somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছাদের উপরে কে - কে ওখানে????

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বছর দুয়েক আগের ঘটনা। ক্যাম্পাস অনির্দিষ্ট কালের বন্ধ। তাই ভাবলাম বাসা থেকে ঘুরে আসা যাক। রাজশাহী থেকে টংগী তে আসলাম । অনেক পর বাসায় আসলে যা হয় আর কি? স্বাস্থ্য হাজার ভাল থাকলেও মায়ের চোখে মুখে শুধুই হতাশার কথা।
কি করস তুই? না খাইয়া খাইয়া শরীরটারে কি বানাইছোস !! ৭৪ এর দুর্ভিক্ষ থেকে আইলি নাকি, এই রকম কত কথা।
তারপর মায়ের কথা শেষ হইলে বলতাম, মা আমার ওজন দশ কেজি বাড়ছে জানো?

ক্যাম্পাসের বন্ধু বান্ধব ছেড়ে বাসায় প্রথম দুই তিনদিন ভালই লাগে কিন্তু পরের সময়টা কাটতেই চায় না। টংগী তে ফ্রেন্ড সার্কেল তেমন একটা বেশি নাই যেও বা আছে তাদের বাসা আমার বাসা থেকে বেশ দুরে। অবশ্য কাছের কিছু ছোট আর বড় ভাই আছে যাদের সাথে আড্ডা ভালই জমে। কাম কাজ নাই কবে ক্যাম্পাস খুলবে তারো ঠিক নাই।

আদরের ছোট ভাই অংকুর দের বাসার সামনে নতুন বিল্ডিং হচ্ছে, সবে মাত্র দোতালা পর্যন্ত ছাদ হয়েছে। এখনো বসবাসের উপযোগী হয়নি। রোজদিন আমরা সেই বিল্ডিং ক্যারাম খেলছি দিব্ব্যি মনের আনন্দে। সাথে অংকুর, আসিফ আর আশিক এর সাথে আড্ডা তো চলছেই। দিনে ক্যারাম খেলা আর রাতে ছাদে আড্ডা মারা এই হচ্ছে বিগত কয়েকদিনের রুটিন আমার।
তারিখ টা ঠিক মনে নেই আমার, মার্চ কি এপ্রিল এর মাঝামাঝি হবে। রাতে কারেন্ট চলে গেছে, অংকুর ফোন দিয়ে ডাকল আড্ডা মারার জন্য। কাজ নেই তাই দ্রুত চলে এলাম, একটু পর আসিফ ও চলে এল। দিনটা যতদূর মনে পড়ে শুক্রবার ছিল, তিনজনে মিলে গল্প করছি আর রেডিও তে ভুত এফ এম শুনছি।

ঘুটঘুটে অন্ধকার, কোন শব্দ নেই চুপচাপ ব্যস্ত শহর যেন ঘুমিয়ে পরেছে। সবাই মিলে গল্প করছি, আর ভুত এফ এম এর গল্প নিয়ে সমালোচনা করছি, আসিফ বলছে ভাই এইসব সব ভুয়া গল্প। এই রকম নানান কথার ফাকেও একটু একটু ভয় তো লাগছেই সবার। আকাশের কোথায় চাঁদ তারা কিছুই নেই। রাতও প্রায় গভীর হয়ে আসছে..

কথা বলতে বলতেই হঠাত দেখি আমরা ছাদের যে কোনায় বসে ঠিক তার উল্টো দিকে একজন দাড়িয়ে নামায পড়ছে আর একজন পায়চারী করছে। ঐদিকে তাকাতেই দেহে কাঁপুনি ধরে গেল। কালো কাপড়ে ঢাকা সাড়া শরীর, বেশ লম্বা, বুজতে পারছি না পুরুষ না মহিলা। দেখেই তো গা ছমছম শুরু হয়ে গেছে, তিনজনই দেখে না দেখার ভান করছি। প্রথমে ভেবেছিলাম কল্পনা দেখছি, কিন্তু না এতো সত্যিই দেখছি। কারো মুখে কোন কথা নেই, গায়ের লোম শিউরে উঠেছে।
এই বাসায় তো কেউ থাকেনা, তাহলে এত রাতে ওনারা কোথা থেকেই বা এল এখানে। মাথায় কিছুই কাজ করছে না তিনজনের।

তিনজনের মধ্যে আমি বড় হলেও সাহস বেশি ছিল না। এতটাই ভয় পেয়ে গেছি যে মোবাইল এর টরচ লাইট মেরে যে দেখব সে সাহস ও কারো নেই। আবার তাকালাম, হ্যা এখনো আছে রুকু সিজদা যথারীতি দিচ্ছে। ভয় ক্রমশ বেড়েই চলছে, ছাদ থেকে যে লাফ দিব সে সাহস ও নেই। আবার সিড়ি দিয়ে যে নেমে পালাবো সে উপায়ও নেই , কারন যে পায়চারী করছিল সে সিড়ির খুব নিকটে ছিল।আর এমন ভাবে পায়চারী করছে একটুও শব্দ হচ্ছে না। ছোটবেলায় গল্প শুনতাম জিনরা হাটলে নাকি পা মাটির উপরে থাকে।

এতদিন জিন ভুত নিয়ে নানান রকম ফাজলামি করছি, আজ সত্যি সত্যি যে এরকম একটা কিছু হবে ভুলেও কলপ্না করিনি কেউ।
বিপদে পড়লে নাকি মানুষ আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করে, আমরাও তাই শুরু করলাম। আর মনে মনে ভাবছি কারেন্ট টা কেন আসে না। শালার অন্যদিন দশমিনিটেই চলে আসে আর আজ আধাঘন্টা হয়ে গেল তবুও কোন খবর নেই। নাকি জিন ভুতেই কারেন্ট এর লাইন অফফ করে দিয়েছে......

দেখতে দেখতে আধাঘণ্টা পার হয়ে গেছে এরই মাঝে কারেন্ট চলে এল, এবার সাহস করে তাকালাম। তারপর এগিয়ে গিয়ে দেখি পাশের বাড়ির আংকেল আর আন্টি। ভয়ে ভয়ে সালাম দিলাম। আংকেল জিজ্ঞেস করল এত রাতে তোমারা এখানে কেন?
না আংকেল কারেন্ট নাই তো, তাই আড্ডা দিচ্ছি এই আর কি।
যাও অনেক রাত হয়েছে বাসায় যাও??
ঠিক আছে আংকেল বলে তিনজনে বাসায় ফিরে আসলাম, রাতে আর ঠিকমত ঘুম হলনা। ঘুমের মধ্যেও মনে হচ্ছে সত্যি কি আংকেল আন্টি ছিল নাকি অন্য কিছু????
ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি মনে নেই...

পরদিন সকালে আবার সেই ছাদে গেলাম,তারপর দেখলাম আমরা যে ছাদে আড্ডা দিচ্ছিলাম ঠিক তার পাশের বিল্ডিং থেকে এই ছাদে আসার জন্য একটা মই রাখা হয়েছে। আর সেই মই দিয়েই আংকেল আন্টি গত রাতে ছাদে এসে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়েছিল।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×