somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শুষ্ক মরুভূমিতে বিজ্ঞানচর্চা

৩০ শে জুন, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পাকিস্তানি পদার্থবিজ্ঞানী পারভেজ আমিরালি হুদভয় ২০০৭ সালে ফিজিক্স টুডে নিবন্ধে একটি ভয়াবহ পরিসংখ্যান তুলে ধরেছিলেন। মুসলিম দেশগুলিতে প্রতি হাজারে নয়জন বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী এবং প্রযুক্তিবিদ রয়েছে, যেখানে বিশ্বের অন্যান্য ধর্মের মানুষের মধ্যে গড়ে একচল্লিশ জন। মুসলিম দেশগুলিতে আনুমানিক ১৮০০ বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, তবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র ৩১২ টিতে কিছু গবেষক রয়েছে যারা বিভিন্ন জার্নালে নিবন্ধ প্রকাশ করেছেন। এর মধ্যে পঞ্চাশটি সর্বাধিক প্রকাশিত বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ২৬টি তুরস্কে, নয়টি ইরানে, তিনটি করে মালয়েশিয়া এবং মিশরে, পাকিস্তানে দুটি এবং উগান্ডা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, লেবানন, কুয়েত, জর্ডান এবং আজারবাইজানের প্রত্যেকের একটি করে আছে।

বিশ্বে মোটামুটিভাবে ১.৮ বিলিয়ন (একশ আশি কোটি) মুসলমান আছে, কিন্তু মুসলিম দেশ থেকে এখন পর্যন্ত মাত্র দুইজন বিজ্ঞানী বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার জিতেছেন (একজন ১৯৭৯ সালে পদার্থবিজ্ঞানে পাকিস্তানের আহমদিয়া সম্প্রদায়ের আব্দুস সালাম যাকে অমুসলিম বলে পাকিস্তান থেকে বহিষ্কার করা হয়, অন্যজন ১৯৯৯ সালে রসায়নে তুরস্কের আজিজ সাঙ্কার)। অপরদিকে এই দুনিয়ায় মোট ইহুদীর সংখ্যা দেড় কোটিরও কম। কিন্তু শুরু থেকে আজ অব্দি প্রায় ৯০০ নোবেল জয়ীর মধ্যে দুইশর অধিক ইহুদী। এর মাঝে ১৫৩ জন পেয়েছেন বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায়। তাহলে দেখা যাচ্ছে ইহুদীরা মোট জনসংখ্যার ০.২ শতাংশেরও কম হয়ে নোবেল প্রাপ্তির দিক থেকে তাঁরা ২২.৫ শতাংশ।

চল্লিশটি মুসলিম দেশ মিলিতভাবে বিশ্বের সকল বৈজ্ঞানিক গবেষণায় মাত্র ১ শতাংশ অবদান রাখে; এক স্পেন এবং ভারত মিলে বিশ্বের বৈজ্ঞানিক সাহিত্যে সেই ৪০টি মুসলিম দেশগুলির চেয়েও বেশি অবদান রাখে। প্রকৃতপক্ষে, যদিও স্পেন খুব কমই একটি বুদ্ধিবৃত্তিক পরাশক্তি, এটি এক বছরে যত বই অনুবাদ করে তা হাজার বছরে সমগ্র আরব বিশ্বের তুলনায় বহু বেশি। বিজ্ঞানে মুসলিমদের এই চরম হতাশাজনক পরিস্থিতি নিয়ে নোবেল বিজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী স্টিভেন ওয়েইনবার্গ পর্যবেক্ষণ করে বলেন, “যদিও পশ্চিমা দেশে মুসলিম বংশোদ্ভূত প্রতিভাবান বিজ্ঞানীরা বেশ ভালো কাজ করছেন, কিন্তু গত চল্লিশ বছর ধরে মুসলিম দেশ হতে আমি কোনো পদার্থবিজ্ঞানী বা জ্যোতির্বিজ্ঞানীর একটি গবেষণাপত্রও দেখিনি যা পড়ার মতো।"

আরব বিশ্বের তুলনামূলক চিত্রও একই কথা বলে। জাতিসংঘের ২০০৩ সালের আরব মানব উন্নয়ন রিপোর্ট অনুসারে আরবরা বিশ্বের জনসংখ্যার ৫ শতাংশ, কিন্তু বিশ্বের সকল প্রকাশিত বইয়ের মাত্র ১.১ শতাংশ তাঁরা প্রকাশ করে। ১৯৮০ থেকে ২০০০ সালের এই বিশ বছরে দক্ষিণ কোরিয়া একাই ১৬৩২৮টি পেটেন্ট মঞ্জুর করেছে, অপরদিকে মিশর, সৌদি আরব এবং ইউ.এ.ই. সহ নয়টি আরব দেশ সমন্বিতভাবে মাত্র ৩৭০টি পেটেন্ট দিয়েছে, যার মধ্যে অনেকগুলিই পশ্চিমা বিজ্ঞানীদের দ্বারা নিবন্ধিত। ১৯৮৯ সালে একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, এক বছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১০৪৮২টি বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছে যেগুলি প্রায়শই অন্যান্য গবেষণায় উদ্ধৃত করা হয়েছে, যেখানে সমগ্র আরব বিশ্ব মাত্র চারটি প্রকাশ করেছে। এটা একটা খারাপ কৌতুকের পাঞ্চ লাইনের মতো শোনাতে পারে, কিন্তু যখন ২০০২ সালে ন্যাচার ম্যাগাজিন আরব বিশ্বের বিজ্ঞানের একটি চিত্র প্রকাশ করেছিল, তখন তার প্রতিবেদক শুধুমাত্র তিনটি বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্র চিহ্নিত করেছিল যেখানে ইসলামিক দেশগুলি শ্রেষ্ঠ, সেগুলো হল desalination, falconry, and camel reproduction (বিশুদ্ধকরণ, বাজপাখি এবং উটের প্রজনন)।



উপরের বর্ণনা হতে স্পষ্ট যে মুসলিম বিশ্বে জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা তাঁদের মরুভূমির মতই শুষ্ক নিরস এবং অনুর্বর।

পাদটীকাঃ বর্তমানে আমি বার্নার্ড লুইসের ২০০২ সালের What Went Wrong বইটি পড়ছি আর জানার চেষ্টা করছি যে, ঠিক কোন কারণে, ইতিহাসের কোথায় কোন বাঁক মুসলিম জাতিকে বিজ্ঞানচর্চা থেকে মোড় ঘুরিয়ে চরম ধর্মান্ধতা আর আচারসর্বস্ব ধর্মাচারণের দিকে ধাবিত করলো, সেটি নিয়ে বিস্তারিত পরে লিখব। উপরের লেখাটি বলতে গেলে আমি এই বই এবং ইন্টারনেটের কিছু সোর্স থেকে অনুবাদ করেছি।


ধন্যবাদান্তে
জাহিদ কবীর হিমন
বার্লিন থেকে, ১৫ই আষাঢ় ১৪২৯
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৪৫
১৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×