
২০শ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে মানব সভ্যতা এক ভয়ানক শক্তির মুখোমুখি হয় পারমাণবিক শক্তি। এটি একদিকে নতুন বৈজ্ঞানিক চমক ও সম্ভাবনা নিয়ে এসেছিল, কিন্তু অন্যদিকে বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞের সূচনা করেছিল। হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহরের নাম যেমন বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিত, তেমনই পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষার গোপন কাহিনীগুলো আজও অনেকের অজানা।
ট্রিনিটি টেস্ট: গোপনে পরিচালিত প্রলয়ঙ্করী বিস্ফোরণ
১৯৪৫ সালের ১৬ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকোর মরুভূমিতে প্রথমবারের মতো ট্রিনিটি টেস্ট নামে একটি পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। ওই সময় সেখানে কাছাকাছি ক্যাম্পিং করছিল একদল কিশোরী, যার মধ্যে ছিল বারবারা কেন্ট নামে এক মেয়ে। তারা জানত না, মাত্র কয়েক মাইল দূরেই ইতিহাসের প্রথম পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটেছে।
বিস্ফোরণের পর আকাশে একটি জ্বলজ্বল করা বিশাল সাদা মেঘের কলস দেখা যায় এবং আকাশ থেকে সাদা কণার মতো ছাই পড়তে শুরু করে। এই ছাইকে তারা তুষার ভাবতে ভুল করেছিল, মুখেও মাখে, আনন্দে খেলা করে। কিন্তু বাস্তবে সেটা ছিল পারমাণবিক বিকিরণসহ তেজস্ক্রিয় ছাই, যা তাদের শরীরে গভীর ক্ষতি ঘটায়। বারবারা কেন্ট ও তার বন্ধুরা পরবর্তীতে দীর্ঘদিন ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে জীবন হারায়। এই কিশোরীদের করুণ পরিণতি মানবতার জন্য এক গভীর বেদনার দৃষ্টান্ত।
পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা ও আদিবাসীদের ওপর এর প্রভাব
পারমাণবিক বোমার ভয়াবহতা শুধুমাত্র ম্যানহাটন প্রকল্প বা জাপানের হামলাতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে, বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়ার মারালিঙ্গা অঞ্চলে পারমাণবিক পরীক্ষা চালানো হয়। সেখানে আদিবাসী সম্প্রদায়ের হাজার হাজার মানুষ পারমাণবিক বিকিরণের কারণে ক্যান্সার ও অন্যান্য মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হন, বহু মানুষের জীবন শেষ হয়। ফ্রান্সও আফ্রিকার বিভিন্ন উপনিবেশিক অঞ্চলে পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা পরিচালনা করে। আফ্রিকার নিরীহ জনগণ বহুবার এই বোমার ক্ষতিকর প্রভাবের শিকার হয়, যার কারণে স্থানীয় মানুষের মধ্যে ক্যান্সারের মতো রোগ ছড়িয়ে পড়ে এবং প্রজন্মে প্রজন্মে ধকল তৈরি হয়।
পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষার গোপন বিপর্যয় ও মানবাধিকার লঙ্ঘন
পারমাণবিক পরীক্ষার সময় সাধারণ জনগণকে কোনো রকম সতর্কতা বা নিরাপদ স্থানান্তরের ব্যবস্থা দেওয়া হত না। হাজার হাজার নিরীহ মানুষ পারমাণবিক বিকিরণের প্রভাবের মধ্যে পড়ে, যা দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা ও মৃত্যুর কারণ হয়। এই ভয়াবহ পরীক্ষাগুলোকে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও আতঙ্ক সৃষ্টির হাতিয়ার হিসেবে গোপনে চালানো হয়েছিল, কিন্তু এর মানবিক মূল্যায়ন সর্বদা অনুপস্থিত ছিল। পশ্চিমা শক্তিগুলো আজও এই বিষয়ে যথেষ্ট স্বচ্ছতা দেয়নি বা তাদের ভূমিকা সম্পর্কে সঠিক ক্ষমাপ্রার্থনা করেনি।
পারমাণবিক শক্তি ও ভবিষ্যতের দায়িত্ব
পারমাণবিক শক্তি পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র, যা যুদ্ধের ছড়িয়ে দেওয়া ধ্বংসের পাশাপাশি নিরীহ মানুষের জীবন নাশের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। তাই পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার ও নিয়ন্ত্রণ আজকের বিশ্বে এক জরুরি দাবি।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই আগস্ট, ২০২৫ দুপুর ১২:৩০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


