somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সানভী-৪

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৩:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"যুঁথি" দু' অক্ষরের এই ছোট্ট নামের ছোটখাটো মেয়েটার প্রতি মায়ায় জড়িয়ে যাচ্ছি আমি। অথচ ওকে যখন জিদের বশে বিয়ে করি তখনও ওর জন্য এক ফোটাও মায়া মমতা বা ভালোবাসা কাজ করেনি আমার ভেতরে। আমি তখন ভেতরে ভেতরে ক্রোধে ফুসছিলাম। তার মাঝেও মাথা ঠান্ডা রেখেছি আমি। খুব সাবধানে সযতনে জালে জড়িয়েছি ওকে। যুঁথি নামের ছোট খাটো মেয়েটার চোখে ভেলকী লাগাতে খুব একটা বেগ পে্তে হয়নি আমাকে।অথচ তার আগে তার আগে দুই দুইটা বছর নষ্ট হলো আমার মৌমিতার পিছে।

সত্যি বলতে আমার জীবনে আমি চাইলে বাগে আনতে পারিনি এমন মানুষের সংখ্যা বেশ কম। ছলে বলে ও কৌশলে আমি শেষ পর্যন্ত জয় নিশ্চিৎ করেই ছেড়েছি। কিছুতেই পিছু হঠিনি। কিন্তু মৌমিতা? তার জন্য পিছু হঠা শুধু নয় পুরোটা সময়ের ইনভেস্টমেন্টটাই নষ্ট হলো আমার। মৌমিতার কাছে এই পরাজয়ে আমি নিজের প্রতি সন্দিহান হয়ে পড়েছি। তবে কি আমার কুট কৌশল সকল রকম বুদ্ধিবৃত্তিক তৎপরতার কলা কৌশলগুলো ব্যর্থ হয়ে পড়ছে? আমি কি ইনেকটিভ হয়ে পড়ছি দিনে দিনে? অসহায় লাগতে থাকে আমার।

ঠিক যেমন অসহায় ছিলাম আমি স্কুলের দিনগুলোতে। বেতন নেই, টিফিন নেই, বন্ধু বান্ধবও এড়িয়ে চলে, টিচারদেরও অবজ্ঞার পাত্র যখন সেই মুহুর্তে ইমতিয়াজ।ঠিক সেই মুহুর্তে ইমতিয়াজের আগমন বদলে দিয়েছিলো আমার জীবনের ইতিহাসের পাতা। ওর সাথে সখ্যতার চাইতেও ওর বাড়ির সকল সদস্যের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলতে আমাকে বেশ ভালোই কাঁঠখড় পোড়াতে হয়েছিলো। ওর বাবা মায়ের নেক নজর বা আস্থা অর্জনের জন্যই যে ছিলো ওদের বাড়িতে আমার সুকৌশল অনুপ্রবেশ সেই কথা মনে হয় ঘুর্নাক্ষরেও ওর পরিবারের কেউই আজও ধরতে পারেনি। কিন্তু সুমী। আমার নিজের বোন হয়ে আমাকে দিবারা্ত্র দোষারোপ করে চলে, চিল্লাচিল্লি গালমন্দ কোনো কিছুই বাকী রাখে না সে। ইমতিয়াজের সাথে সুকৌশলে ওর বিয়ে দিয়ে দেওয়াটাও যে আমার স্বার্থ সিদ্ধির চাল সে সেটা যখনই বুঝেছিলো তখন থেকেই তার এই আচরনের শুরু আর তাই এই নিয়ে মাঝে মাঝে তুলকালাম কান্ড ঘটায় সে। সে তার অপমানিত জীবন নিয়ে থাকতে চায়না আর ও বাড়িতে।

বহু কষ্টে নিয়ন্ত্রন করি নিজেকে আমি। এত সহজে রেগে গেলে চলবে না আমাকে। ইমতিয়াজ মাই ফ্রেন্ড একই সাথে আমার বোনের স্বামীও। হ্যাঁ এই সম্পর্কটা গড়িয়ে দেবার পিছে আমার গোপন হাত সক্রিয় ছিলো। সে কথা ইমতিয়াজ না বুঝলেও সুমী বুঝে গেলো। হ্যাঁ ইমতিয়াজের সাথে এই সখ্যতা ও ওর পরিবারের সাথে সম্পর্ক পাকাপোক্ত করতে এর চাইতে আর কোনো সহজ উপায় আমার জানা ছিলো না। তাই আমি সুমীকেই সেই অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করি। তবুও যে কোনো উদ্দেশ্য প্রনোদিত নেতিবাচক ঘটনার ভবিষ্যৎ ভালো হয় না। আর তাই আমাকে ইমতিয়াজের পরিবারে যতই প্রয়োজনীয় মনে করা হোক না কেনো সুমীকে তারা অপাংতেয় মনে করে। সে যাইহোক সুমী কি পারেনা একটু মানিয়ে নিতে? এর চাইতে ভালো হাসব্যান্ড কি সাত জন্ম তপস্যা করেও পেত সে? নিজেকে কি মনে করে বুঝিনা আমি। আর এই নিয়েই বেশি বাড়াবাড়ি করলে সুমীকেও এই পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে আমার কোনো আক্ষেপ থাকবে না।

এই কঠিন পৃথিবীর কঠোরতা আমাকে শিখিয়েছে মায়া মমতা বা রক্তের সম্পর্কগুলোরও আসলে কোনো দাম নেই। সকল সম্পর্ক সকল অনুভূতি শুধুই অর্থ এবং স্বার্থের সাথেই জড়িত। সেই কঠোর কঠিন মানুষটি কি আমি যুঁথির মায়ায় জড়িয়ে যাচ্ছি? অথচ যুঁথিকে আমি ভালোবেসে বিয়ে করিনি। এই বিয়ের পিছে আমার এক অকারণ জিদ কাজ করেছিলো। বলতে গেলে বোকার মত জিদ। জিদটার কারণ ছিলো মৌমিতা। মৌমিতার উপর ক্ষেপে গিয়েই ওমন হুট করে বিয়ে করেছিলাম আমি যুঁথিকে। যুঁথি সে কথা জানে না।

তবে যুঁথিকে বিয়ে করে মনে হয়েছিলো খুব একটা ভুল করিনি আমি। যুঁথি মৌমিতার মত কৌশলী এবং হিসাবী কিংবা ধনী বাবার সন্তান না হলেও বুদ্ধিমতী এক মিষ্টি মেয়ে। সে তার আপ্রাণ চেষ্টায় সংসারটাকে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছিলো। ওর ভালোবাসায় কোনো খাঁদও নেই। সে আমি এবং আমার পরিবার তার কুটকচালি শ্বাশুড়ি তথা আমার মাকেও সন্তুষ্ট রাখতে হেন কিছু নেই যে করেনি। কিন্তু পারলো না। এত কিছুর পরেও এই না পারার পিছে আসলেও যুঁথির কোনো দোষ ছিলো না। দোষ থাকলে তা ছিলো তা আমার নিজের আর সাথে আমার অর্থলোভী স্বার্থপর মায়ের। হুট করে যুঁথিকে বিয়ে করে আনাটা মা মেনে নিতে পারেনি। এবং সোনার ডিম পাড়া রাজহাস ভেবে যুঁথিকে প্রথম দিকে একটু আস্কারা দিলেও পরে যখন জেনেছে যুঁথি কোনো সোনার ডিমপাড়া রাজহাঁস নয়। অতি সাধারণ আর দশটা ঘরের মেয়েদের মতই অতি সাধারণ। মা তখনই খেপে উঠেলো।

আমার অর্থের দাবীদার তারা ছাড়াও যে আরেকজন চলে আসলো ব্যপারটা মা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেনি। আমার ধারনা মা তার সন্তানকে চায়নি। সন্তানের পরিবার চায়নি। সন্তানের সুখ শান্তিও তার কাম্য ছিলো না। মা চেয়েছিলেন টাকা কামাবার একটা মেশিন। এই মেশিনটা টাকা কোথা থেকে উপার্জন করছে না করছে, কিভাবে তার দিন কাটছে না কাটছে কিছুই দেখার দরকার ছিলো না তার। আমার টাকা এই শান শোওকৎ কোথা থেকে আসে, কি উপায়ে কেমন আছে ছেলেটা তা দেখার কোনো দরকারই ছিলোনা তার। শুধু যুঁথিকে আনাটাই মা একদম মেনে নিতে পারলো না। কারণে অকারনে লেগে যায় তার সাথে। যুঁথির সাথে আমার খারাপ সম্পর্কের পিছে আমার মায়ের ভূমিকাও কম নয়।

আমি জানি যুঁথির যদি মৌমিতার মত অঢেল টাকা থাকতো। যুঁথি যদি আমার উপর ডিপেন্ডেন্ট না হত তবে মায়ের এই চেহারা পাল্টে যেত। মায়ের কাছে যুঁথির দোষ যুঁথির বাবা মায়ের অঢেল টাকা নেই যা দিয়ে জামাইকে যৌতুক দিয়ে ভরিয়ে দিতে পারে। যুঁথি আসলে আমার এবং মায়ের চোখে একজন ভুল পুত্রবঁধু। কিন্তু সত্যিই কি তাই? যুঁথিকে আমি ভালোবেসে বিয়ে করিনি বটে সে ছিলো মৌমিতার সাথে অকারণ জিদের বশবর্তী হয়ে খুব দ্রুত যুঁথিকে বিয়ে করে ফেলা আমার নিজের সিদ্ধান্ত। তবুও যুঁথি আসলে স্ত্রী হিসাবে ১০০ নম্বর পাবারই যোগ্য। নাহ আমি মনে হয় সত্যিই যুঁথিকেই ভালোবেসে ফেলেছি। নইলে এত কিছুর পরেও আমি কেনো তাকে কোনো রকম দোষই দিতে পারছি না!
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৩:০৫
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×