somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আট দিনে ভারত দর্শন B-)B-)

০৫ ই আগস্ট, ২০১৩ ভোর ৪:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আইভরিকোস্টের লম্বা ভ্রমণ শেষে সহসা আমার বিদেশ ভ্রমণের কোন প্রকার সম্ভাবনা তৈরি হবে তা কল্পনাও করিনি। কিন্তু কাকতালীয় ভাবে অফিসিয়াল কাজে ভারত ভ্রমনের একটা সুযোগ এ অধমের মিলে যায়। কিন্তু ব্লগের পাঠকগণ এশিয়ার ভ্রমণ কাহিনী পড়তে পড়তে অনেক ত্যক্ত- বিরক্ত আর ক্লান্ত হয়ে পড়েছে – এই ভেবে ব্লগ লেখার সাহস হয়নি অনেকদিন। কিন্তু পরে মনে হল, অন্তত নিজের স্মৃতিচারণ হিসাবে হলেও কিছু লিখে রাখা দরকার। বুড়ো বয়সে ব্লগের পাতা উল্টিয়ে অতীত স্মৃতির রোমন্থনের দারুণ সুযোগটি কিছুতেই হাত ছাড়া করতে মন সায় দিচ্ছিল না। কারন সময়ের স্রোতে মানুষের অতীতের অনেক স্মৃতিই তো বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যায়। তাই সুদীর্ঘ বিরতির পর আজ আবার কি বোর্ডে হাত লাগানোর দূর্বার প্রয়াস। কারো বিরক্তির কারণ হলে নিজ গুণে ক্ষমা করে দেবেন।



সময়টা মে মাসের শেষ সপ্তাহ। গ্রীষ্মের তীব্র দহনে প্রান ওষ্ঠাগত। এ সময়টা বিদেশ ভ্রমণের জন্য মোটেও অনুকূল নয়। তারপরও গেলাম, তাও আবার সড়ক পথে! নির্ধারিত দিনে একটা মাইক্রো ভাড়া করে আমরা ৫ জন সাভার থেকে রওনা হলাম বেনাপোলের উদ্দেশ্যে। শুরুতেই বাগড়া দিয়ে বসল সকালের ঝুম বৃষ্টি। নবীনগরের কাছাকাছি এসে দীর্ঘ যানজটে আটকে থাকলাম প্রায় ঘণ্টা খানেক। কথায় বলে- মর্নিং সোজ দ্য ডে। বুঝতে পারলাম এ ভ্রমণ অনেক চ্যালেঞ্জিং হবে। আমি ও মনে মনে সব রকম মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে ফেললাম। আগেই বলে রাখি আমাদের এ ট্যুর স্পন্সর করেছে একটা প্রাইভেট কোম্পানি। আকাশ পথে ভ্রমণের ব্যবস্থা না করায় মনে মনে তাদেরকে এক দফা অভিসম্পাত দিলাম। বেনাপোল বর্ডারে পৌঁছাতে বিকেল হয়ে গেল। বাংলাদেশ অংশে কাস্টমসের ফরমালিটিজ শেষ করে ঢুকে পড়লাম ভারতে। কাস্টমস অফিসে দাদাদের নাক উঁচু মনোভাব দেখে পিত্তি জ্বলে গেল। আমাদের ব্লু পাসপোর্ট যেন তাদের সহ্য হলনা। এক কাস্টমস অফিসার বলল – তোমাদের সরকার ইদানিং প্রাইমারি স্কুলের টিচারদের ও নীল পাসপোর্ট দিচ্ছে, এটা মোটেও ঠিকনা। আমরা আবার রাগ করি কিনা এজন্য আবার বলল – তোমাদের কথা বলছিনা। এভাবে গনহারে ব্লু পাসপোর্ট দিলে এটার আর কোন মর্যাদা থাকেনা। আমি মনে মনে বললাম- আমাদের সরকার যাকে খুশি লাল, নীল পাসপোর্ট দিক, তাতে তোর এত মাথা ব্যথা কেন। পরে বিষয়টা পরিষ্কার হল। সাধারণ পাসপোর্টধারীদের কাছ থেকে এদের টু পাইস কামানোর স্কোপ থাকলেও অন্যদের ক্ষেত্রে এটা পারা যায়না। তাই তো তার এত মর্ম যাতনা! হায় বিধাতা, মানব সমাজ কি কখনো দুর্নীতির বিষ বাষ্প মুক্ত হবেনা? যাহোক মোটামুটি নির্বিঘ্নে এখানকার ঝামেলা শেষ করে রওনা হলাম কলকাতার উদ্দেশ্যে। আমাদের গন্তব্য হোটেল ডি কে ইন্টার ন্যাশনাল। আরও ঘণ্টা তিনেকের বাস জার্নি করে হোটেলে পৌঁছালাম। শরীর জুড়ে নেমে এল রাজ্যের ক্লান্তি। একটা জম্পেস ঘুম হবে আজ।



পরদিন ভোরে উঠেই আমাদের কলকাতা দর্শনের প্ল্যান করে ফেললাম। বিকেলের ট্রেনেই আমাদের দিল্লী যাওয়ার কথা রয়েছে। হাতে সময় কম, তাই ঝটপট রেডি হয়ে বের হয়ে পড়লাম সবাই। প্রথমে গেলাম রবি ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে।



সকাল বেলার কলকাতার স্নিগ্ধ রূপ ভালই লাগছিল। রাস্তার পাশে দেখলাম ছেলে বুড়ো সবাই মিলে সরকারি সাপ্লায়ের পানি দিয়ে প্রাত স্নান করছে।



কিছু কিছু জায়গায় রাস্তার ড্রেনের পাশে মনুষ্য বর্জ্য দৃষ্টি গোছর হল। মনে পড়ল একটি পরিসংখ্যানের কথা- ভারতের ৫০% লোক উন্মুক স্থানে প্রাকৃতিক কর্ম সারে। এটি অবিশ্বাস্য মনে হলেও এখন বিশ্বাস করতে হল। বাংলাদেশে এর হার ৮% মাত্র। অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন তো আর মিছেমিছি বলেননি যে অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জন ভারতকে ছাড়িয়ে গেছে। কলকাতায় এসে একটা ব্যাপার বেশ ভাল লাগল , এখানকার সব শ্রেণীর মানুষ একই এক্সেন্টে প্রমিত বাংলায় কথা বলে। ভারতীয় বাংলা সিরিয়ালের কথা বার বার মনে পড়ে যাচ্ছিল এদের কথোপকথন শুনে। কলকাতার মানুষের কিপ্টেমির অনেক হাস্য রসাত্মক গল্প শুনেছি। যেমন, বাসায় অতিথি এলে তারা নাকি বলে- “ দাদা কি খেয়ে এসেছেন না গিয়ে খাবেন”। “ দাদা আধখানা ডিমের পুরুটাই খেতে হবে কিন্তু”গল্প গুলি সত্যি কিনা জানিনা। তবে চায়ের দোকানে মিনি সাইজের কাপ দেখে কিছুটা ভিরমি খেলাম। এক চুমুকেই সবটুকু চা শেষ!


রবীন্দ্র ভারতীতে এসে হতাশ হতে হল। আমরা একটু বেশি আগেই চলে এসেছি। গেট খুলতে এখনো আধা ঘণ্টা বাকি। গার্ড কিছুতেই ভবনের ভেতরে ঢুকতে দেবেনা। আমরা অনুরোধ করাতে বলল – দাদা আমার চাকরিটা খাবেন দেখছি। আমরা ব্রেক ফাস্ট খেয়ে এসেছি, কাজেই তার চাকরি খাওয়ার কোন ইচ্ছে আমাদের নেই। তাই অগত্যা মূল ভবনে না ঢুকে আসে পাশে ঘুরে দেখে দুধের স্বাদটা ঘোলেই মেটাতে হল।


















( চলবে)।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৫:১৫
২০টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×