somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাগরে শয়ন যার, শিশিরে কী ভয় তার!

১২ ই জুলাই, ২০২৩ রাত ৯:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বাংলাদেশের ডাটা বেইজ থেকে তথ্য ফাঁস হয়েছে; লাখ লাখ...তাই কি আপনি আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন!! আমি তো বেশ কিছুদিন ধরেই জানি আমার এনআইডির তথ্য ফাঁস হয়েই আছে... বিপদের সম্ভাবনা আছে সেটাও জানি। কিন্তু এত আতঙ্ক দেখে মনে হচ্ছে, অনেকেই জানেন না আমাদের তথ্য কিভাবে অন্যের হাতে চলে যায় বা গেছে... আমার কিছু অভিজ্ঞতা বর্ণনা করি...

১) একজনের এনআইডি সংশোধন করতে হবে, খুব ছোট ভুল। নামের ইংরেজি বানান ঠিক আছে, কিন্তু বাংলা বানানের একটা শব্দে র- এর জায়গায় ল হয়ে গেছে, আতাউরের জায়গায় আতাউল হলে যেমন হয় তেমন আর কি! এটা নিয়ে অসুবিধা হয় নি কখনো, পাসপোর্ট - ভিসা- ব্যাংক সব এই এনআইডি দিয়েই চলেছে। ‌কিন্তু একটা সরকারী দপ্তর এটা গ্রহণ করতে চাইলো না, বলল নাম ঠিক না হলে তারা কাজ করবে না। শুনলাম ঘরে বসে অনলাইনে এন আইডি সংশোধন করা খুব সহজ, নিজেই করা যায়। ফোন নিয়ে সার্চ দিতেই চলে এল অনেক লেখা, যাতে নিজে নিজে এন আই ডি র তথ্য পরিবর্তন করার প্রক্রিয়াটি ধাপে ধাপে বর্ণনা করা হয়েছে। শুরু করলাম; প্রথম দুতিনটা ধাপ পার হবার পর বলা হলো যে, একটা অ্যাপের সাহায্য নিতে হবে, সেই অ্যাপটা শুধু প্লে স্টোরে আছে, আর আমার ফোনে শুধু অ্যাপ স্টোর আছে! কিছুক্ষণ চেষ্টা করার পর বুঝলাম পন্ডশ্রম হবে। তাই পরদিন গেলাম এক মার্কেটে, যেখানে সারি সারি কম্পিউটারের দোকান আছে আর অনেক মানুষ অনলাইনে তাদের নানা রকম কাজ করাচ্ছে । আমার দরকারটা এক দোকানের ছেলেকে জানালাম, সে বলল, করে দিতে পারবে, কিন্তু নিয়ম হচ্ছে যার কার্ড সংশোধন হবে তাকে নিজে আসতে হবে কারণ সংশোধনের একপর্যায়ে ছবি তুলে দিতে হবে তাৎক্ষণিকভাবে। আমি জানালাম, তিনি কিছুতেই দোকানে আসবেন না! বলল সেক্ষেত্রে বিকল্প ব্যবস্থা হচ্ছে ভিডিও কলের মাধ্যমে তার ছবি তোলা হবে, তবে এইসব বাড়তি কাজের জন্য টাকা বেশি দিতে হবে। তথাস্তু! কিন্তু দেখা গেল ভিডিও কলের ছবি তুললে ঠিকমতো হচ্ছে না, তাই এই দোকান বাদ দিতে হলো। হতাশ হয়ে ফিরে আসার পথে আরেক দোকানে জিজ্ঞেস করলাম কোনো ভাবে তারা একাজ করতে পারবে কিনা! দোকানের ছেলে বলল, তারা পারবে, তারা এই কাজে বিশেষ সুনামধারী, কারণ এই মার্কেটে একমাত্র তারাই পারে এনআইডিধারীর সশরীরে উপস্থিতি ছাড়া কাজ করে দিতে; শুধু একটা ছবি দিয়েই তারা কাজটা করে দিতে পারবে! অবশ্য সেজন্য টাকার পরিমাণ বেশি লাগবে। রাজি হয়ে দোকানে বসলাম, একটা ছবি আর এসএসসির সার্টিফিকেট (যেখানে বাংলা নাম ঠিকমতো দেয়া আছে) সেটা দিলাম। কিছুক্ষণ কি কি কাজ করলো ছেলেটা, আমার থেকে টাকা নিয়ে সংশোধন ফি বিকাশে পাঠিয়ে দিল, তারপর বলল কাজ হয়ে গেছে।‌ এরপর নির্বাচন কমিশন অফিস থেকে আমার ফোনে যখন মেসেজ যাবে, তখন তাদের কাছে গেলেই আমাকে তারা সংশোধিত এনআইডি বানিয়ে দিবে! টাকা দিয়ে বাসায় আসলাম, কাজটা গবেট সুলভ হয়ে গেল কিনা তাই ভাবতে ভাবতে...

পরদিন দেখি নির্বাচিত কমিশন থেকে মেসেজ এসেছে, "- - - - আপনার আবেদনটি অনুমোদন করা হয়েছে অনলাইন সিস্টেম হতে কার্ডটি ডাউনলোড অথবা আবেদন জমাকৃত অফিস হতে কার্ডটি গ্রহণ করতে পারবেন।" সাথে সাথে দোকানে গেলাম মেসেজটা দেখানোর পর তারা নামের ঠিক বানান সম্বলিত সংশোধিত কার্ডটি প্রিন্ট করে লেমিনেট করে দিল। বলল এটা স্মার্ট কার্ড নয়, কিছুদিন পর গিয়ে নির্বাচন কমিশন অফিস থেকে সংশোধিত স্মার্ট কার্ডটি নিয়ে আসতে হবে। এত সহজে কার্ড সংশোধন হয়ে গেল দেখে আমি খুব অবাক হয়ে গেলাম, একই সাথে কেন যেন মনে অস্বস্তি হচ্ছিল, কারণটা বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ করে বিকালে অস্বস্তির কারণটা বুঝতে পারলাম। তৎক্ষণাৎ দোকানে গেলাম, গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,

- আচ্ছা, যে ছবি আর কাগজ দিয়ে আপনি এনআইডি সংশোধন করলেন সেগুলো তো আপনার কম্পিউটারে রয়ে গেছে। তাহলে ইচ্ছে করলেই আপনি আরেকবার এনআইডির অন্য তথ্য বদলে দিতে পারেন, তাই না?

দোকান মালিক সহাস্যে উত্তর দিলেন:

- অবশ্যই আপা! এটা কোন সমস্যাই না। নাম বদলাতে হলে সেই অনুযায়ী একটা কাগজ, আর অন্য তথ্য বদলাতে হলে শুধু সেই অনুযায়ী একটা কাগজ বানাতে হবে, ব্যস।"

সেই থেকে ভাবনায় আছি; ফরম ফিলাপের একপর্যায়ে আমি আমার ফোন নাম্বারও দিয়েছি। কোনদিন হয়তো এই ফোন নাম্বারে কেউ ফোন করে বলবে, যদি আমাদের এত টাকা না দেন তবে আপনার এনআইডির তথ্য বদলে দিব... অথবা যদি কোন কিছু না জানিয়েই আমার অজান্তে তথ্য বদলে দেয়, তাহলে আমার এনআইডি অচল হয়ে যাবে!! সেই এনআইডির নাম কিন্তু সত্যিই সংশোধিত হয়েছে।

আমার মতো কোটি খানেক মানুষ দোকানে বা থানা/উপজেলা অফিসে গিয়ে এন আই ডির ভুল সংশোধন করেছেন, এখনও করছেন। সংখ্যাটা কোটি খানেকই হবে, কারণ একেবারে নির্ভুল এন আই ডি খুব কমই পাওয়া যায়, একথা তাদের ওয়েবসাইটেই বলা আছে!! এদের সকলের এন আইডির তথ্য অন্যের হাতে আছে, সেটা বদলে দেয়া কঠিন কোন কাজ না!!

আরেকটা অভিজ্ঞতার কাহিনী। ফ্ল্যাটের জমির খাজনা দিতে গিয়ে শুনলাম অনলাইনে দিতে হবে। এটাও সহজ ডিজিটাল পদ্ধতি, ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের নাগরিক কর্নারে গিয়ে প্রথমে নিবন্ধন করতে হবে মোবাইল নাম্বার দিয়ে, দিলাম। মোবাইলে ওটিপি মেসেজ আসলে সেই ওটিপি নাম্বার দিলে পরবর্তী ধাপে যাওয়া যাবে, যেখানে এন আই ডি নাম্বার দিতে হবে, তাহলে নিবন্ধন সম্পন্ন হবে। সেটাও দিলাম। ভাবলাম নিবন্ধন হয়ে গেছে, এখন লগইন করে আমার জমি তথ্য দিতে পারব। কিন্তু লগইন করতে পারলাম না; মেসেজ আসলো, "এই এনআইডি নম্বর ভূমি মন্ত্রণালয় নিবন্ধিত আছে", কথাগুলো ঠিক এরকম না হলেও বক্তব্য এটাই ছিল।অথচ আমি কোন নিবন্ধন করিনি!! আরেক বার চেষ্টা করতে গেলাম, এবার ফোন নম্বর দেবার পর মেসেজ দেখালো, "আপনার মোবাইল নাম্বার ইতিমধ্যে নিবন্ধিত"! (উপরে যে ছবি দিলাম সেরকম মেসেজ। আমি আমার মোবাইল নাম্বার মুছে স্ক্রিনশট নিয়েছি)। কিছুতেই সমাধান না করতে পেরে ওয়েবসাইটে দেওয়া হটলাইন নাম্বার ১৬১২২তে ফোন করে একজনকে আমার সমস্যার কথা জানালাম, তিনি বললেন যে তিনি দেখবেন কী হয়েছে। কিছুক্ষণ পরে আবার ফোন করে জানলাম, আমার এনআইডিটি নিবন্ধিত, কিন্তু অন্য একটি ফোন নাম্বার দিয়ে নিবন্ধন করা হয়েছে। আমি জানালাম যে, আমি আগে কোন নিবন্ধন করিনি, এটা অন্য কেউ করেছে। তিনি তখন জানালেন, যে মোবাইল নাম্বার দিয়ে নিবন্ধন করা হয়েছে, সেটা তিনি আমাকে জানাবেন, সেই নাম্বার দিয়ে লগইন করে তারপর আমি মোবাইল নাম্বার হিসেবে নিজের নাম্বারটা দিয়ে দিতে পারব, তাহলে আর আমার লগইনে সমস্যা থাকবে না। তাই করলাম, এবার লগইন করতে পারলাম... কিন্তু অনলাইন পেমেন্ট করতে ভূমি অফিসেই যেতে হয়েছিল, বেশি পেমেন্টও করতে হয়েছিল!!

সে যাক ! কিন্তু একটা প্রশ্ন মাথায় থেকেই গেছে, আমি যখন ১৬১২২তে ফোন করে আমার সমস্যার কথা বললাম, তখন তাঁরা কোনরকম ভেরিফিকেশন করেনি যে সত্যিই এটা আমার এনআইডি কিনা। এখন আরেকজন যদি আমার পরিচয়ে ফোন করে বলে যে সে আমি, সে লগইন করতে পারছে না, তখন তাঁকেও আমার নাম্বার বলে দিলে সে সেই নাম্বার দিয়ে লগইন করে আমার নাম্বারটা বদলে ফেলতে পারবে। কিন্তু আমি আর লগইন করতে পারবো না! অথবা আরেক বিপদ হতে পারে, কেউ যদি আমার ফোন নম্বর আর এনআইডি নাম্বার জানে, (যেটা অনেক জায়গায় আছে, উদাহরণ ব্যাংক!) সে এই নাম্বার দিয়ে নাগরিক কর্ণারে লগইন করে সহজেই জেনে যেতে পারে আমার জমি জমার পরিমাণ, চাইলে বিপদে ফেলতেও পারে...

এই হলো অবস্থা!!

সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুলাই, ২০২৩ রাত ৯:৪৯
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তুমি অথবা শরৎকাল

লিখেছেন আজব লিংকন, ১৫ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:১০


রোদ হাসলে আকাশের নীল হাসে।
গুচ্ছ গুচ্ছ সাদা মেঘ দল ব্যস্ত হয়ে
দূর সীমাহীন দিগন্তে ছুটে।

লিলুয়া বাতাসে তোমার মুখে এসে পড়া চুল আর
ঢেউ খেলানো আঁচলের সাথে—
কাশবনে সব কাশফুল নেচে যায়।
নিভৃতে একজোড়া অপলক... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রসঙ্গঃ স্কুলে ভর্তি.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৫ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:৪০

প্রসঙ্গঃ স্কুলে ভর্তি.....

সেই ষাট সত্তর দশকের কথা বলছি- আমাদের শিক্ষা জীবনে এক ক্লাস পাস করে উপরের ক্লাসে রেজাল্ট রোল অনার অনুযায়ী অটো ভর্তি করে নেওয়া হতো, বাড়তি কোনো ফিস দিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মন্দির দর্শন : ০০২ : পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি পূজা মন্ডপ ও নাচঘর বা নাট মন্দির

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৫ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২


পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি বাংলাদেশের জমিদার বাড়িগুলির মধ্যে খুবই সুপরিচিত এবং বেশ বড় একটি জমিদার বাড়ি। পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি সম্পর্কে একটি লেখা আমি পোস্ট করেছিলাম সামুতে।

ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে কলকাতা থেকে রামকৃষ্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একদিন সবকিছু হারিয়ে যাবে

লিখেছেন সামিয়া, ১৫ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:৩১



একদিন সবকিছু ফিকে হয়ে যাবে,
সময়ের সাথে হারিয়ে যাবে স্মৃতি।
মনে থাকবে না ঠিক ঠাক কি রকম ছিল
আমাদের আলাদা পথচলা,
হোঁচট খাওয়া।
মনে থাকবে না
কাছে পাওয়ার আকুতি।
যাতনার যে ভার বয়ে বেড়িয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে না'ফেরা অবধি দেশ মিলিটারীর অধীনে থাকবে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৫ ই অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৯



একমাত্র আওয়ামী লীগ ব্যতিত, বাকী দলগুলো ক্যন্টনমেন্টে জন্মনেয়া, কিংবা মিলিটারী-বান্ধব।

আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ অনেকটা সমর্থক শব্দ ছিলো: বাংলাদেশ ব্যতিত আওয়ামী লীগের প্রয়োজন নেই, আওয়ামী লীগ ব্যতিত বাংলাদেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×