somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মামাবাড়ী, ইশকুল ... ১৪

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১১ সকাল ৯:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগের পর্ব -
Click This Link

পাকা জামের মধুর রসে...

আমার মায়ের চাচাতো ভাই মনির আমাদের প্রায় সমবয়সী। গ্রামীন ভাষায় হয়ে গেলো মইন্যা। এ মইন্যা মামার সাথে একদিন চললাম দূরের পাহাড়ে। মামার হাতে লম্বা ধারালো দা আর আমার হাতে বাঁশের ছোট লাঠি। তখনো সব পাহাড়ে মানুষের কারিগরী ফলানো সম্ভব হয়নি। চা আর আনারস বাগান ছাড়া অনেক পাহাড় ছিলো খাঁটি জঙ্গলে ছাওয়া। ফলে বন্য প্রাণীদের আনাগোনা ছিলো। সাথে সাপের ভয়। এখনো চা বাগান এলাকায় বিষাক্ত সাপের প্রাচুর্য রয়েছে। তবে অন্য প্রাণীরা বিলুপ্ত হয়ে গেছে বললেই চলে। সেই বুনো পাহাড়ের প্রাকৃতিক খাবারের ওপর ভরসা করে সচ্ছ্বল লোকেরা প্রচুর গরু পালতেন।

বুনো জগৎ বলে নিরাপত্তা ও কাজ হাসিলের জন্য ধারালো লম্বা দা সবার অপরিহার্য সঙ্গী ছিলো। মামার সাথে চলে গেলাম বুনো পাহাড়ে। আম্মা একটু আপত্তি করলেও নানীর জন্য সেটা টেকেনি। নানীর কথা, মইন্যা আছে, ভয় নেই। বনের ভেতর হাঁটতে গিয়ে সমস্যায় পড়লাম। ঘাস, লতা গুল্ম আর কাঁটাযুক্ত গাছের জন্য হতে পা ছড়ে একাকার। মামা সাথে সাথে পাহাড়ী গাছের পাতার রস ঘষে নিরাময় করে দিচ্ছিলেন। বেশ দুর্গম একটা পথ পেরিয়ে পৌঁছুলাম মোটা এক গাছের পাশে। এত মোটা গাছ আমি এর আগে দেখিনি। এখনতো বাংলাদেশে সেরকম গাছ পাওয়াই অসম্ভব। অন্তত তিনজন মানুষ হাত ধরাধরি করেও পুরো গাছটি বেড় পাবেন না। মামা বললেন, এটা জাম গাছ। এত মোটা গাছে চড়বো কিভাবে ? মামা বনের ভেতর থেকে একটা বাঁশ টেনে বের করলেন। বুঝলাম এখানে প্রায়ই তার পা পড়ে। বাঁশের দুপাশের কঞ্চি একটু বাড়তি রেখে বাকীটা কাটা। মামা সে বাঁশটি গাছের উঁচু ডালের সাথে ঠেকিয়ে ধরে বললেন, আমি বাঁশ ধরে আছি। তুই উঠে যা। যেহেতু গাছে চড়ার অভ্যাস ছিলো তাই উঠতে শুরু করলাম বাঁশ বেয়ে। মামা অবশ্য কৌশলটা বলে দিয়েছিলেন। তারপরও কাঁপতে কাঁপতে উঠে গেলাম। তরতর করে উঠে এলেন মামা।

আমাকে মোটা একটা ডালের ওপর বসিয়ে রেখে উঠে গেলেন ওপরের দিকে। বেশ কিছুক্ষণ পর দেখলাম কোঁচা ভরা বিশাল বিশাল কুচকুচে কালো জাম নিয়ে নামলেন। ওখানে বসেই খাওয়া শুরু হলো। দারুন মিষ্টি ! তারপর মামা কোঁচা থেকে মরিচগুঁড়া মেশানো লবন বের করলেন। তাতে স্বাদের মাত্রা বেড়ে গেলো দারুন। জাম খাওয়া শেষ হবার পর মামা আবার মগডালের দিকে গেলেন। আবার আনলেন কোঁচা ভরা জাম। বাড়ী নেবেন বলে।

বাঁশ বেয়ে নামাও আরেক হাঙ্গামার কাজ !

এরপরও মামার সাথে আরো কয়েকবার সেই গাছে চড়েছি। বনে বনে ঘুরেছি অনেক। মামা বন মোরগও ধরেছেন বেশ কয়েক বার। স্বাদটা প্রায় একই রকম। কিঞ্চিৎ বেশীই।

চা অভিযান

মইন্যা মামার সাথে বের হলাম চা অভিযানে। বাগানে ঢুকে চা পাতা তুললাম। বাড়ী এনে পিষে রোদে শুকানো হলো চা। তারপর পাতিলে দিয়ে ভাজা হলো চা পাতা। বিচ্ছিরি চেহারা ধরলো। চা বানাবার পর দেখলাম মুখে তোলা যাচ্ছে না। চা অভিযান পুরোটাই মাঠে মারা গেলো !

ছড়ার পারে দুই ঘন্টা

পথ চলার সময় মাঝে মাঝেই ছড়া পার হতে হতো। ঝির ঝির করে বয়ে চলে পানি। অবিশ্বাস্য রকমের স্বচ্ছ্ব। নানা মোড় ঘুরে ঘুরে চলে। মাঝে মাঝে দেখা যায় সেরকম কিছু মোড়ে এক পাশে গভীর পুকুরের মতো পানি জমে আছে। সেখানেই আমরা মাঝে মাঝে গোছল করতে যেতাম। এছাড়া অল্প পানির জায়গায় মগ দিয়ে পানি ঢেলে গোসল করতাম। অন্য সময় কুয়ার পানি তুলে।

একদিন মইন্যা মামার সাথে গেলাম পাহাড়ে। শুরু হলো ঝুম বৃষ্টি। বড়ো একটা গাছের পাতা দিয়ে শরীর বাঁচালাম পানি থেকে। বড়ো একটা গাছের নীচে দাঁড়াবার পর ঝামেলা একটু কমলো। বুষ্টি হলো প্রায় ৪৫ মিনিট। বৃষ্টি থামার পর বাড়ীর পথে চললাম। ছড়ার পারে এসে চক্ষু চরকগাছ ! তীর বেগে ছুটে চলেছে ঘোলা পানির স্রোত। পানির উচ্চতা ছাড়িয়ে গেলো হাঁটু। অগত্যা বসে থাকতে হলো ছড়ার পারে। দুই পারেই জমে গেলো অনেক লোক। দু'ঘন্টার বেশী পরে পানি কমে যখন দৃষ্টিগ্রাহ্য হলো তল দেশ তারপর সবাই পার হলাম ছড়া। মামার কাছে জানলাম প্রবল স্রোতের তোড়ে পানির নীচ দিয়ে গাছের গুঁড়ি পাথর এসব চলে আসে। স্রোতের সময় পার হতে গেলে সেগুলোর আঘাতে স্রোতে ভেসে যাবার ভয় আছে। তাই তলদেশ দেখা দেবার আগে কেউ পার হয় না।

এখণ অবশ্য রাস্তার মাঝ দিয়ে যাওয়া ছড়াগুলোর ওপর সেতু আছে। তারপরও সবগুলোর ওপর সেতু নেই।

(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ৮:৪৬
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×