somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মামাবাড়ী, ইশকুল ... ১৩

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগের পর্ব -
Click This Link

গিলানটা পকায় গেলো গো !

আমি তো দাদাবাড়ী আর নানাবাড়ীতে টিউবওয়েল দেখে অভ্যস্ত। তাই শ্রীমঙ্গলে কুয়া দেখে চমৎকৃত। দড়ি দিয়ে বালতি কুয়ায় ফেলে ভরা বালতি টেনে তুলতে হয়। খুব আগ্রহ নিয়ে সেটা দেখি। সবাই আমাদের পিচ্চিদের চোখে রাখে পাছে কুয়ায় পড়ে যাই। আমি মাথা এগিয়ে কুয়ার পানিতে নিজের মুখের ছায়া দেখি। গলা বাড়িয়ে শব্দ করি। সে শব্দের প্রতিধ্বনি শুনে চমৎকৃত হই।

চা বাগানের কুলীরা রাস্তা দিয়ে যাওয়া আসার পথে মাঝে মাঝে কুয়া থেকে খাবার পানি তুলে খেতো। একদিন এক কুলী বালতি তুলতে গিয়ে দড়িসহ সে বালতি কুয়ায় ফেলে দিলো। কাণ্ড দেখে আমি ভয় পেয়ে গেলাম। কিন্তু কুলীর চেহারা দেখে আমি ঘাবড়ে গেলাম। ভয়ে বেচারা কাঁপছে। কাঁপতে কাঁপতে আমাকে বললো- এই নুন্নু, গিলানটা পকায় গেলো গো। কথাগুলো আমার শিশুতোষ কানে এরকমই লেগেছিলো। আসলে শব্দগুলো কি সেটা আমি জানি না।

আমি দৌড়ে গিয়ে ছোট মামাকে সোৎসাহে খবরটা দিলাম। মামা আমার সাথে এসে বালতিটার অবস্থা দেখলেন। তারপর কুলীটাকে জিজ্ঞেস করলো পানি খেতে পেরেছিলো কিনা ? সে ভয়ে ভয়ে জানালো, পারেনি। মামা তাকে জগ আর পানির গ্লাস এনে পানি খাওয়ালো। তারপর তাকে কাজে যেতে বললো। সে একটু অবাক হয়ে চেয়ে থেকে ''সেলাম, বাবু,, বলে চলে গেলো। যাবার পথে বারবার পিছু ফিরে তাকাচ্ছিলো। বালতি ফেলার জন্য কোন শাস্তি না দিয়ে উল্টো বাড়ী থেকে এনে পানি খেতে দেয়ার বিষয়টাতে যে সে অভ্যস্ত না সেটা বুঝতে পারলাম। সহজে পার পেয়ে তার বোধ হয় বিশ্বাসই হচ্ছিলো না।

রাখাল গরুর পাল লয়ে যায় বনে......

বিকাল হবার পর দেখি এক পাল গরু তাড়াতে তাড়াতে একটা লোক মামাবাড়ীতে ঢুকলো। ৩০,৩৫টা গরু। সব এনে বাড়ীর পেছনের লম্বা কুঁড়ে ঘরে তুললো। জানলাম সব গুরু আমাদের ! (পড়ুন- মামাদের) সব গরুকে রাখাল বনে নিয়ে যায় খাওয়াবার জন্য। পরদিন সকালে যখন দুধ দোওয়ানো শুরু হলো তখন দেখি এক এলাহী কারবার। একে এক ১২/১৩টা গরুর দুধ দোওয়ানো হলো ! বালতি বালতি দুধ ! নানী ফেনা ওঠা কাঁচা দুধ খেতে দিলেন। প্রথমে একটু ইতস্তত: করলেও নানীর উপর্যুপরি অনুরোধে সেটা খেলাম। খেতে একটু গন্ধ লাগলেও খেতে শেষ পর্যন্ত মন্দ লাগেনি। অবাক হলাম সে দুধ গরম দেখে। গরম মানে হালকা গরম। পরে আমি কাঁচা দুধের ভক্ত হয়ে গেলাম।

দুধ দোয়ানোর পর লোকটি ( রাখাল) একটা দা আর ছাতা হাতে নিয়ে গরুর পাল নিয়ে বনের পথে চললো।

আনারস, কাঁঠাল, কলার ঢল

নানীর আদরের চোটে অস্থির হয়ে উঠলাম। এই সরপড়া ঘন দুধ আনেন তো, এই পিঠা আনেন। এরপর শুরু ফলের জোয়ার। বড়ো বড়ো বাটি ভরে আনারস কেটে আনেন, কাঁঠাল ভেঙে আনেন। কলার কাঁদি এনে হাজির করেন। কোনটা রেখে কোনটা খাই !

ফল খাবার স্পেশাল তরিকা

পরে কিঞ্চিৎ বড়ো হবার পর ফল খাবার তরিকা বদলে গেলো। মামার সাথে বা একা লম্বা দা হাতে চলে যেতাম পাহাড়ের ওপরের বাগানে। আনারস যেটা পছন্দ হতো সেটা কেটে হাতে নিতাম। তারপর ওপরের পাতাওয়ালা অংশটা উল্টো করে ধরে দা দিয়ে আনারসের চামড়া ছিলে ফেলে পাতার অংশটা ধরে আস্ত আনারস কামড়ে কামড়ে খেতাম।

কাঁঠালের বেলায় ছিলো ভিন্ন সিস্টেম। গাছপাকা কাঁঠাল খেতাম। গাছের কাছে গিয়ে আঙুলে টোকা দিয়ে অথবা হাতের নাগালের বাইরে হলে দায়ের মাথার অংশ দিয়ে টোকা দিয়ে বের করতাম কোন কাঁঠালটা পাকা। তারপর সে কাঁঠাল পেড়ে সব কোয়া খেয়ে বিচি গুলো কলাপাতায় ভরে নিয়ে আসতাম। কাঁঠাল বিচির ভর্তা আর কাঁঠাল বিচি দিয়ে রান্না করা মাংস আমার খুব প্রিয় ছিলো (এখনো প্রিয়)। নানীর হাতের তৈরী কাঁঠাল বিচির ভর্তার স্বাদই ছিলো আলাদা। আমার মা নানীর এই গুনটা পাননি।

কলাও যেটা যেটা পাকা সেটা গাছ থেকে ছিঁড়ে নিয়ে খেতাম। নিজেদের খাবার জন্য ব্যবহৃত হতো এসব পাকা ফল। বাজারে বিক্রির জন্য পাড়া হতো কাঁচা অবস্থাতেই।

(চলবে)
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×