somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আশ্চর্য উন্নয়ন -২

০৬ ই মার্চ, ২০২৩ সকাল ৯:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



তেরো ঘন্টার টানা ভ্রমণ শেষে এয়ারপোর্টে নেমে শতদল হোসেন অবাক হয়ে গেলেন, ঝকঝকে পরিচ্ছন্ন এয়ারপোর্ট, সবকিছু খুব সুশৃংখল ভাবে হচ্ছে। এয়ারপোর্টের আনুষ্ঠানিকতা নির্ঝঞ্ঝাটে শেষ করে, চারপাশে তাকিয়ে তার মনে হচ্ছিল যেন স্বপ্ন দেখছেন...

অনলাইনে একটা হোটেলের রুম বুক করে রেখেছিলেন। হোটেলের গাড়িতে চড়ে হোটেলে যেতে যেতে চারপাশে তাকিয়ে তার মনে ধন্ধ লেগে গেল; এ কি সেই ঢাকা যেখান থেকে তিনি বিশ বছর আগে বিদেশে গিয়েছিলেন!! চওড়া রাস্তাঘাট, ফুটপাত, দুপাশে গাছের সারি। কোথাও কোন যানজট নেই। সেই গাদাগাদি করে গড়ে ওঠা কংক্রিটের স্তুপ বাড়িগুলোই বা কোথায়!! এখন যে বাড়িগুলো দেখতে পাচ্ছেন তার চারপাশে খোলা জায়গা, নানারকম গাছপালার ফাঁকে ফাঁকে বসার বেঞ্চ দেখা যাচ্ছে। বিশাল বাড়িগুলোর একপাশের দেয়াল ছোট ছোট গাছ সবুজ করে রেখেছে, মনে হচ্ছে সবজি গাছ। কৌতুহলী হয়ে ড্রাইভারকে প্রশ্ন করলেন,

- বাড়ির দেয়ালে গাছ লাগানো! এমন বাড়ি আগে দেখিনি!

- দেয়ালে ঠিক লাগানো হয়নি, গাছগুলো দেয়ালের কাছাকাছি বাতাসে ঝুলছে, ফলে বাড়ির এই পাশটা সবসময় ঠান্ডা থাকে। এভাবে বাতাসের মধ্যে গাছ লাগানোর পদ্ধতির নাম এরোপনিক, বাতাসের গাছের ঝুলন্ত শিকড়ে গাছের পাশ দিয়ে যাওয়া পাইপ লাইন থেকে গাছের খাদ্য স্প্রে করা হয়। পরিবেশ সুন্দর করছে, সাথে সাথে খাবারও জোগান দিচ্ছে এই গাছগুলো।

- সবকিছু এত বেশি বদলে গেছে যে আমাকে বলে না দিলে আমি বুঝতেই পারতাম না এটা ঢাকা।

- সত্যিই তাই... ঢাকা অনেক বদলে গেছে! পুরানো বাড়িঘর আর নেই। আপনার কাছে সব নতুন মনে হবারই কথা!

- কিন্তু আগের বাড়িঘরগুলো কি হলো?

- সেগুলো ভেঙে ফেলা হয়েছে! এক সময় ঢাকায় যেখানে খুশি, যেমন খুশি, ঘরবাড়ি বানানো হচ্ছিল। ঢাকার অন্তত আশি শতাংশ বাড়ি ইমারত নির্মাণ বিধিমালা লংঘন করে বানানো হয়েছিল, ফলে নানা ধরনের অসুবিধা হচ্ছিল। সেগুলো ভেঙে বেটাঙ্ক এই আধুনিক, পরিবেশ বান্ধব বাড়ি তৈরি করেছে। এই বাড়িগুলোর প্রতিটিতে আড়াইশো/ তিনশো পরিবার বসবাস করেন। বাড়িগুলোর বিদ্যুতের চাহিদার অধিকাংশ পূরণ হয় নিজস্ব ভাবে উৎপাদিত সৌর বিদ্যুৎ দিয়ে, আবার বিশেষ প্রক্রিয়ায় বৃষ্টির পানি জমা করে ব্যবহার করা হয় খাবার পানি হিসেবে। এই বাড়িতে আছে স্বয়ংক্রিয় অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা, প্রাথমিক চিকিৎসালয়, জিমনেসিয়াম শিশুদের দিবা যত্ন কেন্দ্র আরো নানা ধরনের সুবিধা।

- আগের বাড়িগুলো ভেঙে ফেলল?? কেউ বাঁধা দেয় নি?

- কিভাবে বাঁধা দেবে? তারা তো আইন না মেনে বাড়ি বানিয়েছিল, আর সকলেই জানে যে আইন ভাঙার অন্যায় বেটাঙ্ক বরদাস্ত করে না। এতো আর আপনার সময়ের পুলিশ বা রাজউকের লোক নয় যে ঘুষ খেয়ে সব অন্যায়কে প্রতিষ্ঠিত করে দেবে!!

- আশ্চর্য!!!

- শুধু আশ্চর্য না, অত্যাশ্চর্য! আপনি যখন দেশে থাকতেন, তখন নিশ্চয়ই ঢাকা শহরের যে কোন প্রধান সড়ক দিয়ে দু'মাইল গেলেই কয়েকখানা বিশ্ববিদ্যালয় আর হাসপাতাল দেখতে পেতেন। সেগুলো ছিল আসলে ব্যবসা কেন্দ্র। সেই হাসপাতাল আর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আর নেই। এই যে এতক্ষণ ধরে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছেন, কোনো হাসপাতাল বা বিশ্ববিদ্যালয় দেখতে পেয়েছেন কি? অথচ এখন শিক্ষা আর চিকিৎসা সেবায় আমাদের দেশ বিশ্বে অনুকরণীয়!

- সত্যি আশ্চর্য! এটা কী করে সম্ভব হলো?

- এটা যে সম্ভব হয়েছে, এই ব্যাপারটায় আশ্চর্য হবার কিছু নেই। আমাদের দেশের মানুষ মূলত মেধাবী এবং পরিশ্রমী, এই উন্নয়ন করা আমাদের জন্য কঠিন কিছু না, শুধু দরকার ছিল যোগ্য পথপ্রদর্শকের, যে কিনা লোভ আর ভীতির উর্ধ্বে উঠে দেশের কল্যাণে কাজ করতে পারে।

- এই উন্নয়ন কী কেবল ঢাকাতেই হয়েছে, নাকি সারা দেশেই হয়েছে?

- উন্নয়ন সারাদেশেই হয়েছে, শুধু ঢাকায় নয়। আগে প্রশাসন আর ব্যবসার সব সদর দপ্তর ঢাকায় ছিল, এখন সেগুলো সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে জনসংখ্যা আর উন্নয়ন, দুটোই সারাদেশে সমভাবে বন্টিত হয়েছে...এই সবকিছু করেছে বেট্যাঙ্ক, আমাদের স্বস্তি আর আস্থার আরেক নাম।

- বারবার "বেট্যাঙ্ক" বলছেন, বেট্যাঙ্ক কি কোনো বিশেষ বাহিনীর নাম?

- হয়তো বা বিশেষ বাহিনী! আসলে আমরা কেউ জানি না বেট্যাঙ্ক কী। এটুকু জানি, বছর দশক আগে বেট্যাঙ্কের শুরু। আপনি নিশ্চয়ই জানেন, আমাদের দেশের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগের পরীক্ষা হতো প্রার্থীর সাধারণ জ্ঞান আর বিশ্লেষণী ক্ষমতা যাচাইয়ের মাধ্যমে। দশ বছর আগে দেখা গেল, এই পরীক্ষায় কিছু পরীক্ষার্থী তিন ঘন্টার লিখিত পরীক্ষায় পাঁচ মিনিটে সব সঠিক উত্তর দিয়েছে, মৌখিক পরীক্ষায় প্রশ্ন করা শেষ হওয়া মাত্রই সঠিক উত্তর দিয়েছে! এদের বাদ দিয়ে অন্যদের নেয়া সম্ভব হয় নি। এরা তাদের কাজে যোগদানের পর থেকে দেশের শুভ পরিবর্তনের শুরু হলো, তারপর থেকে প্রতিবার এই পরীক্ষায় এমন অতি বুদ্ধিমান পরীক্ষার্থীরা নির্বাচিত হতে লাগলো, তাদের পরিচিতি হলো বেট্যাঙ্ক নামে। এই হলো বেট্যাঙ্কের গল্প!

- বেট্যাঙ্ক কী বাংলাদেশে লেখাপড়া করেছে?

- সম্ভবত না। ধারনা করা হয় যে বেট্যাঙ্ক যন্ত্র মানব; এক নিভৃতচারী বিজ্ঞানীর সৃষ্টি। যন্ত্র মানব বলে ভাবার কারণ এরা কোনরকম দুর্নীতি করে না, সবসময় উচিত কাজটি করে, কোন বিশ্রাম না নিয়ে টানা কাজ করতে পারে...

ড্রাইভারের কথা থেমে যাওয়ায় শতদল হোসেনের ভাবনা থেমে গেল। দেখলেন অন্য ধরনের স্থাপত্যের এক বাড়ির সামনে গাড়ি থেমে গেছে, বুঝলেন হোটেলে পৌঁছে গেছেন।

হঠাৎ তীব্র শব্দ করে নানাধরণের হর্ণ বাজতে লাগলো। এমন সুন্দর রাস্তায় হর্ণ বাজায় কে... ভাবতেই ঘুম ভেঙ্গে গেল। চোখ খুলে দেখলেন, এতক্ষণ জ্যামে আটকে থাকা গাড়িগুলো কচ্ছপের গতিতে চলতে শুরু করেছে।





সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মার্চ, ২০২৩ সকাল ৯:০৩
২৫টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×