৪৩ তম ওভারের তৃতীয়, চতুর্থ ও ষষ্ঠ বলে তিন উইকেট নিয়ে সাকিব যখন ইংল্যান্ডকে ছয় উইকেট থেকে নয় উইকেট বানিয়ে দিলেন তখন Cricbuzz এর ধারাবিবরণীতে লেখা হল, এমনকি দুঃস্বপ্ন শব্দটিও ইংল্যান্ডের অবস্থা বোঝানোর জন্য যথেষ্ঠ নয় (Even nightmares are fall short to describe their plights). বিনা উইকেটে ১০০ রান করে চা বিরতিতে যাওয়া ইংল্যান্ড যে তখন নয় উইকেট হারিয়ে ধুঁকছে। ঐ ওভারের শেষ বলে আউট হওয়া জাফর আনসারী আগের বলে আউট হলেই সাকিবের টেস্ট হ্যাটট্রিক হয়ে যেত অথচ সেই আউটে ইংল্যান্ড এর সাথে টেস্ট জয় এমনি নিশ্চিত হয়ে গেলো যে হ্যাটট্রিক-ফ্যাটট্রিক এসবকে নিতান্ত ছেলেমানুষি মনে হতে লাগলো। তখন আর জয় নিয়ে নয় বরং কথা হচ্ছিলো সেটার জন্য ইংলিশ লোয়ার অর্ডার আজ সকাল পর্যন্ত আমাদেরকে অপেক্ষায় রাখতে পারবে কিনা তা নিয়ে। এক দর্শক তো টেলিভিশনের সামনে থেকে উঠে যাওয়ার সময় বলেই বসলেন, এক উইকেটের জন্য ইংল্যান্ড কাল মাঠেই নামবে না।
তারও আগে আসল কাজটি করেছেন আরেক হাসান মেহেদি মিরাজ। আগের ইনিংসেও ছয় উইকেট নিয়েছিলেন। গতকালও শুরু থেকেই আক্রমনে আসলে তাকে ঠেকানোর জন্য সিরিজ জুড়েই হাপিত্যেশ করে মরা দুই ইংলিশ ওপেনার আক্রমণকেই আত্মরক্ষার সেরা উপায় বলে বেছে নিয়েছিলেন। আর তাতে এমনই সফল যে সিরিজে প্রথমবার মনে হল, ইংল্যান্ড ওপেনাররাও ব্যাট করতে জানেন! তাদের আক্রমনে যখন ২৭৩ রানের টার্গেটটাকে নিতান্ত ছোট মনে হচ্ছিল তখনই ঘাতক হয়ে এলেন সদ্য উনিশে পা দেয়া সাবেক যুব অধিনায়ক। চোখের পলকে বিনা উইকেটে ১০০ থেকে ৬ উইকেটে ১৩৯ হয়ে গেল যার পাঁচটিই নিলেন মিরাজ। নাইমুর রহমান দুর্জয়ের পর থেকেই একজন অফ স্পিনারের জন্য যে অপেক্ষা তারও বুঝি অবসান ঘটালেন মিরাজ। সে সময়ে তিনি এমনই আতঙ্ক ছড়াচ্ছিলেন যে মনে হচ্ছিলো প্রতি বলেই বুঝি উইকেট যাবে। টার্ন আর বাউন্সে সিরিজ জুড়েই ইংল্যান্ডকে ভোগানোর পুরস্কার স্বরূপ ম্যান অফ দ্যা সিরিজ হবার পথে ভাংলেন দুই টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশি বোলার হিসেবে সবচেয়ে বেশি উইকেট নেয়ার রেকর্ড। তারপরই সাকিবের সেই ওভার যার প্রথমটি সিরিজে বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি ভোগানো বেন স্টোকসের। সেই উইকেট পেয়ে জানানো স্যালুটও বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকলো। সিরিজে প্রতিবার ব্যাট করতে নেমে প্রতিবারই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সবচেয়ে কম রানে আউট হবার রেকর্ড নতুন করে লেখানো ব্রিটিশরা শেষ পর্যন্ত অলআউট ১৬৪ রানে।
রেকর্ড বুকে হয়তো লেখা থাকবে বাংলাদেশ এই সিরিজ ড্র করেছে কিন্তু আসলে এই সিরিজে জয়ী দলের নাম বাংলাদেশ। অ্যালিস্টার কুক সেটা বিলক্ষন জানেন। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তিনি যদি অনায়াসে বাংলাদেশের কোটি মানুষের মনের কথাই বলতে না পারেন তাহলে তিনি ইংলিশ অধিনায়ক হবেন কেন! আমাদের প্রতিনিধি হয়ে সবাইকে আহ্বান করলেন এখানে এসে ক্রিকেট খেলে যেতে।
সিরিজ শুরুর আগে নিরাপত্তা ছিলো সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। সিরিজ শেষেও তাই থাকলো। সত্যিই বাংলাদেশের মাটিতে কোন দলই আর নিরাপদ নয়। সেটা যে ফরম্যাটের ক্রিকেটই হোক না কেন। সময় এসেছে গর্জে ওঠার।