somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীরঃ বাংলার বীর সন্তান

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


by জুনাইদ বিন কায়েস। রচনাকালঃ 26 ডিসেম্বর, 2018
বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীরঃ বাংলার বীর সন্তান –

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে । যে যুদ্ধের সূচনা হয়েছিল পাকিস্তানী হায়েনাদের নিরস্ত্র বাঙ্গালীদের উপর অতর্কিত নারকীয় হামলার মধ্য দিয়ে । দীর্ঘ নয় মাস রক্ত ঝরে বাংলার স্বাধীনতাকামী মানুষের। আর এই সোনার বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে যারা নিজেদের জীবন অকাতরে দান করেছিল তাদের নাম বাংলার আকাশে থাকবে চির উজ্জ্বল। স্বাধীনতা সংগ্রামে অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন জনকে তাদের অবদানের ভিত্তিতে যথাক্রমে বীরশ্রেষ্ঠ, বীরউত্তম , বীরবীক্রম ও বীরপ্রতীক উপাধিতে ভূষিত করে।



বীরত্বের জন্য প্রদত্ত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সামরিক পদক হচ্ছে বীরশ্রেষ্ঠ। যারা জান বাজি রেখে যুদ্ধ করেছিলেন, দেখিয়েছিলেন অতুলনীয় সাহস, যাদের রক্তের রঙ্গে রঞ্জিত বাংলার ভূখন্ড, যাদের সাহসে ভর করে স্বপ্ন দেখে কোটি বাঙ্গালী সে অতুলনীয় সাহসের নিদর্শন স্থাপঙ্কারীদের স্বীকৃতি এই বীরশ্রেষ্ঠ পদক। বীরশ্রেষ্ঠদের নাম যথাক্রমে মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর , হামিদুর রহমান, মোস্তফা কামাল, মোহাম্মদ রুহুল আমিন, মতিউর রহমান, মুন্সি আব্দুর রউফ, নূর মোহাম্মদ শেখ।





১৯৪৯ সালের ৭ মার্চ জন্ম হয়েছিলো বাংলার বীরসন্তান মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের। বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলায় জন্ম গ্রহন করেন তিনি। রহিমগঞ্জ গ্রামের আলোবাতাসে তাঁর জীবনের সূচনা। পিতার নাম আব্দুল মোতালেব হাওলাদার। বাবা পেশায় ছিলেন কৃষক আর মা সাফিয়া বেগম ছিলেন গৃহিণী । পরিবারে তিন বোন তিন ভাই এর মধ্যে একজন মহিউদ্দিন। পিতার আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকায় সাড়ে তিন বছর বয়সেই জীবনে বড় পরিবর্তন আসে জাহাঙ্গীরের। স্থান পরিবর্তন করে চলে যান মুলাদি উপজেলার পাতারচর গ্রামে মামার বাড়িতে ।



তাঁর শিক্ষাজীবনের সূচনা হয় পাতারচর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে । ১৯৬৪ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে মেট্রিকুলেশন পাশ করেন। ১৯৬৬ সালে বরিশালের ব্রজমোহন কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন।



ছাত্র হিসেবে ছিলেন মেধাবী এবং রাজনীতি সচেতন। কম বয়সেই পাঠ করেন চে, মাও সেতুং , লেনিন প্রমুখের জীবনী। তাঁর নিয়মিত পাঠ্যের মধ্যে ছিল মাস্টারদা সূর্যসেনের জীবনী গ্রন্থ, তিতুমিরের বাঁশের কেল্লা, ক্ষুদিরামের ফাঁসি , চট্টগ্রামের অস্ত্রাগার লুন্ঠন, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের জীবনী সহ আরো এমনি অনেক গ্রন্থ নিয়মিত পড়তেন।





বিমানবাহিনীতে যোগ দেওয়ার ইচ্ছে থাকলেও চোখের সমস্যার কারনে তা সম্ভব হয়নি। পরবর্তিতে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে ক্যাডেট হিসেবে যোগ দেন। সেনাবাহিনীতে তাঁর নম্বর ছিল PSS-১০৪৩৯ । তিনি কর্মক্ষেত্রে থাকা অবস্থায় শুরু হয়ে যায় বাংলার স্বাধীনতা যুদ্ধ।



স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরুর সময় তিনি পাকিস্তানের ১৭৩ নম্বর ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাটেলিয়ানে কর্তব্যরত ছিলেন পাকিস্তান-চীন সংযোগযোগকারী মহাসড়ক নির্মানে। দেশের স্বাধীনতার জন্য তিনি জীবনের ঝুকি নিতে পিছপা হননি। পাস্কিস্তানের দূর্গম পথ পাড়ি দিয়ে তিনি ছুটে এসেছিলেন সঙ্গে একটি মাত্র পিস্তল নিয়ে। ১০ জুন ছুটি নিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের রিসালপুরে যান। পরবর্তিতে পাকিস্তানী সেনা ও সীমান্ত রক্ষিদের দৃষ্টি এড়িয়ে শিয়ালকোট হয়ে ভারতীয় এলাকায় প্রবেশ করেন। দিল্লী হয়ে পৌছে যান কলকাতায়। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে কয়েকজন সামরিক অফিসার পালিয়ে এসেছেন শুনে বাঙ্গালী, মুক্তিবাহিনী ও শরনার্থিদের মধ্যে আনন্দের শিহরন বয়ে যায়। জানবাজি রেখে করেছেন যুদ্ধ। তাদের আক্রমনের ত্রাসে প[কিস্তানীরা বিভিন্ন সেক্টরে হয়েছিল পরাজিত।





রাজশাহীর চাপাইনবাবগঞ্জ শহরটি দখলের জন্য সেক্টর কমান্ডার এ।এন,এম নুরুজ্জামান তিনটি দল গঠন করেন। তৃতীয় দলের নেতৃত্ব পান মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর । সময়টা ১০ ডিসেম্বর ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর লেফটেন্যান্ট আউয়াল ও কাইউম এর সাথে আরো ৫০ জন মুক্তিযোধা সহ চাপাইনবাব গঞ্জের পশ্চিমে বারঘরিয়ায় অবস্থান গ্রহন করেন . ।





১৪ ডিসেম্বরের ভোর। মাত্র ২০ জন মুক্তিযোদ্ধাকে সঙ্গে নিয়ে বারঘরিয়া এলাকা থেকে ৩/৪ টি দেশিয় নৌকায় করে রেহাইচর এলাকা থেকে মহানন্দা নদী পাড়ি দেন। নদী অতিক্রম করার পর থেকেই উত্তর দিক থেকে প্রত্যেকটি শত্রুদের অবস্থানের দখল নিয়ে দক্ষিন দিকে এগোতে থাকেন তিনি। তাঁর পরিকল্পনা ছিল উত্তর দিকের শ্ত্রুদের নিপাত করার সময় দক্ষিন দিকের শত্রুরা যাতে জানতে না পারে। জয় যখন সুনিশ্চিত সে সময় ঘটে বিপর্যয়। পাকিস্তান সিভিল আর্মড ফোর্সের ৮/১০ জন সৈনিক দৌড়ে চর এলাকায় চলে আসে, শুরু হয় পাকিস্তানী বাহিনীর অবিরাম গুলি বর্ষন। ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর জীবনের মায়া না করে এগিয়ে যেতে থাকেন। যখন মাত্র আর একটি শত্রু অবস্থান এর পতনের বাকি ঠিক সে সময় সম্মুখ সমরে বাঙ্কার চার্জে শ্ত্রুর বুলেট এসে বিদ্ধ হয় মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের কপালে। শহীদ হন মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর।



তাঁর রক্তে রঞ্জিত হয় বাংলা মায়ের বুক। নিজের জীবনের বিনিময়ে বাংলার ভাগ্যাকাশে তিনি এঁকে দিয়েছেন বিজয় তিলক।

সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৫৭
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×