somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিশেষ দ্রষ্টব্য :: মোশতাক আহমদ

০৩ রা অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ১:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[কয়েকটি চিঠির সাহায্যে একটি গল্প বলার চেষ্টা করেছি এখানে। প্রথম আর শেষ চিঠির মধ্যে সময়ের দুরত্ব দু’বছর। অনেক চিঠিই গ্রন্থিত করা সম্ভব হলো না, আয়তনের সীমারেখার কারণে। তারিখ ও স্থানের কোনো উল্লেখ রাখা হয়নি বাহুল্য মনে করেই। তবে তাতে করে গল্পের ধারাবাহিকতার বিশেষ ক্ষতি হয়নি। আর একটি কথা, গল্পের দুজন ব্যক্তি-ই কল্পনা প্রসুত।- মোশতাক আহমদ, ১৯৯১]
....................................
রজ্জুরণে কেটেছে সময়
কল্যাণীয়াসু
এই মুহূর্তটি যে খুব শিগগির আসবে, তোমাকে লিখতে বসতে হবে, তা জানা হয়ে গিয়েছিল কিছুকাল আগেই। মনের প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু লিখতে আমি বড় বিব্রত বোধ করছি। মনে হয়, তোমার সাথে প্রথম দূরভাষ- কথোপকথন শুরু হবার সময়েই লেখার অভ্যাস করা উচিৎ ছিল। কিন্তু কি করবো বলো, সেই বিব্রত বোধ আর দ্বিধা। তখনই লেখা উচিৎ ছিল এই জন্য বলছি, তখনও তোমার সাথে আমার দেখা হয়নি; বড় কথা, আমাদের পরিচয় গাঢ় হয়নি, অবলীলায় যা খুশি লিখে ফেলতে পারতাম। কিন্তু এখন বড় সংকট: সাদা কাগজটি খুলে যখন টেবিলে বসলাম, কাগজ জুড়ে তোমার প্রচ্ছন্ন একটা মুখ দেখতে পেলাম । সত্যি কবুল করতে দ্বিধা নেই, একধরণের পরীক্ষার হল-মার্কা অনুভূতি হলো আমার। এই মুহূর্তে দ্বিধাটা সরে গেছে কথাটা লিখে ফেলতে পেরে। এখন মনে হয় অনেক কথাই লিখে ফেলা যায়। এমন একটি সময়ে তোমার সাথে দেখা হয়েছে যখন আমার প্রায় সবকিছু খোয়া যেতে বসেছে। খোয়াতে খোয়াতে এতদূর এসছি যে আয়নায় দাঁড়ালে নক্ষত্রের ছাই ভষ্ম ঝরে পড়া দেখতে পাই। ছাই, শুধু ছাই। আর কিছু নয়। ছাই চাপা আগুণ বলেও যে কিছু থাকতে পারে সে ধারণাও গেছে মুছে। এমন সময়ে তুমি এসে টানতে শুরু করলে জীবনের দিকে। জীবন আর জীবনহীনতার, আশা আর নৈরাশ্যের, আনন্দ আর বেদনার, নেই আর আছে-র সে কী তুমুল টাগ অব ওয়র শুরু হয়ে গেল। সেয়ানে সেয়ানে। দূর থেকে ওদের খেলা দেখি আর তোমার সংক্রামক হাসি ফুটে উঠতে দেখি অবিশ্বাসী মুখে আমার।
তাড়াতাড়ি লিখো। ইতি।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: আমার নামটা লিখলাম না। কারণ তুমি বুঝতেই পারছো চিঠিটা আর কারো নয়।
..........................................
ঘুম টুটেছে
শ্রদ্ধেয় রানা ডাকাত,
আমার সালাম রইল। আপনার চিঠির তলায় ‘বি.দ্র.’ বস্তুটি আমাকে এই বিদ্রুপাত্মক সম্বোধনটি তৈরী করতে প্ররোচনা দিয়েছে। কিন্তু আপনাকে যে হেয় করার ইচ্ছে বিন্দুমাত্র নেই, তা আশা করি বুঝতে পারছেন ‘শ্রদ্ধেয়’ শব্দটির ব্যবহারে। রানা ডাকাতের বেনামী চিঠির মতো আপনার চিঠিটি যখন পেলাম, আমি আমার বেড়ালের পিচ্ছিটাকে নিয়ে দিবানিদ্রার চেস্টা করছিলাম। চিঠিটা পড়ে আপনার ভাষার চোটে ঘুমটুম উড়ে গেল। তিনবার পড়ে বোঝা গেল আসলে কি লিখেছেন। আমাকে কিন্তু বিপদে ফেলে দিলেন। আমাকেও ভাষার খেলা খেলতে হবে এখন থেকে। আজ আর কিছু ভেবে লিখতে পারছি না। লেখার অভ্যাস কম। কাল একটা পরীক্ষাও আছে। এখন রাখছি। ভালো থাকুন। ইতি।
বিশেষ দ্রষ্টব্য : আমিও নাম লিখলাম না কিন্তু।
......................
বিন্দুর ভেতর
শ্রদ্ধেয়া বিশেষ দ্রষ্টব্য,
আপনার পত্রটি পাইয়া সংক্ষিপ্ত এই পত্রটি রচনায় প্ররোচিত হইলাম। আপনি এখনও যদি ‘আপনি আপনি’ বলিয়া যান ও লিখিতে থাকেন তাহা হইলে আমারও উক্ত পথে চলা ভিন্ন গতি নাই। আপনার ‘আপনি’ সম্বোধন আমারও নিদ্রা টুটাইয়াছে। সম্ভাষণ সংশোধন করত: নিদ্রা ফেরত প্রদানে আজ্ঞা হয়। আপনাকে ধন্যবাদ জানাই, রানা ডাকাত নামটি আমার পছন্দ হইয়াছে।
ইতি। রানা ডাকাত।
বি.দ্র. সম্বোধন সংশোধন করিলে পত্ররচনা করিতে আপনার সুবিধা হইবে।
..................
ক্রমাগত ভীষণ অসুখ
মিথ্যুক প্রবরেষু,
আমি ‘আপনি’ লিখেছি বলে আপনার ঘুম টুটেছে এই কথাটি আমি বিশ্বাস করতে পারলাম না। কারণ আপনাকে বরাবর ‘আপনি’ করেই বলে এসেছি। তবে মনে হয় কোনো কারণে ইদানিং আপনার ঘুমটুম কম হচ্ছে। নইলে উল্টো আমাকে ‘আপনি’ বলে লিখবেন কেন! আমি এজন্য বিশেষ উদ্বিগ্ন আছি। আপনার মিথ্যেগুলোর পাশাপাশি ‘বিশেষ দ্রষ্টব্যে’ একটি সুন্দর সত্যি কথা ছিল। সেজন্যে সাধু! যুক্তি আছে। আমি এই মুহূর্ত থেকে ‘তুমি’ শুরু করলাম শুধু বি:দ্র:- র চমৎকারিত্বেই নয়, আমারও মনে হচ্ছিল, লেখা উচিৎ। কিন্তু কি লিখবো? এ মুহূর্তে মনে পড়ছে প্রথম যেদিন দেখা হলো সেদিনকার কথা। সে কথাই লেখা যাক। সেদিন কি শহরটা মুহূর্তের জন্যে থেমে গিয়েছিল? কি জানি! আমার কিন্তু দিনটাকে একটু রঙ চরিয়ে ভাবতে ভালো লাগে। তুমি আদিখ্যেতা বলবে কিনা জানিনা; আদিখ্যেতা করার মতো ঘটনাতো বটে! আমি এতোটাই রঙ চরাতে চাই যে সকাল এগারটার আলোকে কনে দেখা আলো বলে ভাবতে ইচ্ছে করছে। সে আলোতে তুমি আমাকে প্রথম দেখেছিলে। আমি? - ‘তোমাকে দেখার নাম করে চারপাশ দেখি।’ কবিতা এসে গেল। চিঠির বাকিটুকু তোমার কাব্য-ভাষায় লিখছি। যদি কখনো এই বাক্যগুলোর প্রসঙ্গ তোলো, বালো হবে না। তুমি যে ‘ক্রমাগত ভীষণ অসুখ’ হবে সেদিনই ঠিক টের পেয়েছিলাম। অসুখ আমার অসুখ, তুমিময় জলবায়ু তাবৎ স্বাস্থ্যনিবাসের নাম ভুলিয়ে দিয়েছে আমাকে। নিরাময় হবারও উপায় নেই। তুমি ভালো থেকো।
ইতি। বিশেষ দ্রষ্টব্য।
বি.দ্র. - আশা করি বুঝতে পারছো তােমার দেয়া নামটি আমার অপছন্দ হয়নি।
..................

মাইল মাইল লাবণ্য যোজনা

বিশেষ দ্রষ্টব্য কল্যাণীয়াসু
শীত প্রায় শেষ। বসন্ত আসি আসি। বিকেলে বাইরে হাটতে গেলেই মনটা ফুরফুরে হয়ে ওঠে। এরকমই এক সন্ধ্যা আজ। ফুরফুরে মন নিয়ে একটা কবিতা লেখার চেষ্টা করছিলাম। শব্দ ছন্দ উপমা সব ভজঘট
পাকিয়ে গেল। পন্ডশ্রম। টুকরো টুকরো লাইনগুলোর জন্য একধরণে মায়া হলো। ফেলে দিলাম না। মায়াগুলো এদিক ওদিক করে গদ্যরচনার মতো লিখে পাঠালাম। আকাশের গায়ে লেগে ছিল অস্পষ্ট বিষাদ। জলে তার ছায়া পড়েছিল। হাওয়া দুতিয়ালি করছিল মাঝখানটায়। সে সময় তুমি এলে মাইল মাইল লাবণ্য যোজনা হয়। সম্মোহে বিস্ময়ে ব্যক্তিগত আহ্নিকগতি বার্ষিকগতি নিয়ে উপগ্রহের ধরণে ঘুরে বেড়ালাম তোমার চারপাশে। নিয়ে মায়াপাশ! তুমি কি চাও আমি উন্মাদ হয়ে যাই। একটা হাত, মৃণালের মতো একটা হাত বাড়িয়ে দিলে: মনে হলো অন্য মৃণাল ভেসে বেড়াচ্ছে সাগর পাড়ের দেশে। ইত্যাদি ইত্যাদি... আমার এ লেখায় তোমার চিঠির প্রভাব পড়েছে। এখন স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে আমিও প্রথম দিনের কথাই লিখে ফেলেছি। আমি তোমার শহরে আসছি সাতাশ তারিখ। দেখা হবে ওই রেস্তোঁরাতেই। তুমি এ চিঠির উত্তর লিখো না। একই সময়ে। আটাশ তারিখে। কথা হবে। ভালো থেকো।
রানা ডাকাত।
..................
দুর থেকে পরস্পর
ডাকাত আমার ,
আমার কাছ থেকে চলে গেছো আবার সমুদ্রপাড়ের দেশে। মনের ভেতর ’দূরে আছো দূরে আছো ’ গেয়ে ওঠে এক অদৃশ্য মুনিয়া। সম্বিৎ পেয়ে দেখি গুনগুন করছি আমি নিজেই- গান তো আর শোনানো যাচ্ছে না সেদিনকার আমি মতো- আচ্ছা তুমি কেন গেয়ে শোনালে না কিছু? কথা ছিল আমি গাইলে তুমিও শোনাবে। ভীষণ অন্যায় করেছো কিন্ত। শোধ একদিন নেবই। একটা কবিতা পড়লাম কাল, সেটাই শোনো-
‘দূরে আছি বলেই তো খুব কাছে থাকি
নদীর হৃদয় মিশে সমুদ্রের হৃদয়ের মাঝে
নদী যদিও থাকে সমুদ্রের থেকে খুব দূরে। ’
শেষে,
‘এইভাবে বিরহের ফুল ঝরে যায়
এইভাবে তুমি আর এইভাবে আমি
দূর থেকে পরস্পর খুব কাছে আসি।’
তুমি এবার কথায় জিতে গেলে। আমার একটা গর্ব ছিল, কথায় সহজে হারিনা। এবারে হারতে হলো। প্রিয় কবিতা কোনটি জিজ্ঞেস করতে কেন যে হুট করে নীরার অসুখ বললাম। আর তুমি আমাকে অবাক করে দিয়ে বললে, তোমার প্রিয় কবিতা আমি। কবে এসে পড়বে আবার?
ইতি। বিশেষ দ্রষ্টব্য।
..................
তোমাকেই মন্থন ক’রে
প্রিয় কবিতা আমার
ওলিম্পেকের জনকের কথাটি মনে পড়ে গেল তোমার পরাজয়ের গ্লানি মেশানো চমৎকার চিঠিটা পেয়ে।। ব্যারণ পিয়রে দ কুবার্তা তাঁর নাম, এরকম একটা কথা বলেছিলেন, জয় বা পরাজয় বড় কথা নয়, বিজয়ের সংগ্রামই মহৎ। সে রকম, তোমাকে সারা জীবনের জন্যে পাশে পাবো কি না পাবো জানিনা, তোমাকে পাবার সংগ্রামটাই আমার কাছে মধুময় হয়ে থাকবে আজীবন। কী কষ্টের সংগ্রাম, কী তীব্র মধুর সংগ্রাম এটি! কিছুটা বোঝানোর চেষ্টা করা যাক। .... তুমি যেন এক সমুদ্র। রতœাকরের ধরণে মন্থন করে মুঠো মুঠো মুক্তো তুলে আনি আমি। এইসব লিখতে লিখতে এক এক সময় কèান্তির কোলে ঘুমিয়ে যাই। ঘুমের মধ্যে তোমার শহরে পরিব্রাজকের বেশে ঘুরে বেড়াই। আ -হা - একটা মৌসুম ডুবে থাকি বুঁদ হয়ে থাকি তুমিময় স্বপ্নে। ... জেগে থাকলেও তো দু‘চোখ ভর্তি তুমি। ক্যানো ? চোখের পল্লব জুড়ে ঘর বেঁধেছো ক্যানো? এত্ত এত্ত ইট-বালু-সিমেন্ট-রড-গ্রীল-দরোজা জানালা-আসবাব-ভর্তি ঘর আমার দু’চোখের পল্লবে কোন্ বিবেচনায় গড়লে তুমি? আমার যে কষ্ট হয়। অসহ্য রাত অসহ্য দিন। এক মুহূর্ত নয়। আজই আমি রাজউক এর কাছে আমার লাজুক নালিশ পৌঁছে দেব। ভালো থেকো।
ইতি। ডাকাত তোমার।
..................
তবু মনে রেখো
লাজুক শর্মা,
ডাকাত নাম ঘুচিয়ে সংগ্রামী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছো দেখে তোমাকে লাল সালাম। জয় পরাজয়ের কথাই যখন তুললে, ‘আমি কথাটা বলেই ফেলি। আমাকে মাঝে মাঝেই ভয় ভাবনায় পায়। তুমি যখন বলেছিলে, ‘আমরা দুজন পরস্পরের বায়না’- আমার ভেতরটা কেঁড়ে উঠেছিল। যে ছন্দ আমাদের পাখায় পাখায় লেগেছে তা কি স্ফুলিঙ্গের মতো? ক্ষণকালের! আমরা কি উড়তে গিয়ে ফুরিয়ে যাবো হঠাৎ? সেদিন যদি এসেই যায়, আবারও রবি ঠাকুরের ভাষায় বলি, ‘তবু মনে রেখো।’ একটু ঝেড়েই কাশি; একটা পাত্রপক্ষ বাবার সাথে বাতচিত করছে। খুব একটা গায়ে লাগাচ্ছি না কারণ মা আছেন পক্ষে। ভাইয়াও। এটুকুই আমার শক্তি। কিন্তু তোমার বড় ভাইয়ারা এখনো অকৃতদার, তোমার সময় হতে বেশ দেরি... কিছু মনে কোরো না, এসব ভাবলেই শক্তিটা কেমন কমে যায়। এদিকে বাবাও খোদ হিটলার। ডিক্টেটর। তুমি এচিঠি পড়ে দুশ্চিন্তা কোরোনা, আমার শক্তিবৃদ্ধির ফুয়েল পাঠিও।
ইতি। বিশেষ দ্রষ্টব্য।
..................
ফুল ফুটুক
বিশেষ দ্রষ্টব্য কল্যাণীয়াসু,
‘ভালো মন্দ যাই ঘটুক সত্যের লও সহজে’ রবীন্দ্রনাথই বলে গেছেন। কিন্তু সহজে তা নেয়া যায় না। তবে আশাভঙ্গের পরেও একটা কিছু আমাদের হাতে থেকে যায়, যাকে জড়িয়ে ধরে আমরা আবার লতিয়ে উঠতে পারি। আমি তোমাকে ‘ফুয়েল’ দেয়ার চেষ্টা করছি এ চিঠিতে। পাবলো নেরুদার একটা কবিতায় পেলাম, ‘আমি চাই/ তোমার সঙ্গে সেই কাজটা দ্রুত সেরে ফেলেতে চাই/ যা চেরি গাছের সঙ্গে বসন্ত করে থাকে।’ কথাগুলো পড়তে চমৎকার। কিন্তু আমার জন্য কথাগুলো চমৎকার হয়নি। আমাদের উঠোনে একটা চেরি গাছ আছে। ওর সাথে বসন্ত কী এমন করে, দেখবার জন্য বর্ষা শরৎ হেমন্ত আর দীর্ঘ শীতকাল অপেক্ষায় উপুড় ছিলাম। কিন্তু সেই যে শীতের দিনে চেরি গাছটি ন্যাড়া হলো, বসন্ত এসে যাবার পরও হুঁশ হলো না ওর। দেখি, বসন্তের শেষ রাতে ও সুভাষ মূখার্জির ‘ফুল ফুটুক না ফুটুক’ এর দড়ি পাকানো গাছটির মতো অন্ধকারে মুখ চাপা দিয়ে পাঁজর ফাটিয়ে হাসছে। উপহাসের হাসি। এইটুকুই সান্তনা, ‘ফুল ফুটুক না ফুটুক/ আজ বসন্ত’ / ইতি।
..................
আমাদের যৌথ চাঁদ
বেনামী বরেষু,
সর্বনাশের মেঘ জমেছে হৃদয় আকাশে। তুমি চেরিগাছের সাথে ‘ফুল ফুটুক’ এর ন্যাড়া গাছটাকে মিলিয়ে ফেললে ! আমার যে সব গোলমাল হয়ে যাচ্ছে। আরো গোলমাল বাধালেন এক কবি। বলছেন : শেষাবধি হবে না কিছুই
দুজনেই নিজ নিজ পথে হেঁটে যাবো
নিজেদের সুবর্ণ সংসারে
আমাদের যৌথ চাঁদ এভাবেই টুকরো টুকরো
ছুটে যাবে দুটি পৃথক প্রান্তরে।
কবির নামটা জানাচ্ছিনা; যাতে বানোয়াট বলে ভাববার একটা অবকাশ পাও তুমি। আমিও চাই এসব অলক্ষূণে কথা আমার মতো পাগলের প্রলাপ বলেই তুমি ভাবো। তোমাকে দিব্যি দিচ্ছি, দড়ি পাকানো গাছের সর্বনেশে উপমা আর কক্ষনো আনবে না। কাব্যে থিতু আছো আর এই সহজ ভয়াবহ ব্যাপারটা বোঝ নি?
ইতি। বি:দ্র:
..................
তুমি জানো নাই

প্রিয় বিশেষ দ্রষ্টব্য,
যদি কোনোদিন তোমার পাঠানো কবিতার মতো করে তুমি কোনো ‘সুবর্ণ সংসারে’ হেঁটে যাও, আমি চমৎকার এক বিকেলে গিয়ে সেই সংসারে কড়া নেড়ে বলবো ‘পরকীয়া দুয়ার খোলো।’ রেগে গেলে?- এই মুহূর্তে যদি তোমাকে দেখতে পেতাম! আমিও একটু রেগেই ছিলাম; দু’ মিনিটে জল অবশ্য। কবিতার ব্যাপারে ঠেস দিয়েছো বলে রাগ ঘনীভূত হয়েছিল মেঘের মতো। যখন বৃষ্টি মুরু হচ্ছে- দেখি সেটা রাগ নয়, ভালবাসা। আচ্ছা, আমি না হয় কবিতায় ‘থিতু’ আছি; তুমি একা কী কোরে কাটাও গার্হস্থ্য সময়?- তা দেখবার জন্যে বিকেলের ছাদে তোমার টবে ফুটে থাকি ফুল হয়ে, তোমার যতœ কুড়োই, চোখ জুড়িয়ে শেষে ফুটে রই হৃদপিন্ডের মাটিতে। চোখের জলে গর্ভবতী হয় হৃদয়ের মৃত্তিকা, ‘ক্লান্তিবিহীন ফুল ফোটানার খেলা’ শুরু হয়ে যায়। তোমার কথা আকাশ পাতাল করতে করতে একসময় নিজেকে ভাবনা- সাগর মনে হতে থাকে; আমি ছাড়া কার বুকে আর অ্যাতো তোলপাড় যে সাগরের প্রতিদ্বন্দ্বী হবে।
মনে পড়ে? তোমাকে একদিন মাঝ রাস্তায় নামিয়ে ফিরে এসেছিলাম। ফিরি নি আমি প্রকৃতপক্ষে, ছায়ার মতো সাথে গিয়েছিলাম। (ছায়া। তোমার ছায়াতেই একদিন ক্লান্তির বোঝা নামিয়ে রেখেছিলাম।) তোমার সাথে গিয়ে চায়ের কাপ সেজে আদর কুড়িয়েছিলাম গাড়লের মতো। তুমি জানো নাই তুমি জানো নাই তুমি জা-আ নো-ও না-আ-আ-ই।
ইতি। সমুদ্রদস্যু।
........................
শুয়ে আছে নীল ইতিহাস

বিশেষ দ্রষ্টব্য প্রিয়জনেসু,
আজ ২৫ দিন ২৫ রাত তোমার চিঠি নেই। সাত দিনের জায়গায় দশ দিন হবার পর থেকেই যোগাযোগহীণতার হীণমন্যতা আমাকে পর্যুদস্ত করে রেখেছে সারাবেলা। কক্সবাজারের কবির মতো এখন ‘আকাশ ও সমুদ্র আমার দুই রোরুদ্যমান অস্তিত্ব’। ...... তোমার উপক্ষো? বিপদাপদ? না কি দীর্ঘসূত্রীতা? হায়, প্রেমেওকি তাহলে লাল ফিতের দৌরাত্ম? উপেক্ষা হওয়াটাই সম্ভব। উপেক্ষাই কি বিরাগের একমাত্র ভাষা? আর কোনো কম অপমানজনক ভাষা কি জানা ছিল না তোমার? তোমার সব শেষ চিঠিটি বের করে পড়ে দেখি আবার; ভাষা ইতস্তত, লেখা তড়িঘড়ি, আগাপাশতলা দায়সারা। খোঁয়ারিতে পেয়ে বসেছে এই বেলা। কাল সারা রাত ঘুমহীন জাগরণহীন ছিল, আচ্ছন্নতা আর মৌতাত ছিল। সন্ধ্যে থেকেই অলৌকিক কুয়াশায় সেঁধিয়ে যেতে যেতে মাঝরাত নাগাদ ‘বিশ্ব চরাচর লুপ্ত হয়ে যায়।’ তুমি কি আবার নদী হবে না আমার? শুধু ‘নীল ইতিহাস’ হয়ে থাকবে সারাজীবন। তাড়াতাড়ি লিখে আমার উদ্বেগ দূর করো।
ইতি। গুড ওল্ড রানা ডাকাত।

[এই চিঠির তিন দিন পরেই গল্পের ছেলে চরিত্রটি একটা নববর্ষের শুভেচ্ছা কার্ড পাঠালো মেয়ে চরিত্রটিকে। তখনো নববর্ষের বার দিন বাকি। আবার অপেক্ষায় দীর্ঘ দিবস দীর্ঘ রজনী। ওদিক থেকে কার্ড এলো ঠিক পহেলা বৈশাখে। চমৎকার কার্ড। ঝকঝকে ছাপা। ভেতরে চিঠির ভাষ্যের নিচে ফিরে লেখা- বিশেষ দ্রষ্টব্য: উপহারের পরিবর্তে দোয়াই কাম্য।’ যথারীতি সেটাও চমৎকার ফটোকম্পোজ প্রযুক্তিতে ছাপা। - সংকলক]
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×