somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মামাবাড়ী, ইশকুল ... ১৫

২১ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ৯:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগের পর্ব -
Click This Link

ময়না পাখির খোঁজে...

মইন্যা মামার এক জোড়া ময়না পাখি। খুব সুন্দর করে কথা বলতে পারে। একই খাঁচায় থাকে ওরা। এদের দেখে মামার কাছে ময়না পাখির জন্য বায়না ধরলাম। মামাও রাজী হলেন বন থেকে ধরে এনে দেবেন। তবে কাজটা নাকি খুব কঠিন। ময়না বাসা করে গাছের অনেক ওপরের দিকে। ওই ডাল পর্যন্ত নাকি ওঠা কঠিন। সরু ডাল ভেঙে পড়ার ভয় থাকে। তারওপর থাকে বিষাক্ত সাপের ভয়।

মামা অনেক খোঁজাখুঁজির পর বললেন, তিনি একটা ময়নার বাসার সন্ধান পেয়েছেন। শুনে আমিতো খুশীতে আটখানা। কখন ময়নার খোঁজে যাবেন সে জন্য তাঁকে অস্থির করে তুললাম। অবশেষে এক দুপুরে মামা ভাগ্নে চললাম ময়নার ছানার সন্ধানে। অনেক কষ্টে গহীন জঙ্গলে পৌঁছালাম। ভয়ে হাত পা ঠাণ্ডা হবার যোগাড়। খুব সাবধানে নি:শব্দে গেলাম। মামা আমাকে নীচে রেখে সন্তর্পনে গাছে চড়লেন। বেশ সময় নিলেন নি:শব্দে ওঠার জন্য।

উত্তেজনা নিয়ে নীচে অপেক্ষা করছি। এমন সময় হুড়মুড় শব্দের সাথে সাথেই ধুপ করে পড়লেন মামা। পড়েই বললেন, মামা দৌড় মারো। মামার পেছন পেছন দৌড় দিলাম। ঘন জঙ্গল আর পাহাড়ী পথ। দৌড় মারা কি কথার কথা ? বেশ কিছুদূর আশার পর মামা বললেন, গোখরা সাপ ! চার টা !

প্রাণপনে ছুটে বের হলাম সেখান থেকে। ময়না পাখির শখ ওখানেই শেষ !

খাঁচায় পোরা বনের হরিণ

একদিন মইন্যা মামা জানতে চাইলেন হরিণ দেখেছি কিনা ? উত্তর যথারীতি ''না''। বললেন, চল হরিণ দেখে আসি। গ্রামের একজনের বাড়ীতে নাকি হরিণ আছে। মামার সাথে চললাম হরিণ দর্শনে। জীবনে প্রথম হরিণ দেখার উত্তেজনায় তখন অস্থির। আমার ধারণা ছিলো হরিণ হয়তো খোলামেলা জায়গায় স্বাধীনভাবে আছে। পৌঁছে দেখি আসলে তা না। একটা বড়ো জায়গা খাঁচার মতো ঘেরা। একটা বড়ো হরিণ আর একটা বাচ্চা। বড়োটার মাথায় শিং আছে। ছোটটপর নেই। ছোটটাকে দেখতে ছাগলের বাচ্চার মতো লাগছিলো। আমি অবাক হয়ে গেলাম হরিণের ঘাস খাওয়া দেখে। এটা তো গরু ছাগলের খাবার ! আমি ভেবেছিলাম হরিণ নিশ্চয়ই স্পেশাল কিছু খায়।

হরিণের শিং, বাঘের ছাল

আমার নানা ছিলেন নাম করা শিকারী। বিভিন্ন সাইজের বিশের অধিক বাঘ শিকার করেছেন। হরিণ শিকার করেছেন বেশুমার। শিকারী হিসাবে চিহ্ণ রেখেছেন সারা বাড়ী জুড়ে। বিভিন্ন জায়গায় হরিণের শিং লাগানো ছিলো। এর কিছু ব্যবহার হতো জামা কাপড় ঝুলিয়ে রাখার জন্য। আমাদের গ্রামের বাড়ীতে তার একটা এখনো ব্যবহৃত হচ্ছে সে কাজে। অনেক দিন হয়ে যাওয়ার রংটা চটে গেছে তার।

নানার ঘরের দেয়ালে বেশ কয়েকটি বাঘের ছাল পেরেক দিয়ে আটকে রাখা ছিলো। দু'একটা ছালের সাইজ আসলেই চোখ কপালে ওঠার মতো।

রাতের বেলার চিৎকার !

এক রাতে বিকট চিৎকারে ঘুম ভেঙে গেলো আমার। ভয়ে আমিও চিৎকার শুরু করলাম। থামলাম আম্মার ধমক খেয়ে। পরে জানলাম ঘুমের মধ্যে নানাভাই মাঝে মাঝে ভয়ে চিৎকার করে ওঠেন। কারণটা শুনেছি নানীর কাছে। নানাভাই একবার বিশাল এক বাঘকে গুলি করেছেন। সেই কালে রাইফেল তো ছিলো না। ছিলো গাদা বন্দুক। কার্তুজ ভরে একবার গুলী করার পর আবার কার্তুজ ভরে গুলী করতে হতো। পর পর গুলী করার সুযোগ ছিলো না। ফলে শিকার করা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ ছিলো। গুলী না লাগলে শিকারীর খবর ছিলো। নানাভাই গুলী করার সাথে সাথে বাঘটা তার দিকে লাফ দেয়। নানাভাই ভেবেছিলেন গুলী বোধ হয় লাগেনি। ভয়ে চিৎকার করে গাছ জড়িয়ে ধরেন। বন্দুক ফেলে দেন তার আগেই। ওভাভেই নাকি অজ্ঞান হয়ে নীচে পড়ে যান। ঘটনাক্রমে গুলীটা বাঘের হৃৎপিণ্ডে লেগেছিলো বলে বাঘ মরেছে, নানাভাই বেঁচে যান। কিন্তু সেটাই নানাভাইয়ের শেষ শিকার হয়ে যায়। নানী তাকে আর কখনো বন্দুক ছুঁতে দেননি। কিন্তু নানাভাই সেই যে ভয় পেয়েছেন মৃত্যু পর্যন্ত সেই ভয় বয়ে বেড়িয়েছেন। প্রায়ই ঘুমের মধ্যে চিৎকার করে উঠতেন।

(চলবে)
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×