অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।
ক
একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন, খাতার প্রথম পৃষ্ঠায় সুন্দর হস্তাক্ষরে প্রশ্নপত্রের প্রথম প্রশ্ন লিখে তার নিচে অনেকখানি জায়গা খালি রেখে পৃষ্ঠার একেবারে শেষে লেখা, "উত্তর ২০ নম্বর পৃষ্ঠায় দেখুন"। তিনি দেখলেন, খাতার পরবর্তী সব পৃষ্ঠায় প্রশ্নপত্রের অন্যান্য প্রশ্ন তুলে দিয়ে নিচে লেখা, "উত্তর ২০ নম্বর পৃষ্ঠায় দেখুন"। শিক্ষক ২০ নম্বর পৃষ্ঠায় পৌঁছে গেলেন, দেখলেন সেখানে পুরো পাতা জুড়ে মস্ত বড় এক 'ক' লিখে তার নিচে ছাত্র লিখে রেখেছে, "দ্যাখ **, কত্ত বড় ক!"
কৌতুহল
মেট্রো রেলের টিকেট করার লাইনে দাঁড়িয়েছি, মেশিন কাজ করছে না তাই লাইন আগাচ্ছে না। আমার পিছনে দাঁড়ানো লোকটি আমাকে প্রশ্ন করা শুরু করলেন। অন্যের ব্যাপারে অতি কৌতুহল দেখানো যে শিষ্টাচারের সীমা অতিক্রম করা, এটা যে অতি অশোভন একটি কাজ লোকটির সম্ভবত একথা জানা ছিল না। আমি না শোনার ভান করে চুপ করে থাকলেও তিনি বারবার প্রশ্ন করতে থাকেন, অগত্যা উত্তর দিতে হয়...
- যাবেন কোথায়? বললাম।
- আপনি থাকেন কোথায়? বললাম।
- দেশের বাড়ি কোথায়? বললাম।
- আপনার ছেলেমেয়ে কয়জন? বললাম।
- তারা কী করে? বললাম।
- সাহেব কী করেন? বললাম।
- আপনি কী করেন? কিছু করি না।
- চাকরি করেন না? না।
- আগে করতেন? না।
- আপনি জীবনেও চাকরি করেন নাই? না।
লোকটার কৌতুহল মেটাতে গিয়ে একসময় আমাকে মিথ্যা বলতে হলো! বিরক্ত হয়ে লাইন ছেড়ে আরেক লাইনের শেষে গিয়ে দাঁড়ালাম।
অপরিচিত কোন মানুষের ব্যক্তিগত বিষয়ে এমন কৌতুহল প্রকাশ করা যে অনুচিত, বিশেষ করে পাবলিক প্লেসে, এই সাধারণ জ্ঞানটুকুও কিছু মানুষের থাকে না। ব্লগও একটা পাবলিক প্লেস। এখানেও দেখি কেউ কেউ ব্যক্তিগত প্রশ্ন করেন, যেমন আপনার বয়স কত, আপনার আয় কত ইত্যাদি। এটা অতি অশোভন এবং অনুচিত আচরণ।
কুম্ভীলক এবং কোতোয়াল
অন্যের লেখাকে নিজের নামে চালিয়ে দেয় যে, তাকে বলে কুম্ভীলক। সামু ব্লগেও কোন কোন ব্লগার কুম্ভীলকবৃত্তি অবলম্বন করে থাকতেন, আবার কোন কোন ব্লগার কুম্ভিলকের উপর নজরদারি করতে থাকতেন। দ্বিতীয় ব্লগার লেখা চুরির প্রমাণ হাজির করে চোরকে একাজ থেকে বিরত থাকতে বলতেন। যেহেতু চৌর্যবৃত্তি ঠেকাতে দ্বিতীয় ব্লগার কাজ করে যাচ্ছিলেন, তাই তাকে ব্লগীয় কোতোয়াল বলতে পারি। কোতোয়াল কিন্তু তার কাজে সফলতা পেলেন না; প্রথমত সমস্ত প্রমাণ দেবার পরও লেখা চোর কিছুতেই চুরির কথা স্বীকার করলেন না, দ্বিতীয়ত সামুর কিছু পুরনো ব্লগার কোতোয়ালের উপর চোটপাট করলেন, তিনি নতুন ব্লগার হয়ে পুরোনো ব্লগারের উপর এমন খবরদারি করছেন দেখে। এরপর দেখা গেল কোতোয়াল সামু ছেড়ে কোথায় চলে গেলেন... মনের দুঃখে হয়তো বনেই গেলেন!! অথচ ব্লগার শের শায়রী আবিষ্কার করেছিলেন যে এই কোতোয়াল আসলে কোনো নতুন ব্লগার নন, ইনি সামুর ঋদ্ধ ব্লগার ম্যাভেরিক। লগইন জটিলতায় ম্যাভেরিক নিকে সামুতে আসতে না পেরে নিজের নামে সামুতে ব্লগিং করতে এসেছিলেন। অবশ্য এখন সামুতে একাধিক কোতোয়াল ম্যাভেরিকের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন।
কুম্ভিলকের সমস্যা মনে হয় সামুর শুরু থেকেই আছে। ২০০৮ সালে, ষোলো বছর আগের সামুতেও আমি একজন কুম্ভিলককে পেয়েছি। অবশ্য আমি কোতোয়ালের মতো এমন এলেমদার নই যে লেখাচোর ধরে ফেলবো! এই কুম্ভীলককে আবিষ্কার করেছি কাকতালীয়ভাবে! একদিন করুনাধারা লিখে গুগল সার্চ করতে গিয়ে দেখি "করুনাধারা" শিরোনামে একটা পোস্ট আসলো। সেটা কবিগুরুর "জীবন যখন শুকায়ে যায়..." গানে একটা শিরোনাম জুড়ে দিয়ে তৈরি করা পোস্ট, অথচ পোস্টের কোথাও কবিগুরুর নামের উল্লেখ করেন নি পোস্ট দাতা! view this link
ক্যাচাল
দূর থেকে ক্যাচাল দেখতে আমার ভালো লাগে, বলা যায় যে আমি ক্যাচাল পর্যবেক্ষণ করতে বেশ পছন্দ করি। সামুতে কখনো সখনো ক্যাচাল হয়, সেটা দেখে আমার দেখা প্রথম ক্যাচালের কথা মনে পড়ে যায়। সেটা ছিল অনেক জনের ক্যাচাল, দুই দেশের মানুষের মধ্যে ক্যাচাল। ১৯৯৩/৯৪ সালে, আমি তখন ইউ এ ইতে থাকি। সেখানে তখন গালফ নিউজ পত্রিকা পড়া হতো। মোটাসোটা পত্রিকায় অনেকগুলো পৃষ্ঠা, একেক পৃষ্ঠায় একেক রকম খবর থাকতো। একটা পৃষ্ঠা ছিল India and the sub continent নামে, আর ছিল খেলার খবরের জন্য একাধিক পৃষ্ঠা। দেখা গেল, এই দুই জায়গাতেই প্রতিদিন শচীন টেন্ডুলকারের গুণগান করে নানারকম খবর থাকে, সাথে বিশাল ছবি। কখনো টেন্ডুলকার হাসিমুখে নতুন কেনা লাল গাড়িখানার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন, কখনো লন্ডনে তার অ্যাপার্টমেন্টের সামনে দাঁড়ানো, কখনো কোনো রেস্টুরেন্টে খেতে গেছে! তখন টেন্ডুলকার ভারতের ক্রিকেটে সদ্য আবির্ভূত হয়েছেন, তাকে বলা হতো ভারতের ক্রিকেটের child prodigy। তেন্ডুলকারে ভারতীয়দের মাতামাতি দেখেই হয়তো গালফ নিউজ পারলে পত্রিকার অর্ধেক জুড়ে তার খবর ছেপে দেয়।
আমার স্বামী একদিন গালফ নিউজের চিঠিপত্রের পাতায় একটা চিঠি লিখলেন, চিঠির শিরোনাম ছিল "Such in Tendulkar!", চিঠির বক্তব্যের সারসংক্ষেপ ছিল, "শচিনকে নিয়ে এত মাতামাতি করার কী আছে! এমন কী তালেবর হয়ে গেছে সে, যে প্রতিদিন পত্রিকা খুলেই তার চেহারা দেখতে হবে, খবর পড়তে হবে!"
এই চিঠির প্রতিক্রিয়ায় পরদিন শচিনের পক্ষে বক্তব্য দিয়ে দু-তিনটা চিঠি ছাপা হলো, তারপর দিন পাঁচ ছয়টা, এবার পক্ষের সাথে বিপক্ষেও। তারপর দিন একজন লিখলেন, জনৈক (আমার স্বামীর নাম) পাকিস্তানী শচিনের কীর্তিতে গাত্রদাহ অনুভব করছেন, কারণ পাকিস্তান ক্রিকেটে শচিনের মতো এমন কীর্তিমান কোনো ক্রিকেটার নেই, কখনো হবেও না!! আমার স্বামীর মুসলিম নাম দেখে এই লেখক অনুমান করে নিয়েছিলেন তিনি পাকিস্তানি! এরপর শুরু হয়ে গেল গালফ নিউজে ভারতীয় এবং পাকিস্তানীদের পত্র লিখন প্রতিযোগিতা, ভারতীয়রা শচিনের পক্ষে আর পাকিস্তানীরা বিপক্ষে। এই পত্রিকার পুরো এক পাতা থাকতো নানা বিষয়ে পাঠকদের মতামত প্রকাশক চিঠিপত্রের জন্য, দেখা গেল সেই চিঠিপত্রের পাতা জুড়ে থাকছে কেবল শচিন বিষয়ক চিঠি! পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন বিক্রম ভোহরা, নাম দেখে তার জাতীয়তা বোঝা যায় কিন্তু তিনি নিরপেক্ষভাবে পক্ষে-বিপক্ষে সমান সংখ্যক চিঠি প্রতিদিন ছাপাতেন, আর সেই ক্যাচাল পর্যবেক্ষণের জন্য আমি ভোর হলেই দোর খুলে হকারের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতাম।
বেশ কিছুদিন পর সম্পাদক একদিন ঘোষণা দিলেন, তেন্ডুলকর সম্পর্কিত কোন চিঠি আর ছাপা হবে না। আমার দেখা প্রথম ক্যাচালের সমাপ্তি এভাবেই ঘটেছিল!
কেকা আপার আলুর নুডুলস
একদিন টিভি খুলে দেখি কেকা আপা নতুন রেসিপি শেখাবেন, আলুর নুডুলস। আমি খুব আগ্রহ নিয়ে দেখতে বসলাম, কারণ চালের আর গমের নুডুলস খেলেও আলুর নুডুলস কখনো খাইনি, নামও শুনিনি! কেকা আপা বলে চলেছেন, "... আলুর নুডুলস কোরিয়া, ভিয়েতনাম, জাপান প্রভৃতি দেশে খুবই জনপ্রিয়। আমি তাদের রেসিপিটাকে নিজের মতো করে নিয়েছি, এটা একটা সহজ রেসিপি, ফিউশন রেসিপি বলতে পারেন, কেমন! তাহলে আলুর নুডুলসের জন্য আমরা নিয়ে নিলাম বড় দুটো আলু, এগুলোকে এভাবে চিকন করে কেটে নিয়ে সরিয়ে রাখলাম। এবার নিলাম এই একটা মাঝারি পেঁয়াজ, দুটো লাল আর সবুজ ক্যাপসিকাম, একটা গাজর, সবগুলো এভাবে জুলিয়ান কাটে কেটে
নিলাম। কয়েকটা কাঁচা মরিচ চিরে রাখলাম, কেমন। আচ্ছা এবার ছোট একটা বিজ্ঞাপন বিরতির পর ফিরে আসছি... বিরতির পর আবারও এলাম, এবার ফ্রাইপ্যানে তেল দিয়ে দুটো ডিম এভাবে ভেজে তুলে নিলাম। এরপর এই তেলে পেঁয়াজ দিয়ে অল্প ভেজে আলু দিয়ে ঢেকে দিলাম। আলু একটু নরম হয়ে এসেছে , এবার কেটে রাখা বাকি সবজি, লবণ, গোলমরিচ, কাঁচামরিচ, সয়াসস দিয়ে মিশিয়ে ঢেকে দিলাম। এবারে ডিম দিয়ে পাঁচ মিনিট নেড়েচেড়ে নামিয়ে নিলাম। দ্যাখেন, কী সুন্দরভাবে তৈরি হয়ে গেল আমাদের আলুর নুডুলস!"
অনুষ্ঠান শেষ পর্যন্ত দেখার পর আমি হতভম্ব হয়ে বসে রইলাম! আলু ভাজা রান্না দেখলাম এত সময় ধরে!!
=================================================================================
আমার এই পোস্ট পাঠ করা অনেকটা আলুর নুডুলস শেখার মতো, এই পোস্টে দেশবাসীর জন্য হিতকর কোনো কিছু বা শিক্ষনীয় কোনো কিছু নেই। সামুতে বর্তমান কালে যেসব রাজনীতিবিহীন, বিজ্ঞানবিহীন, মানবিহীন নিম্নমানের পোস্ট আসে এই পোস্ট তার একটা নমুনা।