Click This Link
কাজল,
আজ তোর হিমঘর জীবনের দু'বছর হয়ে গেলো ! সময় বুঝি ময়ূরপঙ্খী ঘোড়া- খুব উড়ে উড়ে যায় ! অবশ্য সে তোর চেয়ে তেজী নয়রে দোস্ত ! তুই সময়কে হারিয়ে কেমন চোখের পলকে সত্যিকারের দলছুট হয়ে গেলি! কী করে পারলিরে তুই ? তুই আসলেই তোর নিজের মতো !
আজ তোর ওপর পুষে রাখা রাগের কথা তোকেই বলি। আমার ধারনা, এই চিঠি পড়ে গোঁফের নীচে তোর সেই বিখ্যাত নি:শব্দ হাসিটা ঝুলিয়ে দিবি ! যায়যায়দিনের দিনশেষে তুই তখন মিরপুরের বাসাতেই থাকতি। বলেছিলি যে কোন সময় বাসায় গেলেই তোকে পাওয়া যাবে। সেদিন বিকেলে ঠিক করেছিলাম বাসা থেকে নীচে নেমে গাড়ীতে বসে ঠিক করবো কোথায় বেড়াতে যাবো। তিথি ( আমার বাবুদের মা) বললো, ''কাল রাতে সঞ্জীবদাকে স্বপ্ন দেখেছি, চলো মিরপুরেই যাই। দাদাতো বলেছেনই সবসময় বাসাতেই থাকেন।'' আমি বললাম, ওকে তো তুমি চেনো না, চিনি আমি। ওর ঠিকানা ওর মর্জিমতো স্থির হয়। আগে ফোন করে নিই আসলেই বাসায় আছে কি না। অবাক করে দিয়ে প্রথম রিংয়েই ফোন ধরলি- ''কিরে নিরাপদ দিয়াশলাই, কি খবর তোর।'' বললাম, আজ তোর খবর করবো শালা, আমার বউ তোকে স্বপ্নে দেখলো কেন ? তুই প্রানখোলা একটা হাসি দিয়ে বললি, তুই বাদ। দে, ভাবীর সাথেই কথা বলি। যা ভেবেছিলাম তাই জানালি ওকে। তুই বাসায় ছিলি না, ছিলি রেকর্ডিং স্টুডিওতে। জানালি পরদিন সাতক্ষীরা যাবি স্টেজ প্রোগ্রাম করতে। ফিরে এসে তোর ভাবীর তৈরী চা-নাস্তা খাবি। তুই কিন্তু কথা রাখিসনি দোস্ত। এখনো সেই চা-নাস্তা খেতে এলি না। অবশ্য এটাই তোর নিজস্ব ভঙ্গী।
সাতক্ষীরা থেকে ফিরে মিরপুরের হাসপাতাল হয়ে এপোলো হাসপাতালে ঢুকলি। শুক্রবার রাতে সাতক্ষীরার লোকজন যখন সিডর মোকাবেলা করছিলো তুই তখন হাসপাতালে হিমঘরে ঢোকার কসরত করছিলি।
সিডরে ঢাকার লণ্ডভণ্ড বিদ্যুৎ ব্যবস্থা পুন:স্থাপিত হবার পর টিভি ছাড়লাম। আরটিভি ছাড়তেই অবাক হয়ে দেখি তোর গান চলছে। আধামিনিট পর গান হঠাৎ শেষ। সংবাদ পাঠক বললেন খবর শেষ। আমাদের ইশতিয়াক রেজা তখন আরটিভির হেড অব নিউজ ( এখন বৈশাখী টিভির হেড অব নিউজ)। সাথে সাথে ওকে ফোন করলাম, কিরে রেজা, খবরের ভেতর সঞ্জীবের গানের ফুটেজ দেখালি কেন? রেজা বললো, তুই জানিস না ? ওতো মারা গেছে। আমি তো থ ! তিথিকে ঘুম থেকে তুলে খবরটা দিতেই ও কেঁদে ফেললো। সাথে সাথে তোর ছোট বোন বাবলিকে ফোন করলো সে। (হবিগঞ্জে থাকতে বাবলির মেয়ে তিতলি আমার ছোট ছেলের ক্লাসমেট ছিলো। আর কাজল ছিলো আমার ক্লাসমেট)। বাবলি তখন এপোলো তে। বাবলি জানালো আরটিভির খবর ঠিক না। তুই তখন কোমায়। সাথে সাথে সপরিবারে ছুটলাম এপোলোতে। সারাপথ আমার ছেলে দুটো কাঁদতে কাঁদতে গেছে। বাসায় গেলে যে ওদের দুজনকে দুপাশে নিয়ে বসতি। এপোলোতে পৌঁছে দেখি শিল্পী, সাংবাদিক আর শুভানুধ্যায়ীতে গমগম করছে। বাবলির দিকে তাকানো যাচ্ছিলো না। আমিতো জানি বাবলির কাছে ছোড়দা কি ছিলো। আরো করুণ অবস্থা বড়দির। বড়দিতো আসলে কাকীমার ভূমিকা নিয়েছিলো তোর জীবনে। বড়দি বারবার বলছিলেন ওকে আমি বিদেশে নিয়ে যাবো চিকিৎসার জন্য।
সবকিছুকে তুই উপেক্ষা করে চলে গেলি ! এখানেও তুই তোর মতোই।
টিএসসিতে যখন তোকে সবাই দেখছিলো আমি যাইনি। সুমিকে (প্রথম আলোর ফিচার সম্পাদক সুমনা শারমিন) ফোনে বললাম তোর প্রাণহীন মুখের কোন স্মৃতি আমি রাখতে চাইনা।
আমার ছেলেরা এখনো তোর গান খুঁজে বেড়ায় চ্যানেলে চ্যানেলে !
তুই তোর মতো করেই ( সারা জীবন যা করতি) ঢামেকের হিমঘরে ভালো থাকিস রে দোস্ত...................................................!
ইতি-
তোর নিরাপদ দিয়াশলাই।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে নভেম্বর, ২০০৯ সকাল ১০:৫৮