somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছুটির দিনে হাল্কা রান্না

২৬ শে জুন, ২০১০ বিকাল ৩:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছুটির দিনে হাল্কা রান্না

আজ আমার ছুটির দিন। ভোররাত থেকে হাল্কা ধরণের বৃষ্টি হয়ে গেছে। আকাশটা এখনো মেঘলা। দিনটা নিঃসন্দেহে বেশ রোমান্টিক। বিশেষ করে কোন ছুটির দিন যদি এমন হয় তবে অন্যরকম ভাললাগায় মনটা ভরে যায়। ইতিমধ্যে সকালে এক পুরোনো বান্ধবী বউকে কল করেছে। বেশ রসিয়ে কথা হচ্ছিল দুজনে। আমি তখনো বিছানায়। ঘুম ভেঙ্গেছে অনেক আগেই। বউয়ের কথা শেষ হবার আগেই বললাম আমাকে একটু দাও, ওর সাথে কথা বলি। কথা হইলো তাহার সনে। তাকে এও জানালাম এখন আমার অফুরন্ত সময়- ইচ্ছে হলে যখন তখন বাসায় আসতে পারো। তুমিতো জানোই বউ কখন বাসায় থাকেনা। ওদিকে আমি না দেখেও বুঝতে পারলাম নিগারের নিটোল মুখে মিষ্টি লালিমা, কানে শুনলাম ঝর্ণা হাসির ফোয়ারা। সে জানালো সময় পেলেই আসবে- অপেক্ষায় থাকতে বললো। আমার কথা শেষ করে বউয়ের হাতে ফোন দিলাম। সে তার বান্ধবীকে অকপটে জানালো এমন কথা গত রাতে আমি নার্গিসকে বলেছি। কদিন আগে মিনুকেও বলেছি। বান্ধবীকে উপদেশ দিল ওর কথা বিশ্বাস করিসনা। সবাইকেই সে একই কথা বলে। প্রেমিক হিসেবে আমি নাকি মোটেও বিশ্বস্ত নই। কি সাংঘাতিক কথা! অগত্য কি আর করা! আমি ধরা খেয়ে গেলাম।

বউয়ের এমনিতে ছুটির দিন শুক্রবার। আজ কি কারণে যেন তার “অফ ডে” তাই কলেজে যেতে হবেনা। গতকাল বিকেলে আবার ঠিকা বুয়াটা আসেনি তাই রাতের খাবার বাড়ীর গেটের সামনের স্টার কাবাব থেকেই জুটিয়ে নিয়েছি। বুয়া প্রতিদিন বিকেলে এসে রান্না করে দিয়ে যায়। সেই রান্না সেদিন রাতে ও পরের দিন দুপুরে খেতে হয়। ছুটির দিনগুলোতে আগের মতো আর রান্না করিনা। বয়স হয়ে গেছে তাই হয়তো অতটা উৎসাহ পাইনা। বিছানা থেকে উঠে হাতমুখ ধুয়ে নাস্তা করলাম। তারপর একটু নেটে বসলাম। এমন সময় বউ এসে বললো আমি সব রেডি করে দিচ্ছি তুমি রান্না করবে নাকি? আমি বললাম করা যেতে পারে। তবে বেশী ঝামেলার রান্না করতে পারবোনা। অগত্যা দুজনে মিলে ঠিক করলাম আজ দুপুরের মেনু হবে- ভূনা খিচুড়ি, ইলিশ মাছ ভাজা আর ডিমের দোপেঁয়াজা। বউ খিচুড়ির জন্য চাল ডাল ধূয়ে দিল। ফ্রীজ থেকে ইলিশ মাছের গাদার অংশ বের করে ধূয়ে দিল। পেটির অংশটা আনারস-ইলিশের জন্য তুলে রাখা হলো। ফ্রীজ খুলে দেখলাম কিছুটা মুরগীর মাংশ আছে। সেটা বের করলাম। কাজের ছেলেটা পেঁয়াজ কেটে রেডি করে দিল। শুরু হলো আমার রান্নার পালা।

ইলিশ মাছের পিসগুলো সামান্য সর্ষের তেল, পরিমাণ মতো (আধা চা চামচ) লবন, হলুদ ও মরিচ গুড়া (আধা চা চামচ করে) দিয়ে মাখিয়ে রেখে দিলাম। এরপর ভূনা খিচুড়ি রান্না শুরু করলাম। সয়াবিন তেল ও বাটার (প্রায় দেড় কাপ) গরম হবার পর একে একে দারুচিনি, তেজপাতা, লবঙ্গ, এলাচ, পেয়াঁজ ও আদা-রসুন বাটা দিয়ে বেশ কিছুক্ষণ কষালাম। মশলা মিশ্রণ একটু লাল হতেই চাল ও ডালের মিশ্রণ (৪ কাপ পোলাওর চাল, ২.৫ কাপ ভাজা মুগ ডাল ও ১ কাপ মশুরের ডাল) হাঁড়িতে ঢেলে বেশ কিছুক্ষণ কষিয়ে নিলাম। এর পর আন্দাজ মতো গরম পানি (১৫ কাপের মতো) ঢেলে পরিমাণ মতো লবণ, ১ চামচ চিনি ও ১৫/২০ টা কাঁচা মরিচ দিয়ে আস্তে আঁচে ঢাকনা দিয়ে রাখলাম। পানি একটু কমে এলে চাল-ডালগুলো একটু উপর-নীচ করে নেড়ে দিয়ে আবার ঢাকনা দিয়ে দিলাম। এরপর পানি শুকিয়ে এলে একদম ঢিমে আঁচে খিচুড়ি চূলোর উপর রেখে কিছুক্ষণ পর নামিয়ে নিলাম। খিচুড়ি রান্না শেষ। এরপর ফ্রাই প্যানে এক কাপ পরিমাণ সয়াবিন ও সর্ষের তেল মিশিয়ে ইলিশ মাছগুলো ভেজে নিলাম। মাছ ভাজা শেষ হলে একটা ডিশে মাছগুলো সাজিয়ে নিলাম। তারপর মাছভাজা তেলে ১ কাপ পরিমাণ পেয়াঁজ কুচি ও ৪/৫টা কাঁচামরিচ হাল্কা ভেজে ভাজা মাছের উপর ছড়িয়ে দিলাম। এরপর একটা কড়াইয়ে তেল গরম করে তাতে সেদ্ধ ডিমগুলো একটু ভেজে নিলাম। সেই তেলে পেয়াঁজ কুচি ও কাঁচামরিচ হালকা ভেজে আগের রান্না করা মুরগীর মাংশটা ভাল করে কষিয়ে তাতে ডিমগুলো ছেড়ে দিলাম। ব্যস্ হয়ে গেল আমার ছুটির দিনের ঝটপট রান্না।

অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি আজকের এই রান্নার স্বাদ আপনাদের কারো সাথে শেয়ার করতে পারলাম না। তবে ছবিগুলো দিয়ে দিলাম। ছবি দেখে অনুমাণ করে নেবেন রান্নাটা কেমন হয়েছিল। সবাই ভাল থাকুন। ছুটির এই মেঘলা দিনটা সবার ভাল কাটুক।
৪৫টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তুই পাগল তোর বাপে পাগল

লিখেছেন আজব লিংকন, ১১ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



রাতে অর্ধেক কাউয়া ক্যাচাল দেইখ্যা হুর বইল্যা— মোবাইল ফোনের পাওয়ার বাটনে একটা চাপ দিয়া, স্ক্রিন লক কইরা, বিছানার কর্নারে মোবাইলটারে ছুইড়া রাখলাম।

ল্যাপটপের লিড তুইল্যা সার্ভারে প্রবেশ। বৃহস্পতিবারের রাইত... ...বাকিটুকু পড়ুন

যত দোষ নন্দ ঘোষ...

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১১ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৫:০১

"যত দোষ নন্দ ঘোষ"....

বাংলায় প্রচলিত প্রবাদগুলোর মধ্যে অন্যতম ‘যত দোষ নন্দ ঘোষ’। যে যত দোষ করুক না কেন, সব নন্দ ঘোষের ঘাড়েই যায়! এ প্রবাদের সহজ অর্থ হচ্ছে, দুর্বল মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আমাদের বাহাস আর লালনের গান

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১১ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৮:৪১


দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে হৈচৈ হচ্ছে, হৈচৈ হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে। একটা পক্ষ আগের সরকারের সময়ে হৈচৈ করত কিন্তু বর্তমানে চুপ। আরেকটা পক্ষ আগে চুপ ছিল এখন সরব। তৃতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ থাকে না কেউ থেকে যায়

লিখেছেন বরুণা, ১১ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:০৩


চমকে গেলাম হঠাৎ দেখে
বহুদিনের পরে,
নীল জানালার বদ্ধ কপাট
উঠলো হঠাৎ নড়ে।

খুঁজিস না তুই আর খুঁজিনা
আমিও তোকে আজ,
আমরা দু'জন দুই মেরুতে
নিয়ে হাজার কাজ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আরও একটি কবর খোঁড়া

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১১ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১০:০৪

গোরস্থানে গিয়ে দেখি
আরও একটি কবর খোঁড়া
নতুন কেউ আজ মরেছে
এমন করে বাড়ছে শুধু
কবরবাসী, পৃথিবী ছেড়ে যাবে সবাই
মালাকুল মওত ব্যস্ত সদাই
কখন যে আসে ঘরে
মৃত্যুর যে নেই ক্যালেন্ডার
যে কোন বয়সে আসতে পারে
মৃত্যুর ডাক,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×