somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দূরে কোথায়... দূরে...দূরে...

১৮ ই মার্চ, ২০২১ রাত ১০:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



জানালা দিয়ে আকাশ দেখছেন, হঠাৎ দেখলেন আকাশে ঘুড়ির মতো ভেসে চলেছে একটা লম্বা বাড়ি!! অদ্ভুত শোনালেও, এমন দৃশ্য দেখা অসম্ভব কিছু না, কারণ আকাশে ভাসমান এমন বাড়ি বানানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে! বাড়ির নকশা, নির্মাণ সামগ্রী, কোথায় নির্মাণ করা হবে এ সবকিছুই ঠিক করা আছে, এখন শুধু দরকার একটা গ্রহাণু আর গ্রহাণুর সাথে বেঁধে বাড়িটা ঝোলানোর জন্য একটা শক্ত দড়ি, তাহলেই এমন বাড়ি হয়ে যাবে!! 

আকাশে ভাসমান বাড়ি বানাবার এই অভিনব ধারণা নিয়ে এসেছে নিউইয়র্কের ক্লাউড আর্কিটেকচার অফিস। ভাসমান এই সুউচ্চ বাড়ির নাম তারা দিয়েছে এনালেমা টাওয়ার (Analemma tower)। মূলত এনালেমা টাওয়ার এমন এক অট্টালিকা যা একটা গ্রহাণুর সাথে বাঁধা থাকবে, তারপর  গ্রহাণুর সাথে সাথে সেই অট্টালিকা পৃথিবীর সাথে একই কক্ষপথে ঘুরবে। এভাবে একটা গ্রহাণুকে পৃথিবীর কক্ষপথে নিয়ে আসার সম্ভাবনাকে ক্লাউড আর্কিটেকচার মোটেই  অলীক কল্পনা বলে ভাবছেনা, কারণ নাসা তাদের আশা দিয়েছে এভাবে গ্রহাণুকে পৃথিবীর কক্ষপথে নিয়ে আসা সম্ভব বলে!! নাসা হিসাব করে দেখিয়েছে, ১.২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে একটা ছোটখাটো গ্রহাণুকে চাঁদের কক্ষপথে স্থাপন করা সম্ভব। সুতরাং একইভাবে, বড় একটা গ্রহাণুকে পৃথিবীর কক্ষপথে স্থাপন করা যেতেই পারে, শুধু সেক্ষেত্রে খরচ অনেক বেড়ে যাবে...



গ্রহাণুর ব্যবস্থা হয়ে গেলে অট্টালিকা বানানো কোন সমস্যা না। এনালেমা টাওয়ারের ডিজাইনার ওস্টাপ রুদাকেভিচ (Ostap Rudakevych) বলেছেন টাওয়ার বানানো হবে কার্বন ফাইবার আর এ্যালুমিনিমের মতো হালকা অথচ মজবুত বস্তু দিয়ে। ক্লাউড আর্কিটেকচারের পরিকল্পনা দুবাইতে অট্টালিকা নির্মাণ করা, কারণ এমন সুউচ্চ অট্টালিকা নির্মাণে দুবাইয়ের অভিজ্ঞতা আছে আর সেখানে নির্মাণ খরচ নিউইয়র্কের তুলনায় এক পঞ্চমাংশ পড়বে। নির্মাণের পর বাড়িটা গ্রহাণুর সাথে ঝুলিয়ে দিলেই হলো!! সমস্যা এখন একটাই, গ্রহাণু থেকে এই অট্টালিকা ঝোলাবার মতো মজবুত দড়ি যোগাড় করা! এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত সবচেয়ে শক্তিশালী কার্বন ন্যানো টিউবের শক্তিও এনালেমা ঝোলাবার জন্য যথেষ্ট না। তাই  আরো কিছুকাল অপেক্ষা করতে হবে দড়ি আবিষ্কারের জন্য।

দেখা যাক বাড়িটা কেমন হবে... টাওয়ারের নিচের অংশে থাকবে অফিস, উপরের অংশ আবাসিক আর অন্যান্য কাজে ব্যবহৃত হবে।
পৃথিবীর সাপেক্ষে একই গতিতে গ্রহাণু ঘুরতে থাকবে, ফলে পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে দেখলে মনে হবে
এনালেমা টাওয়ার আকাশে স্থির হয়ে আছে। উত্তর আর দক্ষিণ গোলার্ধের মধ্যে এর চলাচলের পথ হবে ইংরেজি আট বা বাংলা চারের মতো একটা লুপে, লুপের শেষ দুই প্রান্তে গতিবেগ সবচাইতে কম হবে। গতিপথ এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যে নিউইয়র্কের উপর থাকাকালীন গতিবেগ সবচাইতে কম হবে, এখানে অবস্থান করবেও বেশি সময়।

৩২ হাজার মিটার  উচ্চতায় থেকে প্রতিদিন এনালেমা টাওয়ার ঘন্টায় গড়ে ৩০০ মাইল বেগে (২৪ ঘন্টায় অতিক্রান্ত দূরত্বকে ২৪ দিয়ে ভাগ করে এই গতিবেগ পাওয়া গেছে) চলতে থাকবে। এত উচ্চতায় তাপমাত্রা থাকবে -৩২° ফারেনহাইট, বাতাসে অক্সিজেন কম থাকবে। টাওয়ারের যত উপরে যাওয়া যাবে ততই বায়ুর চাপ কমবে, এই কম চাপের সাথে খাপ খাওয়াতে উপরের তলাগুলোতে জানালা ক্রমশ ছোট হতে থাকবে। নিচের তলার তুলনায় উপরের তলায় দিনের আলো চল্লিশ মিনিট বেশি থাকবে। বিদ্যুৎ শক্তি তৈরি হবে সোলার প্যানেল থেকে। পানি জোগাড় হবে মেঘ আর বৃষ্টি থেকে, যা ক্রমাগত রিসাইকেল করা হবে। তড়িৎ- চুম্বকীয় শক্তি লিফট চালাতে ব্যবহৃত হবে,  কেবলে ঝোলানো লিফট না।

যদি কখনো পৃথিবীর মাটি স্পর্শ করতে ইচ্ছে হয় তখন এনালেমা বাসীরা কী করবেন? রুদিকেভিচ বলছেন যাত্রীবাহী ড্রোনে চড়ে তারা পৃথিবীতে নেমে আসতে পারবেন।

এমন বাড়ি বানানোর কথা মাথায় এলো কী করে? এই প্রশ্নের উত্তরে রুদিকেভিচ বলেন, "গুহাবাসী মানুষ যখন থেকে গুহা ছেড়ে ঘরবাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করা শিখলো, তখন থেকে  তাদের ঘরবাড়ি ক্রমান্বয়ে উঁচু আর হালকা হয়ে আসছে। আমাদের মনে হয়, এমন এক সময় আসবে যখন ভূমিকম্প, বন্যা আর সুনামী থেকে বাঁচবার জন্য মানুষ ‌ভুপৃষ্ঠ ছেড়ে উপরের দিকে বাড়ি বানাতে চাইবে। ভবিষ্যতের সেই দিনের কথা ভেবেই এনালেমা টাওয়ারের পরিকল্পনা।" 

মঙ্গলে ঊষা বুধে পা, যথা ইচ্ছা তথা যা...

পৃথিবীর সীমা ছাড়িয়ে মঙ্গল আর বুধ গ্রহে যাবার স্বপ্ন... প্রথমে মঙ্গল নিয়ে বলি। পৃথিবী তৃতীয় আর তার পরের চতুর্থ গ্রহ মঙ্গল। লাল এই গ্রহটিতে ২০৫০ সালের মধ্যে মানুষের বসতি গড়ার স্বপ্ন দেখেন স্পেসএক্স কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্ক। ইলন মাস্কের আশা ২০২৪ সালের মধ্যে তার কোম্পানির মহাকাশ যান স্টারশিপ সফলভাবে আসা- যাওয়া করতে পারবে পৃথিবী ও মঙ্গলের মধ্যে। স্টারশিপ বিশাল মহাকাশ যান, ১৬৫ ফিট উঁচু, এটা উড্ডয়ণ করবে শক্তিশালী বিশাল রকেট সুপার হেভির সাহায্যে।

মাস্ক বলেছেন, পৃথিবী ছেড়ে যেন গ্রহান্তরে মানুষ বসতি স্থাপন করতে পারে, সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে তিনি ২০০২ সালে স্পেসএক্স কোম্পানির প্রতিষ্ঠা করেন তার স্বপ্ন মঙ্গলে মানুষের বসতি গড়া, মঙ্গল গ্রহেই তিনি মরতে চান!

স্পেসএক্সের বিজ্ঞানীরা অবিরাম চেষ্টা করে যাচ্ছেন বারবার ব্যবহারযোগ্য রকেট, অর্থাৎ স্টারশিপের উৎক্ষেপণের পর আবার নিরাপদে ফিরতে পারে এমন রকেট তৈরি করার জন্য। ইলন মাস্ক আশাবাদী যে তাদের এই প্রচেষ্টা সফল হবে, এমন রকেট তৈরি হবেই!! রকেট তৈরি সফল হলে স্পেসএক্স সপ্তাহে একটা করে স্টারশিপ বানাবে। তারপর ১০০০টা স্টারশিপ প্রতিটিতে ১০০ জন করে মানুষ নিয়ে মোট ১০০,০০০ জন মানুষকে মঙ্গলে নিয়ে যাবে।  ২৬ মাস পরপর পৃথিবী আর মঙ্গলের কক্ষপথ সবচাইতে কাছাকাছি হয়, সেইসময় মঙ্গল যাত্রা করলে যাত্রা করার পরিকল্পনা রয়েছে।

মাস্কের অভিপ্রায় মঙ্গলে দশ লক্ষ মানুষের উপনিবেশ গড়া, কারণ এই জনসংখ্যা এই অবধি পৌঁছালে মানুষ মঙ্গলের সম্পদ ব্যবহার করেই নিজেদের সব প্রয়োজন মেটাতে পারবে, অর্থাৎ পৃথিবী নির্ভর থাকবে না।

মঙ্গল অভিযানের সবচাইতে বড় বাঁধা রকেট উৎক্ষেপণের বিপুল ব্যয়। নাসা পারেনি, কিন্তু স্পেসএক্স পুনঃ ব্যবহারযোগ্য রকেট নির্মাণ করে খরচ কমিয়ে এনেছে। ফলে স্পেস এক্স এখন মঙ্গল অভিযানে নাসার থেকে এগিয়ে আছে, তাদের লক্ষ্য ২০২৪ এ মঙ্গলে পৌঁছা। নাসা আশা করছে ২০৩৩ সাল নাগাদ তারা মঙ্গলে পৌঁছাতে পারবে। এদিকে আমাজনের কর্তা জেফ বেজোস ব্লু ওরিজিন নামের কোম্পানি খুলেছেন মঙ্গলে যাবার সুলুকসন্ধান করতে...

মঙ্গলে বসবাস- ইউটোপিয়া না ডিসটোপিয়া, সেটা সময় বলে দেবে। স্পেসএক্সের শাখা স্টারলিঙ্ক  ইতিমধ্যেই মহাকাশে থাকা স্যাটেলাইট দিয়ে ইন্টারনেট সংযোগ দেয়া শুরু করেছে, মঙ্গলেও ইন্টারনেট সংযোগ দেবার পরিকল্পনা তাদের!!! স্পেসএক্সের ভাষ্য, মঙ্গল একটা মুক্ত গ্রহ আর পৃথিবীর কোন সরকার বা কর্তৃপক্ষের এই গ্রহের পরিচালনায় কোন কর্তৃত্ব থাকবে না। কে থাকবে মঙ্গলের দেখভাল করার জন্য তা এখনও স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না।

অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে, মঙ্গলে জীবন কষ্টকর ও বিপদসংকুল, যাওয়ার টিকেট ওয়ান ওয়ে হতে পারে জেনেও অনেক মানুষ আছে যারা মঙ্গলে যেতে আগ্রহী!! ডেনমার্কের এক সংস্থার করা সমীক্ষায় এটা দেখা গেছে।

কিন্তু ইলন মাস্ক কেন মঙ্গল নিয়ে এত উৎসাহী,  জানতে চাইলে তিনি বলেন, পৃথিবী মানুষ বাসের অযোগ্য হয়ে যাবার আগেই মানুষকে অন্য কোথাও আবাস খুঁজে নিতে হবে। সৌরজগতের মধ্যে শুক্র, বুধ, বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস, নেপচুন, আর চাঁদের তুলনায় মঙ্গলে আবাস গড়া সবচাইতে সুবিধাজনক কারণ এর তাপমাত্রা,  দিনের দৈর্ঘ্য এসব পৃথিবীর সাথে মিলে, তাছাড়া পৃথিবী থেকে দূরত্বও কম। এসব বিবেচনা করার পর তিনি মঙ্গলগ্রহ নিয়ে উৎসাহী হয়েছেন।

মঙ্গলে শুধু পৌঁছালেই তো হবে না, এখানকার  আবহ অনেকটা পৃথিবীর মত হতে হবে, নাহলে  মানুষ বাস করতে পারবে না। মঙ্গলের আবহ পৃথিবীর মত করাকে বলে terraforming, ইলন মাস্ক কীভাবে terraforming করতে চান সেটা বলার আগে মঙ্গলের বর্ণনা দেই।  মঙ্গল আয়তনে  পৃথিবীর ৭০ শতাংশ, জমাট বরফ আছে দুই মেরুতে, পৃথিবীর তুলনায় এর বাতাবরণ প্রায় ১০০ শতাংশ হালকা তাই সূর্যের তেজস্ক্রিয়তা থেকে রক্ষা পাবার উপায় নেই, মঙ্গলের গড় তাপমাত্রা -৬২° সেলসিয়াস। মানুষের বাসোপযোগী করতে এর বাতাবরণকে পুরু করতে হবে, সম্ভব হলে নিঃশ্বাস নেয়ার মত বাতাস তৈরি করতে হবে। এটা করার জন্য বিজ্ঞানীরা অনেক ভেবেও কোন লাগসই প্রযুক্তি  বের করতে পারছেন না। তাঁরা দেখেছেন, দুই মেরুর জমাট বরফ গলাতে পারলে পানি আর কার্বন ডাইঅক্সাইড বিমুক্ত হবে, ফলে গ্রীন হাউস এফেক্ট বায়ুর চাপ ও তাপ বাড়াবে। বরফ গলানোর উপায় হিসাবে তারা মঙ্গলের চারপাশে বিশাল প্রতিফলক স্থাপন করে সূর্য তাপকে বরফের উপর প্রতিফলিত করার কথা ভেবেছেন, কিন্তু  বর্তমানের প্রযুক্তি দিয়ে সেই বিশাল প্রতিফলক তৈরি ও স্থাপনের কোনই সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। তাছাড়া গবেষণা করে দেখা গেছে, এই বরফ গলানো, কার্বন ডাইঅক্সাইড বিমুক্ত করার পরও মঙ্গলের বায়ুচাপ বেড়ে পৃথিবীর তুলনায় মাত্র ৭% হবে। তবে বিজ্ঞানীরা আশাবাদী যে আগামী একশ বছরের মধ্যে প্রযুক্তি এতটা উন্নত হবে বরফ তো গলানো যাবেই সেই সাথে এমন উদ্ভিদের আবিষ্কার হবে তা অনেক বেশি অক্সিজেন নিঃসরণ করতে সক্ষম হবে। ফলে মঙ্গলের বায়ুমণ্ডল অনেকটা সহনীয় পর্যায়ে আসবে।

ইলন মাস্ক ভাবছেন, পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে তিনি বরফ গলাবেন, তারপর পর্যায়ক্রমে মঙ্গলে terraforming করবেন। এই পরিকল্পনাকে তিনি নাম দিয়েছেন Nuke Mars.  এটা নিছক খেয়াল বা পাগলামি না, মাস্ক তার এ পরিকল্পনা নিয়ে অনেক ব্যাখ্যা দিয়েছেন, Nuke Mars লেখা টি সার্টও তৈরি করে ফেলেছেন!! তার পরিকল্পনা, মঙ্গলের জমাটবাঁধা মেরু অঞ্চলে অনেকগুলো পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো। ফলে বিপুল পরিমাণ জলীয় বাষ্প ও কার্বন ডাইঅক্সাইড অবমুক্ত হয়ে মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলে মিশে যাবে। এর ফলে গ্রীন হাউস এফেক্ট সৃষ্টি হবে, যা তাপমাত্রা বাড়াবে। ফলে মঙ্গলের শিলা উত্তপ্ত হয়ে আরো কার্বন ডাইঅক্সাইড অবমুক্ত করবে, তাতে তাপমাত্রা আরো বাড়বে আর তাতে ক্রমাগত কার্বন ডাইঅক্সাইড অবমুক্ত হতে থাকবে! এভাবে মঙ্গলের তাপমাত্রা পৃথিবীর তাপমাত্রার কাছাকাছি হবে, বায়ুমণ্ডলের ঘনত্ব বাড়বে আর তরল পানি পাওয়া যাবে। তারপর কিছু গাছ লাগিয়ে অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা গেলেই নতুন পৃথিবী সৃজন হয়ে যাবে!!



কিন্তু ইলন মাস্কের এই Nuke Mars পরিকল্পনায় গলদ বের করেছেন অনেকে। প্রথমত, এটা বাস্তবায়ন করতে ১০,০০০ এর বেশি পারমাণবিক বোমা মঙ্গলে নিয়ে গিয়ে মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলে বিস্ফোরণ ঘটাতে হবে (মাটিতে যেন তেজস্ক্রিয়তা না ছড়াতে পারে)। এর ফলে বরফ গলানো গেলেও  পারমাণবিক শৈত্য সৃষ্টি হয়ে মঙ্গলের তাপমাত্রা বাড়ার বদলে কমবে, তেজস্ক্রিয়তা ভয়ানক ভাবে বেড়ে যাবে, আরো অনেক সমস্যা তৈরি হবে। সবচাইতে বড় কথা, ১০,০০০ পারমাণবিক বোমা জোগাড় করা !! এই জিনিস তো ইলন মাস্ক বানাতে পারবেন না... তাই মঙ্গলকে দ্বিতীয় পৃথিবী বানানো সহজে হবে না বলেই মনে হচ্ছে... অবশ্য ইলন মাস্ক এখনও হাল ছাড়েননি!

এখনি বসতি গড়া না যাক, গবেষণার কাজ চালাবার জন্য মানুষকে যে মঙ্গলে কয়েক মাস থাকতে হতে পারে। সেক্ষেত্রে তাদের থাকার জন্য ঘর লাগবে। মঙ্গলে থাকার জন্য নাসা বাড়ির নকশা দেবার আহ্বান জানিয়েছিল, তাতে অনেকেই মঙ্গলে বাসের উপযোগী বাড়ির নকশা করেছেন। এরমধ্যে থেকে space exploration architecture আর clouds architecture office এর যৌথভাবে উদ্ভাবিত বরফের বাড়ি নাসা অনুমোদন করেছে। মঙ্গলের বরফ ব্যবহার করে থ্রিডি প্রিন্টার দিয়ে এই বরফ বাড়ি তৈরি হবে।



মঙ্গলের পরে আসে বুধ; বুধ সূর্যের সবচেয়ে নিকটবর্তী গ্রহ। এই বুধ গ্রহকে ব্যবহার করে সূর্য থেকে শক্তি আহরণের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

মানুষ প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে এর ব্যবহার বাড়াচ্ছে, ফলে পৃথিবীতে মজুদ জ্বালানি শেষ হয়ে আসছে। তাই ভবিষ্যতের জন্য জ্বালানির নতুন উৎস খোঁজা প্রয়োজন। এই নতুন উৎস খুঁজতে গিয়ে সূর্য থেকে শক্তি আহরণের একটি ধারণা দেন মার্কিন পদার্থবিজ্ঞানী ফ্রিম্যান ডাইসন (Freeman dyson)। তিনি সূর্যকে ঘিরে এক বিশাল স্থাপনা নির্মাণের কথা বলেন, যার নাম পরে তার নামানুসারে ডাইসন সোয়ার্ম রাখা হয়। সূর্য থেকে এর দূরত্ব হবে পৃথিবীর কাছাকাছি, নয় কোটি ত্রিশ লক্ষ মাইল। ডাইসন সোয়ার্মে অসংখ্য আয়না বা সোলার প্যানেলে প্রতিফলিত হয়ে সূর্যের শক্তি জমা হবে, তা রূপান্তরিত করে মানুষ পাবে প্রয়োজনীয় জ্বালানি। সেই আয়না বা সোলার প্যানেল পৃথিবীতে বানানো হবে না, বরং একদল কৃত্রিম বুদ্ধিসম্পন্ন রোবট বুধে গিয়ে বুধের মাটি খুঁড়ে প্রয়োজনীয় মালামাল সংগ্রহ করে আয়না বানিয়ে একের পর এক মহাকাশে স্থাপন করবে, তৈরি করবে শক্তির নতুন উৎস!!

 সময় বলে দেবে এসব কিছু সত্যি হবে নাকি হবে না... দুঃখের বিষয়, এসব দেখার জন্য সেই সময়ে আমি পৃথিবীতে নেই!!

এতক্ষণ যা যা লিখলাম, সব যদি পড়ে থাকেন তবে এগুলোকে কি আপনার নিছকই কল্পনা বলে মনে হচ্ছে!! কিন্তু আমার মনে হয় এসব সত্যিই হবে, কারণ মানুষের কল্পনা শক্তি তাকে উদ্ভাবনের দিকে ঠেলে দেয়। রাইট ভাতৃদ্বয় যখন প্রথম আকাশে ওড়ার কথা ভেবেছিলেন তখন লোকে তাদের নিয়ে হাসাহাসি করেছে, অথচ তার পঞ্চাশ বছরের মধ্যে মানুষ শব্দের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি গতিতে চলার মত উড়োজাহাজ তৈরি করেছে। ১৮৬৯ সালের ডিসেম্বরে জুল ভার্ন Around the moon নামে একটা সাই ফাই লিখেন, যে কাহিনিতে বারবীকেইন, নীকোল আর আরডান নামের তিনজন মানুষ চাঁদে যায় একটা ক্যাপসুলে করে। চাঁদের দিকে তাক করে কামান আকৃতির এক যন্ত্র থেকে এই ক্যাপসুল নিক্ষেপ করা হয়, তারপর নানা ঘটনার মধ্যে তিনজন চাঁদে পৌঁছান, আবার কামানের গোলায় চড়ে পৃথিবীতে ফিরে আসেন, চন্দ্রজয়ী হিসেবে বিপুল সংবর্ধনা পান।

ঠিক একশ বছর পর এই কল্পনা সত্যি হয়, ১৯৬৯ সালে তিনজন মানুষ চাঁদে পৌঁছান, তাদের নামের সাথে জুল ভার্ণের চন্দ্র বিজয়ীদের নামের মিল বিস্ময়কর!!

তাই আমার মনে হয়, একদিন সত্যিই মানুষ আকাশে ভাসা বাড়িতে থাকবে, মঙ্গলের বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে পৃথিবীকে দেখবে... সেদিন দূরের পৃথিবীকে দেখে তাদের মন কেমন করবে কিনা কে জানে!!

লেখার সূত্র সমূহ:

১) এনালেমা
২) এনালেমা
৩) মঙ্গলের ভিডিও
৪) মঙ্গলে বসতি
৫) মঙ্গল
৬) টেরাফরমিঙ
৭) বরফের বাড়ি
৮) Dyson sphere
৯) Around the moon
১০) Nuke Mars





 ছবি অন্তর্জাল থেকে নেয়া।

 
 
 

 
 


 





সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১১:০৭
৪৫টি মন্তব্য ৪৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের লোকেরা কিছু একটা নিয়ে ব্যস্ত আছে; সন্দেহজনক

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৬ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ৮:৩৩



শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ২ মাস চলে গেছে; অন্তর্বতীকালীন সরকারের লোকেরা কিন্তু সরকারকে পুরোদমে চালু করার জন্য খুব একটা চেষ্টা করছে না, এদেরকে এই ব্যাপারে তেমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার কন্যা ভাই পেল, এখন থেকে প্রতিদিন একটি করে গল্প সিরিজে নতুন গল্প যোগ হবে।

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০৬ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১১:১০



ব্লগের সবাইকে একটি সু-খবর শেয়ার করার জন্য আজকের পোস্ট। ব্যক্তিগত ব্যস্ততায় ব্লগে ক’দিন আসতে পারছিলামনা। ০২/১০/২৪ খ্রিঃ দুপুর ২।০০ ঘটিকায় ২য় সন্তানের বাবা হলাম। আলহামদুলিল্লাহ। বাবুর জন্য সবাই দোয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

দূর্গাপূজা ও সম্প্রীতি

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৬ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৬



একবার ভাবুন তো যে লোকটি বা লোকগুলো আজন্ম আপনার সংগে থেকেছে, একসংগে বেড়ে ওঠেছে, খেলাধুলা, লেখাপড়া, গল্পগুজব, ব্যবসা বাণিজ্য সবই একসংগে করেছে হঠাৎ কী এমন হলো যে আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছোট গল্পঃ নিমন্ত্রণ

লিখেছেন সামিয়া, ০৬ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৪

ছবিঃগুগল


সোলায়মান আলী একটা বিয়ের দাওয়াত নিয়ে দোটানায় ছিলেন অনেক দিন ধরে মনে মনে; একদিকে বিয়ের দাওয়াত এড়িয়ে যাওয়ার প্রবল ইচ্ছা তার মাঝে; অন্যদিকে জোরাজুরি করা তার একমাত্র ঘনিষ্ঠ জ্বীন... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোমলমতিদের ভয়ে অনেকে ব্লগ ছাড়ছেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৬ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৪



হাসান কালবৈশাখী ও কলাবাগান-১ নেই; মোহাম্মদ গোফরান ও রাজিব নুরের দুরে থাকার দরকার আছে। এখন দেখছি, কোমলতিদের ভাই-বেরাদররাও গা তোলা দিচ্ছেন! বাংলাদেশ অবশ্য কঠিন যায়গা, ভাই-বেরাদর, শিক্ষক, সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×