১৬ বছরের কিশোর এক ধনীর আদরের দুলাল, সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্ম, যার পরিবারে রাজনীতির ছায়া মাত্র নেই সেই কি না এক রাতে সবার অগোচরে পালিয়ে গিয়ে যোগদান করলেন আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে । দেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনার জন্য অসীম সাহসিকতায় ভয়ংকর সব অপারেশনে অংশগ্রহন করেছেন সহ-যোদ্ধাদের সাথে সমানতালে ।
যুদ্ধের শেষ মুহুর্তে সে পাক বাহিনীর হাতে ধরা পরে যায়। ফাঁসীর আদেশ হয় তাঁর, জায়গা হয় ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের কন্ডেম সেলে। কিন্ত তার ফাঁসী কার্যকর করার আগেই আমাদের দেশ স্বাধীন হয়। মৃত্যুর অপেক্ষায় থাকা সেই অসীম সাহসী কিশোর ছেড়া লুঙ্গি আর গেঞ্জি পরে উন্মুক্ত করে দেয়া কারাগার থেকে দৌড়াতে দৌড়াতে সাঁঝের আধারে এসে হাজির হয় ধানমন্ডির এক আত্মীয়ার বাসায় যেখানে অপেক্ষায় ছিলেন তাঁর মা। যারা সেদিন সেই দৃশ্য দেখেছিল তারা কেউই চোখের পানি আটকে রাখতে পারে নি।
অনেকেই তাকে চিনে, তাঁর কথা জানে, কিন্ত উনি ছিলেন প্রচার বিমুখ তাই তাঁর নাম আমি উল্লেখ করলাম না। বলতেন " পাকিদের কাছ থেকে দেশ স্বাধীন করার জন্য যুদ্ধ করেছি তা নিয়ে বলাবলির কি আছে "! তারপরও আমি অনেকদিন বলেছি " মামা আপনার এই ইতিহাস নিয়ে আমি একটু হলেও লিখতে চাই" উনি বলতেন আচ্ছা পরে পরে ---------
হাজারও গল্প হলো ওনার সাথে কিন্তু সেই পরের আর পর হলো না।
কিছুদিন আগে তার কোভিড ধরা পরলো দুই ছেলে আর স্ত্রী সহ। হাসপাতালে শুয়ে শুয়ে নিজেই লিখেছেন আই নিড প্রেয়ার , তাঁর দুদিন পরে লিখেছেন আমি কি ট্রাম্পের মত একই চিকিৎসা পাচ্ছি? তারপর লেখা আই এম নেগেটিভ আত্মীয়স্বজন সবাই খুশী কিন্ত তাঁর ঠিক দুদিন পর তাঁর ছোট ভাই জানালেন তাঁর নিঃশব্দ প্রস্থানের কথা । হাসপাতাল থেকেই রাতের আঁধারে তাকে বিদায় জানিয়েছেন হাসপাতালে থাকা তাঁর কোভিড আক্রান্ত প্রিয়তমা স্ত্রী আর পুত্রদ্বয়। হিংস্র পাকবাহিনী তাকে ফাসীর দড়িতে ঝুলাতে পারে নি, নতজানু হন নি তাদের কাছে, করেন নি ক্ষমা প্রার্থনা, তবে শেষ পর্যন্ত হেরে গেলেন ভয়ংকর কোভিডের কাছে।
আমাদের খুব ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের একটি পেইজ আছে সেখানে তাঁর নামের নীচে এই লাইনটি উনি লিখে রেখেছেন। তাঁর জীবনের সাথে মিলে যাওয়া নীচের এই ইংরেজি লাইনটি কোথা থেকে সংগৃহীত কি না জিজ্ঞেস করা হয় নি হাজারও আলাপের মাঝে। নাকি নিজের মন থেকেই লিখেছিলেন তা আর জানা হলো না !
Freedom fighters don't cry, when time comes they silently go into the night
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১:০৪