somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমরা সকাল ১০টায় চোখ মেলেই কল করি হ্যালো তুমি কোথায়? কখন আসছো?

১০ ই মে, ২০০৯ রাত ১০:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গতকয়েকদিন পূর্বে এই ব্লগে একটি সাপ্তাহিকে মা দিবসের বিশেষ আয়োজনের কথা জানিয়ে লেখা আহবান করেছিলাম সেই পত্রিকারটির বার্তা সম্পাদকের অনুরোধে। তিনি এই বিশেষ সংখ্যা সম্পাদনার দায়িত্বটি আমার উপর দিলেন। আমি সেই বিজ্ঞাপনের পর অসম্ভব ভালো লেখা পেয়েছি। এবং সবচেয়ে ভালো লেগেছে দেশের বাইরে থেকেও মাকে ভালোবেসে লেখা পাঠানো হয়েছে।
আজ সেই সংখ্যাটির একটি কপি আমার মায়ের হাতে তুলে দিয়ে বললাম এই যে দুটি পত্রিকায় আমার লেখা ছেপেছে। আর এই বাকিসবটুকু আমার সম্পাদনা। এমন সময় ছোটবোন আমাকে বললো ভাইয়া আম্মার গিফট কই। আমি বললাম স্যরি। আরেকদিন এনে দিব। এমন সময় মা আমার হাসি দিয়ে বললেন আমার ছেলে আমাকে নিয়ে পত্রিকায় লিখেছে। এর চাইতে বড় গিফট আমার কাছে আর কিছুই হতে পারেনা। আমিও সত্যিই যেন খুশীতে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়লাম। আর সারা দিনে অসংখ্য ফোন পেয়েছি শুধু লেখাটির কারণে। বেশ কিছুদিন আগে এক রাতে আমার প্রিয় মাকে ভালোবেসে একটি ফিচার লিখার চেষ্টা করছিলাম। আর সেই থেকে এই ফিচারটি তৈরী। পুরো ফিচারের অংশবিশেষ.......।


জীবন বহতা নদী, এর বাঁকে বাঁকে এমন কিছু স্মৃতির অভ্যুদয় ঘটে যেগুলো উত্তরকালে আমাদের Nostalgic করে তোলে। লেখালেখির একটা প্রবনতা আমাকে আন্দোলিত করলো। কি বিষয়ে লিখব তা নির্ধারণ করাটা অনেক সহজ থেকে কঠিন হয়ে গেলো। রাত নিঝুম হলে যখন লিখতে বসি তখন প্রতি পাঁচ মিনিট পর একটি করে কাগজ আমার ওয়েষ্ট পেপার বাস্কেটে নিক্ষিপ্ত হচ্ছে। অনেক চিন্তার পর পথ ঘেটে অবশেষে আমার দূরন্ত ঘোড়ার মত মস্তিস্ক থমকে গেল মায়ের সোহাগ মাখা শাসনের ডাকে- এখনও ঘুমোসনি, রাত অনেক হল, ঘুমিয়ে পড়। আমার চিন্তার আকাশে যেন এক ঝলক মিষ্টি রোদ হাসি দিয়ে উঠলো। পরম শ্রদ্ধাভরে তখন মায়ের প্রতি উত্তরে জবাব দিলাম- ঘুমোচ্ছি মা, আর একটু।

মা। ছোট্ট এই শব্দটির এত ক্ষমতা আছে যা সুপার পাওয়ারদের পারমানবিক বোমায়ও নেই। পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের সবচেয়ে মধুর শব্দ মা। হৃদয়ের গভীর থেকে উচ্চারিত হয় মধুর আমার মায়ের হাসি/ চাঁদের মুখে ঝরে. . . । এক অনাবিল ভালোবাসায় জড়িয়ে রেখেছেন আমাকে আমার মা। মা' যেদিন পৃথিবীর হাজারো আয়োজনের মাঝে নিজের অস্তিত্ব অনুভব করেছি, সেদিন থেকেই তুমি আমার অবিচ্ছেদ্য স্বত্তায় জড়িয়ে আছো। কবির ভাষায়- 'অনেক কথার গুঞ্জন শুনি/ অনেক গানের সুর/ সবচেয়ে ভালো লাগে/ যে আমার মাগো ডাক সুমধুর।'
পুষ্প ফুটতে হলে যেমন পরাগের ডানা মেলতে হয়। তুমি ছাড়া আমার প্রস্ফুটিত হওয়া অসম্ভব তেমনই। মা, তোমার শাসন ছাড়া এই পৃথিবীতে আমার বেঁচে থাকা হবে সাফল্যহীন; সাদা-কালো সব কর্ম হবে নিস্ফল। ক্যানভাসে আল্পনা আকতে যেমন রংতুলির প্রয়োজন। তেমনি ধরনীর কণ্টকময় পথে দীপ্ততার সাথে পদচারনার জন্য প্রয়োজন তোমার প্রফুল্ল পরশ। মালীর যত্ন ছাড়া যেমন ফুটতে পারেনা সুন্দর ফুল। তেমনই দশ দিগন্তের পথে অবিরাম ছুটতে প্রয়োজন তোমাকে- হে প্রিয় মা।
ডায়রীতে অনেক সুন্দর কথার মাঝে কম শব্দের একটি কথা আমি গভীরভাবে উপলব্দি করি- যে ঘরে শিক্ষিত মা থাকে সে ঘর সভ্যতা আর মানবতার বিশ্ববিদ্যালয়। হ্যাঁ, আমার মা আমার পৃথিবী। আমার মা বিশাল ছায়া রোদ বৃষ্টিতে। মায়ের প্রতি আমরা সকলে সুবিচার করছি কি? না! দিনে ১২ ঘন্টায় ১২বার ফোন করে প্রেমিক প্রেমিকার খোজ নেই কেমন আছো? কিন্তু মাকে কতবার ফোন করি? রাতে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলে কত টাকা যে ফেক্সি লোড ও আইটপের বিল দিই কখনো কি ঘরে ফিরতে মায়ের প্রিয় খাবার বা প্রিয় বস্তুটি কিনে আনি? সুবহে সাদিকে জায়নামাজে বসে চোখ ভিজিয়ে পরম প্রভুর দরবারে মায়ের একটাই প্রার্থনা- আমার সন্তানকে তুমি সুস্থ রাখো হে প্রভু। সকল ভালো কাজে তুমি তাকে সফলতা দান কর. . . । আর আমরা সকাল ১০টায় চোখ মেলেই কল করি হ্যালো তুমি কোথায়? কখন আসছো?
পৃথিবীতে একজন মানুষের সবচেয়ে বড় শুভাকাঙ্খী তার মা। জাহাজডুবীর পর সমুদ্রের উত্তাল স্রোতে মা তার ছোট্ট কলিজার টুকরো মানিককে এক হাতে উপরে উঠিয়ে রাখার দৃষ্টান্তও আমাদের সভ্যতার ইতিহাসকে আলোড়িত করেছে। মৃত্যুর দুয়ারে দাঁড়িয়ে মা তার সন্তানকে বাঁচানোর জন্য নিজের জীবন বাজি রাখার যে দূর্লভ সাহস দেখান তা পৃথিবীর অন্য কোন পরমাত্মীয় পারবেন কিনা সন্দেহ। ...............


আর লেখাটির পর আমার উপলব্দি হল আমরা মায়ের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করছি হৃদয়ের গভীর থেকে কারণ আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় আমার মা আমাকে আদর শাসনের বাহুডোরে বেধে আমাকে বড় করেছেন। কিন্তু যাদের মা তাদেরকে সেই শৈশব থেকে ট্রলিতে করে ফিডার খাইয়ে বড় করেছেন আর আঠারো বছর পর মা থেকে তারা বিচ্ছিন্ন জীবন যাপন করছে। এবং বৃদ্ধ বয়সে সেইসব মায়েদের জীবন অধিকাংশের কাটছে বৃদ্ধাশ্রমে। সেই অসহায় মায়েদের প্রতি সন্তানদের ভালোবাসা সৃষ্টি করতেই মূলত মা দিবসের সূচনা। আর মা দিবস শুধু একদিনের জন্য মাকে ভালোবাসার দাবী নিয়ে আসেনি। মা দিবস যদি মায়ের প্রতি ভক্তি আর ভালোবাসা সৃষ্টি করতে আমাদের অনুভুতি তৈরীর জন্য সাহায্য করে তবেই এই দিবসের স্বার্থকতা। সত্যিই আমরা দিবসের জন্য মা'কে ভালোবাসবো না মাকে ভালোবাসবো প্রতিদিন প্রতিটি সময়।
আজ সারাদিন যেসব ফোন এসেছিল তার অধিকাংশই ছিল কি প্রেমিকার সাথে রাতে কতক্ষণ কথা হয়। আমি হেসে বললাম রাত কে রাতের মর্যাদা দেওনা বলেই তো তোমার কন্ঠ ভারী আর আয়নায় দেখো তোমার চোখ ফোলা।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মে, ২০০৯ রাত ১০:৪২
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×