somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি গল্প (প্রথম পর্ব)

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ইমরানের আত্মকথন



মনটা খারাপ ।মন খারাপের অনেক হেতু থাকতে পারে,আমারো নিশ্চয় আছে ।কিন্তু আপাতত বুঝতে পারছি না ।মন ভালো করার জন্য ছাদে উঠলাম ।ছাদের চার কোণে পাঁচটা মেয়ে ,দুজন আংকেল সাথে উনাদের ওয়াইফ ।পাঁচ মেয়ের মধ্যে দুজন ফোনে কথা বলছে ,দুজন নিজেদের মাঝে খুঁনশুটিতে ব্যস্ত ,আরেকজন উদাস হয়ে আকাশ দেখছে ।কাপলরা নিজেদের নিয়ে মেতে আছে ।বিরক্ত লাগল ।মন খারাপ মেজাজ খারাপের পর্যায়ে চলে যাচ্ছে ।নেমে যাব ,এমন সময় পেট মোটা আঙ্কেলটা ডাক দিল ।

-এই যে ছেলে,একটু এদিকে আসো ।

-আমাকে ডাকছেন ??

-হুম তুমাকেই ।তুমি সাইফুল ভাইয়ের ছেলে না !!

-জি ।

-কেমন আছ ?

-মোটামুটি ভাল ।

-ছাদে কি জন্য আসছ ??

মেজাজটা এইবার সত্যি সত্যি খারাপ হল ।দাঁত কিড়মিড় করে জবাব দিলাম ,

-ছাদে আসতে ইচ্ছে হল ।

-চলে যাচ্ছ কেন ??

-চলে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে ।

উনি হাসলেন ।বিদঘুটে টাইপ হাসি ।

-চলে যাচ্ছ কেন !!বস ,হাওয়া খাও ।

-কক্সবাজারের আকাশে বাতাসে আজ বিষাক্ত হাওয়া ঘুরে বেড়াচ্ছে ।বিষাক্ত হাওয়া খেলে ব্যমো বাঁধতে পারে ,তলিতল্পা গুটিয়ে প্রস্থান করুন ।আমি ব্যমো বাঁধাতে চাই না জনাব ।

বলেই উলটা ঘুরে হাঁটা দিলাম ।পিছন থেকে একটা শব্দ ভেসে আসল ‘বেয়াদব’ ।

বেয়াদপ শব্দটা মধুর ।অন্তত আমার কাছে মধুর ।মাঝে মাঝে বেয়াদপি করি ।তারা বেয়াদপ বলে সম্বোধন করে ,আমি প্রীত হই ।মেজাজ খারাপ ভাবটা চলে গেছে ,মন খারাপ ভাবটা যায় নি ।তবে মন খারাপের হেতু আবিষ্কার করেছি ।আমি চ্যাকা টাইপের কিছু খেয়েছি ।





মেয়েটার সাথে ফোনে কথা হত ।দেখা একবার হয়েছিল বটে ,তবে অনেক আগে ।বছর দেড়েক তো হবেই ।নববর্ষে ।সাদা লাল শাড়ি যে কোন নারীকে অপ্সরী করতে বাধ্য ।তাকেও অপ্সরীর মত লাগছিল ।প্রশ্ন আসতেই পারে অপ্সরী কেমন !!অন্য কারো কাছে কেমন জানি না ,আমার কাছে অপ্সরী ওর মতন ।কথা বলা হয়ে উঠে নি ।ভেবেছিলাম ওখানেই বোধহয় শেষ ।ভুল ছিলাম ।শেষ হয় নি ।তার নাম্বার যোগাড় করে তাকে ফোন দিয়েছিলাম ।তখন থেকে আজ অবধি কথা বলেই যাচ্ছি ।নাম আনিকা ।থাকে চট্টগ্রাম ।সম্প্রতি তার ফোন বন্ধ ।ফেসবুকে সে এড নায় ,ইউজ করে না নাকি !!

বিরক্তির চরম পর্যায়ে আছি ।মোবাইলের কিপ্যাডের উপর আজকাল অত্যাচার কমে গেছে ,ইনবক্সে নতুন কোন মেসেজ আসে না ।মোবাইলটা বের করে নাড়ি ,দেখি ।বন্ধ নাম্বারটাতে খামোকা ফোন দিই ।যান্ত্রিক কন্ঠটা বিরক্তিকর একঘেয়ে বাক্যটা আওড়াতে থাকে ।বন্ধ নাম্বারটাতে পাঠানো মেসেজগুলা ফেইল্ড হয় ।বোকার মত রাগ ঝাড়ি আশপাশের মানুষের উপর ।তার চট্টগ্রামের ঠিকানাটা আছে ।যাব কিনা ভাবছি ,গিয়ে বিষদ লাভ হবে বলে মনে হচ্ছে না ।হয়ত গিয়ে দেখব বাড়িতে তালা লাগানো !!



গলির সামনের দোকানটার সামনে চোখমুখ কুঁচকে দাঁড়িয়ে আছি ।চায়ের অর্ডার করেছি অনেকক্ষণ ,খবর নায় ।সামনে একটা মেয়ে এসে দাঁড়াল ।পরিচিত মনে হচ্ছে ।

-আচ্ছা ,আপনি এমন ফাযিলের ফাযিল আর বেয়াদপ কেন ??

-আপনাকে কামড়ে ছিলাম নাকি ??

-ফালতু কথা বলবেন না ।আপনি বাবার সাথে সবসময় বাজে আচরণ করেন কেন ??

বুঝতে পারলাম ইনি জনাব পেট্ মোটা সাহেবের সুন্দরী কন্যা ,ছাদে উদাস চোখে আকাশ দেখা মেয়েটা । পেট মোটা সাহেব বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে আমার কাছে হেনস্থা হয়েছেন ,গতকালও হয়েছেন ।মেয়ে এসেছে বাপের অপমানের প্রতিশোধ নিতে !!

-আচ্ছা ,ইদানীং কি মুনমুন ময়ূরীদের বাংলা সিনেমা বেশি দেখা হচ্ছে ??

-মানে ???

তার চোখ দুটা আগুনে ঝলছে ।প্রতিশোধের আগুন !!আবার খানিকটা আশ্চর্যকর ভাব ফোটে উঠেছে ,সাথে বিরক্তির মিশেল ,অদ্ভুত বটে !!

-না মানে ঐ মুভিগুলাতে প্রায় সময় দেখা যেত ,বাবা হত্যার প্রতিশোধ নিতে নায়িকা ভিলেন বাবাজির হালুয়া টাইট করার জন্য ছোটে যেত ,আপনিও যেমন বাবার অপমানের প্রতিশোধ নিতে ছোটে এসেছেন ।হয়ত বাবার কাছে প্রতিজ্ঞা করে এসেছ , ‘বাবা, আমি ঐ ইমরান ত্যাদড়টার শায়েস্তা করে আসবই !!’

-আপনি আস্ত একটা ফাউল ছেলে ।ত্যাঁদড় না কি বললেন !!আপনি আসলেই ঐটাই ।

বলেই গটগট হাঁটা দিল ।তার গমন পথের দিকে তাকিয়ে হাসলাম ।মুচকি টাইপের হাসি ।ভালবাসাবিদরা যাকে রোমান্টিক হাসি বলে ।বিরক্তি কমছে ,মাথাটা ঠান্ডা হচ্ছে ,অপারেশনের জন্য প্লান করা যাবে ।অপারেশন খুঁজাখুঁজি ফর আনিকা !!!





রাইমার আত্মকথন



আকাশটা মেঘ করেছে ।বৃষ্টি হচ্ছে ,পায়ের নিচে কাঁদা ।অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়ায় আছি ।রিক্সা পাচ্ছি না ।গলির ভিতরে রিক্সা পাওয়া কিছুটা টাফ বটে ,কিন্তু কাঁদার মধ্যে হাঁটতে ইচ্ছে করছে না ।তাছাড়া বৃষ্টি অনেক তীব্র ।

উপায় দেখছি না ।হেঁটে গেলাম সামনে ।অবাক হলাম ।গলির মাথায় দাঁড়িয়ে এই ঝুম বৃষ্টিতে ভিজছে ত্যাঁদড় ইমরান ।ত্যাঁদড় নামটা মোটেই আমার দেওয়া নাম না ।ঐটা ঐ ত্যাদড়েরই দেওয়া ।কোন কথা তার মুখে আটকায় না । আস্ত একটা ফাযিল ।

কিন্তু এইভাবে ঝুম বৃষ্টিতে মূর্তির মত দাঁড়িয়ে ভেজার মানুষ অন্তত সে না ।খুব জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করতেছে ,এইভাবে মূর্তির মত দাঁড়িয়ে ভিজছে কেন !! কিন্তু সদুত্তর পাব না ,উলটাপালটা কিছু বলে বসতে পারে !!

চুপচাপ ওর পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম ।আমার দিকে ফিরেও তাকায় নি ।দাঁড়িয়েই আছে ।আমি এখন আর রিক্সা খুঁজার চেষ্টা করছি না ।ওর সাথে কথা বলব ।বলুক উলটাপালটা কথা ।জানার আগ্রহ বেড়ে গেছে ।কিছু একটা হয়েছে ।

-এই যে ,জনাব ইমরান !!একটু হেল্প করুন না!! একটা রিক্সার ব্যবস্থা করে দেন না !!আমার জরুরী একটা কাজে যেতে হবে কিন্তু রিক্সা পাচ্ছি না ।

চোখ তুলে তাকাল এইবার ।ইমরানের এই চেহেরাটা আমার কাছে অপরিচিত ,কেমন যেন বিদ্ধস্ত !!চোখ দুটা লাল ।নাকটাও লাল ।কাঁদছে সে !! যারপরনায় বিস্মিত হলাম ।কোন কথা না বলে ,হেঁটে চলে গেল।







রাত দশটা ।

বারান্দায় বসে আছি ।মশার কামড় খাচ্ছি ,কিন্তু রুমের ভিতর যেতে ইচ্ছা করছে না, বারান্দার সুন্দর চাঁদের আলো ফেলে কেই বা যেতে চাইবে !!তবে মনটা একবার খারাপ হচ্ছে ,আবার কনফিউজ হচ্ছে ।আজকের আকাশের মত ।সকালে ছিল তীব্র বৃষ্টি ,আর এখন ফকফকা চাঁদের আলো ।

মন খারাপ হচ্ছে কেন বুঝতে পারছি না ।খারাপ হওয়ার তো কোন কারণ দেখছি না ।ত্যাঁদড় ইমরানের মন খারাপ হলে আমার কি !!ত্যাঁদড় ইমরান কাঁদলে আমার কি !!

আমার কি জানি না !!কিন্তু কিছু একটা হচ্ছে ।কি হচ্ছে বুঝতে পারছি না ।নাকি আমি না বুঝার ভান করছি ।কিছু হওয়া কি উচিত ।উচিত ,অনুচিত বুঝতে পারছি না ।

অনেক দিন থেকে দেখছি তাকে ।প্রাইমারী লেভেল থেকে ।কোনদিন আমার সাথে ভাল আচরন করেছে বলে মনে পড়ছে না ।তবু কিছু একটা হচ্ছে !!তাকে কি এখন আমার দেখতে ইচ্ছা করছে না !!করছে ।সে কাঁদছিল কেন কি জানতে ইচ্ছা করছে না !!তাও তো করছে ।কেন করছে !!কিছু একটা হচ্ছে বলে করছে ।এখন আর হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না ,মনে হচ্ছে ‘হয়ে গেছে’ !!পৃথিবী এত বিচিত্র কেন !!



হচ্ছে ,হয়েছে কনফিউশন থেকে রক্ষা পেতে রুমে এসে ফেবুতে লগ ইন করলাম ।আসলেই কি রক্ষা পেয়েছি !!চ্যাট বক্সের ইমরানের নামের পাশে সবুজ বাতিটা জ্বলছে ।বুক ধুকপুক করছে ।যন্ত্রের মত নামটাতে ক্লিক করলাম ,লিখে enter button এ চাপও দিয়ে ফেললাম , ‘আজকে সকালে রাস্তার মাথায় মূর্তির মত দাঁড়িয়ে ভিজছিলেন সাথে কাঁদছিলেন কেন !!!’

-কেন ?তাছাড়া আমি কাঁদি নি ।

-হতে পারে ।বাট আমার মনে হইছিল কাঁদছিলেন ।মন তো নিশ্চয় খারাপ ছিল !!

-এমন মনে হল কেন ??

-কারন আপনি সাধারনত প্রশ্ন করলে জবাব দেন ।বাট আজ সকালে কোন কথা না বলে চলে গিয়েছিলেন ।

-মন খারাপ ছিল বটে ।কিন্তু কারন জানা কি খুব বেশি প্রয়োজনীয় !!

-খুব বেশি প্রয়োজনীয় কিনা বুঝতে পারছি না ,তবে জানতে ইচ্ছে করছে ।

-আমি ঠিক জানি না কেন মন খারাপ ছিল ,ঠিক বুঝাতেও পারবো না ।তবে মন যে খারাপ ছিল এইটা সত্য ।

-একটু বুঝিয়ে বলেন বুঝতে পারবো ।

-আমার ঐ বিষয়ে কথা বলতে ইচ্ছা করতেছে না ।

- ও !!তো কি করেন ??

-তেমন কিছু না ।শুয়ে আছি ।তুমি ?

-তেমন কিছু না ।

আমূল পরিবর্তন ।আগে নক করলে অনেকক্ষণ পর রিপ্লাই দিত ।মাঝে মাঝে দিতও না ।কি করেন জিজ্ঞেস করলে ,রিপ্লাই দিত হাগু করতেছে ।এখন !!এত্ত চ্যাঞ্জ !!চ্যাকা ট্যাকা কিছু খাই নি ত !!

প্রেম করত সে !!ধূর প্রেম করতে যাবে কেন !! ।!!তাছাড়া ও প্রেম করলেই বা কি !!আমার কি আসে যাই !!যাই ,না যাইলে বুকের নীচটায় চিনচিনে ব্যাথা করবে কেন ??



-------------------------

ইমরানের আত্মকথন



মেয়েটা এমন করল কেন ??সে কি একটুও বুঝত না ,আমি যে তাকে ভালবাসতাম ।কত সুন্দর করে তাকে খুঁজতে যাওয়ার প্ল্যান করেছিলাম !!অথচ সে ফোন করল ,বেশ খুশিই হয়েছিলাম ।চিনতে পারি নি প্রথমে নাম্বারটা ।বেশ বিরক্তির সাথেই রিসিভ করেছিলাম ।কন্ঠটা শুনে খুশিতে লাফিয়ে উঠতে ইচ্ছা করছিল ।

-হ্যালো, ইমরান ।

-এতদিন কোথায় ছিলা ??

-আরে অনেক কথা ।পরে বলব ।আগে বল ,তুমি কোথায় ??

-আমি কক্সবাজার ।তোমার নাম্বার কই ??ফোন বন্ধ কেন ??

-এইটা আমার হাসবেন্ডের নাম্বার ।অনেক ঝামেলায় আছি ।পালিয়ে বিয়ে করেছি ।

-তোমার হাসবেন্ড !!তুমি প্রেম করতা ??

-করতাম ।এখন করি ।ওই ত আমার সব ।জান অনেক ঝামেলায় আছি ।হেল্প করতে পারবা ??

-কোন ধরনের হেল্প ??

-পারবা কিনা বল না ??করনা প্লিজ ।তুমি ছাড়া আর কাউকে দেখছি না ।

-করব ।

-ওকে ।কি করতে হবে কালকে জানাবো ।

তার কথাগুলা আমার কানে ঢুকছিল না ।কান টা জ্বলছিল ,জানি লাল হয়ে গেছে ।চোখটাও হটাত জ্বলা শুরু করল ।পানি পড়ছে নাকি !!পড়ছেই তো !!তার বয়ফ্রেন্ড ছিল ,তাকে আবার বিয়েও করে ফেলেছে ।বিয়ে করে পড়েছে ঝামেলায় ,ঝামেলা সাড়াতে কল দিয়েছে আমাকে !!কি হচ্ছে এসব !!চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছা করছে ।কাঁদা যাবে না ,প্রেস্টিজের ব্যাপার স্যাপার আছে ।

গতকাল বলেছিল আজকে জানাবে ,দুপুর তিনটা বাজে ,খবর নায় ।তার বয়ফ্রেন্ডের ফোনও বন্ধ !!আমি খানিকটা উতকন্ঠিত হচ্ছি নাকি !!আমার উতকন্ঠিত হওয়ার দরকার কি ,তারতো বয়ফ্রেন্ড আছে ,যাকে আবার সে বিয়েও করে ফেলেছে ।।কিন্তু আমি উতকন্ঠিত হচ্ছি ত ।গতকাল থেকে স্বাভাবিক হতে পারছি না ।উল্টা পেটুক আংকেলের মেয়ে রাইমা না ফাইমা ,তার কাছে ধরা পরে গেছি,যে কাঁদছিলাম !!

গতকাল বৃষ্টির মধ্যে ওভাবে দাঁড়িয়ে থাকা উচিত হই নি ।কিন্তু আমি তো নিজেই বুঝতে পারছিলাম না আমি কি করেছিলাম !!অনূভুতিশূন্য হয়ে গিয়েছিলাম ।মানতে পারছি না ,আনিকার এখন হাসবেন্ড আছে ।তাদেরকে আবার আমার হেল্প করতে হবে ।।হেল্প করছি কেন আমি !!জানি না ।



বিকালে সাধারণত খেলতে যাই ,আজকে যেতে ইচ্ছে করছে না ।ছাদে উঠব কিনা ভাবছি !!পেট মোটা পেইন দিবে ,মেজাজ টা আরো খারাপ করে দিবে ।কলিং বেল বাজছে ।কেউ খুলছে না ,কেউ খোলার কথাও না ,আজ বাড়িতে কেউ নাই ।বেড়াতে গেছে সবাই ।অথচ এই অনূভূতিটা আসতে কয়েক সেকেন্ড বেশি সময় লাগল ।দরজা খুললাম ,ওপাশে রাইমা দাঁড়িয়ে ।

-বাসায়তো কেউ নাই ।

বললাম আমি

-আপনি কি কেউ এর মধ্যে পড়েন না !!

ওর জবাব শুনে অন্য সময় হয়তো আমার মেজাজ খিচড়ে যেত ,আশ্চর্যজনক ভাবে আমার মুখটা দুপাশে প্রসারিত হচ্ছে ,হাসছি আমি!! সব কিছু এমন উল্টাপাল্টা হচ্ছে কেন !!!

-পড়ি বটে ।তো কোন প্রয়োজন !!

-শুধু কি প্রয়োজনেই আসতে হবে এমন কোন কথা আছে নাকি !!

মেয়েটার কথা বলার ধরন ভাল ঠেকছে না ।বলতে চাই কি !!সন্দেহজনক ,তার চেয়েও বেশি বিপজ্জনক ।বাংলা সিনেমার কথা বেশি মনে পড়ছে ।নায়ককে ভিলেন ফাঁসানোর জন্য কিন্তু মেয়েদের ব্যবহার করে ।সেক্ষেত্রে ভিলেনের অস্ত্র হয় ,মেয়েদের প্রতি নায়কের সফট কর্ণার ।আপাতত আমি শক্তই আছি ,আমাকে ফাঁসাতে পারবে না :p :D ।চোখ নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলাম ,

-তোমার পিছনে কলকাঠি কে নাড়ছে !!

-মানে !!

যারপরানই বিস্মিত হয়েছে ।আমি সফল ,তাকে পুরা কনফিউজ করে দিয়েছি । :D

-মানে !!তোমার পিছনে কলকাঠি কে নাড়ছে ??

-আমি তো আপনার কাছে নতুন কোন মুভি আছে কিনা দেখতে আসলাম ।কি বলতেছেন এসব !!

-এইতো লাইনে আসছ ।এতক্ষণ এই কথা না বলে ,শুধু কি প্রয়োজনেই আসতে হবে ,ফাস্তে হবে কি সব যা তা বলছিলা কেন !!

-আমিতো দুষ্টামী করছিলাম ।এভাবে ঘাবড়ে দেন কেন !!গতকাল তো খুব চুপচাপ ছিলেন ,ভেবেছিলাম আপনার দুষ্টামি গেছে !!এখন দেখছি ভুল ছিলাম ।।

রাইমা হাসছে ।চোখ নামিয়ে মিষ্টি টাইপের লজ্জা লজ্জা হাসি ।মুখের উপর এসে পরা চুলগুলোকে কানের উপাশে নিয়ে যাচ্ছিল আর হাসছিল ,লজ্জা লজ্জা মিষ্টি টাইপের হাসি ।আশ্চর্যজনকভাবে আমিও হাসছি ।মুচকি হাসি ।ভালবাসাবিদরা যাকে রোমান্টিক হাসি বলে ।







আনিকার আত্মকথন



কেমন যেন ভাল লাগা অনূভুত হচ্ছে ,তবে অনেক ভয়ে আছি ।অনিশ্চয়তার পথে পাড়ি দিয়েছি ।কি হবে এখনো বুঝতে পারছি না ।তবে সবচেয়ে খুশির ব্যাপার হচ্ছে রাহাত আমার সাথে আছে ।

রাহাত !!

কয়েকটা ছেলে আমাদের এক বান্ধবীকে সবসময় টিজ করত ।ঐ টিজ করা ছেলে গুলার মাঝে রাহাতও ছিল ।মেজাজ খারাপ করে সবসময় তাকাতাম ।সবাই চিল্লাচিল্লি করলেও রাহাত চিল্লাচিল্লিতে ছিল না ,স্রেফ দাঁড়িয়ে হাসত ।কখন ভাবিনি ,তাকেই ভালবেসে ফেলবো ।প্রতিদিন দেখতাম তাকে ,দিন দিন সে পাল্টাতে থাকে ।প্রথম হাসলেও ,এক সময় দেখলাম ,সে শুধু চুপচাপ বসে থাকে ,চোখটা নিচের দিকে নামিয়ে রাখে ।আরেকদিন দেখলাম ফ্রেন্ডদেরকে সে মানা করছে ।এসব দেখেই যে ,তাকে ভালবেসে ফেলবো এমনটা না ।তবে তার প্রতি একটা ভালোলাগা তৈরী হচ্ছিল ।

রিক্সা পাচ্ছিলাম না একদিন ।দাঁড়িয়ে আছি ,যথারীতি ঐ ছেলেগুলাও ছিল ,সাথে রাহাত ।একটা বাক্য তখন কানে আসছে মনে হল, ‘দোস্ত ,ভাবি তো ,রিক্সা পাচ্ছে না ।বাইক নিয়ে পৌঁছায় দিয়ে আয় না !!!’কথাটা ঐখানের এক ছেলেই বলেছে ,কিন্তু কাকে উদ্দেশ্য করে বলেছে জানি না ।জানার কথাও না ।তবে আমাকে ভেতরের কেউ একজন বলছে ,কথাগুলা রাহাতকে উদ্দেশ্য করেই বলা হয়েছে ।নাম জানতাম না তার তখনো ,শুধু দেখতাম ডান দিকে সিঁথি করা শ্বান্ত সৌম্য চেহেরার এক ছেলে চোখ নামিয়ে দাঁড়িয়ে থাকত ।



হটাত একদিন দেখলাম সে নায় ।ঐদিন কয়েকবার ফিরে ফিরে ঐ ছেলেদের দলের দিকে তাকিয়েছি ,ডান দিকে সিঁথি করা শ্বান্ত সৌম্য চেহেরার ছেলেটাকে খুঁজেছি ।পাইনি ।পুরা দিনেই মন খারাপ ছিল ,কেন খারাপ ছিল বুঝতে পারছিলাম ,কিন্তু বুঝতে চাইছিলাম না ।তাকে ভাল লাগার কোন কারণ খুঁজে পাচ্ছিলাম না ।একটা ছেলে তার ফ্রেন্ডদেরকে টিজ না করতে মানা করলেই কি তাকে ভাল লাগতে হবে !!কিন্তু আমার লাগছিল !!

কয়েকদিন পর হঠাত একদিন দেখলাম ।গিয়ে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছা করছিল ,কিন্তু ইচ্ছা করলেই তো সবসময় সবকিছু করা যায় না ।মেজাজ খারাপ হত, ও এসে কথা বলে না কেন !!তবে ও যে আমাকে পছন্দ করত এইটা বুঝতে পারছিলাম ।যেদিন দেখেছিলাম ,ঐদিনও ফিরে ফিরে তাকিয়েছি ।শ্বান্ত সৌম্য চেহেরার ছেলেটাকে দেখেছি ।অকারণে মানুষের মন কেন ভাল থাকে ঐদিন বুঝেছিলাম ।

তারপর একদিন সে বলল ।বৃষ্টি ছিল সেদিন ।ঝুম বৃষ্টি ।কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম ।যথারিথী রিক্সা খুঁজছিলাম ।বান্ধবীরা কেউ ছিল না ঐদিন ,একাই ছিলাম ।রাস্তার এপাশে ,ওপাশে তাকাতে তাকাতে হঠাত নজর পড়ল রাস্তার অপর পাশে ।একটা ছেলে বাইকের উপর বসে ঝুম বৃষ্টিতে ভিজছিল ।ভাল করে দেখলাম ,ছেলেটার শ্বান্ত সৌম্য চেহেরা কিন্তু ডান পাশের সিঁথিটা নায় ,বৃষ্টির কারণে নষ্ট হয়ে গেছে ।

রাস্তা পার হয়ে আমার সামনে আসল ।

-রিক্সা পাচ্ছেন না ?

-না ।আপনি ??

-আমি রাহাত ।চিনবেন না হয়ত ।তবে আপনাকে চিনি ।

-আপনার নাম জানতাম না ।তবে আপনাকে চিনি ।

মাথাটা নিচু করে ফেলল এইবার ।

-আসলে স্যরি ঐ ব্যাপারগুলা নিয়ে ।এখন নিশ্চয় আর কেউ সাউন্ড দেয় না ??

-দেয় না ।এবং আমি এটাও জানি আপনি ওদের নিষেধ করেছেন ।

লজ্জা পেল মনে হয় ।আবারো বললাম ,

-আচ্ছা আপনি কি বেশি লজ্জা পান ।

-ঠিক লজ্জা না আসলে !!আসলে কিভাবে বলব ,...... বাদ দেন ।আমি কি আপনাকে পৌঁছায় দিব ??

তার কথা রাখতে ইচ্ছে করতেছে ,কিন্তু ইচ্ছে করলেই যে সব কিছু পারা যায় না ।

-আসলে হঠাত এভাবে আপনার বাইকে বাড়ি যাওয়া উচিত হবে না ।

-আপনার ইচ্ছাটা আছে নাকি জানতে চাইছিলাম ।

-এখন বৃষ্টি পড়ছে তো ,বাইকে করে গেলে ভিজে যাব ।

-আমি আপনাকে বাইকে করে যেতে বলি নি ,স্রেফ ইচ্ছা আছে কিনা জানতে চাইছিলাম ।

তার চেহেরার দিকে তাকাতে পারছিলাম না ।ধরা পড়ে যাব ।আমি ধরা পড়তে চাচ্ছি না ।না করলে তো হবে না ,আমিতো ওর দিকে তাকিয়ে ফেলেছি ।সে আমার কাছে কোন প্রশ্ন করে নি ,পাশে এসে দাঁড়িয়ে অনুমতির তোয়াক্কা না করে , আমার ডান হাতটা ধরে একটা চাপ দিয়েছিল ।কেঁপে উঠেছিলাম ।না উঠে উপায় ছিল !!

হাতটা ধরেই আছে ।সে কিসের অপেক্ষা করছে জানি ,আমার হাতের চাপের ।আমি দিতে পারছি না ,আমি স্রেফ অবশ হয়ে গেছি ।তার দিকে তাকালাম ।আমার দিকে তাকিয়ে নেই ,সামনের দিকে তাকিয়ে আছে ।

-আমি অবশ হয়ে গেছি ।তোমার হাতে চাপ দিতে পারছি না ।

আমার দিকে তাকিয়ে হাসল ।আমার না হেসে উপায় ছিল ?? ছিল না ।হেসেছিলাম ,ঠোটফাটা হাসি ।

তখন যে হাতটা ধরেছিল ,তখন ঐ হাত ধরে রাখার ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দিহান ছিলাম ।এখন অপরাধ বোধে ভুগছি ,সন্দিহান ছিলাম বলে ।দুদিন আগে বিয়ে করে ফেলেছি ।বাড়িতে জেনে যাওয়ার পর ,আমার বিয়ে দিতে সবাই উঠে পড়ে লেগে গেল ।আসলে আম্মু মেনে নিতে পারছিল না রাহাতকে ।বেকার কোন যুবকের হাতে নিশ্চয় কেউ তার মেয়েকে তুলে দিতে চাইবেন না ।তাছাড়া রাহাতের বাবা মা কেউ বেঁচে নেয় ,থাকে চাচার বাড়িতে ।তবে সে যে কিছু একটা করে তা জানতাম ,কি করত ঐটা জানতাম না ।জিজ্ঞেস করেছিলাম কয়েকবার ।সঠিক করে কিছু বলে নি ,স্রেফ বলেছে ফ্রেন্ডদের সাথে শেয়ারে একটা ব্যবসা করে ।বাবাকে বলেছিলাম ,বাবা বিশ্বাস করেছিল কিন্তু আম্মু বিশ্বাস করে নি ।আম্মুর কথার উপর আব্বুর কথা বলার সাহস ছিল না ,কারন আব্বু নিজেই থাকত মামার বাড়িতে ।মামারা স্থানীয়ভাবে অনেক প্রভাবশালী ।ওনাদের আমি চিনি ,কি ভয়ংকর !!ওনারা খুন করতেও দ্বীধা করবেন না ।আর ওনারা খুন করলেও কেউ কিচ্ছু বলবেনা ।এমনকি আমার রিলেশনের কথা জানার পর রাহাতকে মারার জন্য খোঁজা হয়েছিল ।পালিয়ে ছিল সে ।আব্বু আমার অবস্থা বুঝতে পারছিল ।আর ওদিকে আম্মুরা আমার বিয়ের জন্য তোড়জোড় শুরু করে দিল ।বাসা থেকে পালানো ছাড়া উপায় ছিল না ।পালাতে সাহায্য করল বাবা ।একটি বারের জন্যও রাহাতের উপর বিশ্বাস হারায়নি দেখে অবাক হয়েছিলাম ।

পালিয়ে প্রথমে গিয়েছিলাম বান্দরবান ,বাবার একটা এক খালাত ভাইয়ের বাড়িতে ।ঐখানে বেশিদিন থাকা নিরাপদ নয় বলে ,এখন কক্সবাজার যাচ্ছি ।কারণ ইতিমধ্যে আমাকে হন্যে হয়ে খোঁজা শুরু করে দিয়েছে মামারা ।কক্সবাজারে ইমরানকে ফোন করেছি ।এই ছেলেটার সাথে পরিচয় অনেকদিনের ।অচেনা নাম্বার থেকে ফোন আসছিল ।দেখাও হই নি ,আমাকে দেখেছিল নাকি নববর্ষে ।অথচ নির্দ্বিধায় বিশ্বাস করা যায় ।দুদিন আগে সব বিস্তারিত বলেছি ।সব ব্যবস্থা করে রাখবে আশ্বাস দিয়েছে ।আপাতত কক্সবাজারে ভাড়া বাসায় গিয়ে উঠব ।এরপর দেখা যাক কি হয় !!!

বাসে এখন ।গন্তব্য কক্সবাজার ।বাসে পালাতে ভয় পাচ্ছি না ।কারণ এত তাড়াতাড়ি পুলিশকে জানাবে না মামারা ।মান সম্মান নিয়ে অনেক টেনশনে থাকেন ।মায়ের জন্য অনেক খারাপ লাগছে ।বুক ফেটে কান্না আসতেছে ।বাবার কাছে শুনেছি ,উনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন ।পাশের সিটে পাথুরে মুখে বসে আছে রাহাত ।নির্লিপ্ত চেহেরাটা দেখে বুঝার উপায় নেই ভেতরে কি চলতেছে !!পরম নিশ্চিন্তে তার কাঁধে মাথাটা রেখে দিলাম ,হাতটা হাতের মুঠোতে নিয়ে চাপ দিলাম ।তাকাল আমার দিকে ,একটু হাসল ।পরম নির্ভরতার হাসি !!







আনিকার মামার বাড়ি



মারাত্মক গম্ভীর মুখে ড্রয়িং রুমের সোফার উপর বসে আছেন স্থানীয় পৌরসভা চেয়ারম্যান আনিকার বড় মামা আনিসুর রহমান ।আনিকার দুঃসাহসের কথা চিন্তা করে উনার পায়ের পাতা থেকে মাথার চুল পর্যন্ত জ্বলছে ।কি করবেন বুঝতে পারছেন না ।কোথায় যেতে পারে আন্দাজও করতে পারতেছেন না ।আপাতত কেউ যাতে না জানে ,এই ব্যাপারটা নিশ্চিত করতে হবে ।উনি উনার বক্তব্যের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন ।একটু পরই বাড়ির সবার সামনে ছোটখাট একটা বক্তব্য দিতে হবে ।কিন্তু কি বলবেন ,তা কিছুতেই মাথায় আনতে পারছেন না ।

একে একে সবাই প্রবেশ করল রুমে ।আনিকার মেঝ মামা ,ছোট মামা ,মামীরা এবং আনিকার বাবা রিয়াদুল হক ।আনিকার মা আসেন নি ।উনি তিনদিন ধরে শয্যাশায়ী ।

সবার উপর একবার চোখ বুলালেন ।সবার চেহেরাতেই চিন্তার চাপ পড়েছে ।বিশেষ করে আনিকার বাবাকে একেবারে বিধ্বস্ত মনে হচ্ছে ।নার্ভাস ফিল করছেন উনি ।ঘামছেন উনি ,বেশ ক্লান্ত হয়ে গেছেন আসলে ।কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন উনি ।মেয়েটা এইভাবে হাওয়া হয়ে যাওয়াটা মেনে নিতে পারছেন না ।ফকিন্নির বাচ্চা রাহাইত্যাকে পেলে একেবারে কাঁচা খেয়ে ফেলবেন ।

কাঁপা কাঁপা কন্ঠে উনি উনার বক্তব্য শুরু করলেন ,

“আমরা সবাই একটা কারণে দুশ্চিন্তায় আছি ।আনিকা এইভাবে বাড়ি থেকে চলে যাবে আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না ।তবে সে চলে গেছে ।বাড়িটা পুরোটা যেন হাহাকার করছে ।তার বড় মামা ডাকটা এখনো যেন শুনতে পাচ্ছি ।রিয়াদের(আনিকার বাবা) চেহেরার দিকে আমি তাকাতে পারছিনা ।কত ভালবাসত মেয়েটাকে ,অথচ সে পালিয়েছে একটা রাস্তার ছেলের হাত ধরে ।আমিনার(আনিকার মা) তো অসুখই হয়ে গেল ।তিনদিন হয়ে গেল অথচ একটা খবর পর্যন্ত নেয়ার প্রয়োজনবোধ করল না মেয়েটা ।আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি ।মেয়েটাকে আমরা খুঁজব না ।যে চলে গেছে তাকে চলে যেতে দেওয়া উচিত ।এমনকি ঐ ফকিন্নির বাচ্চার লাথি টাথি খেয়ে যদি আবার বাড়িতে ফিরে আসে ,তখনো তার জায়গা এইখানে হবে না ।অর্থাৎ তার জন্য এই বাড়ির দুয়ার সবসময়ের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে ।যে আমাদের মান সম্মান ,নিজের মান সম্মানের কথা চিন্তা না করে বাড়ি থেকে পালাতে পারে ,তার স্থান এই বাড়িতে আছে বলে আমি মনে করি না ।কারো কি দ্বিমত আছে ??আশা করি কেউ নেই ।তাছাড়া এই ব্যাপারে গতকাল কথা হয়েছে আমার আমিনার সাথে ।তার আপত্তি নেই ।রিয়াদ তোমার কি কিছু বলার আছে ??”

জনাব রিয়াদুল হক মনে মনে হাসছেন ।বেশ খুশিই লাগতেছে তার ।তবে মুখে দুঃখিত ভাবটা ধরে রেখেছেন ।কিছু বললেন না ।চুপ করে থাকলেন ।

-কিন্তু ভাইয়া ,আমাদের কি খুঁজা উচিত নই !!

প্রশ্ন রাখলেন আনিকার ছোট মামা ।

-না ।চলে গেছে ।চলে যাক ।বোনটা কষ্ট পাচ্ছে এইটা খারাপ লাগতেছে ।কেউ জিজ্ঞেস করলে বলবা, মেয়েকে দেশের বাইরে পড়তে পাঠানো হয়েছে ।যেইটা সিদ্ধান্ত হয়েছে ঐটাই থাকবে ।এইবার চাইলে সবাই চলে যেতে পার ।রিয়াদ থাক ,তোমার সাথে কিছু কথা আছে ।



সবাই চলে যাওয়ার পর ঠান্ডা চোখে কিছুক্ষণ মাপলেন রিয়াদ সাহেব কে ।ঠান্ডা গলায় বললেন,

-অনেকদিন থেকে চিনি তোমাকে ।তোমাকে কি করা উচিত বুঝতে পারছিনা ।মেয়ে তোমার ।কিন্তু আমাদেরও হক আছে ,তার ব্যাপারে ।অথচ তুমি কি করলা !!মেয়েকে একটা ফকিন্নির বাচ্চার হাতে তুলে দিলে ।নিজের হাতে তুলে দিয়ে এখন আবার দুঃখিত হওয়ার ভান করছ ।

-আপনি কি বলতেছেন কিছুইত বুঝতে পারছি না ।

-জনাব, চালাক হওয়ার চেষ্টা করবে না ।তোমাকে চিনি আমি ।আমিনা মানা করেছিল ,নয়তো তোমাকে স্রেফ পুঁতে ফেলতে ইচ্ছা করছে ।অন্য ভাইয়েরা জানলে আমিনার নিষেধের তোয়াক্কা করবে না ।পুঁতে ফেলবে ।তোমাকে এবং তোমার মেয়ে জামাইকে ।তাই তাদের সামনে তোমার কথা ফাঁস করি নি ।কালকে সকালে ঘুম থেকে উঠে এই বাড়ি ছাড়বে ।নিজের মেয়েকে খুঁজে বের করে ওদের সাথে থাকবে ।তাদের অভিবাবকের প্রয়োজন আছে ।আমিনার আপত্তি নাই ।সে তোমার চেহেরাটা দেখতে চায় না ।এখন আমার সামনে থেকে দূর হও ।দেখলেই গর্তে পুঁতে ফেলতে ইচ্ছা করে ।

-আপনি এসব কি বলছেন !!

-যা বলছি তাই কর ।আমার বোনটাকে বিধবা করতে বাধ্য করিও না ।আর একটাও কথা না বলে ,রুম থেকে বাহির হয়ে গেলে খুশি হব ।

বিধ্বস্ত মন ও চেহেরা নিয়ে রুম থেকে বের হলেন রিয়াদ সাহেব ।মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে ।আমিনাকে ফেলে চলে যেতে হবে !!আনিকাকে এসব কথা কিভাবে বলবেন !!মেয়েটা নিজেকে অপরাধী ভেবে শেষ হয়ে যাবে !!







ইমরানের আত্মকথন



মন খারাপ করে ছাদে বসে থাকা উচিত হচ্ছে কিনা বুঝতে পারছি না ।আজকে আনিকারা আসবে ।একটা বাড়া বাসা খুঁজতে বলেছিল ।খুঁজার প্রয়োজন ছিল না ।আমাদের বিল্ডিংয়েই ছিল ।বিল্ডিংয়ের মালিক অর্থাৎ পেট মোটা আংকেলকে বলতে হবে ।কিন্তু বলার কাজটা এখনো করি নি ।পেইন দিবে ।বাড়ি ভাড়া দেওয়ার সময় প্রচুর পেইন দেন ।বাপ দাদা চৌদ্দ গুষ্টির বায়োডাটা বের করে ছাড়েন ।আনিকাদের জন্য বাসা ভাড়া খুঁজতে গেলে কি অবস্থা করবেন বুঝতে পারছি না ।ব্যাপারটা উনার কন্যা রাইমার উপর ছেড়ে দিব কিনা ভাবছি ।কিন্তু মেয়েটারে পথে ঘাটে যেখানে সেখানে যেভাবে ওর বাবার মত পেইন এর উপর রাখি ,তাতে আমার কাজ করে দিবে বলে মনে হচ্ছে না ।গতকাল তো কান্নায়ই করে দিয়েছিল ।

গতকাল রাতেও বাড়িতে কেউ ছিল না ,খালাত বোনের বিয়েতে গেছে সবাই ।একা ছিলাম ।বাইরে হোটেলে গিয়ে খেতে হত ।কারন আমার একই খাবার বারবার গরম করে খাইতে ইচ্ছা করে না ।বিকেলে ছাদে উঠেছিলাম ,ঐখানে দেখা হয়েছিল রাইমার সাথে ।কথায় কথায় বলেছিলাম ,রাতে বাইরে খাইতে হবে ।

রাতে বসে বসে বিরক্ত হচ্ছিলাম ।কিচ্ছু করার ছিল না ।খানিকক্ষণ বই পড়ছিলাম ,বিছানায় গড়াগড়ি দিচ্ছিলাম ।আনিকার বিয়ে করাটা মেনে নিতে পারছিলাম না আসলে ।আমার অপ্সরী ,আরেকজনের অপ্সরী হয়ে গেছে ।আরো বলে কি ঐ গিরগিটিটা ওর সব ।গিরগিটি টার দেখা পাই খালি ,নাক টাক ভাঙ্গি দিব ।

রাত নয়টার দিকে কলিংবেল বাজল ।

এমনিতে বিরক্তিতে আছি তার উপর আরো মেজাজ খারাপ হল ।যেই হোক ,দরজা খুলে একটা ঝাড়ি দিব সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ।দরজা খুললাম ।যথারিথী ওপাশে রাইমা দাঁড়িয়ে ।পরনে হলুদ একটা সালোয়ার কামিজ ।চেহেরার দিকে তাকালাম ।সাজুগুজু করেছে ।বেড়াতে গিয়েছিল মনে হই ।ঝারিটা দিতে পারি নি ।মেয়ে মানুষ ঝাড়ি দেওয়া কি উচিত !!আসলে কি তাই !!নাকি ওর সৌন্দর্যের কাছে পরাজিত হয়েছিলাম !!

হাতে একটা ট্রে ,ট্রের উপর ডাকনা দেওয়া কতগুলা বাটি ।

-দাঁড় করিয়ে রাখবেন নাকি ??

বুঝতে পারলাম মেয়েটা আমার জন্য খাবার এনেছে ।বাইরে যাতে খেতে না হই ।ভেতরে ভেতরে খুব খুশি হয়েছি ।কিন্তু তাকে ক্ষেপাতে ইচ্ছা করছে ।ক্ষেপানো উচিত হবে কিনা বুঝতে পারছি না ।জায়গা করে দিলাম ভিতরে যাওয়ার জন্য ।ট্রেটা টেবিলের উপর রেখে আমার দিকে ফিরল ।

-যান ,হাত ধুয়ে আসেন ,খাবেন ।আম্মু রান্না করে দিয়েছে ।আমি এখনও রান্না করতে পারি না তো ,তাই রান্না করি নি ।নয়তো আমি রান্না করতাম ।অবশ্য খুব শীঘ্রই শিখে ফেলবো ।

-আচ্ছা তুমি কি ইদানিং হিন্দি সিরিয়াল দেখা শুরু করছ নাকি !!আগেতো একবার বলেছিলা দেখ না ।

-আপনি কি বলছেন !!হিন্দি সিরিয়াল দেখতে যাব কোন দুঃখে !!

-তো ,রাতের বেলা সাজুগুজু করছ কেন ??

লজ্জায় একেবারে লাল হয়ে গেছে ।মাথা নিচু করে ফেলেছে ।মাথা যখন তুলেছে চোখ টলটল করছে ।কেঁদে দিবে নাকি !!কেউ শুনলে তো কেলেংকারী ঘটে যাবে ।

-আমি যাই ।আপনি খেয়ে নিয়েন ।

-আরে তুমি রাগ করছ কেন ??আমিতো দুষ্টামি করছিলাম রে গাধী ।

-আপনি সবসময় আমার সাথে এইভাবে কথা .........

কথা আটকে গেছে ।অঝোর ধারায় কান্না শুরু করে দিল ।হতবিহ্বলের মত দাঁড়িয়ে রইলাম ।কি হতে ,কি হয়ে গেল !!কি করব বুঝতে পারছি না ।ভয়ও লাগতেছে ।বাইরের কেউ যদি শুনে !!বাইরের দরজাটাও খোলা ।পেট মোটা শুনলে তো শূলে চড়াবে আমাকে ।

-আরে তুমি কান্না করছ কেন ??স্যরি ।আর দুষ্টামি করব না ।

ঐ কাঁদো কাঁদো গলাতেই বলল ,

-দুষ্টামি করবেন না কেন ??

-আরে বাপ ,দুষ্টামি করলে তো তুমি কান্না করতেছ ।।

-সবসময় ,সব ব্যাপার নিয়ে দুষ্টামি করলে খারাপ লাগে ।আমি আপনার জন্য খাবার নিয়ে আসলাম ,আর আপনি আমার সাথে ফাযলামো করতেছেন ।সেজেছি না হই একটু ,তাই বলে হিন্দি সিরিয়ালের খুটা দিবেন ??কি জন্য সেজেছি তা তো আপনি জীবনেও বুঝবেন না ।আপনি খান ।আমি যাচ্ছি ।খাওয়া শেষ হলে একটা ফোন দিয়েন ।

বলেই চলে গেল ।কি বলতে কি বলে গেল খুদা মালুম ।আরে আমি কি জানি ,ও কিসের জন্য সেজেছে আমি জানব কেন অথবা আমার বুঝতেও হবে কেন !!আজব তো !!

---------------------

পেট মোটা আঙ্কেল কে ফোন দিলাম ।রাইমাকে রিকোয়েস্ট করব না ।আমার মনে হচ্ছে মেয়েটার মাথায় ,সামান্য ডিফেক্ট আছে ।কি না ,কি বলে আঙ্কেল কে !!

অনেকক্ষণ রিং হওয়ার পর রিসিভ করল ।মেয়ে কন্ঠ ।রাইমা রিসিভ করেছে ।দুষ্টামী করার চান্স হাতছাড়া করলাম না ।

-আঙ্কেল আপনার গলা কোকিল কন্ঠি হয়ে গেছে কেন ??কি হয়েছে ??

-আপনার ফাযলামো বন্ধ করবেন ??

-আমাকে চিনতে পেরেছ নাকি ??

-চিনতে পারবো না !!মোবাইলে স্পষ্ট অক্ষরে সেভ করা আছে , ‘বেয়াদপ’ ।

-মানে কি !!

-আব্বুর কাছ থেকে জিজ্ঞেস করিয়েন ।উনিই তো সেভ করেছেন ।আমিতো আমার ফোনে ভাল নামেই সেভ করেছি ।

-উনি কোথায় ??

-মেহমান আসছে । উনাদের সাথে কথা বলতেছেন ।কথা বলা যাবে না ।আমাকে বলুন ।

-তোমাকে বলে লাভ নাই ।উনাকে বলতে হবে ।

-বলুন না আমাকে ।

-ভাড়া বাসার প্রয়োজন ।চার তলায়তো ফ্ল্যাট একটা খালি আছে ।

-কি জন্য ?

-আমার বান্ধবীর জন্য ।

-কি ??আপনার বান্ধবীর জন্য !!

-হুম ।এইখানে থাকবে ।আঙ্কেলকে কিভাবে রাজি করাব বুঝতে পারছি না ।উনিত একেবারে চৌদ্দগুষ্টির বায়োডাটা নিয়ে ছাড়েন ।আর বেচারি এসেছে বাড়ি থেকে পালিয়ে ।ভাড়া দিবেন কিনা বুঝতে পারছি না ।তুমি হেল্প করতে পারবা ??

-আপনি কোথায় এখন ??

-কেন ??ছাদে আর কি !!

ফোন কেটে দিছে ।কি আজব মার্কা মেয়ে ।কথায় শেষ করলাম না ,অমনি ফোন কেটে দিছে ।ভুলই করলাম মনে হই ,মেয়েটার মাথায় দেখি আসলেই সমস্যা আছে ।আঙ্কেল কে কি বলতে কি বলে ফেলে !!

ছাদের দরজায় আওয়াজ শুনে ওদিকে থাকালাম ।রাইমা ।

চুল উস্কুখুস্কু ,পরনে কালকের কাপড়টাই ।চেহেরায় সাজের চিহ্ন নেই ।গাল দুটা লাল ।কান গুলাও লাল ।চোখে কিছুটা রাগ !!

-বেশি ভালবাসেন উনাকে ??

-কাকে ??

-আপনার বান্ধবীকে ।

পুরা তাজ্জব হয়ে গেলাম ।রাইমা কিভাবে আনিকাকে আমার ভাল লাগার কথা জানতে পারল ,বুঝতে পারলাম না ।অবাক বিস্ময়ে তার দিকে তাকিয়ে আছি জবাব দিতে পারছি না ।আনিকার প্রতি চাপা দিয়ে রাখা ভালবাসাটা আবার উতলে উঠল ।নিজের আবেগকে আমার সংবরণ করা উচিত ।কিন্তু পারছিই না ।

-হুম অনেক ভালবাসতাম তাকে ।প্রথম দেখায় প্রেম বলে কিছু আছে বলে বিশ্বাস করতাম না ,কিন্তু জান ওকে দেখার পর মনে হল আমি ভুল ছিলাম ।পুরা দেড় বছর ওর সাথে ফোনে কথা বলেছি ,কিন্তু কোন সময় আমার পছন্দের কথা জানাতে পারি নি ।হটাত একদিন তার ফোন অফ ।অস্থির হয়ে গিয়েছিলাম ।কিছুদিন পর ফোন করল ,অনেক খুশি হয়েছিলাম ।কিন্তু আমার সব খুশিতে পানি ঢেলে দিয়ে বলল ,সে বিয়ে করে ফেলেছে ।পালিয়ে বিয়ে ।কক্সবাজার আসবে ,একটা বাসা ঠিক করে রাখতে বলল ।এত কষ্ট পেয়েছিলাম জান !!!

বলতে বলতে ওর দিকে তাকালাম ।হাসছে ।মেজাজ খারাপ হয়ে গেল একদম ।আমি এইখানে আমার দুঃখের কাহিনী শুনাচ্ছি ।আর ও বসে বসে মজা নিচ্ছে ।

-হাসছ কেন ??

-এমনিতে ।

-আমি হাসার কথা বলছি ??

-না ।তবে আমি হাসছি কেন আপনাকে বলতে পারব না ।আমি আপনার কথার জন্য হাসছি না ।আমি আমার পাগলামির জন্য হাসছি ।

-তুমি আবার কি পাগলামো করলা ??

-কিছু না ।বাদ দেন ।ঘর ভাড়া হয়ে যাবে ।আম্মুকে দিয়ে রাজি করাব ।আপনাকে আব্বু পছন্দ না করলেও ,আম্মু যথেষ্ট পছন্দ করে ।তবে একটু মিথ্যা বলতে হতে পারে ।আব্বু যদি জিজ্ঞেস করে বলবেন ,আপনার বান্ধবীর হাসবেন্ড চাকরী করেন ।বদলী হয়ে কক্সবাজার এসেছেন ।কোথায় চাকরী করে বলবেন ,পরে বলব ।আম্মুর সাথে কথা বলে দেখি ।তবে আপনার এই লাভ স্টোরিটা একদিন চা খেতে খেতে শুনব আবার ।আপাতত যাই ।

কি বলে গেল বুঝলাম না ।শুধু বুঝলাম ,আমার কাজটা হয়ে যাবে ।আমি এমন আবেগের সহিত আমার এমন দুঃখের ভালবাসার কথা বলছিলাম ,আর ও কিনা মজা নিয়ে চলে গেল ।আরো বলল কি ,আরেকদিন চা খেতে খেতে শুনবে ।আজব পাব্লিক তো !!মাথায় আসলেই প্রব্লেম আছে !!অবশ্য পেট মোটার মেয়ে এর চেয়ে ভাল হবে আশা করাটা বোকামী !!ভালয় ভালয় আমার কাজটা হয়ে গেলে হয় এখন !!নয়তো মান ইজ্জত নিয়ে টানাটানিতে পড়ে যাব ।







নিজের ছোট ছেলে ইমরানকে এখনো বুঝতে পারলেন না সাইফুল সাহেব ।ছেলেটা যখন কোন পাব্লিক ইউনিভার্সিটিতে চান্স পেল না ,তখন দেশের বাইরে কোন ভার্সিটির স্কলারশিপের জন্য চেষ্টা করতে বলেছিলেন ।ছেলেকে রাজি করাতে পারেন নি ।প্রাইভেট ভার্সিটিতেও ভর্তি হবে না সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ।কেন নিয়েছিল খোদা মালুম ।অনেক বার জিজ্ঞেস করেছিলেন ,সদুত্তর পান নি ।হটাত এমন কি হল ছেলেটার বিদেশে যাওয়ার জন্য লাফালাফি শুরু করে দিল ।ইদানীং সদা হাসিখুশি ছেলেটাকেও খুঁজে পাচ্ছেন না উনি ।কেমন যেন চুপচাপ থাকে ,কথা বলা একেবারে কমিয়ে দিয়েছে ।অথচ এমনটা সে কোন কালেই ছিল না ।আসমাকে(ইমরানের আম্মু) জিজ্ঞেস করতে বলেছিলেন ।জবাব ছিল ‘এমনি,কিছু না’ ।কিছু একটা হয়েছে ,কিন্তু শেয়ার করতে চাচ্ছে না ।কিছু একটা থেকে পালাতে চাচ্ছে সে ।কিছু টা কি বুঝতে পারছেন না ।



বারান্দায় বসে পেপার পড়ার ব্যর্থ চেষ্টা করছিলেন ।ছেলেটাকে নিয়ে মহা দুশ্চিন্তায় আছেন ।ইমরান এসে পাশে দাঁড়াল ।তাকালেন ওর দিকে ।একটু হাসলেন ।

-বাবা, কি অবস্থা ?

-ভাল ।তোমার কি অবস্থা ?

-ভাল খারাপের মাঝামাঝি ।তবে মোটামুটি না ।আসলে মোটামুটি বলতে কিছুই নাই ।মানুষ কেন মোটামুটি বলে ,তা তারা জানে না ।তারা তখন নিজের অবস্থা বুঝতে পারে না বলে দায়সারা গোছের একটা উত্তর দেয় ।তবে এখন মোটামুটি শব্দটা স্টাব্লিশ হয়ে গেছে যার অর্থ হতে হবে সে ভালও না খারাপও না ।আমি এর ঘোর বিরুধী ।যদি সে বুঝতে না পারে সে কেমন আছে তাইলে তার বলে দেওয়া উচিত ,সে কেমন আছে তা সে বুঝতে পারছে না ।আর যদি সে বুঝতে পারে সে ভাল খারাপের মাঝামঝি জায়গায় অবস্থান করছে ,তাহলে তা সরাসরিই বলতে হবে ।জান আব্বু, ভাল আর খারাপের মাঝামাঝি থাকা খুব খারাপ ।আমি খুব খারাপ অবস্থায় আছি ।কি রকম খারাপ অবস্থা ঠিক বুঝাতে পারবো না ।



শেষের দিকের কথাগুলা অনেকটা আর্তনাদের মত ছিল ।সাইফুল সাহেব কি কেঁপে উঠেন নি ,উঠেছেন ।ছেলের দিকে ভাল করে তাকালেন ।ছেলের চেহেরায় কিছুই বুঝা যাচ্ছে না ।মুখটা পাথুরে টাইপের কিছু না ।কথা বলার সময় তার ঠোট একটুও কাঁপে নি ।তবে গলায় কিছু একটা ছিল ।ঐ কিছু একটাই একজন বাবাকে ব্যতিব্যস্ত করে দিতে যথেষ্ট ।

-কি হয়েছে বলতে পারবা ??

-বললাম তো বুঝাতে পারবো না ।

-তুমি যে এরকম করতেছ ,আমার মোটেই ভাল লাগছে না ।তোমার আম্মুর, দুশ্চিন্তায় ঘুম হারামের দশা হয়ছে ।তুমি যদি আমাদের সাথে কিচ্ছু শেয়ার না কর ,তাহলে আমরা কিভাবে সমাধান করব ??আমি কি বলছি তুমি বুঝতে পারছ ??

-পারছি ,আবার বুঝতেও পারছি না ।মানুষ সব কথা ভালভাবে কখনো বুঝতে পারে না ।আমি মানুষের সমগোত্রীয় ।

-কি বলতেছ এইসব !!

-দর্শন শাস্ত্র চেষ্টা করছি ।কিছু ব্যপার বুঝতে পারছি বলে মনে হচ্ছে ।আমার দর্শনকে আপাতত কেউ পাত্তা দিচ্ছে না ।তবে আমি কিছু মনে করছি না ।বড় বড় দার্শনিকের দর্শন কেউ মেনে নিতে পারে নি ,সেখানে আমি কোন ছাড় !!যাই ,তোমার সাথে পরে আলোচনা করা যাবে ।আরেকটু চিন্তা করা দরকার ।ছাদে ঠাডা রোদ পরছে ।ঠাডা রোদে চিন্তা করলে মাথা খুলে ।মাথা খুলতে যাই ।আর আমি আগামী ছয় মাসের মধ্যে দেশ ছাড়ছি ।কিভাবে ছাড়বো জানি না ,ঐটা তোমার দায়িত্ব ।মধ্যপ্রাচ্যে হলে মধ্যপ্রাচ্যে ,স্রেফ এই দেশটা ছাড়তে হবে ।



সাইফুল সাহেব ভয় পেলেন ।তার ছেলে পাগল হওয়ার প্রাইমারী স্টেজে আছেন ।প্রাইমারী থেকে যে কোন সময় সেকন্ডারী স্টেজে চলে যেতে পারে ।সেকেন্ডারী স্টেজ থেকে উচ্চ পর্যায়ে যাওয়া সময়ের ব্যপার মাত্র ।উচ্চ পর্যায়ে গেলে কেলেংকারি ঘটে যাবে ।উচ্চ পর্যায়ের পাগলরা কাপড় ছাড়া বেশি সচ্ছন্দ্য বোধ করে ।

হতভম্ব বাবাকে বারান্দায় রেখে,ছাদে আকাশ দেখার চেষ্টা করছে ইমরান ।আকাশটা দেখতে পারছে না, সূর্য তীব্র আলো ছড়াচ্ছে ।চোখ খুলতে পারছে না ।তার চোখ দিয়ে হয়তো দু এক ফোটা করে পানি পড়া শুরু হয়েছে ,যা সূর্যের তীব্র আলোয় হয়ত বাষ্পীভূত হচ্ছে ।চোখ বন্ধের মধ্যে সে ,আনিকা কে দেখছে ।যে নিশ্চিন্তে রাহাতের বুকে মাথা রেখে ঘুমুচ্ছে ।রাহাতের বুকে আনিকার নিশ্চিন্তে ঘুমানোর দৃশ্যটা তার সয্য হচ্ছে না ,অথচ কি এক অদ্ভুত আকর্ষণে সে চোখ খুলতেও পারছে না !!



---------------------

আনিকার আত্মকথন



ভাল থাকার চেষ্টা করছি ।কিন্তু পারছি না ।সকাল থেকে মন টা খারাপ ।কক্সবাজার এসেছি আজকে দু সপ্তাহ হয়ে গেছে ।ইমরান যথেষ্ট হেল্প করেছে ।বেশি হেল্প করেছে রাইমা মেয়েটা ।পুরো বাসাটা নিজের হাতে গুছিয়ে দিয়েছে মেয়েটা ।এখনো কলেজে পড়লেও সব কিছুর মধ্যে কেমন যেন পূর্ণতা আছে ওর ।

বাড়ি থেকে একটা খবরও পেলাম না ।আশ্চর্যজনক ভাবে বাবার ফোনটাও বন্ধ ।আম্মুকে ফোন করেছিলাম বটে ,কিন্তু ঐটাও বন্ধ ।মামাদের ফোন করতে ভয় লাগে বলে ,ফোন করি নি ।মা কেমন আছে খুব জানতে ইচ্ছা করছে ।

কয়েকদিন থেকে রাহাতকেও খুব দুশ্চিন্তা গ্রস্থ দেখছি ।কি কারণে চিন্তিত জিজ্ঞেস করা হই নি ।জানি করলেও লাভ নেই ,নিজে থেকে কিছু না বললে তাকে কিছু বলানো যায় না ।এইখানে একটা চাকরি নিয়ে ফেলেছে ।ব্যবস্থা ইমরানই করে দিয়েছে ।তবে ওকে দেখলে বুঝতে পারি ,সন্তুষ্ট না ।কিন্তু আপাতত তো করারও কিছু নেই ।

রান্না করছিলাম ।এই সময় ফোন এল ।রিসিভ করলাম ।ওপাশে রাহাত ।

-আনিকা ……

-হুম ,বল ।

-কি করছ ??

-এইতু রান্না করছিলাম ।

-শুন ।আমি একটু জরুরী কাজে ঢাকা যাচ্ছি ।এখনই চলে যেতে হবে ।কিছুদিন পরেই চলে আসব ।তোমার সাথে দেখাও করতে পারছি না ।ইভেন আমি এখন গাড়িতে ।চিন্তা করিও না চলে আসব । love u…. take care… বাচ্চার নাম রাখবা ,ছেলে হলে রাফাত আর মেয়ে হলে আবিরা ।

-তুমি এখন থেকে বাচ্চার নাম ঠিক করছ কেন ???

-জানি না ।তবে যা করতে বলেছি তা করিও ।

-কি বলতেছ এই…………



ফোনটা কেটে গেছে ।আবার করলাম ।অফ ।কিছু বুঝলাম না ।ফিরে আসবে বলেছে ,অথচ এমনভাবে বিদায় নিল কেন ?? কিছু ঘটেছে নাকি ।ও কি আমাকে ছেড়ে চলে গেল ।চলে যাবে কেন !!দূর ,কি যা তা ভাবছি ।তবে আমার শরীরটা কাপছে কেন ??চেয়ারে বসে পড়লাম ।খুব খারাপ লাগছে আমার ।আশপাশের পৃথিবীটা দূলে উঠছে ।অথচ দুলে উঠার মত তো কিছু হয় নি এখনো ।ওকে কিছুদিন ধরে দুশ্চিন্তাগ্রস্থ কি এই জন্যই দেখাচ্ছিল !!

কেউ একজন দরজা নক করছে ।বসা থেকে উঠে দরজাটা যে খুলে দিব ,সেই শক্তি পাচ্ছি না ।মাথাটা যেন বনবন করে ঘুরছে ।আম্মুর কথায় কি তাহলে সত্যি হল !!মনে প্রাণে চাইছি আম্মুর কথাটা মিথ্যা হোক ।কিন্তু চাইলেই তো সব কিছু হয় না ।এইভাবে বিদায় নেওয়ার মধ্যে নিশ্চয় কোন দুঃসংবাদ লুকিয়ে আছে ।দুঃসংবাদ লুকিয়ে না থাকলে ,আমি এইভাবে ভেঙ্গে পড়ব কেন !!মনে হচ্ছে ,সদর দরজার ওপাশেই দুঃসংবাদ লুকিয়ে আছে ।



-------------------

দরজা নক করার অনেকক্ষণ পর দরজা খুলে দিল আনিকা ।রাহাতের কাছ থেকে ফোনটা পেয়ে এমনিতে খুব অস্থির হয়ে ছিল ইমরান ।ছাদে শুয়ে শুয়ে আকাশ দেখার চেষ্টা করছিল সে ,ঐসময় ঐ গজব মার্কা ফোনটা আসে ।কি সব বলল ফোনে কিছুই মাথায় ঢুকে নি ,স্রেফ সব মাথার উপর দিয়ে গিয়েছিল ।আনিকাকে ভাল করে দেখতে বলল ।অবাক হয়েছে সে ,মেজাজও খারাপ হয়েছিল প্রথমে ওর , ‘আরে বেটা নিজের বউকে নিজে দেখবি আমাকে দেখতে বলতেছস কেন !!’ ফোনটা কেটে দেয়ার পর মাথায় আসছে এইভাবে বলার একটাই কারণ থাকতে পারে ,সে কোথাও চলে যাচ্ছে ।ব্যপারটা হজম করতে কয়েক সেকেন্ড লেগেছিল তার ।এক দৌড়ে ছাদ থেকে সোজা আনিকার ফ্ল্যাটের সামনে ।

অনেকক্ষণ পর দরজা খুলে দেওয়া আনিকাকে দেখে সে প্রথমে চমকে উঠেছে ।কান্না করছে আনিকা ।ইমরানকে দেখে কিছুটা আশ্বস্ত হল আনিকা ।তবে বুকের ভিতর ধড়পড় করছে ।চোখ মুছল সে ।

-কান্না করতেছ কেন?

জিজ্ঞেস করল ইমরান ।

-না ,তেমন কিছু না ।আম্মুর কথা মনে পড়ছিল ।

-রাহাত ভাইয়ের সাথে কথা হয়ছে ??

বুকটা ধ্বক করে উঠল আনিকার ।তবে কি সে যা ভেবেছিল তাই ঘটতে যাচ্ছে ।

-না ,মানে হ্যা ।হয়েছে ।।কেন ??

-কিছু বলেছেন উনি ??

-আমি বুঝতে পারছি না তুমি কি বলতে চাচ্ছ ??

-তোমাদের মধ্যে ঝগড়া টগড়া কিছু হয়েছে নাকি??

-না তো ।তোমাকে ফোন করেছিল ??

-হুম ।

-কি বলেছে ??

-তেমন কিছু বলে নি ।তবে উনার কথাটা ঠিক বুঝতে পারি নি ।তোমাকে দেখে রাখতে বলল ।কেন বলল বুঝতে পারলাম না ।তোমাকে কি বলেছে ??

আনিকা জবাব দিতে পারে নি ।ফ্যালফ্যাল চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে ।এই তাকিয়ে থাকার গভীরতা ইমরান ধরতে পারছে না ।চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়ছে তার ।এখন আর পৃথিবীটা ঘুরছে না তার চোখের সামনে ,হয়ত সে নিজেই দুলে উঠছে পৃথিবীর সামনে ।সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ইমরানকে সে এখন আর দেখছে না ।অনেকটা ফ্ল্যাশবেকের মত সব কিছু ভাসছে ।রাহাতের সাথে দেখা হওয়া ।ঝুম বৃষ্টির মাঝে প্রথম হাত ধরা ।প্রথম চুমু ।বাবার সাহায্য ,মায়ের আর্তনাদ করে কান্না ,মামাদের রাগ ,বাড়ি ছেড়ে পালানো ,হটাত সব ঝাপসা ।

ইমরান তখন সাক্ষাত বাংলা সিনেমার কিংবদন্তি দুঃখিনী নায়িকা শাবানাকে দেখছিল আনিকার মাঝে !!এইটা কিভাবে সম্ভব তা ভেবে কুল পাচ্ছিল না ।দর্শন শাস্ত্রের নতুন বিষয় পেয়েছে বলে মনে হল ।হঠাত দেখল ,আনিকা পড়ে যাচ্ছে ।সিনেমার মত দৌড়ে গিয়ে ধরে ফেলবে কিনা ভাবছে ।তার উপলব্ধি হল ,বাস্তবতা সিনেমার মত হতে পারে না ।আনিকার পড়ে যাওয়া উচিত !!









রাহাত গত হয়েছে চার দিন ।ফোন আসে নি ,ফোন বন্ধ ।আনিকা শয্যাসায়ী ।মারাত্মক জ্বর ।ইমরান তার সেবায় নিয়োজিত হয়েছে ।কিন্তু মেয়েদের সব সেবা ছেলেরা করতে পারে না ,তাই সে রাইমাকে তার এসিস্ট্যান্ট হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে ।কিন্তু মেয়েটা বড্ড বেশি চালাক, এসিস্ট্যান্ট হয়ে তার বস কে আদেশ করছে ।এইটা আনেন ,ঐটা আনেন ।এইটা আনছেন কেন ,যেইটা আনতে বলেছিলাম ঐটা আনেন নি কেন??

রাতের বেলা আপাতত রাইমাই আনিকার সাথে থাকছে ।পেট মোটাকে বলা হয়েছে রাহাতকে চাকরির কারণে ঢাকাতে যেতে হয়েছে ।তবে ইমরান বুঝতে পারছে এইভাবে বেশিদিন চলা যাবে না ।কিছু একটা করতে হবে ।সবচেয়ে ভাল হয় যদি আনিকার পরিবারকে জানানো যায় ।কিন্তু আনিকা এতে সাঁয় দিবে বলে মনে হচ্ছে না ।

দুপুর বারটা পর্যন্ত ছাদে সূর্যস্নান করে ইমরান বাসায় প্রবেশ করল ।বাসায় ঢুকে দেখে অপরিচিত মানুষে বাসা ভর্তি ।ড্রয়িং রুমে জনাব সাইফুল হাসতে হাসতে কথা বলছেন একটা মধ্যবয়সী লোকের সাথে ।মানুষ্টাকে সুবিধার মনে হচ্ছে না ।তবে উনার পাশে বসা মেয়েটাকে বেশ ভাল লাগছে তার ।অসাধারণ চোখ ,ফিল্মি ভাষায় টানাটানা চোখ বলা হয় ।গালটা একটু ফোলা ।টেনে দিতে ইচ্ছা হয় ।

সাইফুল সাহেব হঠাত ইমরানকে দেখে বললেন ,

-আরে ,কোথায় ছিলা এতক্ষণ ??এদিকে আস ।পরিচয় করিয়ে দি ।

যন্ত্রমানবের মত উনার দিকে হেঁটে গেল সে ।চোখের একটা কোণ মেয়েটার দিকে আছে ।মেয়েটা অন্যদিকে তাকায় আছে ।এত সুন্দর কেন ??

-আমার ছোট ছেলে ইমরান ।ইমরান, উনাদের তো চিন না ।তাই না ।

-চেনার তো প্রশ্নই আসে না ।আগে তো দেখা হয় নি ,তাই না আঙ্কেল ??

আঙ্কেলও হাসিমুখে মাথা নাড়লেন ।

জনাব সাইফুল আবারো বললেন , ‘ইনি রাসেদুল হক ।আর ও উনার মেয়ে নিহা ।’

মেয়েটা একটু হাসল ।মুচকি হাসি ।তবে রোমান্টিক হাসি না ।ইমরান হাসে নি ,মন্ত্রমুগ্ধের মত তাকিয়ে রয়েছে ।

ইমরান পরিচিত হয়ে চলে আসল ।আসতে ইচ্ছে হচ্ছিল না ।কিন্তু সুন্দরী মেয়েদের পাশে বেশীক্ষণ থাকা যায় না ,জ্বলতে হয় ।নিজের রুমে ঢুকার আগে বড় বোনের রুমে ঢুঁ মারল সে ।বসে আছে ।কিছুটা বিষন্ন ।বিষন্ন আপুর সাথে কথা বলা যায় না ,ঝাড়ি খেতে হয় ।কোন কথা না বলে সে চলে আসছিল ।এমন সময় জারিন(ইমরানের বড় বোন) তাকে ডাকল ।

-ইমরান একটু এদিকে আয় তো ।

-কিছু বলবা ??

-আচ্ছা আমার বিয়ে হয়ে গেলে তুই খুশি হবি??

-ঠিক খুশি হব কিনা জানি না ,তবে কিছুটা হয়ত কষ্ট পাব ।

-কিছুটা !!

-হুম ,কিছুটা ।মানুষ কখনো বেশি কষ্ট পায় না ।কোন প্রিয় ব্যক্তি চলে গেলে অথবা হারিয়ে গেলে ,তারা মনে করে তারা বেশি কষ্ট পায় ।আসলে পায় না ।যদি পেত তাহলে জীবনেও হাসতে পারত না ।অথচ কিছুদিন পরে দেখা যায় কি ,তারা হাসছে ।গলা ফাটানো হাসা ।তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ‘কিছুটা কষ্ট’ টা সামান্য পরিমাণ বেশি হয়ে যায় ।তবে তোমার বিয়ে হয়ে গেলে সামান্য পরিমাণ বেশি কষ্ট লাগবে না ।কিছুটা বেশি লাগবে ।

-যদি সবাইকে ছেড়ে পালিয়ে যায় ??

ইমরান চমকে উঠল ।পালাতে যাবে কেন তার বোন !!কাহিনী কি !!বাবা কি বিয়ে ঠিক করছে নাকি?? বিয়ে ঠিক করলে সে জানবে না কেন??তার বোন যে প্রেম করত তা সে জানে ,নিহাল ভাইয়া ।নিহাল ভাইয়া পালাতে যাবে কেন !!উনি ভাল চাকরি করে ,প্রস্তাব পাঠালেইতো হচ্ছে ।

-পালিয়ে গেলে তোমার জন্য বিন্দুমাত্র খারাপ লাগবে না ।বাবা মায়ের জন্য কিছুটা বেশি খারাপ লাগবে ।তো পালাতে চাচ্ছ কেন ??

-ড্রয়িং রুমে কাউকে দেখছস ??

-হুম ।

-দেখে কি মনে হল ??

-তেমন কিছু না ।স্রেফ মনে হল আব্বু উনার কোন পুরনো বন্ধুকে পেয়েছেন ,যার সুন্দরী এক মেয়ে রয়েছে।

-তার এক ছেলেও রয়েছে ।যার সাথে বিয়ে দেওয়ার প্লান করছে আব্বু ।এখন তুই বল আমি বিয়ে কিভাবে করব ??

-আজব বিয়ে করা এমন কি কঠিন কাজ শুনি ।তিন কবুল বললেই ত কাজ শেষ ।অবশ্য এর পরের কাজ গুলা একটু কঠি .........

-চুপ ।ফালতু কথা বলবি না ।আমি নিহাল কে কি বলব ??

-বলবা তুমি বিয়ে করে ফেলছ ।তবে আপু আমি কি বলি জান ??তোমাদের ভালবাসা যদি সত্য হয় তাহলে তা একদিন তুমি ফিরে পাবায়ইইই ।

-বাংলা মুভি দেখতে দেখতে তোর মাথা গেছে ।

-আজব শুধু বাংলা মুভির দোষ দিচ্ছ কেন ,আমি হিন্দি মুভিতেও একই ডায়ালগ দিতে শুনেছি ।

-তুই এইখান থেকে যা ।তোর সাথে কথা বলাটাই ভুল হয়েছে ।

-তো কি পালিয়ে যাবা ??লাভটা কি হবে ??আনিকার মত এক কাত হয়ে শুয়ে থাকিয়ো সারাদিন ।গিয়ে মেয়েটার চেহেরার দিখে একবার তাকায় আস ,তাহলে পালানোর চিন্তা তোমার মাথা থেকে যাবে ।

-নিহাল আমার সাথে এমনটা করবে না ।

-আনিকা মনে করেছিল রাহাত তার সাথে এমনটা করবে ??করে নি ।এখন কি হল ??রাহাত তবুও তো ভাল ছিল ।ভাল প্লেসে ওকে রেখে গেছে ।নিহাল ভাই দেখা যাবে ,হোটেল রুমে ফেলে আসছে ।চিন্তা করতে পার তুমি ,তখন তোমার অবস্থা কি হতে পারে ??

-তুই যা ।ভাল লাগতেছে না আমার ।

-অবশ্য আরেকটা ব্যপার আছে ।

উজ্জ্বল চোখে তার দিকে তাকাল জারিন ।

-কি ব্যপার ??

-নিহাল ভাইকে পালানোর কথা বলতে পার ,উনি রাজি হবেন বলে মনে হচ্ছে না ।কারণ উনার চিন্তা ভাবনার সাথে আমার ব্যপক মিল ।তুমি আব্বুকে বলছ না কেন ??

-আমার ভয় লাগছে ।তুই বলবি ??

-না ।যার কাজ তার করায় উত্তম ।

-আমি কিভাবে বলব ??

-তা আমি কি জানি ??

-আমি পালিয়ে যাব ।

-কার সাথে ??একা ??নিহাল ভাই ভুলেও পালানোর কথা চিন্তা করবে না ।বাবা মায়ের আদরের সন্তান কিন্তু !!

-তুই যা এখান থেকে ।তোর সাথে কথা বলতে ভাল লাগতেছে না ।

কথার জবাব না দিয়ে মায়ের রুমে ঢুকল সে ।মায়ের সাথে কথা আছে ।বড় বোনের ব্যপারে কথা বলবে ।

রুমে ঢুকে দেখল একজন ভদ্র মহিলার সাথে কথা বলছে জনাবা আসমা ।জারিনের হলেও হতে পারে শ্বাশুড়ী আম্মু হতে পারে ।ইচ্ছা করেই পাত্তা না দিয়ে মা কে বলল ,

-বাড়িতে এত বড় একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলা হচ্ছে ।অথচ আমাকে একবারো জানানোর প্রয়োজন মনে করলেন না ।ইভেন যার সাথে বিয়ে হবে তাকেও একবার জিজ্ঞেস করা হয় নি ।

জনাবা আসমা কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গিয়েছিলেন আর ভদ্রমহিলার চেহেরায় বিস্ময় ।প্রাথমিক ধাক্কাটা কাটিয়ে আসমা ছেলেকে বললেন ,

-তুমি বাড়িতেই থাক না বলে তোমাকে জানানো হয় নি ।আর তোমার আপুর সাথে কথা হয়েছে ।তার ,রিফাতের সাথে দেখা করতে কোন সমস্যা নাই বলে জানিয়েছে ।আর ইনি মার্জিয়া হক ।রিফাতের আম্মু ।

মার্জিয়া হক কিছুটা অবাক হয়েছেন ।তার সামনেই মাতা পুত্র এসব আলোচনা করছেন দেখে ।তবে তিনি পুত্রের দিকে তাকিয়ে কর্পোরেট হাসি উপহার দিলেন ।পুত্র কিছু না বলে চেহেরায় এক অদ্ভুত ভঙ্গি করে রুম থেকে বের হয়ে গেল ।বেয়াদপ ছেলে তো ।



------------------

আনিকার শরীর কিছুটা ভাল হয়েছে ।রাইমার সাথে গল্প করছে সে ।তবে মন ভাল নেই ।থাকার কথাও না ।অন্ধকার ভবিষ্যত ।কোথায় যাবে সে ??এভাবে আর কতদিন ??বাবার ফোনটাও বন্ধ ।মাকে বেশি মনে পড়ছে তার ।

রাইমা মেয়েটা এত ভাল ,কল্পনাও করতে পারে নি সে ।গত চারদিন অনেক কষ্ট করছে তার জন্য ।একটা কথা ভেবে কুল পাচ্ছে না ।রাহাতের যদি এইভাবে পালানোর ইচ্ছা থাকে তাহলে বাচ্চা নেয়ার চেষ্টা করেছে কেন ??আর কিছুদিন পরেই হয়ত রাহাতের বাচ্চা পেটে থাকবে তার ।কি করবে সে বাচ্চাটাকে নিয়ে ।সময় হয়ত এখনো আছে ,নষ্ট করা যাবে ।কিন্তু কোন মতেই সে করতে পারবে না ।খুনি হতে পারবে না সে ।ইমরানের সাথে কথা বলতে হবে ।ও যদি কোন সমাধান দিতে পারে !!

-আচ্ছা ,রাইমা ।তোমার কি মনে হয় ??রাহাত এভাবে চলে গেল কেন ??

-বাদ দেন না আপু ।

-আমি আসলে চিন্তাও করতে পারি নি ।সে এমন করেছে কেন ??আসলে কি জান ,সে পালানোর ব্যপারে খুব একটা এগ্রি ছিল না ।আমার ভবিষ্যতের কথা বলত সবসময় ।আমার ভবিষ্যতটা নাকি সে নষ্ট করতে চাচ্ছিল না ।আর এখন কি করেছে ??চলে গেছে আমাকে ফেলে ।কোথায় গেছে ??আদৌ ফিরে আসবে কিনা জানি না ।অনিশ্চিত একটা ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিয়েছে আমাকে ।সে হয়ত মনে করেছে সে আমাকে ফেলে চলে গেলে আমি আবার বাড়িতে ফিরে যাব ।অথচ সে একবারো চিন্তা করল না ,আমি কোন মুখে বাড়িতে যাব ??

-আপু, আপনি এত হতাশ হচ্ছেন কেন ??এমনো ত হতে পারে উনার কোন বিপদ হয়েছে ।উনার এইভাবে পালানোর ইচ্ছা থাকলে তো আর ইমরান কে ফোন করে আপনাকে দেখতে বলত না ।অন্য কিছু একটা হয়েছে ।

-আমারো মনে হয়েছে ।কিন্তু আমি কি করব এখন ??ইমরান কিছু বলতে পারে কিনা কে জানে !!

-উনি আর কি বলবেন ??পাগলের মত করতেছে ইদানীং ।আরো বলছে ,পৃথিবীর সব মানুষ নাকি পাগল হয়ে গেছে ।উনি ছাড়া ।আবার বলছে ,সবাই পাগল ,শুধু ভাল মানুষের মত অভিনয় করছি নাকি !!

এমন সময় দরজায় নক পড়ল ।রাইমা দরজা খুলে দেখে ইমরান ।

-ভিতরে আসা যাবে ??

-হুম ।চেহেরাটা এমন করে রেখেছেন কেন ??

-ইচ্ছা হয়েছে ।না ।মেজাজ খারাপ ।কাউকে মারতে ইচ্ছা করছে ।কিন্তু কাকে মারব বুঝতে পারছি না ।সিঁড়িতে তোমার আব্বুকে পেয়েছিলাম ,কষে থাপ্পড় লাগানোর জন্য হাত নিশপিশ করছিল ।মারতে পারি নি ।মুরুব্বি মানুষতো ।

ইমরানের কথা শুনে হাসছে রাইমা ।এত পাগল একটা মানুষ কেন সে !!

-আজব তুমি হাসছ কেন ??দিব থাপ্পড় ।

-দেন ।

রাইমা কনফার্ম ছিল ইমরান তাকে থাপ্পড় দিবে না ।ইমরানও জানে রাইমা মনে করছে সে তাকে থাপ্পড় দিবে না ।মানুষকে বেশি কনফার্ম থাকতে দেয়া ভাল না ।কষে এক তাপ্পড় বসিয়ে দিল সে ।রাইমা যতটা না ব্যাথা পেয়েছে ,তার চেয়েও বেশি আশ্চর্য হয়েছে ।

-ছি ইমরান ।মেয়েটাকে এইভাবে থাপ্পড় মারলা কেন ?? বকার সুরে বলল আনিকা ।

-অনুমতি নিয়ে মেরেছি ।হঠাত মারি নি তো ।



এক ঘন্টা পর



রাইমা এখন আর কাঁদছে না ।তবে খানিক পর পর নাক টানছে ।গালে চারটা আঙ্গুল এখনো আছে ।আনিকা চুপচাপ বসে আছে ।ইমরানও চুপচাপ বসে আছে ।একটু আগে আনিকার সাথে হওয়া কথা গুলা ভাবছে ।রাহাত আনিকাকে ছেড়ে পালায় নি ।পালাতে বাধ্য হয়েছে ।না হলে সে তাকে ফোন করত না ।তার সাথে হয়ত কিছু একটা হয়েছে ।আনিকা তার ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে খুব একটা জানে না ।অর্থাৎ এই ব্যাকগ্রাউন্ডেই কিছু একটা ঝামেলা থাকতে পারে ।

-আনিকা ,আঙ্কেলের ফোন বন্ধ কেন কিছু আন্দাজ করতে পার ??

রাইমা ইমরানের কন্ঠ শুনে অবাক হল ।এই কন্ঠটা সম্পূর্ণ অপরিচিত ।খুব বেশি সিরিয়াস ।চেহেরাটাও অপরিচিত ।অনেক বেশি পরিণত ।স্বাভাবিক বাচ্চাসুলভ ভাবটা নেই ।রাইমার নাক টানা বন্ধ হয়েছে ।অবাক বিস্ময়ে সে ‘কিছু একটা হয়ে যাওয়া’ মানুষটাকে দেখছে ।

-না ।বুঝতে পারছি না আসলে আব্বুর ফোন বন্ধ কেন ?? জবাব দিল আনিকা ।

-তাহলে আগে আঙ্কেলের খোঁজ করতে হবে ।তারপর রাহাত ভাইকে ।কারণ রাহাত ভাই সম্পর্কে আমাদের কোন আইডিয়া নেই ।আঙ্কেল সম্পর্কে আছে ।উনার অফিসের ঠিকানাটা দাও ।আছে তো নাকি ??

-আছে ।বাট তুমি কি করবা ,অফিসের ঠিকানা নিয়ে ।

-কাজ আছে ।উনাকে খুঁজে বের করব ।উনাকে জানানো উচিত ।আগামীকাল চিটাগাং যাব ।

-কিন্তু তুমি এসব ............

-জানি না ।কারণ জিজ্ঞেস করে দয়া করে লজ্জা দিবা না ।রাইমা ,তোমার নাকের প্যাচপ্যাচানি কখন থামল ??



বলেই বাসা থেকে বের হল ।খুঁজবে সে ।রাহাত ভাইকে খুঁজবে ।আনিকার জন্য খুঁজবে ।খুঁজা উচিত ।তবে রাইমার মুখের বেয়াদপ ডাকটা অতি সুন্দর ।এত সুন্দর করে বেয়াদপ ডাকতে পারে মেয়েটা !!দরজা থেকে বের হওয়ার সময় শুনেছে সে !!
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বৃদ্ধাশ্রম।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১৬



আগে ভিডিওটি দেখে নিন।

মনে করেন, এক দেশে এক মহিলা ছিলো। একটি সন্তান জন্ম দেবার পর তার স্বামী মারা যায়। পরে সেই মহিলা পরের বাসায় কাজ করে সন্তান কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

টের পেলে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৭

টের পেলে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

টের পেলে গুটিয়ে যায় লজ্জাবতী/ পরিপূর্ণ যৌবনে যুবতীর নিখুঁত অনুভূতি। আমার চাওয়া, ইচ্ছে, স্বপ্ন! আমার পছন্দ বুঝদার, সুন্দর হৃদয়ের রূপ! সৌন্দর্য সুন্দর যা চিরন্তন সত্য। কিন্তু সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের চার খলিফার ধারাবাহিকতা কে নির্ধারণ করেছেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৭




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব)... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×