somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন ‘পারফেক্ট’ মানুষ।

২২ শে জুলাই, ২০২০ বিকাল ৩:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



জীবনে চলার পথে অনেক মানুষ দেখেছি। ভালো-খারাপ, সুখি-দুঃখি, ধনি-গরিব, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, নীতিবান-নীতিহীন এধরনের প্রত্যেকটি মানুষের সাথে আমার উঠাবসা হয়েছে। এই হাজার কোটি মানুষের ভিরে অনেক মানুষ আছে যেমন- এক লক্ষ মানুষের মাঝে একটি মানুষ, যার সব দিকটাই হয় ‘পারফেক্ট’! হ্যা একজন ‘পারফেক্ট’ মানুষ। যার প্রতিটি দিক ‘পারফেক্ট’ দেখেছি আমি। আজ আমি তার কিছু ক্ষোপ প্রকাশের কথা লিখবো।

গল্প নয় সত্যি বলছি, নাম রাজু (ছন্দনাম), বোঝার ক্ষমতা হওয়ার পর থেকেই বাবা মাকে জীবন যুদ্ধ করতে দেখেছি। তারা যে সুখ ভোগ করবে সেটা কিন্তু না, সেই যু্দ্ধটা ছিল সন্তানদের নিয়ে। বাবার সারাদিন হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম, মায়ের হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম সবটাই ছিল অসহয় বাবা-মায়ের স্বপ্ন সন্তানদের নিয়ে। জীবনের সব কিছু উজাড় করে, সব কিছু ত্যাগ করে এই দুই ব্যক্তি কাধে কাধ মিলিয়ে নেমে পরে সন্তানদের ভাগ্য ফলানো জন্য।

জানো তো কলি, সেই দিন উপলব্ধি করতে পারিনি, তাদের সেই ত্যাগ, সেই পরিশ্রমের কথা। কখনো মনে প্রশ্ন জাগেনি, কোথায় পাই এতো সব খাবার, এতো সব পোশাক, এতো সব টাকা, কিভাবে স্কুলে পড়ালেখা করি। বাবা তো সামান্য একজন ব্যবসায়িক ছিলেন আর মা গৃহীনি তাদের ঘরে কি স্বপ্নরা উকি মারতে পারে বলো। উকি মারলেও হয়তো পালিয়ে যায় সুবোধের ভিরে।



জানো কলি, মা বলেছে আমি যখন জন্মগ্রহণ করেছি তখন নাকি বাবা একটু রাগ করেছিল, কিন্তু মা বিষন খুশি হয়েছে। মা বাবাকে বুঝিয়ে বলতো আমার এই ছেলেটা একদিন বড় ইঞ্জিনিয়ার হবে, বড় চাকুরি করবে। আমাদের জীবনে অনেক সুখ আসবে, তখন আর কষ্ট হবে না তুমি দেখো। জানো, আমি বড় হলাম আস্তে আস্তে বাবার সব থেকে প্রিয় সন্তান হয়ে উঠলাম, মায়ের থেকেও বেশি বাবার আদর পেলাম। ভাইয়ের আদর, বোনের আদর।

কলি আমার ভাইয়ের কথা শুনবে না? আমার বড় ভাই যার হৃদপিন্ড হলাম আমি। মানুষ যেমন হৃদপিন্ড না থাকলে বাঁচতে পারেনা তেমনি আমি না হলে আমার ভাই বাচতে পারবে না। আমি যখন স্কুলে ভর্তি হয়েছি তখন বড় ভাই পড়ালেখা ছেড়ে দিয়েছে। কারণ বাবা একা সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। সব ভাইবোনদের পড়ালেখা একা সামলাতে পারছেন না। তাই বড় ভাই, নিজের পড়ালেখা বাদ দিয়ে শুধু মাত্র আমার পড়ালেখার জন্য চলে আসেন এই আজব ঢাকার শহরে। ভাই সমস্ত খরচ বহন করতে লাগলেন আমার। আমার স্বপ্ন আর বাবা-মায়ের স্বপ্ন পুরণ করার জন্য, নিজেকে বিলিয়ে দিলেন কঠিন পরিশ্রমের মুখে।

আমিও আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যেতে লাগলাম, গ্রামে কারেন্ট ছিলনা, থাকলে আমাদের অতোটা সমার্থ ছিলনা তাই রাতে উঠানে চাঁদের আলোতে বই নিয়ে পরতে থাকতাম। চাঁদের আলোতে বইয়ের লেখা স্পর্শ দেখা যেতো না, তাই হাতে একটি দেশলাইট নিয়ে নিতাম ওটার পিছরে একটা লাইট ছিল সেই আলো জালিয়ে পড়েছি। ফ্যান ছিলনা, কারেন্ট ছিলনা ফ্যান পাবো কোথায় বলো, তাই চাঁদের আলো আর প্রকৃতির বাতাস উপভোগ করেই মনকে সতেজ করেছি। এই ভাবেই জীবনের প্রতিটি ধাপে ধাপে এগিয়ে যাচ্ছি।

মাধ্যমিকে স্কুলে সবথেকে ভালো রেজাল্ট করেছি, উচ্চমাধ্যমিকে আরো ভালো রেজাল্ট করেছি, গ্রামের সবথেকে ভালো খেলোয়ার ছিলাম, ফুটবল বলো ক্রিকেট বলো, যতপ্রকার লেখা বলো সব দিকেই ভালো ছিলাম। কেউ কখনো আমাকে হারাতে পারতো না, প্লেয়ার রাজু বলে উপধি পেয়েছি গ্রামে, স্কুলে, কলেজে। সবাই ভাবলো আমি হয়তো জীবনে একটা কুল খুজে পেয়ে যাবো। তারপর উচ্চমাধ্যমিকে পড়া শেষ করি। এর মধ্যে আবার বাবাও চলে গেলেন পৃথিবীর সব সুখ নয় দুঃখ গুলো ভোগ করে। তারপরও পরিবারের কেউ আমাকে বাবা চলে যাওয়ার আচটুক পেতে দেননি। এরপর ভাই আমাকে নিয়ে আসলো এই আজব শহরে, এই অদ্ভুত শহরে।



শহরটি আমার কাছে বেশ ভালো লাগতে শুরু করলো। কিন্তু ভালো লাগা থেকে একটা সময় আমাকে অসহ্য যন্ত্রণা দিতে শুরু করলো। ধুলো-বালির এই শহরটিতে কেমন জানি মানুষগুলো ধুলো-বালির মতো দেখতে লাগলাম। জীবনের সব দুঃখ ভুলে যেয়ে স্বপ্ন বুনতে লাগলাম। কিন্তু স্বপ্নগুলো আর বুনা হয়না, কেনো জানি মাঝ পথে এসে সুতো শেষ হয়ে যায়।

দেখো, নিজের কাছে এতোগুলো প্রতিভা রেখেও কাজে খাটাতে পারছি না। চোখের সামনে দেখতে লাগলাম আমাদের মতো মেধাবীরা অথৈই জলে তলিয়ে যাচ্ছে। ভার্সিটিতে ভর্তি হলাম পাশাপাশি একটা চাকুরি করি, নিজের খরচের জন্য। ভার্সিটিতে ক্লাসের সবথেকে ভালো ছাত্র ছিলাম। বুকে অদম্য সাহস আর বুকভরা আসাগুলো ছাড়লাম না। ভাবলাম, আমার মতো মেধাবীর স্বপ্ন পুরণ হবেই। এতোগুলো আসা নিয়ে ভার্সিটি শেষ করলাম। ভালো রেজেল্ট হলো, ভালো মেধাবীদের তালিকার একটা ইঞ্জিনিয়ার সার্টিফিকেটও হলো।

হাস্যকর, এতো কিছু থাকার পরও আমি আমার জীবনের অধ্যায়টা শূন্যই পেলাম। শূন্য করে দিলো এই সমাজ, এই দেশের মানুষগুলো। এখন একটা প্রাইভেট কোন্পানিতে জব করি। এটাও একটা হাস্যকর, কারণ আমার মতো মেধাবীদের সরকার বা ভালো কোন প্রতিষ্ঠান কেউ মূল্য দেয়না, এদেশে মানুষগুলো মূল্য দেয় শুধু তাদেরই যারা টাকা দিয়ে, ঘুষ দিয়ে, কোন রকম একটা সার্টিফিকেট চালিয়ে দিলেই ভালো ভালো চাকুরির আসনে যেয়ে বসতে পারে। কিন্তু আমরা মেধা দিয়ে সেটা অর্জন করতে পারিনা।

আমার তো অনেক প্রতিভা আছে, আমি কি না পারি বলো? কিন্তু আমাকে তাদের চোখে পরে না, তাদের চোখে পরে রঙিন টাকা। আজ যদি আমার ভাই কিংবা মামা খালু থাকতো তাহলে হয়তো একটা চাকুরি পেতাম। তাহলে আমার দোষ কি এটাই যে আমার মামা খুলু নেই? তারা প্রতিভা দিয়ে নয়, মামা-খালু দেখে আমার মেধার যাচাই করবে?

এখন করোনা মহামারিতে সবাই ভোগছে, আমিও। আমার মতো একজন মধ্যবিত্ত পরিবার না পারে কারো কাছে হাত পেতে চাইতে, না পারে রাস্তায় একটা টুপলি নিয়ে হাটতে। যে কোম্পানিতে জব করি সেই মালিক তো বুঝবে না আমার মতো একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের জালা কি। সারা মাস বেতনের আসা কষ্ট করি অথচয় বেতন না দিয়ে উল্টো চাকরি থেকে বাদ দেওয়ার হুমকি দেখায়। এদিকে বাড়িওয়ালারা বাসা বাড়ার জন্য চাপ দিতে থাকে, ওদিকে পরিবারের সবাই আশায় বসে থাকে, কবে বেতন পেয়ে তাদের পাঠাবো। বলতে পারো কলি আমরা কোথাও যাবো। এই করোনা মহামারিতে মালিক ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত মাত্র দুই বার বেতন দিয়েছে তাও আবার হাফ, না দিয়েছে দুই ঈদে কোন বোনাস না কোন বেতন। আমরা কিভাবে চলি বলতে পারো?



আর যারা সরকারি চাকুরি করে তারা প্রতিমাসে বাড়ি বাড়া পাচ্ছে, অফিসে না যেয়ে কাজে ফাকি দিয়ে ফুল বেতন বোনস পাচ্ছে, কত রকম এক্সটা বোনাস যে সরকার দিচ্ছে তার দশ ভাবে দুই ভাগও যদি আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের দিতো। তাহলে হয়তো আমার মতো মানুষের স্বপ্ন এই ভাবে ভেঙে যেতে পারতো না। জানো তো, আমরা না খুব কষ্টে আছি। আমাদের জীবনের সব শেষ করে দিয়েছে এই দেশের আমলারা।

আমাদের মতো মেধাবীরা পরে আছে এদেশের কোনায় কোনায়। তাদের গভির রাতের হাহাকার, গভির রাতে ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ার শব্দ কেউ পায় না। এদেশের সরকার মেধাবীদের কাজে না লাগিয়ে তাদের চিরতরে মুছে দেয় মেধাবী পৃষ্ঠা থেকে সেখানে বসায় অমেধাবীদের তালিকা।

জানো কলি, আমি ২২-৬-২০২০ তারিখ আমি প্রতিজ্ঞা করেছি, যে দেশের সরকার মেধাবীদের কোন মূল দেয় না সেই দেশে সরকারি চাকুরি আমি করবো না। আমি আর ট্রেই করবো না সরকারি চাকুরির জন্য। আমি অনেক সরকারি চাকুরিজীবিদের দেখেছি যাদের ভিতরে কোন ন্যায় নীতি নেই। বাংলাদেশের সরকার এই নীতিহীন মানুষদের বসিয়ে বসিয়ে তাদের পিছনে কোটি কোটি টাকা খরচ করছে। আর সেই জন্যই সরকারের প্রতিটি খাতে খাতে লাভ না বিষন ভাবে ক্ষতি হচ্ছে।

সরকার সাধারণ মানুষদের ঠকিয়ে সরকারি মানুষদের লাভবান করে দিচ্ছে। সরকার একটুও ভাবে না সাধারণ মানুষগুলো কিভাবে বেঁচে থাকে। উনার কি একটুও মনে হয়না? একটুও চিন্তা হয়না? যে সরকারি চাকুরিজীবিদের এতো এতো সুবিধা দিচ্ছি সাধারণ মানুষদের কাছ থেকে নিয়ে তাহলে ওদেরও তো বেচে থাকতে হবে। সরকারের এই নীতিটাই আমাকে থামিয়ে দেয়, এখানেই আমি থমকে দাড়িয়েছি। আমার শিক্ষার মেরুদন্ড ভেঙ্গে দিয়েছে সব নীতিহীন মানুষগুলোরা।







সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুলাই, ২০২০ বিকাল ৪:২২
৯টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×