somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মামাবাড়ী, ইশকুল...৬

০৩ রা মে, ২০১১ বিকাল ৩:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগের পর্ব-
Click This Link

চড়ুইভাতি

আমরা ভাইবোন বাহিনী ঠিক করলাম চড়ুইভাতি করবো। বাড়ীতেই। তখন ধান কাটার মৌসুম চলছে। সবাই এককাপ ধান জমা দিলাম। জমি থেকে কিছু যোগটড় করে ধান সিদ্ধ করলাম। শুকিয়ে ঢেঁকিতে চাল করলো বোনেরা। আমরা পুকুরে নামলাম মাছ ধরার জন্য। কিছু মাছ ধরলাম। প্রতি ঘর থেকে একটা করে ডিম এলো। দাদী দিলেন মুরগী। মসলা দিলেন আম্মা। জমানো টাকা থেকে সরিষার তেল কিনা হলো।

সব যোগাড় করে রান্না শেষ করে খেতে খেতে প্রায় বিকাল হয়ে গেলো। ঝাল লবন আর মসলার গোলমালে রান্না যা হয়েছে তার বিবরণ নাই দিলাম। শুধু হাড়ে হাড়ে টের পেলাম ক্ষুধা লাগলে বাঘেও কেন ঘাস খায়।

সেই স্বাদ, গন্ধ কোথায় গেলো ?

আমাদের বাড়ীর দরজা বেশ লম্বা। রাস্তা থেকে ঘরগুলোর দূরত্ব ৫শ' গজের মতো হবে। বাড়ীতে যেদিন গোশত বা ইলিশ মাছ রান্না হতো কিংবা ডিম ভাজা হতো রাস্তা থেকে তার ঘ্রাণ পাওয়া যেতো। রাস্তা দিয়ে যাবার সময় লোকজন সে ঘ্রাণ পেয়ে বলতো এ বাড়ীতে গোশত বা ইলিশ রান্না হচ্ছে, চল দাওয়াত খেতে যাই। আমরা সেটা শুনে খুব মজা পেতাম।

এখন নাকের কাছে না নিলে এই সব তরকারীর ঘ্রাণই মিলে না। কোথায় হারিয়ে গেলো সেই ঘ্রাণ ? সেই স্বাদও আর পাইনা। স্বাদ যে কোথায় হারালো ? দেশী জাতের মাছ, মুরগী,ডিম সবই গায়েব হবার পথে।

ছোট বেলায় মামাবাড়ী গেলে বিন্নি চালের ভাত খেতে পছন্দ করতাম খুব। ২০০৩ সালে আবার যখন ব্রাক্ষ্মণবাড়ীয়া এলাকায় গেলাম। বিন্নি চালের সন্ধানে লোক লাগালাম। বিন্নি ভাও রান্না করা হলো বিন্নি চালের ভাত রান্নার স্পেশাল তরিকাও অনুসরণ করা হলো। মুখে দিয়ে বিন্নির মতো লাগলো বটে। কিন্তু সেই ঘ্রাণ আর পেলাম না। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বুঝলাম যে দিন গেছে সেটা আসলেই চলে গেছে।

গ্রামের মেলা, হাল খাতা

আমাদের গ্রামে চৈত্র সংক্রান্তি আর পহেলা বৈশাখ মেলা বসতো। মাঠের মধ্যে বটগাছের তলে। আমরা সাজুগুজু করে মেলায় যেতাম। মেলার ভিড় অনেক দূর থেকে দেখা যেতো। কানে আসতো হৈহুল্লোড়। কাছাকাছি গেলে দেখতাম মাঠের বুক চিরে নানা দিক থেকে লোকজন আসছে। সাথে ছোট ছেলেমেয়ে। মেলায় আমাদের মূল আকর্ষণ ছিলো বাতাসা, মুড়কি, নাড়ু, হাওয়াই মিঠাই। বাঁশি বেলুন আর কাঠের তৈরী খেলনা। মাটির পুতুল। বড়োদের আকর্ষণ ছিলো বাঁশ বেত কাঠের তৈরী নানা জিনিস। জাল পাওয়া যেতো। পাওয়া যেতো পাটি, গৃহস্থালীর নানা জিনিস। মেয়েদের চুড়ি, লেইস,ফিতা,আলতা ইত্যাদি।

আনন্দের সাথে মূল বিষয় ছিলো বাণিজ্যিক। দরকারী বেচা কেনা সেখানে সবাই সারতেন।

পহেলা বৈশাখে সব দোকানে হতো হালখাতা। বাকীর খাতার কিছু টাকা হাতে করে বড়োরা যেতেন। সাথে যেতো ছোট ছেলে মেয়েরা। দোকান সাজানো হতো রঙিন কাগজে। পর্দা দিয়ে ঘিরে ভেতরে বসার ব্যবস্থা। নানা রকমের মিষ্টি পরিবেশন করা হতো। সেই মিষ্টির স্বাদ এখনো যেন মুখে লেগে আছে। কারণ গ্রামে ভেজাল তখনো এতো সর্বব্যাপী
হয়ে ওঠেনি। শহরে ভেজাল যে ছিলো তার প্রমান পাই সৈয়দ মুজতবা আলীর পঞ্চতন্ত্রে। ''কায়রো'' শিরোণামের লেখায় বলছেন- বসন্ত রেস্টুরেন্টে ভেজাল তেলে ভাজা পচা ডিমের যে উমদা অমলেট মিলে সে ফিরিস্তি দিতেও ভুললুম না।

তাঁর ''শবনম'' উপন্যাসের নায়িকার কপালের রঙের বর্ণনা দিতে গিয়ে মুজতবা আলী লিখেছেন- কপালটি পাগমানের বরফের মতো। সেতো আপনি দেখেননি। বলা যায় নির্জলা দুধের মতো। সে-ও আপনি দেখেননি। বলা যায় বনমল্লিকার পাঁপড়ির মতো। কেননা ওতে এখনো ভেজাল হয়নি। (দুধে পানি মেশাবার ঐতিহ্য দেখুন)।

বলছিলাম হালখাতার মিস্টির কথা। যেসব দোকানে বাকী ছিলো সেখানে মিস্টি ছিলো অবধারিত। যে দোকানে বাকী নেই। সেই দোকানদারও ছোটদের দেখলে ডেকে বসিয়ে মিস্টি খাওয়াতে কঞ্জুসী করতেন না। সেই উদারতাটুকুও তখনো টিকেছিলো।

এখন পহেলা বৈশাখে ঢাকায় যে মঙ্গল শোভাযাত্রা হয় সেটা নিতান্তই ঢাকাই এবং অতিসাম্প্রতিক। এরশাদ জামানায় আমরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি তখন থেকে শুরু। পান্তা-ইলিশের প্রচলনও মূলত তখন থেকে। আবহমান বৈশাখ যাপনের সাথে এর কোন মিল নেই।

তবে ছায়ানটের বটমূলের অনুষ্ঠান শুরু ১৯৬৭ সাল থেকে। ছায়ানটের এই অনুষ্ঠানটি নানা প্রতিকূলতার পরও টিকেছিলো। বোমা হামলাও এর পথ আটকাতে পারেনি। তবে এবার একটা ভয়ের বিষয় দেখলাম, জানি না ছায়ানট এই ঝাপটা কিভাবে সামলাবে। রমনার অন্যপ্রান্তে মোবাইল কোম্পানী পাশ্চাত্য ধরণের কনসার্ট আয়োজন করে দর্শকশ্রোতার মূল স্রোত ওখানে টেনে নিয়েছিলো। ছায়ানটের অনুষ্ঠানে এবার লোক সমাগম কম হয়েছে।

(চলবে)
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×