মেয়রকে দু’ঘন্টা অবরুদ্ধ করে রেখে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে যুবলীগ নেতাকর্মীদের তান্ডব চালানোর একদিন পরও থানায় কোন মামলা বা জিডি করা হয়নি। মেয়র এম মনজুর আলম বললেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের অধীনস্থ সংস্থা আক্রান্তের ঘটনায় কোন ব্যবস্থা নিতে হলে সরকারই নেবে। তবে কারো অনৈতিক দাবির কাছে কিছুতেই মাথা নত না করার ঘোষনা দিয়ে তিনি পাঁচদিনের মধ্যে নগরীর সব অবৈধ বিলবোর্ডের তালিকা তৈরির জন্য ৪১ ওয়ার্ডের কাউন্সিলরকে নির্দেশ দিয়েছেন। সিসিসিতে নজিরবিহীন তান্ডবের এ ঘটনায় চট্টগ্রামে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্ঠি হয়েছে। এই সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে বুধবার যুক্ত বিবৃতি দিয়েছেন কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র, ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও মহিলা কাউন্সিলররা।
মঙ্গলবারের অপ্রীতিকর ঘটনাকে অনভিপ্রেত ও দু:খজনক আখ্যায়িত করে বিবৃতিতে তারা বলেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নগরীর ৫০ লাখ লোকের আশা আকাঙ্খার প্রতীক। এ প্রতিষ্ঠানের কাজই হচ্ছে নগরবাসীকে সর্বোচ্চ সেবা দেয়া। এখানে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির কোন স্থান নেই। তাই গত মেয়র নির্বাচনে সিসিসিকে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার জন্য নগরবাসী সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিকে নির্বাচিত করেছেন। মেয়র মনজুর আলম একজন যোগ্য ব্যক্তি হিসেবে নগরবাসীর প্রতিনিধি হয়ে নিজের দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু গত মঙ্গলবার চট্টগ্রাম আউটডোর এডভারটাইজিং ওনার্স এসোসিয়েশনের নামে একদল উশৃঙ্খল যুবক কর্পোরেশন ভবনে মেয়রকে অবরুদ্ধ করে কর্পোরেশনের কাজে বাধাদানের ঘটনা উদ্দেশ্যপূর্ণ ও আক্রোশমূলক।
এ ঘটনায় কাউন্সিলররা ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করে বিবৃতিতে আরো বলেন, এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে জড়িতদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। বিবৃতিদাতারা হলেন দুই প্যানেল মেয়র জোবাইরা নার্গিস খান ও চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, কাউন্সিলর মো. শাহজাহান, ফরিদ আহমদ চৌধুরী, শফিকুল ইসলাম, মাহবুবুল আলম, মো. আজম, হাসান লিটন, এস এম ইকবাল হোসেন, শামসুজ্জামান হেলালী, আবদুস সাত্তার সেলিম, মোরশেদ আকতার চৌধুরী, বাবুল হক, মাহফুজুল আলম, গিয়াস উদ্দিন, সাইয়েদ গোলাম হায়দার মিন্টু, এ কে এম জাফরুল ইসলাম, মো. তৈয়ব, ইয়াছিন চৌধুরী আছু, বিজয় কুমার চৌধুরী কিষান, এম এ মালেক, নিয়াজ মোহাম্মদ খাঁন, সিরাজুল ইসলাম, আবদুস সবুর লিটন, মো. সেকান্দর, সাহিদুল ইসলাম টুলু, জহির আহমদ চৌধুরী, দিদারুর রহমান, মো. ইসমাইল, হাজী নুরুল হক, জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, হাসান মুরাদ, সরফরাজ কাদের রাসেল, মোঃ নুরুল আবছার, মহিলা কাউন্সিলর ফেরদৌস বেগম মুন্নী, জাহানারা বেগম, আরজু সাহাবুদ্দীন, মনোয়রা বেগম মনি, শাহেদা কাসেম সাথী, আনজুমান আরা বেগম, রেখা আলম চৌধুরী, রেহেনা কবির রানু, ফেরদৌস আরা, জান্নাতুল ফেরদৌস পপি, আফরোজা কালাম, লুৎফুন্নেছা দোভাষ বেবী ও শাহানুর বেগম। কর্পোরেশনে হামলা ও মেয়রকে অবরুদ্ধ করে রাখার ঘটনায় আজ বৃহস্পতিবার বেলা দু’টায় সিসিসি মিলনায়তনে সব কাউন্সিলর ও মহিলা কাউন্সিলররা জরুরী সভা ডেকেছেন। হামলাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে সভা থেকে কর্মসূচী ঘোষনা করা হতে পারে।
তবে এতবড় ঘটনার পরও সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী সমর্থিত আটজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্যানেল মেয়র মোহাম্মদ হোসেন, নিছার উদ্দিন আহমদ, এফ কবির আহমেদ মানিক, নজরুল ইসলাম বাহাদুর, জহরলাল হাজারী, জহিরুল ইসলাম দোভাষ, গোলাম মোহাম্মদ চৌধুরী ও আবদুল বারেক নিন্দা বা প্রতিবাদ জানাননি। অন্যদের সঙ্গে যুক্ত বিবৃতিও দেননি।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ঠিকাদার সমিতির সভাপতি মনজুরুল আলম মনজু ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম মহিউদ্দীন পৃথক বিবৃতিতে সিসিসি মেয়রের অফিস কক্ষে গত ২ নভেম্বর অনাকাংখিত ঘটনায় ক্ষোভ ও দু:খ প্রকাশ করেন। বিবৃতিতে তারা বলেন, মেয়রের অফিস ব্যক্তির অফিস নয়। এ অফিস নগর পিতার অফিস। এই অফিসের মর্যাদা রক্ষা করা সকল নগরবাসীর দায়িত্ব ও কর্তব্য। এর সুনাম নষ্ট করা নিন্দনীয়।
এদিকে বুধবার সকালেও মেয়র এম মনজুর আলম এ ঘটনা নিয়ে কর্পোরেশনের সব বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ ধরনের অনাকাংখিত ঘটনায় খুব দু:খ পেয়েছেন উল্লেখ করে বৈঠকে সবার উদ্দেশ্যে মেয়র বলেন, নাগরিক প্রতিষ্ঠানের পবিত্রতা রা করা সবার দায়িত্ব। তিনি সবাইকে নির্ভয়ে এবং স্বাভাবিকভাবে কাজ করে যাওয়ার আহবান জানান।
বুধবার সিটি কর্পোরেশন ভবনে পুলিশ মোতায়েন ছিল। আগের দিন হামলাকারীদের কাউকে দেখা যায়নি।
বিকালে মেয়র এম মনজুর আলম বললেন, এ ঘটনায় কর্পোরেশনের স্বাভাবিক কার্যক্রমে কোন প্রভাব পড়েনি। মামলা বা জিডি না করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এসব করে আর কি হবে। ব্যবস্থা নিলে সরকারই নেবে। তিনি জানান, বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে নগরীর কোন ওয়ার্ডে কি পরিমান বৈধ অবৈধ বিলবোর্ড আছে তা সার্ভে করে আগামী পাঁচদিনের মধ্যে কাউন্সিলররা রিপোর্ট দেবেন। রিপোর্টের ভিত্তিতে অবৈধ বিলবোর্ড উচ্ছেদ অভিযান চলবে। অন্যায় আবদারের সঙ্গে কোন আপোষ নয়।
বুধবারও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত ছিল। দুপুরে সিটি ম্যাজিষ্ট্রেট শেখ ছালেহ্ আহমদের নেতৃত্বে নগরীর বহদ্দারহাট মোড়, ষোলশহর ২নং গেট, জিইসি মোড়, বাওয়া স্কুলের পাশে, ওয়াসা মোড়, কাজীর দেউরী মোড়ের রাস্তা ও ফুটপাতের উপর অবৈধভাবে স্থাপিত বিভিন্ন বিজ্ঞাপন কোম্পানীর বিজ্ঞাপন সমৃদ্ধ আটটি পুলিশ বক্স অপসারণ করা হয়। এতে র্যাব, সিএমপি পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারি উপস্থিত ছিলেন।
মঙ্গলবার সিটি কর্পোরেশনে সৃষ্ট অপ্রীতিকর ঘটনার ব্যাপারে বুধবার চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগ সভাপতি চন্দন ধর ও সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিবৃতি দেয়া হয়েছে। বিবৃতিতে তারা বলেন, বিলবোর্ড অপসারণকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট পরিস্থিতি নিয়ে মেয়রের সঙ্গে আউটডোর এডভার্টাইজিং ওনার্স এসোসিয়েশন কর্মকর্তাদের বৈঠক নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মিথ্যা বানোয়াট সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। বৈঠককালে বিএনপির মিছিল নিয়ে আসাটা প্রমান করে এটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রনোদিত। মিছিলের সামনে থাকা বিএনপি ও ছাত্রদল ক্যাডারদের গ্রেফতার করার জন্য তারা দাবি জানান।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি নেতাকর্মীরা মেয়রকে অবরুদ্ধ করে রাখার প্রতিবাদে বুধবার বিকালে বিক্ষোভ সমাবেশ মিছিল করেছে। বক্তব্যে নেতারা বলেন, শেখ হাসিনার আশকারায় যুবলীগ ছাত্রলীগ ক্যাডাররা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। জনতার আদালতে একদিন এদের বিচার করা হবে।
এ ঘটনা নিয়ে সবাই যার যার মত করে অবস্থান নিয়েছে, ঠিক আছে। বাংলাদেশে যা নিয়ম আর কি! মজার ব্যাপার হল, সরকার কিন্তু নীরব। স্থানীয় সরকারের একটি সংস্থা আক্রান্ত হলেও সরকারের যেন কোন গরজই নেই।
কি জমানা যে এল !