somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিবর্তনবাদ সত্যি হলে ধর্মতন্ত্রীরা কোথায় যাবে?

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ৯:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৮৫৯ সালে বিবর্তনবাদের জনক চার্লস ডারউইন যখন বিশ্ব ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দেয়া বই অরিজিন অব স্পেসিস প্রকাশ করলেন, সেই সময়ে পৃথিবী এখন থেকে বহু বেশি ধার্মিক ছিল। অপরদিকে বিবর্তনবাদের বিষয়ে আজকে যে অকাট্য সব প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে তার প্রায় কোন কিছুই সেই বইয়ে ছিলনা। কিন্তু দেখা যায় বইটি প্রকাশের পর ১০-১৫ বছরের মধ্যেই বিবর্তনবাদ নিয়ে প্রায় সকল তর্কের সমাপ্তি ঘটে। আন্তর্জাতিকভাবে সব বিজ্ঞানীই বিবর্তনবাদকে সত্য বলে মেনে নেয় ১৮৭০’ এর দশকেই (সূত্রঃ John van Wyhe-বিজ্ঞানের ইতিহাসবিদ)।

আজকের পৃথিবীর মানুষ ১৮৭০’ দশকের তুলনার অনেক বেশি মুক্তচিন্তার, ধর্মচর্চা থেকেও দূরে। তাছাড়া বিবর্তনের পক্ষে আজ লাখো প্রমাণ থাকার পরেও কিছু মানুষকে এটি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে দেখা যাচ্ছে। প্রায় দেড়শ বছর আগে মানুষ যেটি প্রায় মেনে নিয়েছিল, সেটি নিয়ে এই আধুনিক যুগে কেন এত সন্দেহ?

শত শত বছর ধরে মানুষ বিশ্বাস করে এসেছে যে আসমানী কোন বায়বীয় কল্যাণী শক্তি এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড, মানুষ, প্রাণি সৃষ্টি করেছে। সপ্তদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি আইরিশ আর্চবিশপ জেমস উশার গুনে গুনে পৃথিবীর বয়স বের করেন। তিনি বলেন পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে খৃষ্টপূর্ব ৪০০৪ সালে। শুধু তাই নয়, দিনক্ষণ ছিল ২২ অক্টোবর সন্ধ্যা ৬ টা। তাঁর হিসেবে পৃথিবীর বয়স এখন ছয় হাজার ছাব্বিশ বছর। এই হিসাব তিনি করেছিলেন কোরানপূর্বক সব ধর্মগ্রন্থগুলোতে বর্ণিত আদম-হাওয়া থেকে শুধু করে যে সমস্ত প্রজন্মের(Generation) কথা বলা হয়েছে তার উপর ভিত্তি করে। ধর্মগন্থগুলোর উপর যাঁদের বিশ্বাস আছে সকল ধর্ম নির্বিশেষে তাঁরা সবাই মোটামুটি পৃথিবীর এই বয়স মেনে নেয়(কেউ কেউ অবশ্য এটিকে দশ হাজার বছরও বলে থাকে)।



বিশ্বাসীদের জন্য যেমন আছে ধর্মগ্রন্থ, বিজ্ঞানীদের জন্য আছে ফসিল (Fossil বা জীবাশ্ম)। ফসিল হল কোটি কোটি বছরে প্রাণী বা উদ্ভিদ মাটির সাথে মিশে পাথরে পরিণত হয়েছে এমন ধরনের পদার্থ কে বোঝায়। বিজ্ঞানীরা প্রাগৈতিহাসিক যুগের উদ্ভিদ ও প্রাণীর ধ্বংসাবশেষের চিহ্ন ভূগর্ভের স্তরে স্তরে খুঁজে পেয়েছেন এবং এখনো পেয়ে চলেছেন। উইকিপিডিয়া বলছে, অধিকাংশ জীবিত প্রাণীকুলেরই জীবাশ্ম সংগৃহীত হয়েছে। এছাড়াও, অনেক প্রজাতিরই জীবাশ্ম আবিষ্কৃত হয়েছে যারা পৃথিবীতে বর্তমানে বিলুপ্ত। ৩৪০ কোটি বছর থেকে দশ হাজার বছর পূর্বেকার তুষার যুগের প্রাণী ও উদ্ভিদদেহের ধ্বংসাবশেষ জীবাশ্মরূপে বিজ্ঞানীদের কাছে সংরক্ষিত আছে। ফলে দেখা যাচ্ছে, ধর্মগ্রন্থগুলো থেকে পৃথিবীর বয়সের যে ধারণা পাওয়া যায়, প্রকৃতপক্ষে এর বয়স তা থেকে শুধু বেশিই নয়, সেটি বিলিয়নের ঘরে।

কার্বন ও তেজস্ক্রিয় পরীক্ষার মাধ্যমে যেকোন ফসিলের বয়স প্রায় নির্ভুলভাবে বের করা যায়। সেটি করতে গিয়ে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, পৃথিবী, মানুষ বা প্রাণী সৃষ্টির যে ধারণা এতকাল মানুষ জেনে এসেছে ধর্মগ্রন্থের সহায়তায়, তার কোন কিছুই প্রাপ্ত ফসিলের বয়সের সাথে মিলছে না। যেমন ধরুন, মানুষের মাথার খুলি, মেরুদণ্ড বা অন্যান্য হাড়গোড় পাওয়া গেছে কিন্তু সেগুলো ঠিক বর্তমান মানুষের গঠনপ্রকৃতির সাথে সঙ্গতপূর্ণ নয়। হয়ত মুখের চোয়াল একটু বড়, বা মষ্কিষ্কের আকার একটু ছোট, অথচ ডিএনএ-র গঠন প্রায় একই। আজকের মানুষই যদি একমাত্র মানুষ হয়ে, তাহলে এই ফসিলগুলো কার? এ থেকে প্রমাণিত হয়, মানুষের বহু প্রজাতি এসেছে, আবার বিলীন হয়ে গেছে, বর্তমান মানুষের আদিরূপ কিছুটা ভিন্ন আকারে লাখো বছর আগে এই পৃথিবীতে বিচরণ করেছে। এবং এসব একেবারে প্রমাণিত সত্য।

অসুখ বিসুখ হলে ডাক্তারের কাছে যেতেই হয়, কারণ আমাদের রোগশোকের বিষয়ে সুদীর্ঘ পড়ালেখার পর ডিগ্রী নেই। সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা, অধিকাংশ বিজ্ঞানীরই গবেষণার বিষয় বিবর্তন নয়। এ নিয়ে গবেষকের সংখ্যা খুবই কম। কিন্তু বিবর্তন মেনে নেওয়া নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে তেমন দ্বিমত নেই। একারণে বিবর্তন নিয়ে এটির গবেষকেরা যা বলছে সেটা মেনে নেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে, কারণ বিষয়টি নিয়ে তাঁরাই জেনেছে-বুঝেছে। এখন বিবর্তন সত্য হলে ধর্মগ্রন্থগুলো আরব্য রজনীর সেই গল্পের মত কাল্পনিক আর বানোয়াট হয়ে যায়। তাহলে ধার্মিকরা কী বিশ্বাস করবেন?

সেকথা বলার আগে শিরোনামে ধার্মিক না বলে ধর্মতন্ত্রী বলেছি কেন সেটি বলে নিই। ময়মনসিংহের মত মফস্বল শহরের এক ভুলে যাওয়া বিদগ্ধ বুদ্ধিজীবী যতীন সরকার ধার্মিক আর ধর্মতন্ত্রীর পার্থক্য করে বলেছিলেন, ধর্মে বিশ্বাসী মাত্রই ধার্মিক কিন্তু এটি নিয়ে যারা রাজনীতি করে তাঁরাই ধর্মতন্ত্রী। বিবর্তন নিয়ে সাধারণ ধার্মিকদের কোন সমস্যা নেই। কিন্তু গত হপ্তা কয়েক ধরে প্রতি শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর বিবি বাচ্চাদের সাথে খানা খাওয়া বাদ দিয়ে বায়তুল মোকারমের সামনে বুলবুলি মোল্লাদের মত সফেদ পোশাক পরে যারা হৃদয়ের সমস্ত অনল উগরে দিয়ে শিক্ষাব্যবস্থায় বিবর্তন তত্ত্ব বাদ দেয়ার হুমকি দিয়ে চলেছেন তাঁরাই ধর্মতন্ত্রী। ওঁদের জন্যে একটা পরামর্শ আছে। নব্বই দশকের শেষের দিকে ভাটিকানের পোপও বিবর্তন মেনে নিয়ে বলেছেন যে সৃষ্টিকর্তাই বিবর্তনের মাধ্যমে আজকের মানুষ সৃষ্টি করেছেন। বাংলার মোল্লারাও একই কথা বলে ধর্মসেবা করতে পারেন। আজ থেকেই বলা শুরু করে দিন যে, বিবর্তন অবশ্যই সত্য, এর মাধ্যমেই এক কোষী প্রাণি থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন বছরে সৃষ্টিকর্তাই মানুষ সৃষ্টি করেছেন। তাঁদের তো প্রমাণের দরকার নেই, তাঁদের শুধু বিশ্বাস করা দরকার। আদম-হাওয়া ধপাস করে আকাশ থেকে পড়েছে, সেটি বিশ্বাস করতে কি কোন প্রমাণের দরকার পড়েছিল?


বার্লিন থেকে
জাহিদ কবীর হিমন
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ৯:১৭
২২টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×