করোনা ভাইরাস।
করোনা নামক যে ভাইরাস টি পৃথিবী জুড়ে মৃত্যুর তান্ডব চালাচ্ছে সেই ভাইরাসটি দেখতে বেশ সুন্দর, একটা গোলকের গায়ে সজারুর মতো কাঁটা লাগানো! এই কাঁটা গুলোর কারনেই এর নাম হয়েছে করোনা, প্রাচীন গ্রীসের রাজারা এধরনের কাঁটার মুকুট পরতেন, যাকে বলা হত করোনা।
করোনা ভাইরাসের বাইরের আবরণ এক ধরনের চর্বি জাতীয় জিনিস দিয়ে তৈরি,(ছবিতে হলুদ বৃত্ত) সাবানের সংস্পর্শে যা নষ্ট হয়ে যায়, তাই বলা হয় সাবান দিয়ে হাত ধুতে!
এই ভাইরাস বেঁচে থাকার জন্য দরকার শ্বসনতন্ত্রের কোষ। মুখ, নাক বা চোখ দিয়ে এরা ঢোকে শ্বাসতন্ত্রে, (চোখ দিয়ে ঢোকাটা অদ্ভুত লাগলেও ভেবে দেখেন চোখে ড্রপ দিলে মুখে তার স্বাদ পাওয়া যায়) একবার ঢুকে পড়লেই শ্বাসতন্ত্রের কোষ ACE2 নামের এক ধরণের প্রোটিন উৎপন্ন করে ভাইরাস গোলককে কোষের সাথে আটকে ফেলে।
এরপর কোষের আবরণের সাথে ভাইরাসের আবরণ মিশে যায়, ফলে করোনা ভাইরাস কোষের ভেতরে ঢুকে কোষের দখল পুরোপুরি নিয়ে নেবার পর কোষের ভেতরে RNA নামের একরকম জিন নিঃসরণ করে। নিচের ছবিতে দেখা যাচ্ছে চর্বির আবরণ ভেঙে RNA বেরোচ্ছে।
ফলে কোষ থেকে প্রোটিন উৎপন্ন হতে থাকে, যে প্রোটিন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাঁধা দিতে থাকে, আর সাথে সাথে বিপুল বেগে ভাইরাসের নতুন কপি তৈরি করতে থাকে। এই কপি- ভাইরাস কোষের বাইরের অংশে জমা হতে থাকে, একেকটা কোষে কয়েক লক্ষ কপি- ভাইরাস তৈরি হবার পর কোষটি ধ্বংস হয়ে যায়।
এই ভাইরাসের কিছু অন্য কোষকে আক্রান্ত করে, কিছু হাঁচি কাশির সাথে বাইরে ছড়িয়ে পড়ে।
দেহ যখন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়, তখন দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামে, ফলে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে গিয়ে ফুসফুসের কোষগুলোকে আক্রমণ করে। এতে ফুসফুসে তরল আর মৃত কোষ জমা হয়; শুরু হয় শ্বাসকষ্ট। এই শ্বাসকষ্ট আরো বেড়ে শ্বাসযন্ত্রের তীব্র সঙ্কট সিন্ড্রোম হয়, তখন মৃত্যুকে বরণ করা ছাড়া আর উপায় থাকে না।
ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি- কাশির মাধ্যমে বাতাসে ভেসে ভাইরাস আশেপাশের নানা জিনিস বা মানুষের শরীরে, কাপড় জামায় আশ্রয় নেয়, তারপর কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিন ধরে সেখানে বাড়তে পারে। তাই আক্রান্ত ব্যক্তির দরকার মাস্ক পড়ে থাকা, আক্রান্ত হননি এমন কেউ মাস্ক পড়ে থাকলেও ঝুঁকি কমবে না। বরং ভালো করে হাত ধোয়া, চোখে মুখে হাত না দেয়া- এই ব্যাপারগুলোতে সতর্ক থাকতে হবে।
পুরোটাই নিউইয়র্ক টাইমস থেকে নেয়া। view this linkছবি বড় করতে পারলাম না। এত কাঁটা মাটার কথা জেনে কী লাভ জানিনা। লাভ হতো যদি জানতে পারতাম আর কতদিন এই যন্ত্রনা চলবে...
বিভিন্ন দেশে এই সংক্রমণ নিয়ে গাণিতিক মডেল বানানো হচ্ছে, একটা মডেল যাকে প্রায় নির্ভুল বলা হচ্ছে, সেই মডেলের গণনায় দেখা গেছে, এপ্রিলের ৫ তারিখের মধ্যে বিশ্বে দশ লক্ষ মানুষকে আক্রান্ত করবে এই ভাইরাস।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে রক্ষা করুন।
=================================
এই পোস্ট উৎসর্গিত রাজীব নুরের প্রতি। বেশ কিছুদিন ধরে আমার একই ধরণের পোস্ট পড়তে হচ্ছে তাকে, বিরক্তি চেপে মন্তব্যও করতে হচ্ছে। আশাকরি এই পোস্ট এতটা একঘেয়ে লাগবে না।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মার্চ, ২০২০ রাত ৯:১৭