ইন্টারিম সরকারে প্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার পর একের পর এর চমক দিয়ে যাচ্ছেন ডক্টর মুহম্মদ ইউনুস। ভঙ্গুর, মেরুদন্ডহীন শাসন ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক ভাবে পঙ্গু, গৃহযুদ্ধের কাছাকাছি চলে যাওয়া একটি দেশের দায়িত্ব কাঁধে নিয়েই খুবই নমনীয় ভাবে পরিস্থিতি যেভাবে মোকাবেলা করেছেন, তা একবিংশ শতাব্দীর এক রাজনৈতিক বিস্ময় বটে ও। জন্মলগ্ন থেকে চিরাচরিত রাজনৈতিক প্রবাহমান ধারা যেমন; বাপ বা স্বামীর উওরাধিকার সুত্রে বনে যাওয়া নেতা- নেত্রী অথবা রাস্তায় মিছিল মিটিং, হামলা-মামলা খেয়ে বা অতিরঞ্জিত কোন বক্তৃতা দিয়ে ওঠে আসা দলনেতা আর সুশিক্ষিত, মার্জিত, নোবেলজয়ী ব্যাক্তির চিন্তা-ভাবনা, দর্শন দেশ পরিচালনা করার মধ্য যে যোজন-যোজন পার্থক্য তা চোখে আংগুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন ডক্টর মুহম্মদ ইউনুস। কিছু পদক্ষেপে দৃশ্যমান পরিবর্তন বেশ লক্ষনীয়। সব নিয়ে বলতে গেলে পোষ্ট অনেক লম্বা হয়ে যাবে, তাই কিছু বিষয় নিয়ে আলোকপাত করবো।
সরনকালের সবচেয়ে আরামদায়ক স্বস্তির মাস ছিল, এবারের রমজান। বন্যা, ও ভারতের খাদ্যদ্রব্য রপ্তানি বন্ধ হওয়া সত্বেও মাছমাংস, শাক-সবজির বাজারে যেই আগুন লাগবে বলে ধারনা করা হচ্ছিল, তেমন কিছুই হয়নি। ঠিক কবে রমজান মাসে জিনিস পত্রের দাম সহনীয় বা কম ছিল আমার জানা নাই। দ্রব্যমূল্যের দাম নিয়ন্ত্রণ বা কম ছিল ইউনুস সরকারের অন্যতম প্রধান সাফল্য। লুটেরা ব্যাবসায়ী আর লোভী রাজনীতিবিদেরা মিলে যে রমজান মাসে বাজারে কৃত্রিমভাবে মনোপলি সৃষ্টি করতো, তা দৃষ্টত স্পষ্ট ও প্রমানিত। জুলাই-আগষ্ট
গন-অভুক্তানকে জংগী, জামাত-শিবির ট্যাগিং দেওয়া ধর্মবিদ্বেষী এক ব্লগার ও এবারের রমজানে প্রায় প্রতিদিনই তরমুজ খেয়েছেন, ৮-১০ পদের আইটেম দিয়ে ইফতার করেছেন, শুধু মাথায় টুপি পড়ে ছবি তুলতে ভুলে গেছেন। এরপরে ও ইউনুস নাকি খারাপ, জংগি!!!!!
নারীর টানে ঈদ উপলক্ষে স্বস্তির সাথে বাড়ি ফিরা ও ছিলা আরো একটি উল্লেখ্যযোগ্য সাফল্যে। নির্দিষ্ট সময় বাস, ট্রেন ছাড়া ঈদের সময় বেশি ভাড়া না দেওয়া মনে হয়, দেশবাসী এবার প্রথম দেখলো। সীমিত লোকবল দিয়ে ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযান বেশ প্রশংসিত। এই অভিযান আগে ও চলতো যা ছিল নিছক লোকদেখানো!!!!!
সম্প্রতি ইউ এস নিউজ প্রকাশিত গ্লোবাল পাওয়ায় ইনডেক্স বাংলাদেশ অবস্থান কমে দাঁড়িয়েছে ৪৭ তম। মানে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৪৭ তম শক্তিধর রাষ্ট্র। অথচ সাম্প্রতিক সময়ে তেমন কোন সমরাস্ত্র বা যুদ্ধযান ই কিনেনি বাংলাদেশ। তাহলে!!!! মুল সুত্রটি লুকিয়ে আছে ভৌগলিক ভাবে দেশের অবস্থানের গুরুত্ব বিবেচনা করা এবং প্রতিবেশি দেশের সাথে কুটনৈতিক সম্পর্ক সমানে-সমান রাখা যা ডক্টর মুহম্মদ ইউনুস শুরু থেকেই বলে আসছেন। এরমধ্য গুরুত্বপূর্ণ পাশার ডান "চিনের অর্থায়নে" উওরবঙ্গের লালমনিরহাটে বাংলাদেশকে এয়ার বেইস আধুনিকায়ন বা পুর্ননির্মাণ যা কিনা অক্টোবর শুরু হতে হচ্ছে। চিকেন নেকের কাছে এয়ার বেইসের নির্মাণের খবরটি ভারতের মিডিয়ায় "চিনা জোঁকের উপর লবন ছাইড়া দেওয়ার মত ছ্যান কইরা লাফাইয়া উঠছে" । নিচে দেখুন-
লালমনিরহাটে এয়্যারবেস
এছাড়া:
-বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধ করে ও রিজার্ভ ২৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নতিকরন।
- ভারত কেন্দ্রিক চিকিৎসা ব্যবস্থার বিকল্প চায়নার কুনমিং ৪ টি হাসপাতাল বরাদ্দ নেওয়া।
-ঢাকার যানজট নিরসনে শৃংখলা বৃদ্ধি ও ট্রাফিকে আমুল পরিবর্তন।
-অপ্রয়োজনীয় মেগা প্রকল্পগুলো বাদ দেওয়া এবং প্রয়োজনীয় গুলোতে যাচাই-বাছাই করে নির্দিষ্ট অর্থ প্রদান করা।
- আগামী বছরের মধ্যে ১ লক্ষ ৮০ হাজার লাখ রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন।
শেষ করবো, ব্লগের এক উজিরে খামাখার কথা বলে, যিনি গলা ফাটিয়ে বলেছেন, অনির্বাচিত কোন সরকারে নাকি বিদেশিরা বিনিয়োগ করে না। ডক্টর ইউনুস আর অনির্বাচিত সরকার যে এক জিনিস না, এই কাকু মনে হয় তা জানে না। অনির্বাচিত সরকার প্রধানের দেশে জাতিসংঘের মহাসচিবের মত হাই প্রোফাইল ব্যাক্তি বর্গ এসে সফর করে না, চীনের মত পরাশক্তি চার্টার্ড বিমান পাঠিয়ে চীন সফরে স্বাগত জানায় না। গতকালকে অনুষ্ঠিত ইনভেস্টমেন্ট সামিটে কোরিয়া থেকে ১৮০ মিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগের চুক্তি সাক্ষরিত হয়েছে। চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী ২০০ বিনিয়োগকারী নিয়ে শ্রীঘ্রই বাংলাদেশ আসছেন। ব্রিকসের এনডিবি আগামী এক বছরের মধ্যে আসবে আরো ১ বিলিয়ন ডলার। বা়ংলাদেশের বর্তমানে পরিস্থিতি বিদেশি বিনিয়োগের জন্য অনুকূল নয়, ইতিমধ্যে যে সাফল্য অর্জিত হয়েছে তা ব্যাক্তি ডক্টর ইউনুস আর তার রিক্রুট করা যোগ্য কিছুর ব্যাক্তির প্রচেষ্টার ফল। আমাদের অর্থনৈতিক দৈন্যদশা আর রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি যেমন একদিনে তৈরি হয়নি, তেমন অল্প সময়ে দুর করা সম্ভব না। বাংলাদেশের একটি সার্বভৌম, সফল রাষ্ট্রহিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে ডক্টর ইউনুসের দীর্ঘমেয়াদি থাকা ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই। নেই মানে নেই.......
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ২:৩৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




