somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দলছুট সঞ্জীবকে হিমঘরের ঠিকানায় খোলা চিঠি......

১৯ শে নভেম্বর, ২০০৯ সকাল ১০:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(অকালে দলছুট বন্ধু সঞ্জীব চৌধুরীর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ)
Click This Link

কাজল,

আজ তোর হিমঘর জীবনের দু'বছর হয়ে গেলো ! সময় বুঝি ময়ূরপঙ্খী ঘোড়া- খুব উড়ে উড়ে যায় ! অবশ্য সে তোর চেয়ে তেজী নয়রে দোস্ত ! তুই সময়কে হারিয়ে কেমন চোখের পলকে সত্যিকারের দলছুট হয়ে গেলি! কী করে পারলিরে তুই ? তুই আসলেই তোর নিজের মতো !

আজ তোর ওপর পুষে রাখা রাগের কথা তোকেই বলি। আমার ধারনা, এই চিঠি পড়ে গোঁফের নীচে তোর সেই বিখ্যাত নি:শব্দ হাসিটা ঝুলিয়ে দিবি ! যায়যায়দিনের দিনশেষে তুই তখন মিরপুরের বাসাতেই থাকতি। বলেছিলি যে কোন সময় বাসায় গেলেই তোকে পাওয়া যাবে। সেদিন বিকেলে ঠিক করেছিলাম বাসা থেকে নীচে নেমে গাড়ীতে বসে ঠিক করবো কোথায় বেড়াতে যাবো। তিথি ( আমার বাবুদের মা) বললো, ''কাল রাতে সঞ্জীবদাকে স্বপ্ন দেখেছি, চলো মিরপুরেই যাই। দাদাতো বলেছেনই সবসময় বাসাতেই থাকেন।'' আমি বললাম, ওকে তো তুমি চেনো না, চিনি আমি। ওর ঠিকানা ওর মর্জিমতো স্থির হয়। আগে ফোন করে নিই আসলেই বাসায় আছে কি না। অবাক করে দিয়ে প্রথম রিংয়েই ফোন ধরলি- ''কিরে নিরাপদ দিয়াশলাই, কি খবর তোর।'' বললাম, আজ তোর খবর করবো শালা, আমার বউ তোকে স্বপ্নে দেখলো কেন ? তুই প্রানখোলা একটা হাসি দিয়ে বললি, তুই বাদ। দে, ভাবীর সাথেই কথা বলি। যা ভেবেছিলাম তাই জানালি ওকে। তুই বাসায় ছিলি না, ছিলি রেকর্ডিং স্টুডিওতে। জানালি পরদিন সাতক্ষীরা যাবি স্টেজ প্রোগ্রাম করতে। ফিরে এসে তোর ভাবীর তৈরী চা-নাস্তা খাবি। তুই কিন্তু কথা রাখিসনি দোস্ত। এখনো সেই চা-নাস্তা খেতে এলি না। অবশ্য এটাই তোর নিজস্ব ভঙ্গী।

সাতক্ষীরা থেকে ফিরে মিরপুরের হাসপাতাল হয়ে এপোলো হাসপাতালে ঢুকলি। শুক্রবার রাতে সাতক্ষীরার লোকজন যখন সিডর মোকাবেলা করছিলো তুই তখন হাসপাতালে হিমঘরে ঢোকার কসরত করছিলি।

সিডরে ঢাকার লণ্ডভণ্ড বিদ্যুৎ ব্যবস্থা পুন:স্থাপিত হবার পর টিভি ছাড়লাম। আরটিভি ছাড়তেই অবাক হয়ে দেখি তোর গান চলছে। আধামিনিট পর গান হঠাৎ শেষ। সংবাদ পাঠক বললেন খবর শেষ। আমাদের ইশতিয়াক রেজা তখন আরটিভির হেড অব নিউজ ( এখন বৈশাখী টিভির হেড অব নিউজ)। সাথে সাথে ওকে ফোন করলাম, কিরে রেজা, খবরের ভেতর সঞ্জীবের গানের ফুটেজ দেখালি কেন? রেজা বললো, তুই জানিস না ? ওতো মারা গেছে। আমি তো থ ! তিথিকে ঘুম থেকে তুলে খবরটা দিতেই ও কেঁদে ফেললো। সাথে সাথে তোর ছোট বোন বাবলিকে ফোন করলো সে। (হবিগঞ্জে থাকতে বাবলির মেয়ে তিতলি আমার ছোট ছেলের ক্লাসমেট ছিলো। আর কাজল ছিলো আমার ক্লাসমেট)। বাবলি তখন এপোলো তে। বাবলি জানালো আরটিভির খবর ঠিক না। তুই তখন কোমায়। সাথে সাথে সপরিবারে ছুটলাম এপোলোতে। সারাপথ আমার ছেলে দুটো কাঁদতে কাঁদতে গেছে। বাসায় গেলে যে ওদের দুজনকে দুপাশে নিয়ে বসতি। এপোলোতে পৌঁছে দেখি শিল্পী, সাংবাদিক আর শুভানুধ্যায়ীতে গমগম করছে। বাবলির দিকে তাকানো যাচ্ছিলো না। আমিতো জানি বাবলির কাছে ছোড়দা কি ছিলো। আরো করুণ অবস্থা বড়দির। বড়দিতো আসলে কাকীমার ভূমিকা নিয়েছিলো তোর জীবনে। বড়দি বারবার বলছিলেন ওকে আমি বিদেশে নিয়ে যাবো চিকিৎসার জন্য।

সবকিছুকে তুই উপেক্ষা করে চলে গেলি ! এখানেও তুই তোর মতোই।

টিএসসিতে যখন তোকে সবাই দেখছিলো আমি যাইনি। সুমিকে (প্রথম আলোর ফিচার সম্পাদক সুমনা শারমিন) ফোনে বললাম তোর প্রাণহীন মুখের কোন স্মৃতি আমি রাখতে চাইনা।

আমার ছেলেরা এখনো তোর গান খুঁজে বেড়ায় চ্যানেলে চ্যানেলে !

তুই তোর মতো করেই ( সারা জীবন যা করতি) ঢামেকের হিমঘরে ভালো থাকিস রে দোস্ত...................................................!

ইতি-
তোর নিরাপদ দিয়াশলাই।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে নভেম্বর, ২০০৯ সকাল ১০:৫৮
১৩টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লাইকা লেন্সে তোলা ক’টি ছবি

লিখেছেন অর্ক, ১৭ ই জুন, ২০২৪ সকাল ১১:৩০




ঢাকার বিমানবন্দর রেল স্টেশনে ট্রেন ঢোকার সময়, ক্রসিংয়ে তোলা। ফ্ল্যাস ছাড়া তোলায় ছবিটি ঠিক স্থির আসেনি। ব্লার আছে। অবশ্য এরও একরকম আবেদন আছে।




এটাও রেল ক্রসিংয়ে তোলা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কার গল্প জানেন ও কার গল্প শুনতে চান?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই জুন, ২০২৪ বিকাল ৫:৩১



গতকাল সন্ধ্যায়, আমরা কিছু বাংগালী ঈদের বিকালে একসাথে বসে গল্পগুজব করছিলাম, সাথে খাওয়াদাওয়া চলছিলো; শুরুতে আলোচনা চলছিলো বাইডেন ও ট্রাম্পের পোল পজিশন নিয়ে ও ডিবেইট নিয়ে; আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাবাকে আমার পড়ে মনে!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৭ ই জুন, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২

বাবাকে আমার পড়ে মনে
ঈদের রাতে ঈদের দিনে
কেনা কাটায় চলার পথে
ঈদগাহে প্রার্থনায় ..
বাবা হীন পৃথিবী আমার
নিষ্ঠুর যে লাগে প্রাণে।
কেন চলে গেলো বাবা
কোথায় যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×