somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অহনার সাতকাহন (২য়পর্ব)

০৮ ই জুলাই, ২০০৯ বিকাল ৪:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রতিদিনের মত সেদিনও প্রত্যুষে বিছানা ছেড়ে নামতে গিয়ে মনে হল,কিছুক্ষণের জন্য পৃথিবীটা অন্ধকারে ছেয়ে গছে।সেদিনই কেন যেন খাওয়াতে অরুচি তদুপরি বমি বমি ভাব।হঠাৎ এক অজানা আশংকায় বুকের ভেতরটায় কেমন যেন দপ করে উঠল। তখনি অর্পা ফুপ্পির কথা মনে পড়ল।আমার বিয়ের আগে তাকেও দেখেছি এমন অসুস্হবোধ হতে,পরে জেনেছিলাম এটা নাকি মা হওয়ার লক্ষণ। চোখটা ঝাপসা হয়ে এল।

আমাদের নিচতলায় এক ল্যাফটেনেন্ট ভাবী থাকতেন,কেন যেন আমাকে খুব পছন্দ করতেন, আমারও ভাল লাগত,মানুষের মনের ভাব বুঝার এক আর্শ্চয্য ক্ষমতা উনার মধ্যে ছিল,আমার কাছে তাই মনে হত।কেননা আমি ঠিক গুছি্য়ে কথা বলতে পারিনা কিন্তু যখনই আমি কিছু জানতে চেয়েছি, আমার এলোমেলো কথার শুরুটা শুনেই বুঝতে পারতেন আমি কি বলতে চাচ্ছি এবং সুন্দর একটা সমাধান দিতেন।

নিশ্চিত হওয়ার জন্যে তাই পড়ার টেবিলে বসার আগে এক ফাঁকে উনার কাছে গিয়ে সব বললাম।আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই দেখলাম তার দৃষ্টিতে খুশির ঝলক , আমার চিবুক ধরে হেসে হেসে বলল, "খুশির খবর, তুমি মা হবে"।
কথাটা শুনার পর মনে হল আমার পায়ের তলার মাটি সরে যাচ্ছে।ওখানে আর না দাঁড়িয়ে এলোমেলো পায়ে উপরে এসে পড়ার টেবিলে বসে ভাবনার অথৈ সাগরে ডুবে গেলাম.....।

মনে পড়ল, বিয়ের সময়ের কথা।মেঝ ভাই ছিলেন কক্সবাজারের ডিসি,আমার প্রিটেস্ট পরীক্ষার পর একদিন হঠাৎ ভাইয়া তাঁর ছেলেকে পাঠান আমাকে কক্সবাজার নিয়ে যেতে।বিনা বাক্যব্যয়ে ভাইপোর সাথে চলে যেতে হল।কারণ, মেঝ ভাইয়ের কথার অবাধ্য হওয়ার মত সাহস আমাদের পরিবারে কারোরই ছিলনা।আমারত প্রশ্নই নেই।

কক্সবাজার পৌঁছার পরদিন সার্কেট হাউজে ভাইয়ার অফিসিয়াল এক পার্টি ছিল।আমি,ভাবী ও প্রায় আমার সমবয়সী ভাইয়ের মেয়ে কাকলী,কুহেলী সহ খুব এনজয় করলাম। সেখানে ডিএও ভাই ও ভাবী অযাচিৎ অনেক প্রশ্ন করলেন ।মনে হল গায়ে পড়ে কথা বলতে চাইছে। পরে জানলাম ডিএও সাহেব ছেলের মামা। উনিই ভাইয়াকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন ও আমাকে দেখতে চেয়েছিলেন ,তাই ঢাকা থেকে আমাকে নিয়ে আসেন।

পরদিন সকালে নাস্তা শেষে যখন কাকলী কুহেলী সহ ওদের সাম্প্রতিক তোলা ছবির এ্যলবাম নিয়ে বসলাম তখুনি ভাবী হাতে করে একটা ছবি নিয়ে এসে আমাদের দেখিয়ে বলল, "দেখত ছেলেটা দেখতে কেমন ?"ছবিটা দেখে তিনজনই একসাথে বলে উঠলাম, ভারী সুন্দরত!তারপর ছবিটা ফিরিয়ে নিয়ে হাসিমুখে ভাইয়ার ঘরের দিকে চলে গেল। কাকলী আবার এসব নিয়ে বেশ উৎসাহী, তাই সে ভাবীকে অনুসরণ করল,কিন্তু ভাইয়ার বকা শুনে আবার ফিরে এল।এসে বড়দের মত করে বলল, ফুপ্পি ,মনে হয় তোমার বিয়েরই কথা হচ্ছে। তুমি কিন্তু সরাসরি না বলবে, এত তাড়াতাড়ি কেউ বিয়ে করে ?আরও যেন কি কি বলল , কিছুই আর কানে যায়নি।কেন যেন চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে হল। মন খারাপ দেখে দুপুরে ভাবী শান্তনা দিয়ে বলল, "বিয়ের কথা চললেইত আর বিয়ে হয়ে যাচ্ছেনা, এত মন খারাপ করছ কেন?"ভাবীর কথা শুনে কিছুটা স্বস্হিবোধ করলাম।
রাতে ঘুমুতে যাওয়ার আগে ভাবী আমাদের তিনজনকে ডেকে লাগেজ গুছিয়ে নিতে বললেন,কাকলীর জিজ্ঞাসু দৃষ্টি দেখে বললেন,কাল সকালে সবাইকে ঢাকা যেতে হবে।শুনেই সে তীব্র ক্ষেপে উঠল, আমরা কেন যাব ?ছেলে না দেখেই কি বিয়ে ঠিক করে ফেললে? তাকে শান্ত করার জন্যে বললেন,তোর আব্বুকেত চিনিস ,তাঁর সিদ্ধান্তের উপর কেউ কি কিছু বলতে পারে? তা শুনে সে যেন আরও ক্ষেপে উঠল,বলে দিচ্ছি ,আমি কিন্তু পড়া শেষ না করে কিছুতেই বিয়ে করবনা, বেশী চাপ দিলে কিন্তু ছাদ থেকে লাফ দিব।কথা বাড়াতে না দিয়ে ভাবী চুপচাপ চলে গেলেন। তরপরও সে শান্ত হয়নি, এটা করবে ওটা করবে বলেই যাচ্ছে , একসময় আমাকে অনেক অবাস্তব বুদ্ধি দিল ,যা আমার কল্পনাতেও সম্ভব নয়।বিড়বিড় করতে করতেই লাগেজ গুছালো।একসময় বলতে বলতে ঘুমিয়ে পড়ল।আর আমি এপাশ ওপাশ করে নির্ঘুম রাত কাটালাম।

যথারিতী সকালে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম,পুরোটা রাস্তা কাকলী এটা সেটা বলে আমার উপর ক্ষোভ প্রকাশ করল,কেন আমি কিছু বলছিনা।ভাইয়ার সামনে বেশী কিছু বলতেও পারছেনা।বিকেলে ঢাকায় পৌঁছে দেখি মুরুব্বি টাইপ সবাই হাজির।সবাইকে দেখে বুকের ভিতরটা আর একবার দপ করে উঠল।
রাতে ঘরোয়া সভা বসল, কিছুক্ষন পর আমার ডাক এল,অন্যরকম এক ভয় আমাকে গ্রাস করল।কাকলীর রক্তচক্ষু দেখে একটু সাহস এল।এই প্রথম বড়দের সামনে না বলব। নিজেকে নিজেই সাহস দিলাম ,আমাকে বলতেই হবে।তরপর ভাবী সাথে করে নিয়ে গিয়ে সভার এক কোণে একটা চেয়ারে বসালো।আমাকে দেখেই সবাই একে একে আমার সব ভাল দিকগুলো বলে যাচ্ছে, বুঝতে পারলাম আমাকে বশে আনার চেষ্টা চলছে।একসময় মেঝ ভাই বলে উঠলেন। ছেলের মামা মামি তোমাকে দেখেছে এবং অন্যরা তোমার ছবি দেখেছে ,তোমাকে ওদের খুব পছন্দ হয়েছে,তাই ওরা আগামীকালই আংটি পড়াতে চাচ্ছে।এরমধ্যে আমরাও ছেলের দেশের বাড়ি ও ঢাকার বাড়িঘর সব দেখে এসেছি এবং খবরাখবর নিয়েছি, সবদিকদিয়েই আমাদের উপযুক্ত।এখানে বিয়ে হলে তুমি সুখেই থাকবে।
পড়াশুনায় তোমার বেশ আগ্রহ ,সে ব্যপারেও আমরা আলাপ করেছি।ওরা বলেছে তুমি যতদুর পর্যন্ত পড়তে চাও পড়াবে।ইতিমধ্যে আমার হৃদস্পন্দন বেড়ে গেল, এখনই সময় না বলার। বড় বড় শ্বাস নিয়ে বলেই ফেললাম, আমি এখন বিয়ে করতে চাচ্ছিনা।আমার কথা শুনে সবাই যেন আকাশ থেকে পড়ল। আমি না বলব এটাত অসম্ভব একটা ব্যাপার।যাই হউক,সবাই মিলে আমাকে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করল, তারপরও আমি আমার সিদ্ধান্তে অনড়।এক পর্যায়ে মেঝ ভাই ক্ষেপে গিয়ে বললেন, তাহলে আমরাও আর তোমার দায়িত্ব নিতে পারবনা। বাবা মা মারা যাওয়ার সময় কথা দিয়েছিলাম ,তোমার ভাল বিয়ে দেব। এখন তোমার ইচ্ছে , তোমার পথ তুমি দেখতে পার।
ভাইয়া এভাবে বলবে কখনও ভাবিনি।নিজেকে ভীষণ অসহায় মনে হল।এতটা একাকী বোধ কখনও লাগেনি।চুপচাপ সব মেনে নেওয়া ছাড়া বোধকরি আমার আর করার কিছুই নেই।
খুব ভালোভাবেই এন্গেজমেন্ট অনুস্ঠান সম্পন্ন হল।এখানেও কাকলীর প্রশ্ন, ছেলে কোথায়? কে আংটি পড়াবে?
ছেলের মা এর নির্লিপ্ত জবাব, মুরুব্বিরা আংটি পড়ায়,ছেলে নয়। ভাইয়াতো পারলে ওখানেই কাকলীকে চড় দেয়।অনেক কষ্টে নিজেকে সংযত করে শুধু বললেন তুমি ভিতরে যাও। সবশেষে সিদ্ধান্ত হয় ,পরের সপ্তাহেই বিয়ে।
এভাবে একদিন অহনা বউ সেজে অনাকাংখিত এক অজানার উদ্দেশ্যে পা বাড়াল।
চলবে...............




সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুলাই, ২০০৯ বিকাল ৪:০৭
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×