
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ছিল বাঙালি জাতির অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম। লাখো শহীদের রক্ত, মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে পাওয়া এই স্বাধীনতা একদিনে আসেনি। কিন্তু ভয়াবহ ব্যাপার হলো, এখনো যখন কেউ বলে “পরাজিত শক্তির লোকেরা তো আমাদের দেশেরই নাগরিক”, তখন সেই কথার পেছনে একটা নরম মনোভাব, একটা মাফ করে দেওয়ার প্রবণতা, আর একটা আত্মঘাতী উদারতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
নাগরিক বললেই কি সব দায় শেষ?
না। নাগরিকত্ব একটি আইনি পরিচয়, কিন্তু সেটাই কি কাউকে আমাদের হৃদয়ের অংশ করে তোলে? যারা ’৭১-এ এই দেশকে অস্বীকার করেছে, পাক হানাদারদের দোসর ছিল, যারা রাজাকার-আলবদর হয়ে এই মাটির মানুষকে হত্যা করেছে তাদের কীভাবে আমরা “আমাদেরই” বলতে পারি? এটা কি শহীদের আত্মত্যাগকে অপমান নয়?
তারা যদি সত্যিকার অর্থে নিজেদের ভুল বুঝতো, জাতির কাছে ক্ষমা চাইতো, তাহলে হয়তো কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবতা হলো, তারা এখনো সক্রিয়। ক্ষমতার পালাবদলে তারা মাথা তোলে, শিক্ষা-সংস্কৃতির ভিতরে গর্ত খোঁড়ে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করে।
ইতিহাস ভুললে বারবার ঠকতে হয়
যারা ’৭১-এ এই দেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ছিল, তারা এখনো সুযোগ পেলেই “দুই পক্ষের দোষ”, “গৃহযুদ্ধ”, “রাজনৈতিক মতপার্থক্য” ইত্যাদি বুলি আউড়ায়। তাদের কাছে মুক্তিযুদ্ধ শুধু “রাজনৈতিক উত্তেজনা”, আর শহীদের রক্ত শুধু “একটা অতীত অধ্যায়”। এদের মানসিকতা যদি নাগরিক বলেই মেনে নিই, তাহলে একদিন দেখা যাবে ইতিহাসের খুনিরাই নায়ক সাজবে।
নাগরিকত্ব নয়, আদর্শই আসল পরিচয়
জাতি হিসেবে আমাদের আরেকটু স্পষ্ট হওয়া দরকার—স্রেফ জন্মসূত্রে কেউ বাঙালি হলে, তাতে সে দেশের বন্ধু হয়ে ওঠে না। যদি সে এই দেশের অস্তিত্বে বিশ্বাস না করে, যদি সে ’৭১-কে “ভুল সিদ্ধান্ত” বলে, তবে তাকে আমাদের নাগরিক বলাও ভুল। এই দেশে থাকতে হলে দেশকে ভালোবাসতে হব, এই দেশের ইতিহাস কে শ্রদ্ধা করতে হবে । না হলে এ দেশ তার নয় কোনভাবেই না।
দয়া নয়, বিচারের দাবি
শহীদদের আত্মত্যাগ ভুলে গিয়ে কোনো পরাজিত শক্তিকে নাগরিক বলে আদর করলে ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না। মানবাধিকার, গণতন্ত্র — সবকিছুর আগে আছে ন্যায়বিচার। যারা এই দেশের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলেছিল, তাদের বিচারই একমাত্র পথ, দয়া নয়।
৭১-এর পরাজিত শক্তি “আমাদের দেশেরই নাগরিক” এই কথাটা যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের উদ্দেশ্য ও অবস্থান না বুঝে বলা হয়, ততক্ষণ আমরা নিজেরাই আমাদের ভবিষ্যতের শত্রু তৈরি করে যাব। দেশপ্রেমের নামে হঠাৎ উদারতা আসলে আত্মঘাতী। সময় এসেছে দ্বিধাহীনভাবে সত্য বলার।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুলাই, ২০২৫ সকাল ১১:৩৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




