আমার কথা বিশ্বাস করা উচিৎ
মুজিবুর জীবিত আছেন
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া
(বিশেষ সংবাদদাতা)
করাচী, ১লা সেপ্টেম্বর : প্যারিসের দৈনিক ‘লাফিগারো’র সংবাদদাতার সংগে এক সাক্ষাতকারে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বলেন যে, শেখ মুজিবুর রহমান বর্তমানে “কারাগারে এবং জীবিত।”
তিনি জোর দিয়ে বলেন, “আমার এই কথা বিশ্বাস করা উচিত।” তবে শেখ মুজিবুর রহমানকে কোন কারাগারে রাখা হয়েছে, তা তিনি জানান নি। তিনি এ সম্পর্কে কিছুই জানেন না বলে সংবাদদাতাকে জানান , আর পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে এই না জানার কারণ হিসেবে তিনি বলেন যে, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের কি জানা আছে সব সব বন্দী কোন কোন জেলে আছেন!
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান পাকিস্তানের বর্তমান সংকটে গণপ্রজাতান্ত্রিক চীন ও ফ্রান্সের ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, ব্রিটেন তার দেশের বিরোধীদের নেতা, পূর্ববাংলার সংকটে এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে।
তিনি শেখ মুজিবকে একজন “ছোট খাটো ফ্যাশিষ্ট নেতা” বলে উল্লেখ করেন।
তিনি আরো স্পষ্ট ভাষায় বলেন যে, ভারত যদি আমাদের ভূখণ্ডের কোন অংশ নিতে চায় তার অর্থ হবে যুদ্ধ। সর্বাÍক যুদ্ধ। কিন্তু আমি তা ঘৃণা করি। তবে দেশরক্ষার প্রয়োজনে আমি যুদ্ধের জন্য ইতস্তত করব না।
সংবাদদাতা পূর্ববাংলার পরিস্থিতি সম্পর্খে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, সীমান্তের কয়েকটি অঞ্চল ছাড়া সমস্তই আমার সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। তবে “সীমান্তের অবস্থা মোটেই শান্ত নয়।”
তিনি বলেন, আমি এখনও সরকারের লাগাম জনগণের হাতে দিতে ইচ্ছুক। আমি আওয়ামী লীগকে বাতিল করেছি। কিন্তু জন প্রতিনিধিদের আসন বাতিল করিনি। আমি কেবল দেশদ্রোহীদের তাড়িয়েছি। এবং ৮৯ জন প্রতিনিধিকে বেছে নেওয়া হয়েছে যারা জাতীয় পরিষদে বসবেন।
সংবাদদাতার কাছে ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে তিনি বলেন যে, ভারত শরণার্থীদের নিজেদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সিদ্ধির কাজে লাগাচ্ছে। এবং তাদের ফিরে আসতে বাধা দিচ্ছে।
পূর্ব বাংলায় পাক সৈন্যদের নৃশংসতা সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার সেনারা পেশাদারি সেনা। তারা যখন হত্যা করে তখন পরিষ্কারভাবেই করে। যুদ্ধের সময় কেউ ফুল ছোঁড়ে না।
তিনি পূর্ব বাংলায় প্রতিটিই ন্যায় কাজ করেছেন বলে তুলে ধরতে চেষ্টা করেন। এমন কি গত ২৫শে মার্চের পরে পূর্ব বাংলায় কেন বিদেশী সাংবাদিকদের ঢুকতে দেওয়া হয়নিএই প্রশ্নের জবাবে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে বলেন, আমি তাদের রক্ষা করতে চেয়েছিলাম।
বাংলার কথা ১: ২ ১ সেপ্টেম্বর ১৯৭১