আমেরিকান বন্ধুর চোখে ট্রাম্প (এক
জীবনে এত কিছু!!!!!!!!)
২০১৪ সালে র্যাবে থাকতে ওনার সাথে
পরিচয়। একটি ট্রেনিং কোর্সের
প্রশিক্ষক হিসেবে ইউএস থেকে
বাংলাদেশে এসেছিলেন। ঐ কোর্সের
কো-অর্ডিনেটর হিসেবে থাকায় আমার
সাথেই ওনার সখ্যতা একটু বেশি
হয়েছিল। এত মিশুক মানুষ বিদেশে তো
দূরে থাক, দেশেও কম দেখেছি, তাও
আবার প্রফেশনাল আমেরিকান। যাই
হোক, সম্পর্কের ধারাবাহিকতা ফেসবুক
এর মাধ্যমে দীর্ঘায়িত হয়। রেজাল্টের
দিন রাতে জিজ্ঞেস করলাম, "তো
ট্রাম্প তো জিতেই গেল? তোমার
মতামত কী? মন খারাপ?"
জবাবে বলল, "নাহ, আমিতো খুশি,আমি
তো ট্রাম্পের পক্ষেই ছিলাম"।
কিছুটা বিস্মিত হলাম, কেননা এর আগে
যতবারই রাজনীতি নিয়ে কথা হয়েছে,
মধ্যপ্রাচ্য সহ দুনিয়াব্যাপী বিভিন্ন
ইস্যুতে আমেরিকার ভূমিকার ঢালাও
সমালোচনা করতেন উনি। তবুও বলতেন,
বুশের চেয়ে ওবামা/ক্লিনটন অনেক
ভালো। তো উনি হয়ে গেলেন ট্রাম্পের
সমর্থক! বলেই ফেললাম, "বন্ধু, আমি
ভেবেছিলাম, তুমি আর যাই হোক,
ট্রাম্পকে বা ট্রাম্পের আগ্রাসী
নীতিকে সমর্থন করবে না, একটু অবাকই
হলাম, তুমি তো এর আগে নিজেকে অন্য
ভাবধারার পক্ষপাতী বলেছিলে বলে
মনে পড়ছে!"
জবাবে উনি যা বললেন তা যদি একটু
গুছিয়ে বলি তাহলে----
" শোন, আমরা আমেরিকানরা বরাবরই
একটু নতুনত্বে বিশ্বাসী, একটু ক্রেজিই
বলতে পার, হিলারির মধ্যে আর যাই
থাকুক নতুনত্ব ছিল না! সেই ৯২/৯৩
থেকেই হিলারিকে সবাই চেনে,
প্রথমে বিল ক্লিনটনের বউ হিসেবে
একরূপে, তারপর মনিকা কেলেঙ্কারির
সময় তার ভূমিকা নিয়ে আরেকভাবে,
তারপর পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিসেবে, এবার
আবার প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেব,
আসলে সত্যি বলতে কোন আগ্রহই ছিল
হিলারির প্রতি! অথচ চিন্তা কর,
যেবার ওবামা হল সেবার তাকে নিয়ে
কতো গবেষণা!! তুমি নিজে বলত,
ওবামার সময় তাকে কয়বার গুগলে সার্চ
করেছ আর হিলারিকে এইবার কয়বার
করেছ? তবে হ্যাঁ, সার্চ এবারও হয়েছে,
তবে তা শুধুই ট্রাম্পকে নিয়ে। ওর নানা
টাইপের উদ্ভট কাহিনি নিয়ে!"
বললাম, "তাহলে তো স্বীকার করলে,
উদ্ভট! তারপরও? শুধুমাত্র নতুনত্বের
দোহাই দিয়ে উদ্ভটকেও গ্রহণ করা যায়?
তবে ব্রাদার, আমি কিন্তু ট্রাম্পকে
একটু হলেও স্টাডি করেছি, এত ঝানু এক
ব্যবসায়ী আর যাই হোক, উদ্ভট হতে
পারে না! আমার মনে হয়, সেন্টার অফ
অ্যাট্রাকসন হতে এইসব করেছে!!ভিতরে
ভিতরে সব ঠিক!"
বলল, "এইতো পয়েন্টে এসেছো।
আমেরিকার ইতিহাসের সবচেয়ে ধনী
প্রেসিডেন্ট, বিলিয়নেয়ার বলে কথা!
কয়েক পুরুষ ধরে ধনী, শরীরে আবার
জার্মান রক্ত, ট্রাম্প অর্গানাইজেশন
নিয়ে জানো, গুগলে শুধু এইটা সার্চ
করলেই তো মাথা খারাপ হয়ে যায়! এক
লোকের এত কিছু!!হোটেল ব্যবসা,
রিয়েল স্টেট বিজনেস, রিসোর্ট,
বিনোদন কেন্দ্র, ক্যাসিনো, মিডিয়া
ব্যবসা, বিশ্বের ধনীদের খেলা গলফ
কোর্সের মালিকানা, ফুড-বেভারেজ,
লেদার, হোম প্রোডাক্টস, জুয়েলারি
ব্যবসা আরও কতো কী! তুমি নেটে দেখে
নিও, বললে রাত শেষ হয়ে যাবে!আর এই
ব্যবসা কী শুধুই আমেরিকায়?ইউরোপ,
এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য কোথায় নাই তার
ব্যবসা!"
বললাম, "হুম,আমিও কমবেশি সার্চ
করেছি নেটে, ফুটবল খেলায় ক্লাব,
ট্রাম্প ইউনিভার্সিটি, নিজের লেখা
প্রায় গোটা ২০ বই, তার মধ্যে আবার
একটি বই ১৯৮৭ সালে প্রায় ১৩ সপ্তাহ
বেস্ট সেলার ছিল, মিস ইউএস
প্রতিযোগিতার আয়োজক
প্রতিষ্ঠানটির মালিকানাও তো তার
ছিল, ওয়ার্ল্ড রেসলিংএ খ্যাতনামা
'WWE' তেও ইনভেস্ট আছে তার, মিডিয়া
জগতেও তো আছে, একসময় খুব পপুলার
মুভি 'হোম এলন-২' এও তো অভিনয়
করেছে, ওর নিজের বাসা আর ব্যবহৃত
প্লেন দুটোই নাকি আমেরিকার
প্রেসিডেন্টের ব্যবহার করা বিখ্যাত
বাসভবন আর প্লেন দুটোর চেয়েই
বিলাসবহুল, বিয়েও তো করেছে
৩টা-৩টাই আবার মডেল, জীবনে
মামলা-মোকাদ্দমাও কম ফেস করেনি,
সংখ্যাটা নাকি প্রায় ৩৫০০, 'ফোরবেস'
ঘোষিত ধনাঢ্য ব্যাক্তির তালিকায়ও
নাকি আছে ৩২৪ নম্বরে সারা দুনিয়ার
মধ্যে !!, ভাইরে ভাই এক মানুষের
জীবনে আর কতো কিছু ঘটে, এখন হল
প্রেসিডেন্ট !!!!"
বলল, " বুঝো তাহলে! পাগলামিটা তো
আসলে তার লেবাস, ভিতরে ভিতরে
দেখবে সব কিছুই ঠিক! আর পলিসি
নিয়ে ভেবে লাভ নেই, প্রেসিডেন্ট
একলা তো আর যা খুশি চাইলেই করতে
পারে না! যেমন ছিল কম বেশি তেমনি
যাবে, মাঝে মধ্যে একটু বিনোদন হবে
এই যা! তাও ভালো, হিলারি আসলে
তো তাও হত না, জানো তো ট্রাম্প
কিন্তু একসময় ডেমোক্রেটিক
পার্টিতেই ছিল, এখন আবার
রিপাবলিকানদের সাথে! কাজেই
ব্যবসার মতন মনে হয় রাজনীতিতেও
পটুই হবে!"
বললাম," ভালো হলেই ভালো!
পলিটিক্স বলে কথা! দুএকটি ডিসিশনই
পুরো পৃথিবীর ইতিহাস পাল্টে দিতে
যথেষ্ট, অল দি বেস্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প!" (সংগৃহিত)