আচ্ছা এই যে শেখ হাসিনা রেজিমের গত ১০ বছরে প্রায় ডজন খানেক ব্যাংক থেকে লক্ষ কোটি টাকার বেশি লুটপাট করা হলো (সর্বশেষ বেসরকারি খাতের অন্যতম সফল আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইসলামী ব্যাংক থেকে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা লুটপাট হলো), এগুলো কার টাকা? সরকারের? সরকার দলের লোকজনের? না, এই টাকার বেশিরভাগ আপনার, আমার, বাংলাদেশের খেটে খাওয়া মানুষের তিল-তিল করে জমানো টাকা। জীবন-যৌবন বন্ধক রেখে প্রবাসে খেটে খাওয়া মানুষের পাঠানো রেমিটেন্স। ৪০ লক্ষ পোশাক শ্রমিকের জীবনী শক্তি নিংড়ে নিঃশেষ করে দেওয়া পরিশ্রমের ফসল রপ্তানি আয়।
আফসোস! দেশের মানুষের বিশেষ করে মধ্যবিত্ত, গরীব, খেটে-খাওয়া মানুষের অর্জিত, ব্যাংকে সঞ্চিত এই বিপুল পরিমাণ টাকা লুটপাট ও পাচার করে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ দুই ব্যবসায়ী গোষ্ঠী নাকি এখন সিংগাপুরের শীর্ষ ধনীদের কাতারে!! কী অবাক করা কাণ্ড!! আগে বিদেশী বেনিয়া ব্রিটিশরা, পাকিস্তানিরা এই দেশের সম্পদ লুট করে বিদেশে পাচার করেছে, এখন বাংলাদেশের দস্যুরা। নিঃসন্দেহে, শেখ হাসিনা সরকারের আগেও বাংলাদেশ থেকে রাজনীতিক, ব্যবসায়ী দুর্বৃত্ত শ্রেণি টাকা লুটপাট ও পাচার করেছে, কিন্তু কোন সরকারের সরাসরি আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এত বিপুল বিক্রমে ব্যাংক খাত লুটপাটের কোন নজির বাংলাদেশে গত ৭০ বছরে নাই।
নিন্দুকেরা জানতে চান, ব্যক্তি শেখ হাসিনার দায় কতটুকু? ব্যক্তি শেখ হাসিনার দায় আছে কি নাই সেটি সময় বলে দিবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্পষ্টত দায় আছে, এবং সেটি দুইভাবে। প্রথমত, তিনি ক্ষমতায় আসার পর সবগুলো সরকারি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে সেখানে গণহারে নিজ দলীয় ক্যাডারদের পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। যাদের দৃশ্যত একমাত্র মন্ত্রই ছিলো কীভাবে দুই নম্বরি করে টাকা কামানো যায়! এই যাদের ইচ্ছা, তাদের হাতে দেশের ব্যাংক খাত কে তুলে দিয়েছে? শেখ হাসিনার সরকারের নীতি। মূলত, এই লোকদের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ নেতৃত্ব, যোগসাজশেই সরকারি ব্যাংকগুলোর লুটপাট সম্পন্ন হয়েছে। এতেই অবশ্য শেখ হাসিনা সরকার ক্ষান্ত হয় নাই। বেসরকারি খাতের সফল ব্যাংক ইসলামি ব্যাংকসহ কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে “রাজাকার-মুক্ত” করে ”একাত্তরের চেতনা” প্রতিষ্ঠা করার প্রয়াসে সরকারি গোয়েন্দা সংস্থা ও রাজনৈতিক পেশিশক্তি ব্যবহার করে এই ব্যাংকগুলোকে দিনে-দুপুরে জবরদখল করা হয়। ফলাফল: এই ব্যাংকগুলোকেও ফোকলা করে জনগণের প্রায় লক্ষ-কোটি টাকা লুটপাট করা হয়েছে। নিজেদের প্রশ্ন করেন, এসআলম গ্রুপের হাতে দেশের আর্থিক খাতের এতগুলো ব্যাংক কে তুলে দিয়েছে? আপনি কি মনে করেন, শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশে আর কারও এত বড় ক্ষমতা আছে? না, কারো নাই। সুতরাং এই লুটপাটের সরাসরি দায় শেখ হাসিনাকেই নিতে হবে।
দ্বিতীয়ত, আরেকভাবে এই সংশ্লিষ্টতা খুঁজতে পারেন। গত ১০ বছরে এই শীর্ষ লুটপাটের নেপথ্যের হোতাদের কোন একজনকেও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দূরে থাক, এমনকি চিহ্নিতও করা হয়েছে? হয়নি। বরং আমরা দেখেছি তাদের বিভিন্নভাবে রাষ্ট্রীয় সুরক্ষায় আড়াল করা হয়েছে। কেন নেপথ্যের কারিগরকের চিহ্নিত ও সাজা হয়নি? উত্তর কি এটা যে যারা সাজার আয়োজন করবেন ও সাজা দিবেন, এই লুটের ভাগের অংশ তারাও পেয়েছেন? নিজেই উত্তর খুুঁজুন। আকলমান্দ্ কে লিয়ে ইশারাই কাফি।
এই যে একাত্তরের চেতনার নামে রাতের অন্ধকারে ব্যালট বাক্স দখল করে জনগণকে ভোটাধিকার বঞ্চিত করা, দেশে গুমের মতো নিকৃষ্ট মানবতা বিরোধী অপরাধ চালু করা, এবং একাত্তরের চেতনাকে ঢাল বানিয়ে জনগণের কষ্টার্জিত লক্ষ-কোটি টাকা লুটপাট -- আপনি কি মনে করেন ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের সাথে করা এই বেঈমানীর দায়ে শহীদরা শেখ হাসিনা ও তার পোষ্যদের ক্ষমা করবে?
প্রশ্ন উঠতে পারে, এই লুটেরাদের রাম রাজত্বে জনগণের কি ব্যাংকে টাকা রাখার ঠেকা পড়েছে? না, পড়ে নাই। মানুষের উচিত নিজেদের টাকার নিরাপত্তার জন্য টাকা দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যে বিনিয়োগ করা, আর কিছু না পারলে জমি-সোনাদানা কেনা। কারণ যে হারে লুটপাট হচ্ছে, কিছু ব্যাংক পথে বসলে আশ্চর্য হবেন না। তখন, আপনার টাকার নিরাপত্তা কেউ দিবে না। সরকার নাকি আবার আইন করেছে যে, ব্যাংক দেউলিয়া হলে আপনি ক্ষতিপূরণ হিসেবে সর্বোচ্চ এক লক্ষ টাকা পাবেন! মানুষ ঠকানোর কী সুন্দর আয়োজন! চেতনার ষোলকলা পূর্ণ!
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২২ বিকাল ৪:৫৭