দেখতে পারবে নিজের দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কুকীর্তি । কাজেই টাকার অংকটা একেবারে মামুলিই বলা চলে ! মিতালী কাজে নেমে পড়ল । অসাধারণ মেয়েটা – ইমরান খানকে প্রলুব্ধ করতে ওর সময় লাগল না বেশি – একটা পার্টি থেকেই পরিচিত হয়ে যায় ওরা । পার্টির ইনভাইটেশন মেয়েটার কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা যে আসাদ রউফের করা – সেটা জানতেই পারলেন না স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ! আর মিতালিও কাজে বেশ এগিয়ে গিয়ে বয়ফ্রেন্ডকে জানিয়ে দিল আর মাত্র কয় মাস পরেই এই পথ থেকে সরে আসতে পারবে ও – হাতে থাকবে কোটি কোটি টাকা । আর এটাই ছিল মিতালির জীবনের সবচাইতে বড় ভুল । ভুল মানুষকে বিশ্বাস করেছিল ও ।’

‘বয়ফ্রেন্ডটা কে ছিল ??’ আর নিজেকে ধরে রাখতে না পেরে জানতে চায় জিয়া ।
‘আসছি সে কথায় ।’ ওকে থামায় আসিফ । ‘কোটি কোটি টাকার কথা শুনে ভেতরে ভেতরে লাফিরে ওঠে মিতালির বয়ফ্রেন্ড । তবে মুখে সেটা প্রকাশ হতে দেয় নি নিশ্চয় ! বয়ফ্রেন্ডটির যে প্ল্যান ছিল তখন মাথায় – তাতে তার টাকার দরকার আছে বৈকি । নিজের বিজনেস দাঁড় করাতে চাইছিল ও – অস্ত্রের কালোবাজারীতে । মিতালি ছিল তার কাছে দুই দিনের খেলনা । তবে দুই দিনের খেলনা কোটি টাকা এনে দিলে মন্দ কি ?’

‘কাজ হয়ে গেল একদিন – মিতালি মন্ত্রীর অগোচরে হ্যাক করে ঢুকে যায় পার্সোনাল কম্পিউটারে – তার পার্টনারের অর্থাৎ আসাদের দেওয়া তথ্য জানাই ছিল – কাজেই নির্দিষ্ট ডেটটা খুঁজে পেতে দেরী হয় নি ওর । পেনড্রাইভে কপি করে বেড়িয়ে পড়ে ও । বয়ফ্রেন্ডকে জানিয়ে দিয়েছিল আজই শেষ দিন । ওকে যেন পিক করে ছেলেটা । কিন্তু পিক করতে কেউ আসে নি সেদিন । বরং কোটি টাকার ব্যাপারে নিশ্চিত হতে মেয়েটাকে ছদ্মবেশে ফলো করছিল বয়ফ্রেন্ড সেরাতে !’

আগ্রহের সাথে পরের অংশটা জানার জন্য তাকিয়ে আছে জিয়া আর রেজাউল করীম । তবে তাদের হতাশ করে আসিফ ।

‘এবার চলে যাই আমাদের আসাদ রউফের পুরোনো ব্যবসা ড্রাগ ডীলিং-এ । রায়হান আর ফিরোজ নামে দুইজনের দায়িত্ব ছিল বিশ কিলো হিরোইন পিক করার । তারা সেটা জায়গামত না পাওয়ার ঘোষণা দেয় । বিশ্বাসঘাতকতার গন্ধ পান আসাদ প্রথমবারের মত । কাজেই দেরী না করে সমুচিত শাস্তি দিতে রায়হানের পেটে গুলি চালান তিনি । ঝি কে মেরে বউ শেখানোর মত আর কি । কিন্তু সহযোগী ফিরোজ তাতে ঘাবড়ায় না মোটেও – নিজের কাজে একটু বেশিই আত্মবিশ্বাসী ছিল ও । এইখানের পুঁজি আর মিতালির কাছ থেকে পাওয়া কোটি টাকাটা হাতে আসলেই নিজের কালোবাজারির বিজনেসে নেমে পড়তে পারত ও । ’

একটু ব্রেক দিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকা গুরু আর শিষ্যের দিকে তাকিয়ে মাথা দোলায় আসিফ, ‘হ্যাঁ, ফিরোজই আমাদের মিতালির বয়ফ্রেন্ড । ছদ্মবেশে ফলো করছিল ও মিতালিকে । কিন্তু হতাশ হয়ে দেখতে পায় আরেকটি মেয়ের সাথে ঘোরা শুরু করেছে মেয়েটা সেরাতে । আর মিতালিও বোকা নয় – পেছনে কেউ লেগে আছে এটা বুঝতে পারে ও কিছুক্ষণের মাঝেই – যদিও ছদ্মবেশী ফিরোজকে চিনতে পারে নি ও । ভেবেছিল ইমরান খানের লোকের কাজ এটা । ঘটনাচক্রে সেদিন মিতালির সাথে ঘুরতে থাকা মেয়েটাই আমার বাল্যবান্ধবী জিনা – একই স্কুলে পড়েছিল ওরা দুইজন । বহুদিন পরে দেখা হওয়ার পর একসাথে তো ঘুরেই ওরা – নিজের নিরাপত্তার কথা ভেবে জিনার অগোচরেই পেনড্রাইভটা ওর ব্যাগে চালান করে দেয় মিতালি !’

জিয়া আর রেজাউল করীমের চেহারা হয়েছে এখন দেখার মত ! সেদিকে খেয়াল না করে বলে যায় আসিফ, ‘এবং এখান থেকে ফিরে যায় মেয়েটা তার আগের বাসাতে । এখানে এই ছয় মাসে ফিরোজ ছাড়া আর কারও সাথে দেখা করে না ও । একসময় অবশ্য এখানেই খদ্দেররা ভীড় জমাতো ! বাসাটাতে অপেক্ষা করছিল ফিরোজ - হাতের কাছে মিতালিকে পেয়ে টর্চার শুরু করে ও কোটি টাকার সন্ধানে ! অসহ্য যন্ত্রনা সহ্য করতে না পেরে মেয়েটা বলে দেয় পেনড্রাইভের কথা । ওখানেই মেয়েটাকে খুন করে ফিরোজ । কিন্তু সারা শরীর খুঁজেও পেনড্রাইভটা পায় না ! ঠিক একই সময় আসাদ গুলি করছেন ফিরোজের সহযোগী রায়হানকে । এবং আমরা আমাদের চুন্নু মিয়াকে ভুলে যাচ্ছি না তো ?’

মাথা নাড়ে জিয়া আর রেজাউল করীম এক সাথে !
‘এখানেই চুন্নু মিয়া তার সুযোগ দেখতে পায় । আসাদের দলে প্রথমবারের মত বিশ্বাসঘাতকতার ঘটনা ঘটল – সেটার জের ধরে আসাদকে সরিয়ে দিতে চায় ও সীন থেকে । হোটেলে চলে এসে দেখা করাটা তার জন্য কঠিন ছিল না – সহজেই গলাতে হাতির দাঁতের একটা ধারালো ক্লিপ গেঁথে দেয় ও আসাদের ।’

পানির গ্লাস থেকে এক ঢোক পানি খায় আসিফ । তারপর আবার বলে, ‘ইমরান খানকেও বুদ্ধু ভাবার কোন কারণ নেই – পরের সকালেই বুঝে যান ইনি – আসল জিনিসটা কেউ কপি করে নিয়ে গেছে ! এবং প্রথমেই সন্দেহ করেন আসাদ রউফকে । কারণ তাঁর ভিডিও করার কীর্তির কথা এই একটা মানুষই জানতেন । পোষা বাহিনী স্নিফার্সকে লাগিয়ে আসাদকে খুঁজে বের করার কথা ভাবতে থাকেন তিনি ।’

‘আগের রাতে ফিরে যাই চলুন – ফিরোজ মিতালির সারা শরীর সার্চ করেও পেনড্রাইভটা পায় নি । কাজেই ওর মাথাতে একটা মানুষের কথাই আসে – জিনা । মিতালি পেটে বুকে সাইলেন্সড পিস্তলের গুলির ক্ষত নিয়ে ভীষণ আহত – তাকে ওই অবস্থাতেই ফেলে বের হয়ে আসে ফিরোজ । কারণ – মিতালির ফোনে জিনার টেক্সট করা অ্যাড্রেসটা পেয়ে গেছে সে ততক্ষণে । ফিরোজ বেরিয়ে যেতেই শেষ নিঃশ্বাসে কোনমতে জিনার নাম লেখে যায় মেয়েটা ।

‘সেরাতেই হানা দেয় ফিরোজ জিনার বাসায় – তবে সুবিধে করতে পারে না । আর জিনার হাতব্যাগ কালেকশনের বাতিকটা আসল ব্যাগ পেতে দেরী করিয়ে দিচ্ছিল ফিরোজকে । তাছাড়া সেরকম সময়ও পায় নি ও – দরজা নিয়ে ক্যাচাল লেগে যাওয়ায় এলাকাবাসী টের পেয়ে যাচ্ছিল ঘটনা । সেই সাথে পুলিশের সাইরেন কানে আসতেই এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয় লোকটা । তবে লেগে থাকে জিনার পেছনে । জিনা ওকে ধোঁকা দিয়ে বেরিয়ে পড়লেও আসাদের মৃত্যুর খবর শুনে হোটেল সুরভীর সামনে গাড়ি নিয়ে ফিরোজ আসতেই আবারও দেখতে পায় জিনাকে – আমার সাথে গাড়িতে উঠছিল মেয়েটা । ওকে রেখে আবার বেরিয়ে যাই আমি – কারণ মিতালির লাশটা মাত্র তখনই আবিষ্কৃত হয় । আর আমার বাসার বাইরে ওত পেতে থাকে ফিরোজ । জিনাকে বের হতে দেখেই পার্কে হামলা চালায় আবার । ভীড়ের মাঝে সরিয়ে নেয় ওর হাতব্যাগটা আস্তে করে । পেনড্রাইভটা পকেটে রেখে বাকি সব ফেলে দেয় কোথাও । কোটি টাকার জিনিস কাছ ছাড়া করার মত বোকা মানুষ সে নয় ।’

‘বোকা নয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইমরান খানও । স্নিফার্স পাঠিয়ে যেই না খুঁজে পেলেন মৃত বন্ধুকে – ধরেই নিলেন চুন্নু মিয়াই আর সব কাজের মতই এই কাজেও সহযোগীতা করেছে আসাদকে । কাজেই চুন্নু মিয়াকে প্যাকেট করে ফেললেন স্নিফার্স দিয়ে । উনি যখন চুন্নু মিয়াকে ভাঙ্গার চেষ্টা করে যাচ্ছেন – আমি আর জিয়া ছুটে বেড়াচ্ছি পরবর্তী ক্লুর জন্য । আমরা চুন্নু মিয়ার ব্যাপারে জানার পর যখন সিদ্ধান্ত নেই স্নিফার্সের হাত থেকে ওকে বের করে আনার – সেই সময় রায়হান ক্লিনিকে ভর্তি । দুটো দিন নিয়ে একটু করে রিকভার করছে ও । চুন্নু মিয়াকে নিয়ে আমাদের বের হওয়ার সাথে সাথে রায়হান বেড়িয়ে আসার জন্য প্রস্তুত ক্লিনিক থেকে । আসাদের গুলি খাওয়ার সংবাদ কানে পৌঁছতেই আর দেরী করেনি ও – আসল ঝামেলা কেটে পড়েছে বুঝে সম্পূর্ণ চোরাই হিরোইনই নিজের করে নিতে চায় রায়হান । ফিরোজের দায়িত্ব ছিল – কাজেই ওকে ফোন দিয়ে জানায় হাইডআউটে থাকতে – কল লিস্ট আমরা চেক করে দেখেছি আর্কাইভস থেকে । সিকিউরিটি গার্ডদের সরিয়ে দিতে বলে – যেহেতু হিরোইন সরানোর কাজটায় ঝুঁকি আছে যথেষ্ট ।’

একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে আসিফ, ‘এই রায়হানকে ফিরোজ ছোটভাইয়ের মতই স্নেহ করত – যে কারণে নিঃসন্দেহে ওর কথা মেনে নেয় । পকেটে আছে কোটি কোটি টাকা কামানোর পুঁজি পেনড্রাইভ ! নিশ্চয় এই গাড্ডা থেকে বেরিয়েই ও ব্যাপারে কাজ করত ও । রায়হান অবশ্য এত কিছু জানে না । ওর টার্গেট শুধু হিরোইন । কাজেই – ফিরোজের গাড়ির ট্রাংক থেকে আমার গাড়িতে হিরোইন তুলে ফেলে সীটের মাঝেই গুলি করে ও ফিরোজকে ।’

‘মাই গড ! ওহ ! ডিয়ার গড !’ সশব্দেই বলে বসেন রেজাউল করীম, ‘রিপোর্ট থেকে এত কিছু বোঝার কোন উপায় ছিল না । এত হাবিজাবি লেখা ! তবে এখন পুরোটা শুনে ... তিনটি খুন – চারটি ক্ষেত্র ! খুনের মোটিভগুলো যথেষ্ট নয় । যেমন ধরো – ফিরোজ খুন হয়ে গেল বিশ কিলো হেরোইনের জন্য ! অথচ তার পকেটে ছিল আস্ত একটা বম্ব-ইনফরমেশন ! আবার – আসাদ খুন হল পার্টনারশীপের জন্য – অথচ পুরো মাস্টারপ্ল্যানিং তার করা ছিল ! স্মরণকালের শ্রেষ্ঠ ডিটেকশন, আসিফ আহমেদ ! এই শতাব্দীর অন্তত !’
জিয়া মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে – ঘটনা কতটা ঘোরালো সেটা বুঝে উঠেই চোখ ছানাবড়া হয়ে গেছে ওর ।
একটু হাসে আসিফ ।

‘কিভাবে বুঝলে পুরো ব্যাপারটা, মাই সান ? যতদূর মনে হয় তুমিও যথেষ্ট অন্ধকারেই ছিলে ।’ বলেন রেজাউল করীম ।
‘স্কেচ আর্টিস্ট, স্যার ।’ মিটি মিটি হাসে আসিফ ।
‘স্কেচ আর্ট ?’ অবাক হন কমিশনার ।
‘মোটামুটি সবার ভূমিকাটাই আমার কাছে স্পষ্ট হয়ে এসেছিল । কিন্তু কানেকশনটা ঠিক বুঝতে পারছিলাম না । স্কেচ আর্টিস্টের কাছে বাড়িওয়ালার বর্ণনা অনুযায়ী পাওয়া চেহারাটা গ্যারাজে মৃত পড়ে থাকতে দেখে একই সাথে আসাদ, মিতালি, ফিরোজ আর রায়হানের সম্পর্ক বুঝে ফেলি । চুন্নু মিয়ার ভূমিকাটাও ক্লিয়ার হয়ে যায় । তারপর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মোবাইল ফোনের কলরেকর্ড উদ্ধার করে আরও স্পষ্ট হয় সবকিছু । আর পেনড্রাইভের ভিডিওটা দেখে তো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভূমিকা স্পষ্ট হয়েই যায় ! অবশ্য সাহায্য করেছিল স্নিফার্স ডিরেক্টরের ফাইলটাও ।’

‘অসাধারণ ! আসলে কি বলব ... ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না প্রশংসা করার !’ একটু চুপ থেকে কমিশনার আবার বলেন, ‘সুখবর আছে কিছু হে !’
আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে থাকে আসিফ আর জিয়া ।
‘স্নিফার্সকে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে । আর তোমার ফ্রেন্ড জিনাও সুস্থ আছে মোটামুটি এখন ।’ এক গাল হাসেন কমিশনার ।
‘আর ইমরান খান ?’ পাথুরে মুখে জানতে চায় আসিফ ।
‘বিচার কার্যক্রম দ্রুত শুরু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে আদালত । এই লোকটা অপরাধের সাজা পাচ্ছেই । এবার আর ওর বেঁচে যাওয়ার উপায় নেই ।’

‘রায়হানের শুনানি শুরু হয়েছে, স্যার ।’ জিয়াও আপডেট দেয় ।
‘গুড ।’ বলে শুধু আসিফ ।

‘তিনদিন ছুটি কাটাও, আসিফ । যথেষ্ট মাথা খাটিয়েছ একয়দিনে !’ বলে ওঠেন রেজাউল করীম ।
‘ধন্যবাদ স্যার । কিন্তু তার দরকার হবে না ।’ একটু হেসে বলে আসিফ ।
‘তাড়া আছে নাকি তোমার ? নাহলে এক কাপ কফি চলতে পারে, কি বল ?’ হাসেন রেজাউল করীমও ।
ঘড়ি দেখে উঠে দাঁড়ায় আসিফ, ‘কিছু মনে করবেন না, জিনার বয়ফ্রেন্ড শাহেদের বাংলাদেশে আসার কথা । এয়ারপোর্টে ওকে রিসিভ করতে আমাকেই যেতে হবে । জিনার খবর পেয়ে আর দেরী করেনি ছেলেটা ।’

উঠে দাঁড়ায় জিয়াও ।
‘এই শালার বয়ফ্রেন্ড আবার জুটলো কোথা থেকে !’
আসিফ স্যারের পাশে চমৎকার মানিয়ে যাওয়া জিনা মেয়েটার কথা মনে হতে বিড় বিড় করে বিরক্তির সাথে বলে জিয়া নিজে নিজেই !

[সমাপ্ত]

{ কনফিউশন এড়াতে ফেসবুক লিংকগুলো দিলাম । লেখাটা আমারই । ইনফোতে সামুর লিংক আছে ওখানে ।

পর্ব - ০১ এর লিংকঃ Click This Link
পর্ব – ০২ এর লিংকঃ Click This Link
পর্ব – ০৩ এর লিংকঃ Click This Link
}

৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×