somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভুত ভুতং

২২ শে আগস্ট, ২০২১ রাত ৮:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নরক থেকে আসা সত্যিকারের প্রেতাত্বা

আপনি কি জানেন আজ সুর্য্য ডোবার সাথে সাথেই অধিকাংশ থাইবাসীদের দরজা বন্ধ হয়ে যাবে, গাঢ় রঙের পর্দা টেনে দেয়া হবে এমন ভাবে যেন একটুও ফাক না থাকে,বাইরে থেকে একফোটা আলোও যেন ঘরে প্রবেশ না করে। কেউ যদি সন্ধ্যার পর পরিচিত গলায় ডেকে ডেকে বাইরে থেকে দরজা ধাক্কিয়ে মরেও যায় তবুও দরজা খুলবে না সকাল না হওয়া পর্যন্ত। খুব অবাক হলেন কি ! আমি যখন ব্যাপারটা প্রথম শুনি আমার কাছেও খুবই আজব লেগেছিল ।
প্রথম যিনি আমাকে এ ব্যাপারে জানিয়েছি্লেন তাঁর কথা শুনে আমি থ! আমি বিস্মিত নেত্রে তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম কেন !! সেও ততোধিক বিস্মিত হয়ে আমাকে উলটো জিজ্ঞেস করেছিল "কেন তুমি জানো না আজ যে চন্দ্র বছরের সপ্তম মাসের ১৫ তম দিন"! হ্যা জানি তাতে কি ! সে ভীত সন্ত্রস্ত মুখে আমার কানের কাছে ফিস ফিস করে বল্লো "জানো আজ নরকের রাজা নরকের দ্বার খুলে দেবে যাতে সমস্ত ক্ষুধার্ত প্রেতাত্বারা পৃথিবীতে আসতে পারে, স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়ানোর সাথে সাথে তাদের জীবিত আত্মীয়স্বজনের সাথে দেখা করতে পারে"। আমার তো শুনে ভয়ে হাত পা কাপতে লাগলো । তোতলাতে তোতলাতে বললাম 'কি বলো এইসব' !! বল্লো "সত্যি বিশ্বাস না হয় দেখো তুমি আজ কেউ রাস্তায় বের হবে না"।
ব্যাংকক একটা শহর যে কি না সারা রাত জেগে থাকে, নারী পুরুষ নির্বিশেষে সারারাত নিশ্চিন্তে চলাচল করছে, যখন ক্ষিধে পায় রাস্তায় বের হলেই খাবার। সেখানে কিনা সব ভেন্ডার থেকে শুরু করে বেশিরভাগ দোকান বন্ধ করে দিবে সুর্যাস্তের আগেই। এই আধুনিক যুগে এমন কাহিনী যে অবিশ্বাস্য ।
সেই কৌতুহলই আমাকে টেনে নিয়ে গেল এক অচেনা জগতে যা পড়ে আমি বিস্ময়াভুত হোলাম বৈকি, বিভিন্ন তথ্য থেকে জানলাম এই ব্যাতিক্রমী ভুত উৎসবের উৎপত্তি বৌদ্ধ আর তাও ধর্ম থেকে হলেও প্রাচীনকাল থেকেই চীনে এর ব্যাপক প্রসার ঘটে, যা পরবর্তীতে দক্ষিন পুর্ব এশিয়ার বৌদ্ধাধর্মাবলম্বী অনেক দেশেই এটা বিভিন্ন নামে উদযাপিত হয়ে থাকে। চন্দ্র পঞ্জিকার সপ্তম মাসের ১ম দিনেই নরকের রাজা নরকের দরজা খুলে দিলেও ১৫ তম দিন হলো প্রধান উৎসবের দিন। এই দিনই দলে দলে ক্ষুধার্ত নরকবাসীরা পৃথিবীর দিকে ছুটে আসে।

ভুত উৎসব

বিভিন্ন দেশে এই ভুত উৎসবের বিভিন্ন নাম থাকলেও থাইল্যান্ডে এর নাম সাত থাই / ওয়ান না রক। এই উৎসব চন্দ্র বছরের সপ্তম মাসব্যাপী সারা থাইল্যান্ডের বিভিন্ন মন্দির জুড়ে চলতে থাকে বিশেষ করে নাখন রাচাসিমা সংক্ষেপে কোরাট প্রদেশে এর ব্যপকতা বেশি। বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা বিভিন্ন মন্দিরে নিয়মিত প্রার্থনার সাথে সাথে এই সব নরকবাসীর জন্য বিশেষ প্রার্থনা করে থাকে।

মৃত ব্যাক্তিদের আত্মীয়স্বজনরা যারা মনে করে এই প্রেতাত্বাদের সাথে তাদের পুর্বপুরুষরাও রয়েছে। আর তাই তাদের আত্মার শান্তি কামনার জন্য মন্দির প্রাঙ্গনে লাল মোমবাতি জালিয়ে থাকে, করে চমকপ্রদ আলোকসজ্জা,জ্বালায় সুগন্ধি ধুপকাঠি,পানিতে ভাসিয়ে দেয় অসংখ্য ছোট ছোট কাগজের নৌকা যাতে জলতে থাকে প্রদীপ। এছাড়াও বাতিগুলোতে মৃত ব্যাক্তিদের নাম লেখা থাকে এবং সেটা জলতে থাকে পুরো উৎসব পর্যন্ত। এ ছাড়াও ক্ষুধার্ত নরকবাসী আত্মীয়স্বজনের জন্য উৎসর্গ করে থাকে ভাত, মাংস আর ফল, নাহলে হয়তো জ্যান্ত মানুষকেই খেয়ে ফেলবে বলে তারা বিশ্বাস করে না তবে ক্ষতি করতে পারে তারা। তাদেরকে সন্তষ্ট করার জন্যই এই সব অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

এর মাঝে বিশেষ উল্লেখযোগ্য হলো সারা মাস ধরে কাগজের নকল টাকা পোড়ানো। এছাড়াও কাগজের তৈরি ছোট ছোট গাড়ি-বাড়ি,কাপড়-চোপড়ও পোড়ানো হয়ে থাকে এই বিশ্বাসে যে এই জিনিসগুলো নরকবাসীদের আগামী বছর পর্যন্ত কাজে লাগবে। মানুষজন মনে করে এই সব প্রেতাত্বারা হলো তাদের পুর্ব পুরুষ যাদের মৃত্যুর পর সঠিকভাবে নিয়ম নীতি মেনে শেষকৃত্য করা হয় নি। এইসব নরকবাসীরা পৃথিবীতে বেচে থাকা আত্মীয়স্বজনের জন্য সৌভাগ্য বয়ে নিয়ে আসবে এই হলো ভুত উৎসব পালনের মূল বিশ্বাস।

তবে ভীতু থাইবাসীরা অনেকেই ভুতের সাথে মোলাকাত করতে সাহস পায় না তাই আজ সন্ধ্যার পর তারা খাবার নিয়ে ঘর বন্দী। তাদের বিশ্বাস এই নরকবাসীরা সুযোগ পেলেই তাদের সাথে সাথে ঘরে চলে আসবে। এছাড়াও আজকের দিনে রাতে
১।কালো পোশাক পরা যাবে না,
২।সন্ধ্যা বিশেষ করে মধ্য রাতের পর বাইরে থাকা যাবে না,
৩।কোন জীব এমন কি পোকা মাকড়ও মারা যাবে না,
৪। প্রার্থনার জিনিস পা দেয়া যাবে না,
৫।গভীর পানিতে নামা যাবে না,
৬।পাহাড় বনানী এড়িয়ে চলতে হবে
৭।কোন অপরিচিত লোক দেখলে এড়িয়ে চলতে হবে।
এমন আরও নিয়ম কানুন আছে ।
আজ চীন সহ সারা দক্ষিন পুর্ব এশিয়া ভুতের ভয়ে ভীত। আপনারাও আজ সন্ধ্যার পর থেকে ঘরে থাকুন, থাইল্যান্ড আর আমাদের মাঝখানে শুধু মিয়ানমার । তো এই মিয়ানমার পার হয়ে নরকের ক্ষুধার্ত প্রেতাত্বাদের আমাদের দেশে আসতে বেশি সময় লাগার কথা না। এই আধুনিক যুগেও কি অদ্ভুত বিশ্বাস, তবে আধুনিক তরুন তরুনীরা একে উৎসব হিসেবে শুধু অংশগ্রহন করে কিন্ত বিশ্বাস করে না।

ছবি নেট , কিছু কিছু তথ্য নেট ও আমার থাই প্রতিবেশি

সর্বশেষ এডিট : ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৪২
২৭টি মন্তব্য ২৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×