somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি কবিতার স্মৃতি

০৫ ই মে, ২০১১ দুপুর ১২:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটি কবিতার স্মৃতি
মোশতাক আহমদ

চোখ রেখেছি তোমার চোখে
তুমি আমার অনেক কিছু
(অমিত চৌধুরী, তুমি আমার অনেক কিছু, চোখ রেখেছি তোমার চোখে)

আশৈশব কাতরতা ছিল রঙের প্রতি, অথচ পরিধেয় ছিল সাদা-কালো কিংবা ধুসর। কবি ছিলাম তো, স্ববিরোধ আর কোমল বিদ্রোহের বীজ ছিল অন্তর্গত স্বভাবে। আমাদের তারুন্যে কতইনা রঙ ছিল ক্যাম্পাসে! গান ছিল, কবিতা ছিল, ক্রিকেট ছিল, ব্যাডমিন্টন ছিল, ক্যান্টিন ছিল, মোজাম্মেল চত্বর ছিল; সমান্তরালে ছিল অসুখের মিছিল আর লাশ কাটা ঘর। আমরা আমাদের জগৎটাকে রঙিন রাখতে সচেষ্ট থাকতাম। প্রতি বছর সাংস্কৃতিক সপ্তাহে বছরের সব রঙের কুঁড়িগুলো একসাথে ফুটে উঠতো যেনবা। আমরা বিতর্ক সঙ্গীত নৃত্য দেয়ালিকা ইত্যাদির সাথে একক-দ্বৈত-বৃন্দ আবৃত্তির প্রতিযোগিতা করতাম। তিতাস আর দিশা আপা বনাম নাসরিন আপা আর আমি দ্বৈত আবৃত্তির প্রতিপক্ষ হতাম। একবার আমরা প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘নীলকন্ঠ’ কবিতার ‘হেই ডি হাই ডি হাই!’ এর হাওয়াই দ্বীপের মোহিনী মূর্চ্ছনায় দর্শক ধন্য হলেও হেরে গেলাম শাহাদুজ্জামান ভাইদের বিচারে। পরের বার (নব্বই এর উত্তাল দিনগুলোর মুখোমুখি, উৎসবের শ্লোগান হলো ‘আমরা আবহমান ধ্বংসে ও নির্মানে’) কণ্ঠে নিলাম ‘রাতের চাদর দিয়ে ঢেকে দাও আলোর কফিন’ (নোটনের জন্য শোক, খোন্দকার আশরাফ হোসেন)। তিতাস- দিশা এবারে নিয়ে এলো ‘চোখ রেখেছি তোমার চোখে’ অমিত চৌধুরী বই; ছিল ফয়সলের সংগ্রহে। কে হারলো কে জিতলো তা বলার চেয়ে জরুরী হচ্ছে, সেই কবিতা নব্বই এর উত্তাল সময়ের বিপরীতে সবাইকে জয় করে নিল। নাকি ‘এখন একটু চোখে চোখ রাখো/দিনগুলো ভারি দামালো’র (শঙখ ঘোষ) নব্বই-সংস্করণ খুঁজে নিয়েছিল সবাই! আসলে, আমাদের হৃদয়গুলো কোমল-পেলব ছিল, মিছিল-শ্লোগানে চাপা-পড়া নিজেদের অনেক কথাই ওই কবিতায় খুঁজে পেতাম।

এখন বন্ধু বান্ধবীরা অধিকাংশই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে নানা মহাদেশে। আমি এই বাংলায় রয়ে গেছি, বহু ক্রোশ ঘুরে ফিরে শেষে সমুদ্র-সারস। তিতাস মাহমুদ বন্দরে বন্দরে ধাক্কা খেয়ে এখন আমেরিকায় ডাক্তারি করে। এখনো পহেলা বৈশাখে মায়ের কাছে ফেরার আকুতিভরা পংক্তিমালা আবৃত্তি করে- ইউটিউবে পাঠালো সেদিন সবাইকে। দিশা আলী এখন ইথিওপিয়ার জনস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করেন। নাসরিন কাদেরও বিদেশ-বিভূঁয়ে, মানুষের মানসিক ব্যাধির নিদান দিয়ে থাকেন। এখনো ওরা আমার নতুন কবিতা নিয়ে আগ্রহ দেখান। এখনও, এই একুশ বছর পরেও, আমরা সেই অমিত-লাবন্যভরা হীরের টুকরো কবিতাটির স্মৃতিচারণ করি ফেসবুকে। ক্যাম্পাস-কাঁপানো স্মৃতিজ কবিতা এখন ফেসবুকের নীলাভ পৃষ্ঠায়। সেই কাব্যগ্রন্থের গর্বিত মালিক (বইটা অবশ্য জনগণের সম্পত্তি হয়ে গিয়েছিল) ফয়সলকে কি লন্ডন শহরের বিশ্রী বৃষ্টির দিনে কবিতাটির স্মৃতি হঠাৎ এক পশলা দোলা দিয়ে যায়?

একুশ বছর পর, আমার সৌভাগ্য, কবিকে পেয়ে গেলাম হঠাৎ করেই, ব্যস্ত কোলাহলে দরিয়ানগরের ঘর্মাক্ত চা-খানায়। দেখলাম, ‘মূল্যায়ন’ আজও বের হচ্ছে। কুড়ি বছর আগে আমার ‘বালিকার উৎসব’ ছাপা হয়ে আমাকে একদিন উৎসবের উপলক্ষ এনে দিয়েছিল পত্রিকাটি। আজ মেঘনা চাইতেই জল ! কবির সাথে ক.বি.র পরিণয় কাহিনীও জানা হলো। সেই রোমান্টিক কবির আজ বয়স হয়েছে। সে জন্যেই কি তিনি রোমান্টিকতা বিসর্জন দিলেন? - না। এই বয়সে কবিদের পৃথিবী নানা রঙের স্বর্গভূমি হয়ে ওঠে। আমার জননী-জন্মভূমি-স্বর্গাদপী-গরিয়সী কবিকে সে সুযোগ দেয় নাই। কবিকে কেন আজ ‘ধোঁকাবাজ-ধোঁকারাজ’দের শ্রাদ্ধ করতে হচ্ছে? - আমি জেনেছি। কিন্তু আমার মহাদেশে মহাদেশে ছড়িয়ে থাকা ক্যাম্পাসের বন্ধুরা না জানুক; ওরা ‘তুমি আমার অনেক কিছু’র স্মৃতি চর্চায় সুখী থাকুক। আমরা যারা এ দেশে রয়ে গেছি, তারাই না হয় দেখবো কবিকে অকাব্য-অসুরের আগ্রাসনের শিকার হতে; এটাই কি নিয়তি! দেশ মাতৃকার কাছে কবির জীবন আরেকটু নিরাপত্তা পাবার অধিকার কি রাখে না?

আজ আমি অনেক স্ববিরোধিতা কাটিয়ে, অনেক বিদ্রোহের উপলক্ষ পাশ কাটাতেও শিখেছি (!!)। রঙের বিকল্পে এখন আর ধুসরতা খুঁজিনা। সে নীল হলে নীল, লাল হলে লাল.....

৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×