somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আনোয়ার হোসেনের মৃত্যু আর বাংলা ছবি

১৪ ই মে, ২০২১ বিকাল ৪:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের যুগে বিটিভি নামের এক বস্তু ছিল, এখন আছে কিনা জানিনা। সেই বস্তুতে দেখা যেত বাংলা সিনেমা। ছোটবেলায় ঈদের প্রধান আকর্ষণ এই সিনেমা। এমনি এক ঈদে ছবি দেখতে বসলাম। পাড়ার সব মানুষ ঘরে, ঘামের গন্ধে ঘর মৌ মৌ করছে। ভালই লাগছে বিদ্যুৎ আছে। বিদ্যুৎ না থাকলেও কোন সমস্যা নেই। আমাদের ফুপাতো বোন শিউলি আপু আমাদের দোয়া শিখিয়ে দিয়েছে। সিনেমা দেখার সময় কারেন্ট গেলে একশবার "ইয়া বাসিতু" পড়লে কারেন্ট চলে আসবে। একশবার এই দোয়া পড়া অনেক কষ্টের, তাই কয়েকজনে ভাগ ভাগ করে নিয়েছি। বিদ্যুতও আছে, দোয়াও রেডি, সবাই নীরব, শুরু হল সিনেমা।

বাংলা ছবির অনেকগুলো নিয়ম আছে। একটা নিয়ম হল ভিলেনরা মারা যাবে ছবির শেষে, কিন্তু শুরুতেই যিনি মারা যাবেন তাঁর নাম আনোয়ার হোসেন। কিন্তু দশ মিনিট হয়ে গেল, কিন্তু উনি মারা যাচ্ছেন না। ছবির নিয়মানুযায়ী শুরুতেই ছোট ছোট ভাইবোন মেলায় গিয়ে হারিয়ে গেল, ওদের মা-বাপকে মারাও হল, সম্পতিও দখল করা প্রায় শেষ। এতকিছুর পরেও আনোয়ার হোসেন বেঁচে আছে। আমরা একজন আরেকজনের দিকে তাকাচ্ছি, সবার চোখে একটিই প্রশ্ন জ্বলজ্বল করছে উনি মারা যাবেন কখন! ছবির প্রায় পনেরো মিনিট হতে চলল। অবস্থা এতই গুরুতর যে আমাদের নিজেদের মধ্যে একটা মিটিং করে বিষয়টা নিয়ে আলাপ করা জরুরী হয়ে পড়েছে। তাই দ্রুত বিজ্ঞাপনবিরতির অপেক্ষায় আমরা। পৃথিবীর ইতিহাসে কেউ বিজ্ঞাপনের জন্য অপেক্ষা করেছে কিনা জানা নেই, আমরা করলাম। অবশেষে বহুল আকাঙ্ক্ষিত বিজ্ঞাপন। আমরা চলে গেলাম পুকুরপাড়ের আম গাছতলায়। কেউ কারো সাথে কোন কথা বলিনি, কিন্তু আমরা সবাই জানি কি নিয়ে আলাপ হবে।

একেকজনের একেক মত। কেউ বলছে, হারিয়ে যাওয়া বাচ্চারা ফিরে এলেই খুশিতে তাঁর মৃত্যু হবে, কেউ বলল, নায়ক বিএ পাস করে এলেই কেল্লাফতে, তিনি মরবেনই। আরেকজন বলল, আনোয়ার হোসেনের গরীব মেয়ে যখন শত্রুপক্ষের বড়লোকের ছেলের প্রেমে পড়বে, আনোয়ার হোসেনের মৃত্যু আর আটকানো যাবে না। সময়ক্ষেপণ না করে আমরা আবার ছবি দেখতে বসলাম, কারণ আমরা জানি কতকক্ষণ বিজ্ঞাপন হয়।

আমাদের সবার অপেক্ষা শুধুমাত্র একটি হার্ট এটাক হওয়ার মত ঘটনার। ভদ্রলোক না মরা পর্যন্ত আমাদের স্বস্তি নেই, তাছাড়া বাংলা ছবির সূত্রমতেও তাঁর এতক্ষণে মরা উচিত ছিল। এরমাঝে প্রতিবার বিজ্ঞাপনের সময় পুকুরপাড়ে গিয়ে আমরা তাঁকে মারার বিভিন্ন পদ্ধতি নিয়ে গুরুগম্ভীর আলোচনা করি। আমাদের সকল অপেক্ষা সকল আশা আকাঙ্ক্ষা নস্যাৎ করে দিয়ে আনোয়ার হোসেন বেঁচে রইলেন শেষ পর্যন্ত।

আমরা ততক্ষণে তাঁর মরার আশা জলাঞ্জলি দিয়েছি। ছবিতে তিনি অমরত্বলাভ করেছেন। ছবির শেষ দৃশ্য চলছে, এক নায়ক দড়িতে বাঁধা, নায়িকাদের নাচানো হল, আরেক নায়ক হোন্ডা নিয়ে বিল্ডিং ভেদ করে আসার কথা, দেরিতে হলেও তিনি আসলেন, ভিলেন প্রায় সব মারা গেল, গানে গানে ভাইবোন পরিচয় ফিরে পেল। তখনো মহৎপ্রাণ এক ভিলেন ধিকিধিকি করে বেঁচে আছেন, হাতের কাছে পিস্তলটাও রাখা ছিল। তিনি গুলি করলেন নায়কের দিকে। বাংলা ছবির সূত্রমতে নায়ক মারা যেতে পারে না। বুড়ো আনোয়ার হোসেন নায়কের পাশেই ছিলেন। ভাঙ্গাকোমড় নিয়ে এই একটা ঝাঁপ দিয়ে নায়কের সামনে বুক পেতে দিলেন। আনোয়ার হোসেনের বুক ঝাঁঝরা হল, আমাদের বুক থেকে জগদ্দল পাথর নেমে গেল। তাঁর মৃত্যুতে আমাদের মুখে স্বস্তির হাসি ফিরে এল। বাংলা ছবির সকল নিয়ম পালিত হোল।


ঈদ মুবারাক!

৩১ বৈশাখ ১৪২৮
ধন্যবাদান্তে
জাহিদ কবীর হিমন, বার্লিন থেকে
সম্পাদক, জার্মান প্রবাসে
https://www.germanprobashe.com/
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মে, ২০২১ বিকাল ৪:৩৯
১১টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×