নিরীহ পরগাছা
যারা আস্তিক্যবাদ-নাস্তিক্যবাদ-সংশয়বাদ-অজ্ঞেয়বাদসহ সকল প্রকার বাদানুবাদের বাইরে বিচরণ করেন; অর্থাৎ যারা নিজেদের ‘নিরীহ’ বলে দাবী করেন। এবং যাদের জীবনের কোন দার্শনিক ভাষ্য নেই। তারা মূলত মানব সমাজের পরগাছা__ পরের পাছায় নুন রেখে বরই খাওয়া এক ধূর্ত পরজীবী! এরা সমাজকে এগুতেও সাহায্য করেনা, আবার পিছুতেও সাহায্য করেনা। এরা চিরকালই সমাজের স্থিরাবস্থা ধরে রাখতে চায়; যদিও সমাজ ব্যাবস্থা নিয়ত পরিবর্তনশীল। এপ্রসঙ্গে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের কথা প্রণিধানযোগ্য__ স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আমাদের দেশের জনসংখ্যা ছিল প্রায় সাত কোটি। আমরা যদি শিশু-কিশোর-বৃদ্ধ-বৃদ্ধা-বিকলাঙ্গ ও রাজাকারের সংখ্যা বাবদ দুই কোটি বাদ দিয়ে হিসেব করি, তবে আরও থাকে পাঁচ কোটি। এই পাঁচ কোটি বাঙ্গালীর দশকোটি হাত যদি নির্ভীক ও ঐক্যবদ্ধ ভাবে স্বাধীনতার সপক্ষে কাজ করত, তবে স্বাধীনতার জন্য আমাদের দীর্ঘ ন’মাস অপেক্ষা করতে হতো না; অপচয় হতো না ত্রিশ লক্ষ প্রাণের। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর নিরীহ পরগাছাদের দল নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে কেবল নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছেন। এদের কারনেই আমাদের আমাদের স্বাধীনতা এতটা বিলম্বিত-কষ্টসাধ্য ও ব্যায়বহুল হয়েছে। বর্তমান সময়েও সমাজ প্রগতির এক বিরাট প্রতিবন্ধক হচ্ছে অ-বিশিষ্ট নিরীহ গোষ্ঠী। এরা তাদের স্বভাবধর্ম অনুযায়ী বরাবরই প্রতিক্রিয়াশীল ও পরিবর্তনবিমুখ। এরা জানতেও চায় না, জানাতেও চায় না। শুধুমাত্র পেট ও কাম সর্বস্ব পাশবিক জীবনাচারই ইহাদের একমাত্র ব্রত। ‘পাঁচেও নেই, প্যাঁচেও নেই’ এমন গনু মোল্লা টাইপের চরিত্র সমাজের জন্য উটকো উপদ্রপ; তদুপরি তারা সমাজ থেকে তাদের প্রয়োজনীয় উপযোগ সংগ্রহের মাধ্যমে সমাজের যথেচ্ছ ক্ষতিসাধন করে থাকেন। এইসব অকেজো-অহেতুক পরগাছা সমাজের জোয়ালে চাপালে, সমাজ ক্রমশ দুর্বল ভারবাহী গাধায় পরিনত হবে। তাছাড়া পরগাছা কখনই ভালো ফলনের সহায়ক হতে পারেনা। তাই একটি উর্বর সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এইসব পরগাছাদের সমাজ হতে স্ব-মূলে উৎখাত করা উচিত।
৩০-১২-২০১১ইং
বেলকম, সাউথ আফ্রিকা।