somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার বন্ধু জেসি

০১ লা মে, ২০১৯ রাত ২:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



"মেজাজটা প্রচন্ড খিটখিটে হয়ে গেছে। কারো সাথেই কথা বলতে ইচ্ছা করেনা। কোথাও যেতে ইচ্ছা করেনা। কারো সঙ্গও ভালো লাগেনা।
কেমন যেনো হয়ে যাচ্ছি আমি দিন দিন! অসহায় লাগে খুব। প্রচন্ড কান্না করতে ইচ্ছা করে। আমার জন্যে সবাই কতো কষ্ট পাচ্ছে। আমার পরিবার কতো কষ্ট ভোগ করতেছে আমার কারণে।
কতো পেরেশানিতে থাকে আমাকে নিয়ে।
সম্পূর্ণ অচেনা থেকে হঠাৎ করেই চেনা হয়ে যাওয়া কেউ একজনও আমার কারণে কষ্ট ভোগ করতেছে।  আমার সুস্থ্যতার জন্যে প্রার্থনা করতেছে। আমার সুস্থ্য হওয়ার জন্যে অপেক্ষা করতেছে। সেই মানুষটার জীবনটাও আমার কারণে থমকে গেছে।

এতোগুলো মানুষ আমার কারণে কষ্ট ভোগ করতেছে। আর সহ্য হচ্ছেনা আমার!" - এক নিঃশ্বাসে এতোগুলো কথা যে মানুষটি বলেছে তার নাম জেসি।
আমার স্কুল জীবনের সহপাঠী এবং আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধুটি। নিজের অসুস্থ্যতার কষ্টের চেয়েও অন্যরা যে তার অসুস্থ্যতার কারণে কষ্টে আছে এটাই তার মনোবেদনার কারণ।

হাসিখুশী,সরল,মিশুকে টাইপের বন্ধুটি যখন এসব বলে তখন মনের মধ্যে নিজেরো কষ্ট অনুভব হয়। আমাকে জেসি আদর করে "দাদাভাই" বলে ডাকে।কেনো ডাকে সেই জানে!
এমন নয় যে আমি ওর বড়ো বলেই ডাকে।বয়সে আমরা সমানে সমান। জিজ্ঞাসাও কখনো করিনি কেনো ডাকে! সে যাতে খুশী আমিও তাতেই খুশী।

অবশ্য আমি ওকে "দিদিভাই" বলে ডাকলেও মেসেঞ্জারে ওর নাম সেভ করেছি "দি লেডি" নামে। এই নামেরও অবশ্য একটা ইতিহাস আছে। মার্গারেট থ্যাচার নামের ইংল্যান্ডের একজন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে তার কঠোরতা এবং অনমনীয় মনোভাবের জন্যে ডাকা হতো "দি আয়রন লেডি" নামে।তো জেসিকে দেখেও কোমলে-কঠিনে মেশানো মানুষ বলে মনে হতো আমার তখন।তাই তার নাম রেখে দিলাম "দি লেডি"।
এখন সত্যিই চাই জেসি মেসেঞ্জারে আমার দেয়া নামটাকে স্বার্থক করুক। অসুস্থ্যতার সাথে যুদ্ধ করুক অনমনীয়তা আর কঠোরতার সাথে। কখনো ভেঙ্গে না পড়ুক।

আমি আর জেসি স্কুলজীবন থেকে একসাথে পড়লেও আমাদের বন্ধুত্বটা হয়েছিলো স্কুলজীবনের একেবারের শেষের দিকে। কখন কিভাবে যেনো গোলগাল চেহারার গুল্লু মেয়েটি আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধুতে পরিণত হলো। অবশ্য এতে আমার যতোটুকু কৃতিত্ব তারচেয়ে ওর অবদানই বেশী। ও যতো সহজে মানুষকে আপন করে নিতে পারতো আমি সেটা পারতাম না। আমাদের স্বভাবও ছিলো সম্পূর্ণ উল্টো। আমি যেমন ছিলাম চুপচাপ,হাবা টাইপের জেসি ছিলো ঠিক ততোটাই আমোদে আর মিশুকে টাইপের।
স্বভাবে উল্টো হলেও আমাদের বন্ধুত্বে তার কোনো প্রভাব পড়েনি।

সেই স্কুলজীবন থেকেই দেখেছি জেসিকে হৈছৈ করে সবাইকে মাতিয়ে রাখতে।আড্ডা,বন্ধুত্ব,মাস্তি সবি করতো ও একচেটিয়া। আমাদের বন্ধুত্বে শেয়ারিং,কেয়ারিং সবকিছুই ছিলো। জেসি ছিলো এমন একজন মানুষ যার সাথে সবকিছুই শেয়ার করা যেতো নিশ্চিন্তে। শেয়ার করতামও আমি। আমাদের মধ্যে সিক্রেট নামক বিষয়টা ছিলো খুবি কম।

২০১৫ থেকে আমার প্রবাস জীবন শুরু হয়। দূরত্বের ব্যবধান স্বত্ত্বেও আমাদের বন্ধুত্ব যেনো দিন দিন আরো  গভীর হয়েছে।
তারপর হঠাৎ করেই একদিন শুনলাম জেসির অসুস্থ্যতার খবর। হাসিখুশী,মাস্তি করে সবাইকে মাতিয়ে রাখা মেয়েটা যেনো হঠাৎ করেই গুটিয়ে গেলো নিজের মধ্যে। সবকিছু থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিতে লাগলো আস্তে আস্তে।
নিজের অসুস্থ্যতার কারণে এবং আশেপাশের সবার পেরেশানির কারণে দুষতে লাগলো নিজেকে। তার কন্ঠের আক্ষেপ বুঝতাম আমি। তার মনের বেদনাটাও। অসুস্থ্যতার কারণে তার মধ্যে যে সীমাবদ্ধতাগুলো তৈরী হয়েছিলো সেগুলোও ছিলো তার জন্যে অসহ্যকর।

দূরত্ব বাড়ার কারণে জেসির সাথে আমার কথা তেমন হতোনা।চ্যাটিং হতো। লিখার ভাষাই অনেক কিছু বুঝানো সম্ভব না। কিন্তু আমি বুঝতে পারতাম জেসির আক্ষেপটা।
কিন্তু আমারো সীমাবদ্ধতা ছিলো। ভৌগোলিক দূরত্ব।তাই শুধু দূর থেকে ওর জন্যে প্রার্থনা করা ছাড়া কিছুই করা ছিলোনা।
যতোবার ওর অসুস্থ্যতার কথা শুনেছি ততোবার অজানা আশঙ্কাই সঙ্কোচিত হয়ে ছিলো মনটা। সীমাবদ্ধতার কারণে আটকে গেলেও প্রার্থনার কমতি ছিলো না। চেষ্টাও থাকতো ওকে একটু হাসিখুশী রাখার।
জেসি আগের মতোই মজা-মাস্তি করতে চাইতো।কিন্তু কিছুদিন পর পর যে শ্বাসযন্ত্রের অসুস্থ্যতা সেটা তাকে সেই অবসর দেইনা।

কিন্তু অন্যরাও যে তাকে নিয়ে চিন্তাই আছে,কষ্টে আছে এটাই হয়তো জেসির বুকে চেপে বসেছে জগদ্দল পাথরের মতো।
বোকাটাকে কে বুঝাবে যে তার কারণে কেউ কষ্টে নেই বরং তার কষ্টেই সবাই সমান কষ্ট অনুভব করে।
কে বুঝাবে যে তার পরিবারের মানুষগুলোতো তাকে অবলম্বন করেই বেঁচে আছে।তাকে একটু সুস্থ্য রাখার জন্যে,হাসিখুশী রাখার জন্যে,তার মুখে একটু হাসি দেখার জন্যেই সবাই এতো ব্যস্ত।
এটাকে কষ্ট বলেনা। এটাই সুখ। জেসিকে কে বুঝাবে যে হাজার কষ্টের মাঝে সে যখন একটু হেসে উঠে তখন তার আশেপাশের মানুষগুলোর মনটা কতোই না আনন্দে ভরে উঠে।
এই আনন্দের কাছে বাকিসব গৌণ।

জেসি, আমার প্রিয় বন্ধু। তোর অসুস্থ্যতা তোর কোনো দুর্বলতা নয়। সেটা তোর দোষও নয়। আমাদের ধর্মের একটা কথাই আছে যে সৃষ্টিকর্তা যাকে বেশী ভালোবাসেন তাকেই কষ্ট দিয়ে পরীক্ষা করেন।চিন্তা করে দেখ তুই আমাদের সবার যেরকম প্রিয়; সৃষ্টিকর্তারও ঠিক ততোধিক প্রিয়। তাই এই পরীক্ষাই তোর হার মানলে চলবেনা। ভেঙ্গে পড়াও চলবেনা।
সব কষ্টেরই অবসান আছে। শুধু নির্দিষ্ট জায়গা আর নির্দিষ্ট উপলক্ষ্য দরকার।

তোর অসুস্থ্যতা তোর দুর্বলতা নয়। সেটাই তোর শক্তি।

কষ্ট মানুষ তো তার জন্যেই পাই যাকে তারা ভালোবাসে। নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসে।
আমি অবশ্য নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসিনা তোকে। স্বার্থ আছে আমার অনেক। তোর সাথে আড্ডা দিতে চাই জমিয়ে কোনো একদিন। বোট ভ্রমণে যেতে চাই কিংবা বোট না পেলে গাড়িই সই!
তোর সাথে শেয়ার করতে চাই অনেককিছু।দেশে

গেলে তোর সাথে করার জন্যে যতো প্ল্যানিং করেছি আমি জানলে হয়তো অবাক হয়ে যাবি।আর আমার বিয়েতে কতো নাচতে পারিস তুই সেটাও দেখবো আমি।
এসবই আমার স্বার্থ।
শুধু তুই ভালো হয়ে উঠ।

অবশ্য আমি জানি তোর কিছুই হবেনা। এমন সামান্য অসুস্থ্যতাই কিছুই হয়না। এটা শুধুই সৃষ্টিকর্তার সামান্য একটা পরীক্ষা।
আমি জানি তুই এই পরীক্ষাই ঠিকি পাশ করবি। কারণ কতোগুলো মানুষের দোয়া যে তোর সাথে আছে।অনেকগুলো মানুষের দোয়া তোকে সঙ্গ দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। তাই নিজেকে কখনো একা ভাবিস না।নিজেকে কখনো অসহায় ভাবিস না।

এটাও কখনো ভাবিস না যে তোর জন্যে সবাই কষ্টে আছে কিংবা পেরেশানিতে আছে। যাদের নিয়ে এরকম ভাবছিস তুই তাদের সাথে কথা বলে দেখ তারা কি ভাবে তোকে নিয়ে।
আমি নিশ্চিত তোকে নিয়ে সবাই পেরেশানিতে আছে  তোর এই ভুল ধারণাটা দূর হয়ে যাবে।মানুষগুলো তোকে অবলম্বন করেই বেঁচে আছে।তুই মানুষগুলোর শক্তি।

শুধু তুই কখনোই ভেঙ্গে পড়িস না।
নিশ্চিত থাক এতোগুলো মানুষের প্রার্থনা এবং ভালোবাসা কখনোই বিফলে যাবেনা।

সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০১৯ রাত ২:৩২
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুহূর্ত কথাঃ সময়

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



সামুতে সবসময় দেখেছি, কেমন জানি ভালো ব্লগাররা ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়! যারা নিয়মিত লেখে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ প্রচণ্ড নেগেটিভ স্বভাবের মানুষ। অন্যকে ক্রমাগত খোঁচাচ্ছে, গারবেজ গারবেজ বলে মুখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রকৌশলী এবং অসততা

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৭


যখন নব্বইয়ের দশকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং পছন্দ করলাম পুরকৌশল, তখন পরিচিত অপরিচিত অনেকেই অনেকরকম জ্ঞান দিলেন। জানেন তো, বাঙালির ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাক্তারিতে পিএইচডি করা আছে। জেনারেল পিএইচডি। সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

NVR (No Visa Required) এর জন্য জেনে রাখা দরকার

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৯
×